জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,
أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ لِيْ مَالاً وَوَلَدًا وَإِنَّ وَالِدِيْ يَحْتَاجُ مَالِيْ قَالَ أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ إِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ، فَكُلُوْا مِنْ كَسْبِ أَوْلَادِكُمْ،
“এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার সম্পদ ও সন্তান আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী।
তিনি বললেন, “তুমি ও তোমার সম্পদ উভয়ই তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানের উপার্জন থেকে খাও।” [আবু দাউদ হা/৩৫৩০; ইবনে মাজাহ, হা/২২৯২, সনদ সহিহ]
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
নাবালেগ বাচ্চাকে যে হাদিয়া/উপহার আত্মীয় স্বজনদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়,তার দ্বারা নির্দিষ্ট করে তাকে হাদিয়া দেয়া উদ্দেশ্য হয়না,বরং মা বাবাকেই দেয়া উদ্দেশ্য হয়।
সুতরাং সেটির মালিক সন্তান নয়,বরং মা বাবাই তার মালিক।
সে যা চাই,তারা সেটা করতে পারবে।
অবশ্য যদি কেহ নির্দিষ্ট ভাবে সন্তানকেই কিছু দেয়,তাহলে সন্তানই এর মালিক হবে।
(বেহেশতি যেওর ৫/৪৭)
(০১) যেই জিনিস নাবালেগ এর মালিকানায় দেয়া হবে,সেটিকে সেই বাচ্চার কাজেই লাগানো উচিত। পিতা মাতা সেটি ব্যবহার করতে পারবেনা।
পাত্র ইত্যাদি যাহা বাসা বাড়ির কাজে ব্যবহার করা যায়,সেটিকে বাসা বাড়ির কাজে ব্যবহার করা যাবে।
(০২)
যেই হাদিয়া সময় চলে যাওয়ার কারনে খারাপ হয়ে যায়,এবং সেটি ঐ সময়ে সন্তান ব্যবহার করতে পারেনা।
তাহলে সেটিকে বিক্রয় করে বাচ্চাকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে।
(০৩) পিতা মাতাও সেই বস্তুর মূল্য আদায় করে মালিক হতে পারবে।
قال فی الدر: یبیع الأب لأن لہ ولایة التصرف لا الأم ولا بقیة أقاربہ ولا القاضی اجماعاً عرض ابنہ الکبیر الغائب لا الحاضر إجماعاً لا عقارہ فیبیع عقار صغیر ومجنون۔ (الدر مع الرد: 5/367)
সারমর্মঃ
বাবা সেটি বিক্রয় করতে পারবে,কেননা তার সন্তানের সম্পদে হস্তক্ষেপ এর অধিকার রয়েছে।
তবে মায়ের নয়।
قال فی الشامی: وحاصلہ أن المنقول مما یخشی ہلاکہ فللأب بیعہ حفظا لہ (5/367
সারমর্মঃ
যে সমস্ত জিনিস পঁচে যাওয়া বা ধ্বংস হওয়ার ভয় রয়েছে,সেগুলো সেগুলো বিক্রয় করতে পারবে,হেফাজতের জন্য।
★তবে উল্লেখিত মাসয়ালায় কিছু ইসলামী স্কলারদের মতবিরোধ রয়েছে।
তাদের মতানুসারী গন এই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন।
তারা ঢালাও ভাবে উক্ত সম্পদে পিতার ব্যবহার বৈধ বলেন।
তারা বলেন যে ছোট বাচ্চারা আত্মীয়স্বজন এবং বিভিন্নজন থেকে যেসকল অর্থ ও উপহার-সামগ্রী পায় পিতা যদি আর্থিক অস্বচ্ছলতার দরুন সেগুলো ব্যবহার বা খরচ করতে চায় তাহলে তার জন্য যতটুুক প্রয়োজন ততটুকু নেয়া জায়েজ আছে। তবে প্রয়োজন না হলে বা প্রয়োজন অতিরিক্ত না নেয়াই ভালো। কেননা এসব উপহারের প্রতি শিশুদের মন লেগে থাকে।
হ্যাঁ, প্রয়োজনবোধে পিতা যদি তা ব্যবহার করেও তবে পরবর্তীতে সামর্থ্য হলে তাকে তা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করবে। আর মা তা নিতে পারবে কি না তা দ্বিমত পূর্ণ।
মা নিতে পারে কি না সে ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও, অধিক বিশুদ্ধ মতে পিতা-মাতা এ ক্ষেত্রে সমান। অর্থাৎ মাও তার অভাব মোচন পরিমাণ সন্তানের সম্পদ গ্রহণ করতে পারে। তবে বাবা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় মা সন্তানের অর্থ নেয়ার ব্যাপারে তার নিকট অনুমতি নিবে। কারণ বাবাই হল, পরিবারের প্রধান অভিভাবক।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
বাচ্চা জন্ম হওয়ার পর আত্মীয়-স্বজন বা অভিভাবকগণ বাচ্চাকে স্বর্ণ বা রূপার বিভিন্ন জিনিস যে হাদিয়া দেয়,এটি যদি বাচ্চার বাবা মাকেই দিয়ে থাকে,তাহলে সেটির যাকাত বাচ্চার বাবা মা দিবে,কুরবানীও তাদের উপর আবশ্যক হবে।
আর যদি কেহ নির্দিষ্ট ভাবে সন্তানকেই উপরোক্ত স্বর্ণগুলো দেয় দেয়,সেক্ষেত্রে সন্তানই এর মালিক হবে।
সেক্ষেত্রে বালেগ বালেগাহ হওয়ার পর থেকে এই স্বর্ণগুলো তাদের হস্তগত হয়ে থাকলে (নেসাব পরিমান হলে) সেগুলোর যাকাত সন্তানকেই দিতে হবে।
আর সেগুলোর উপর ভিত্তি করে কুরবানী সন্তানদের উপরেই আবশ্যক হবে।
আর যদি বালেগ বালেগাহ হওয়ার পর স্বর্ণ রুপা গুলো তাদেরকে না দেয় সেক্ষেত্রে বাবা-মার কাজ সঠিক হবেনা।
এমতাবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত সন্তানদের হস্তগত না করছে ততদিনের যাকাত সন্তানদেরকে আপাতত দিতে হবে না। তবে সেই সম্পদ হস্তগত হওয়ার পর (নেসাব পরিমান হলে) অনাদায়ী পূর্বের বছর গুলোরও যাকাত দিতে হবে। পূর্বের বছর গুলোরও কুরবানীর কাফফারা আদায় করতে হবে।
(০২)
যারা হাদিয়া দিয়েছে তারা যদি নির্দিষ্ট ভাবে সন্তানকেই উপরোক্ত স্বর্ণগুলো দেয়,সেক্ষেত্রে সন্তানই এর মালিক হবে।
(০৩)
হ্যাঁ এমতাবস্থায় যাকাত ফরজ হবে। কুরবানী ওয়াজিব হবে।
এক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত বাবা মা স্বর্ণগুলো সন্তানদের হস্তগত না করছে, ততদিনের যাকাত সন্তানদেরকে আপাতত দিতে হবে না। তবে সেই সম্পদ হস্তগত হওয়ার পর অনাদায়ী পূর্বের বছর গুলোরও যাকাত দিতে হবে। পূর্বের বছর গুলোরও কুরবানীর কাফফারা আদায় করতে হবে।
(০৪)
হস্তগত হওয়ার পর সে বুঝবে।
এমতাবস্থায় নেসাব পরিমান সম্পদ হলে হস্তগত হওয়ার পর অনাদায়ী পূর্বের বছর গুলোরও যাকাত দিতে হবে। পূর্বের বছর গুলোরও কুরবানীর কাফফারা আদায় করতে হবে।
(০৫)
এক্ষেত্রে হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হালাল টাকা কি পরিমান! সেটা যদি তার মনে না থাকে সেক্ষেত্রে প্রবল ধারণার উপর সে আমল করবে।
হালাল টাকা নেসাব পরিমাণ হলে বা সেরকম প্রবল ধারণা হলে তিনি যাকাত আদায় করবেন এবং কুরবানীও আদায় করবেন।
(০৬)
না, হবেনা।
এখন হারাম টাকা হতে খরচ করার অনুমতি নেই। হ্যাঁ যদি হারাম টাকা হতে সে খরচ করেই ফেলে, সেক্ষেত্রে হালাল টাকা আসা মাত্রই সমপরিমাণ টাকা তার মূল মালিককে দিয়ে দিবে,বিষয়টি অসম্ভব হলে সেক্ষেত্রে সমপরিমাণ টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।
(০৭)
এক্ষেত্রে যদি হাতে থাকা সেই হালাল ৫০০ টাকা মূল মালিককে দিয়ে দেন বা বিষয়টি অসম্ভব হলে সেক্ষেত্রে সেই ৫০০ টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দেন,সেক্ষেত্রে বিকাশের ৫০০ টাকা হালাল টাকা হবে।
অন্যথায় নয়।