আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
29 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম
আমি একজন ব্যবসায়ি।আমার ইনকামের একটা অংশ আমি সঞ্চয় করতে চাই এজন্য শরিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করছিলাম। এমতাবস্থায় আমাদের উপজেলা কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম যিনি আবার আমাদের স্কুল শিক্ষক তিনি আমাকে সোনালি লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানির কতা জানায়।এটা নাকি শরিয়া সম্মত প্রতিষ্ঠান। এখানে টাকা জমা রাখলে সেটা ব্যবসায় বিনিয়োগ হবে এবং সেখান থেকে লাভ-ক্ষতির উপর ভিত্তি করে মুনাফা বন্টন হবে।আমার মোট জমাকৃত টাকার একটি অংশ থাকবে কল্যান তহবিলে। যেখান থেকে কোন বীমাকারি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে সাহায্য করা হবে।

এই প্রতিষ্ঠানের শরিয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান শায়খ কামাল উদ্দিন জাফরি।উনিসহ আরো অনেক আলেম রয়েছেন এখানে।আমাদের ইমাম নিজেও এটার সাথে জড়িত এবং এটাতে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন।
এমতাবস্থায় আমার কি এখানে বিনিয়োগ করা বা এই বীমা করা কি জায়েয হবে?

1 Answer

0 votes
by (672,210 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন  

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٧٥

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লাহ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। {সূরা বাকারা-২৭৫}

হাদীস শরীফে এসেছে  
عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১)

আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ 
الرَّجُلُ أُمَّهُ

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত; নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সুদ (পাপের দিক থেকে) ৭০ প্রকার। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট (পাপের) সুদ হল মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করা! (অর্থাৎ সুদ খাওয়ার গোনাহ মায়ের সাথে ব্যভিচার করার চেয়ে ৭০ গুণ বেশী।)

(ইবনে মাজাহ ২২৭৪ , হাকেম ২/৩৭, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৫৫২০-৫৫২২, ইবনে আবী শাইবাহ ২২০০৫, সহীহ তারগীব ১৮৫৮)

অপর হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবন হানযালা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
دِرْهَمٌ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلَاثِينَ زَنْيَةً

জেনে-শুনে এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ৩৬ জন নারীর সাথে ব্যভিচারের চাইতে অধিক গুনাহের কাজ। (মুসনাদে আহমাদ ২১৪৫০)

https://www.ifatwa.info/1204 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,
জীবন বীমা নাজায়েয ও হারাম। কেননা কম্পানির পক্ষ্য থেকে মাসিক কিস্তিতে যে টাকা উসূল করা হয়, সেটা মূলত কম্পানির নিকট ঋণ হিসেবে থাকে। এবং পরবর্তীতে এ জমাকৃত টাকা তথা ঋণের বিপরিতে যে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা হয়,সেটা সুদ। আর সুদ হারাম।দ্বিতীয়ত বীমার বিষয়টা শর্ত তথা গ্রাহকের কোনো অঘটনের সাথে চুক্তিবদ্ধ। আর শর্তের সাথে কোনো ঋণের আদাণ-প্রদাণ জায়েয না বরং হারাম।তৃতীয়ত,বীমার টাকা দেড়ীতে গ্রাহকের হস্তগত হওয়ার শর্ত থাকে।আর ঋণের মধ্যে শর্তের মাধ্যমে দেড়ীতে লেনদেনের সমাপ্তি বিশুদ্ধ নয়।তাছাড়া বীমা কম্পানি গ্রাহকের নিকট থেকে কিস্তিতে টাকা তুলে সেই টাকা দিয়ে সুদি লেনদেনে জড়িয়ে থাকে।সুতরাং এসমস্ত কারণ বিবেচনায় ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, জীবন বীমা করা এবং বীমা কম্পানিতে চাকুরী করা জায়েয হবে না।(আহসানুল ফাতাওয়া-৭/২৪)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
বীমা সুদ এবং জোয়ার উপর নির্ভরশীল হওয়ার দরুণ বর্তমানে প্রচলিত সকল প্রকার বীমাই হারাম।তবে সরকারের পক্ষ্য থেকে যেই সমস্ত বীমার করার জন্য পাবন্দী রয়েছে,যেমন মটর বীমা ইত্যাদি।সেই সমস্ত বীমা ঐ শর্তে করা যাবে যে,বীমা কম্পানি থেকে পরবর্তীতে শুধুমাত্র জমাকৃত টাকাই নিতে হবে।অতিরিক্ত কোনো টাকা বা সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না।নিলেও তা সদকাহ করতে হবে।(ফাতাওয়ায়ে উসমানি-৩/৩১৪)

যতপ্রকার বীমা রয়েছে, তা যদি সরকারি বাধ্যতামূলক না হয়,তাহলে সকল প্রকার বীমাই নাজায়েয ও হারাম, এবং সেগুলোতে চাকুরী করাও হারাম।

বীমা সম্পর্কে কয়েকটি ফাতাওয়া গ্রন্থের ভাষ্য-
আল্লামা শামীর ফাতাওয়া
والذي يظهر لي: أنه لا يحل للتاجر أخذ بدل الهالك من ماله لأن هذا التزام ما لا يلزم.
অর্থঃ- (বিমার ব্যাপারে উত্তর হল) সমুদ্রপথে মাল ধ্বংস হলে ক্ষতিপূরণ নেওয়াটা ব্যবসায়ীদের জন্যে জায়েয হবে না। কেননা এটি 'এমন বস্তুকে আবশ্যক করে নেওয়া যা মূলতঃ আবশ্যক নয়' সেই মাসয়ালার অন্তর্ভুক্ত।

মুফতিয়ে আযম পাকিস্তান আল্লামা শফী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ-
একথা তো সুস্পষ্ট যে, শুধুমাত্র নাম পরিবর্তন করার দ্বারা কোন লেনদেনের বাস্তবতা পরিবর্তন হয় না। বিমা কোম্পানি থেকে যে লাভ প্রদান করা হয় তা নিঃসন্দেহে সুদের অন্তর্ভুক্ত।(জাওয়াহিরুল ফিকহ - ২/১৮১)

বুহুস ফি ক্বাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছারা তে বর্ণিত রয়েছে,
اما بعد! فقد اتفق معظم العلماء المعاصرين والمجامع والندوات الفقهية علي حرمة التأمين التجاري التقليدي لما يشمل عليه من الغرر والقمار والربا 
﴿بحوث في قضايا فقهية معاصرة - ٢/١٨٧﴾
অর্থঃ- বর্তমান যুগের আলেমদের বড় অংশ ফিকহী বোর্ড ও সেমিনারে কমার্শিয়াল বিমা হারাম হওয়ার উপর একমত পোষণ করেছেন। যেহেতু এ জাতীয় বিমার মধ্যে ধোঁকাবাজি, জুয়া ও সুদের উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে।(বুহুস ফি ক্বাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছার, ২/১৮৭)

ফাতাওয়ায়ে ইসলামিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
يجوز للانسان أن يساهم في هذه الشركات اذا كانت لا تتعامل بالربا  فان كان تعاملها بالربا  فلايجوز  وذاك لثبوت تحريم التعامل بالربا في الكتاب و السنة و الاجماع وكذالك لايجوز للانسان أن يساهم في شركات التأمين التجاري لأن عقود التأمين مشتملة علي الغرر والجهالة والربا والعقود المشتملة علي الغرر والجهالة والربا محرمة في الشريعة الاسلامية،     ﴿الفتاوي الاسلامية - ٢/٣٩٢ ﴾
অর্থঃ-কোন ব্যক্তির জন্যে ব্যাংক ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা তখনি জায়েয হবে যখন তা সুদ মুক্ত হবে। এটা এজন্যই যেহেতু সুদের হারাম হওয়া কুরআন সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সাব্যস্ত। এমনিভাবে মানুষের জন্যে কমার্শিয়াল বিমায় অংশগ্রহণ করা জায়েয নেই। যেহেতু কমার্শিয়াল বিমার চুক্তি ধোঁকা অস্পষ্টতা ও সুদের অন্তর্ভুক্ত, বিধায় তা হারাম।(ফাতাওয়া ইসলামিয়া, ২/৩৯২)

ইমদাদুল ফাতাওয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
এ সকল ব্যবসায়ী বিমা কোম্পানি গ্রাহককে যে বিশেষ সুরতে বিনিময় প্রদান করে থাকে, বাহ্যিকভাবে যদিও সেড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত মালের ক্ষতিপূরণ কিন্তু বাস্তবে সেটা ঐ টাকার বিনিময় যা গ্রাহক মাসিক বা বাৎসরিক প্রিমিয়াম আকারে পরিশোধ করে ছিল।.... অতএব বাহ্যিকভাবে এটা জুয়া.... আর বাস্তবে সেটা সুদ.....। অতএব বিমা চুক্তিটি নিঃসন্দেহে হারাম। এমনিভাবে জীবন বিমা (হারাম) কেননা তা বাহ্যিকভাবে ঘুষ.আর বাস্তবে সুদ।(ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৩/১৬১)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

আমাদের জানা মতে বাংলাদেশে কোন ব্যাংকই সঠিক পদ্ধতিতে ইসলামীক রুলস পূর্ণ ভাবে মেনে ব্যাংকিং করছে না। 

এ সংক্রান্ত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সেখানে বিনিয়োগ করা এবং এই বীমা করে মুনাফা গ্রহন করা জায়েজ হবেনা। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...