আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
47 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (19 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তায,

আমি আমার বান্ধবীর তরফ থেকে কিছু প্রশ্ন পাঠাচ্ছি। তার পরিস্থিতি কিছুটা বর্ণনা করি, দয়া করে কষ্ট করে পড়বেন উস্তায মিন ফাদ্বলিক।
আমার বান্ধবী ইসলাম মেনে চলার চেষ্টা করে। সে সহশিক্ষা ছেড়ে দিয়েছে এবং বিয়েও করেছে তার দ্বীনের সহযোগিতার জন্যে। সে পর্দাশীলা, বিয়ের দিনেও সে কালো বোরকা পড়েছে। এখন তার বিয়ের প্রায় ১৫ মাস হতে চললো। তার স্বামী দ্বীনদার এবং প্রবাসী। তার বিয়ের পরই সে কনসিভ করে এবং শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভোগে। বিয়ের তিনমাসের মাথায় তার স্বামীও আবার দেশের বাহিরে চলে যান এবং এখনো বাহিরেই আছেন। তার সংসারে শশুর-শাশুড়ি এবং একটা অবিবাহিত দেবর আছে। তার স্বামীর বড় বোন আর দুলাভাইও মাঝে মাঝে আসে। তারা কেউ পর্দার বিষয়ে সতর্ক না, এক্ষেত্রে তার পর্দার সমস্যা হচ্ছে। তাদের বাসায় তিনটা রুম আছে, রান্নাঘর একটা, ডাইনিং একটা, ওয়াশরুমও একটা। অর্থাৎ সবাই একই ওয়াশরুম ইউজ করেন, সকল রুম থেকেই ওয়াশরুমে আসা হয়, তার দেবরের ওয়াশরুমে আসতে গেলে রান্নাঘর পার হয়ে আসতে হয়। বাসায় এই অবস্থায় তার দেবরের সাথে দেখা হয় প্রতিদিন অনেকবার রান্নাঘরে, ডাইনিংয়ে বা ওয়াশরুমের পথে। তাছাড়া সে সারা ঘরের কাজ করে, তখনও পর্দায় সমস্যা হয়। অলটাইম কাজের সময় বোরকা নিকাব পড়ে থাকা বাচ্চাসহ কষ্ট হয়ে যায়। তার সিজারে বাচ্চা হয়েছে, সিজারের সময় তার সারা শরীরে বসন্ত ছিলো, হসপিটালে সে পর্দা রক্ষা করতে পারেনি, তার স্বামী বিদেশে ছিলো এবং সে তখন অসহায় ছিলো। সে তার শশুরবাড়িতে সে পর্দা রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে, কোনোভাবেই পারছে না। তার বাসার সকল কাজ তার করা লাগে। (এখানে কাজের প্রেশার হাইলাইট করা উদ্দেশ্য না, তবুও করণীয় জানতে বর্ণনা করছি) তার শাশুড়িও কিছুটা হেল্প করেন। তার শাশুড়ী বুড়ো মানুষ, মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে যান, তার বাচ্চাকেও রাখেন। তবুও ঘরের  কাজ, বাচ্চা সামলানো বান্ধবীকেই করতে হয়। ঘরে কোনো কাজের মহিলা নাই। এখন তার ছেলের বয়স ছয় মাস। ছোট  একটা বাচ্চার কেয়ার করা কম কঠিন না। এসবকিছু করতে করতে সে ক্লান্ত হয়ে যায় আর সময়ও পায়না বললেই চলে। তার নিয়মিত সালাত পড়াটাও এখন কঠিন হয়ে গেছে। এসব ব্যাপারে তার স্বামীকে বললে তার স্বামী সবর করতে বলেন৷ বলেন কঠিন সময় পার হয়ে যাবে।
আমার বান্ধবী জানে, ইসলামে স্ত্রীর উচিত স্বামীর আনুগত্য করা, তাই সে অনেককিছু ছাড় দিয়ে কষ্ট করে এডজাস্ট করার চেষ্টা করছে, সাধ্যমত স্বামীর বাবা মার সেবা করছে। শ্বশুর শ্বাশুড়ির সেবা করতে তার কোনো আপওি নেই। কিন্তু এখন যেখানে তার ফরজ পর্দা রক্ষা হচ্ছে না সেখানে তার কি করা উচিত! তাই সে স্বামীর কাছে চাচ্ছিল পর্দা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা করতে এবং একজন কাজের মহিলা রাখতে যাতে তার একটু সাহায্য হয় কাজে এবং সে যখন বাবার বাড়ি থাকবে তার শ্বাশুড়ির ও কাজে সাহায্য হবে।  শ্বশুর শাশুড়ির সাথে থাকতে তার কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু পর্দা যাতে লঙ্ঘন না হয়। কিন্তু তার স্বামী দেবরের সাথে পর্দা, এসব ব্যপারে বাসায় কথা বলছেন না।  তিনি দেশে আসলে ব্যবস্থা করবেন বলেন,।  তার দেবর ১ বছর পর  বিদেশে চলে যাবেন।  ততদিন পর্দার খেলাফ তো করা যায় না। আর আমার বান্ধবী চাচ্ছে তার যেহেতু স্বামী বিদেশে তাই সে শশুরবাড়ি আর নিজ বাবার বাড়ি সমান সমান থাকতে। অর্থাৎ শশুরবাড়ি ১ মাস এবং বাবার বাড়ি ১ মাস এভাবে থাকতে চাচ্ছে, তার শশুর বাড়ি আর বাবার বাড়ির দূরত্বও বেশি না, কাছাকাছি (যদি শশুরবাড়ি পর্দার ব্যবস্থা কঠোরভাবে করা হয়, আর যদি পর্দার ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে তার জন্য শশুরবাড়ি থাকাটা কি ঠিক হবে? তার   স্বামী আবার বলছেন সে বাবার বাড়ি গিয়ে দুই সাপ্তাহ থাকতে পারবে। আবার, শশুরবাড়ি এডজাস্ট করতে গেলেই পর্দায় বিপত্তি বাঁধে।
আমার বান্ধবী পর্দা, ইবাদাত এবং ঘরের সকল কাজ ও ছোট বাচ্চা নিয়ে এখন সমস্যায় পড়ে গেছে যেহেতু তার স্বামীও দেশে নাই। এই পরিস্থিতিতে কিছু প্রশ্ন-

১. তার জন্য কি আলাদা বাসস্থান জরুরি?  যদি কঠোর ভাবে পর্দার ব্যবস্থা না হয়। যেহেতু দেবর আছে একই বাসায়।

২. এমন অবস্থায় নিজের বাবার বাড়িই কি তার জন্য উত্তম না? স্বামীর দুলাভাইও এখন তার সামনে চলে আসে মাঝে মাঝে।

৩. তার স্বামী কি কোনোকিছুর ব্যবস্থা না করেন তাহলে তার স্বামীর কি গোনাহ হবে না?
৪. তার স্বামীর কথা যদি এক্ষেত্রে সে না শোনে তাহলে কি সে গোনাহগার স্ত্রী হবে? অর্থাৎ পর্দার ব্যবস্থা না করলে সে শশুরবাড়ি না ফিরে তাহলে সে অবাধ্যতার জন্য কি গোনাহগার হবে?

৫. আর সকলকিছুর ব্যবস্থা হলেও সে যদি তার স্বামী দেশে নাই বলে শশুরবাড়ি ১ মাস ও বাবার বাড়ি ১ মাস অবস্থান করার জন্য স্বামীকে অনুরোধ ও জোর করে তাহলে কি গোনাহ হবে?
৬. তার স্বামী নিজ পরিবারের সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না, মনোমালিন্য হয়ে যাবে এসব ভয় পান। তাহলে স্ত্রীর হক রক্ষা করতে গিয়ে এরকম পিছিয়ে থাকা কি ঠিক? এক্ষেত্রে তার স্বামীর কি করণীয়?

৭. তার পর্দা, ইবাদাত ও বাচ্চার দেখভালর জন্য সে নিজের মায়ের কাছে একটু বেশি থাকতে চায়। এটা কি তার জন্য খারাপ?

৮. আমার বান্ধবী এবং তার স্বামী নিজ নিজ জায়গা থেকে এই পরিস্থিতিতে কি পদক্ষেপ নিতে পারেন?
উত্তরগুলো পেলে উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।

1 Answer

0 votes
by (702,270 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
ভাবি-দেবর ও ভাবি-ননদ জামাই এর জন্য প্রচলিত সামাজিকতার নামে বিনা প্রয়োজনে দেখাসাক্ষাৎ করা ও কথাবার্তা বলা কখনো জায়েয হবে না।হ্যা পর্দার আড়াল থেকে খাবার দাবার প্রস্তুত করে পাঠিয়ে দেয়া যাবে।স্ত্রী যদি খাবার ইত্যাদি পর্দার আড়াল থেকে পাঠিয়ে দেয়,তাহলে স্বামীর উপর যে সিলাহ রেহমি ওয়াজিব ছিলো,সেটার আংশিক আদায় হবে।বাকী অর্ধেক সামর্থ্যানুযায়ী স্বামী নিজেই আদায় করবে।

যদি একই ঘরে যৌথভাবে একাধিক ভাই স্ব পরিবারে  বসবাস করেন। পৃথক ঘর করার সামর্থ্য তাদের না থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় জরুরতের ভিত্তিতে ফুকাহায়ে কেরাম কিছু শর্তসাপেক্ষে পর্দা বিধানে কিছুটা শীতিলতা নিয়ে আসেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/2674

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১) প্রশ্নের বিবরণমতে আপনার ঐ বান্ধবীর স্বামীর উপর পর্দা সম্মত পৃথক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী। যেহেতু যৌথ পরিবার এবং বাড়ীতে দেবরও আছেন, এবং ওয়াশরুম একটি, তাই স্বামীর উচিত হয়তো দেবরের জন্য পৃথক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা অথবা স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ী পাঠিয়ে দেয়া, যতদিন না পৃথক ঘরের ব্যবস্থা বা পর্দা সম্মত পরিবেশের ব্যবস্থা হচ্ছে।

(২) এই পরিস্থিতিতে স্ত্রীর জন্য নিজের বাবার বাড়িই উত্তম যদি সেখানে পর্দার যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকে। 

(৩) তার স্বামী কোনোকিছুর ব্যবস্থা না করলে এজন্য স্বামীরই গোনাহ হবে।

(৪) ৎ পর্দার ব্যবস্থা না করলে আপনার বান্ধবী যদি শশুরবাড়ি না ফিরে তাহলে সে অবাধ্যতার গোনাহগার হবে না।

(৫) পর্দা সহ সব কিছুর ব্যবস্থা হওয়ার পর,  স্বামী দেশে নাই অজুহাতে শশুরবাড়ি ১ মাস এবং বাবার বাড়ি ১ মাস অবস্থান করার জন্য স্বামীকে অনুরোধ ও জোর করা কখনো উচিত হবে না। স্বামীর অনুমতি  ব্যতিত স্ত্রী ঘরের বাহিরে গেলে তখন স্ত্রী অবাধ্য হিসেবে

(৬) স্বামীর করণীয় হল, পিছিয়ে না থাকা। পিছিয়ে থেকে স্ত্রীকে বেপর্দায় রাখা গোনাহ।

(৭) তার পর্দা, ইবাদাত ও বাচ্চার দেখভাল, এগুলোর  জন্য নিজের মায়ের কাছে একটু বেশি থাকতে চাওয়া যাবে। তবে কোনো কিছুকে অজুহাত হিসেবে দাড় করিয়ে বাবার বাড়ী ছুটে যাওয়া কখনো উচিত হবে না।

(৮) আপনার বান্ধবী শশুড় শাশুড়ীর প্রতি আন্তরিক হবেন। প্রশ্নের বিবরণমতে বুঝা যাচ্ছে তিনি ততটা আন্তরিক না যতটা হওয়া উচিত।  স্বামীর উচিত, স্ত্রীকে পর্দাতে রাখার যাবতীয় চেষ্টাপ্রচেষ্টা করা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...