আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তায,
আমি আমার বান্ধবীর তরফ থেকে কিছু প্রশ্ন পাঠাচ্ছি। তার পরিস্থিতি কিছুটা বর্ণনা করি, দয়া করে কষ্ট করে পড়বেন উস্তায মিন ফাদ্বলিক।
আমার বান্ধবী ইসলাম মেনে চলার চেষ্টা করে। সে সহশিক্ষা ছেড়ে দিয়েছে এবং বিয়েও করেছে তার দ্বীনের সহযোগিতার জন্যে। সে পর্দাশীলা, বিয়ের দিনেও সে কালো বোরকা পড়েছে। এখন তার বিয়ের প্রায় ১৫ মাস হতে চললো। তার স্বামী দ্বীনদার এবং প্রবাসী। তার বিয়ের পরই সে কনসিভ করে এবং শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভোগে। বিয়ের তিনমাসের মাথায় তার স্বামীও আবার দেশের বাহিরে চলে যান এবং এখনো বাহিরেই আছেন। তার সংসারে শশুর-শাশুড়ি এবং একটা অবিবাহিত দেবর আছে। তার স্বামীর বড় বোন আর দুলাভাইও মাঝে মাঝে আসে। তারা কেউ পর্দার বিষয়ে সতর্ক না, এক্ষেত্রে তার পর্দার সমস্যা হচ্ছে। তাদের বাসায় তিনটা রুম আছে, রান্নাঘর একটা, ডাইনিং একটা, ওয়াশরুমও একটা। অর্থাৎ সবাই একই ওয়াশরুম ইউজ করেন, সকল রুম থেকেই ওয়াশরুমে আসা হয়, তার দেবরের ওয়াশরুমে আসতে গেলে রান্নাঘর পার হয়ে আসতে হয়। বাসায় এই অবস্থায় তার দেবরের সাথে দেখা হয় প্রতিদিন অনেকবার রান্নাঘরে, ডাইনিংয়ে বা ওয়াশরুমের পথে। তাছাড়া সে সারা ঘরের কাজ করে, তখনও পর্দায় সমস্যা হয়। অলটাইম কাজের সময় বোরকা নিকাব পড়ে থাকা বাচ্চাসহ কষ্ট হয়ে যায়। তার সিজারে বাচ্চা হয়েছে, সিজারের সময় তার সারা শরীরে বসন্ত ছিলো, হসপিটালে সে পর্দা রক্ষা করতে পারেনি, তার স্বামী বিদেশে ছিলো এবং সে তখন অসহায় ছিলো। সে তার শশুরবাড়িতে সে পর্দা রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে, কোনোভাবেই পারছে না। তার বাসার সকল কাজ তার করা লাগে। (এখানে কাজের প্রেশার হাইলাইট করা উদ্দেশ্য না, তবুও করণীয় জানতে বর্ণনা করছি) তার শাশুড়িও কিছুটা হেল্প করেন। তার শাশুড়ী বুড়ো মানুষ, মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে যান, তার বাচ্চাকেও রাখেন। তবুও ঘরের কাজ, বাচ্চা সামলানো বান্ধবীকেই করতে হয়। ঘরে কোনো কাজের মহিলা নাই। এখন তার ছেলের বয়স ছয় মাস। ছোট একটা বাচ্চার কেয়ার করা কম কঠিন না। এসবকিছু করতে করতে সে ক্লান্ত হয়ে যায় আর সময়ও পায়না বললেই চলে। তার নিয়মিত সালাত পড়াটাও এখন কঠিন হয়ে গেছে। এসব ব্যাপারে তার স্বামীকে বললে তার স্বামী সবর করতে বলেন৷ বলেন কঠিন সময় পার হয়ে যাবে।
আমার বান্ধবী জানে, ইসলামে স্ত্রীর উচিত স্বামীর আনুগত্য করা, তাই সে অনেককিছু ছাড় দিয়ে কষ্ট করে এডজাস্ট করার চেষ্টা করছে, সাধ্যমত স্বামীর বাবা মার সেবা করছে। শ্বশুর শ্বাশুড়ির সেবা করতে তার কোনো আপওি নেই। কিন্তু এখন যেখানে তার ফরজ পর্দা রক্ষা হচ্ছে না সেখানে তার কি করা উচিত! তাই সে স্বামীর কাছে চাচ্ছিল পর্দা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা করতে এবং একজন কাজের মহিলা রাখতে যাতে তার একটু সাহায্য হয় কাজে এবং সে যখন বাবার বাড়ি থাকবে তার শ্বাশুড়ির ও কাজে সাহায্য হবে। শ্বশুর শাশুড়ির সাথে থাকতে তার কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু পর্দা যাতে লঙ্ঘন না হয়। কিন্তু তার স্বামী দেবরের সাথে পর্দা, এসব ব্যপারে বাসায় কথা বলছেন না। তিনি দেশে আসলে ব্যবস্থা করবেন বলেন,। তার দেবর ১ বছর পর বিদেশে চলে যাবেন। ততদিন পর্দার খেলাফ তো করা যায় না। আর আমার বান্ধবী চাচ্ছে তার যেহেতু স্বামী বিদেশে তাই সে শশুরবাড়ি আর নিজ বাবার বাড়ি সমান সমান থাকতে। অর্থাৎ শশুরবাড়ি ১ মাস এবং বাবার বাড়ি ১ মাস এভাবে থাকতে চাচ্ছে, তার শশুর বাড়ি আর বাবার বাড়ির দূরত্বও বেশি না, কাছাকাছি (যদি শশুরবাড়ি পর্দার ব্যবস্থা কঠোরভাবে করা হয়, আর যদি পর্দার ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে তার জন্য শশুরবাড়ি থাকাটা কি ঠিক হবে? তার স্বামী আবার বলছেন সে বাবার বাড়ি গিয়ে দুই সাপ্তাহ থাকতে পারবে। আবার, শশুরবাড়ি এডজাস্ট করতে গেলেই পর্দায় বিপত্তি বাঁধে।
আমার বান্ধবী পর্দা, ইবাদাত এবং ঘরের সকল কাজ ও ছোট বাচ্চা নিয়ে এখন সমস্যায় পড়ে গেছে যেহেতু তার স্বামীও দেশে নাই। এই পরিস্থিতিতে কিছু প্রশ্ন-
১. তার জন্য কি আলাদা বাসস্থান জরুরি? যদি কঠোর ভাবে পর্দার ব্যবস্থা না হয়। যেহেতু দেবর আছে একই বাসায়।
২. এমন অবস্থায় নিজের বাবার বাড়িই কি তার জন্য উত্তম না? স্বামীর দুলাভাইও এখন তার সামনে চলে আসে মাঝে মাঝে।
৩. তার স্বামী কি কোনোকিছুর ব্যবস্থা না করেন তাহলে তার স্বামীর কি গোনাহ হবে না?
৪. তার স্বামীর কথা যদি এক্ষেত্রে সে না শোনে তাহলে কি সে গোনাহগার স্ত্রী হবে? অর্থাৎ পর্দার ব্যবস্থা না করলে সে শশুরবাড়ি না ফিরে তাহলে সে অবাধ্যতার জন্য কি গোনাহগার হবে?
৫. আর সকলকিছুর ব্যবস্থা হলেও সে যদি তার স্বামী দেশে নাই বলে শশুরবাড়ি ১ মাস ও বাবার বাড়ি ১ মাস অবস্থান করার জন্য স্বামীকে অনুরোধ ও জোর করে তাহলে কি গোনাহ হবে?
৬. তার স্বামী নিজ পরিবারের সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না, মনোমালিন্য হয়ে যাবে এসব ভয় পান। তাহলে স্ত্রীর হক রক্ষা করতে গিয়ে এরকম পিছিয়ে থাকা কি ঠিক? এক্ষেত্রে তার স্বামীর কি করণীয়?
৭. তার পর্দা, ইবাদাত ও বাচ্চার দেখভালর জন্য সে নিজের মায়ের কাছে একটু বেশি থাকতে চায়। এটা কি তার জন্য খারাপ?
৮. আমার বান্ধবী এবং তার স্বামী নিজ নিজ জায়গা থেকে এই পরিস্থিতিতে কি পদক্ষেপ নিতে পারেন?
উত্তরগুলো পেলে উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।