আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
37 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম।
দয়া করা বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে নিবেন।আমার বাবা মা এবং আমার নানার ফ্যামেলি  এক পিরের মুরিদ, আমাকেও ছোট বেলা থেকে সেখানে নিয়ে যায় আমাকেও মুরিদ বানানো হয়, আমিও সেখানে যেতাম পিরকে সেজদা করতাম তাদের সাথে,তারা নিরামিষ ভোজি, নামাজ পরেনা, পিরকে সেজদা করে,সেই পিরের মুরিদ  সব ধর্মের লোকেরা, আমি ২০১৭ সালে সৌদি যাই,  সেখানে যাওয়ার কিছুদিন পরে আমি উমরাহ করি সেখানে গিয়ে উপলব্দি করি আমি  এতদিন শির্কের মধ্যে ছিলাম, আমি তওবা করি,এবং আমার ফ্যামেলি এ বিষয়ে আমার উপর অখুশি আমি কেন পিরের দরবারে যাইনা, এই বিষয়ে আজ ৭-৮ বছর যাবৎ তারা আমাকে প্রেসার দিচ্ছে হুকুম জারি করছে ভিবিন্ন ভাবে ব্লাকমেইল করছে,  আমি আজ দের বছর যাবৎ ব্যাকার দেশে আছি কোনো কাজের ব্যাবস্থা করতে পারছিনা, এই সুযোগে তারা আমাকে বলছে আমি পিরের বিধান মানছিনা পিরকে সেজদা করছিনা তাই আমার এই হালত, তাদের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইলেও তারা আমাকে এইসব কথা বলে যেদিন পিরের কাছে গিয়ে সমাধান করব সেদিন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, এখন হুজুরের কাছে আমি জানতে চাই এই মুহুর্তে  আমি কিভাবে ফ্যামেলি বা আত্নিয়দের সাথে কথা বলব  তাদের শরিয়া বিরধি হুকুম মানা আমার ফরজ না কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ করলেই তারা এরকম প্রেসার ক্রিয়েট করে,পিরের কাছে যেতেই হবে,এক দিনের জন্য হলেও   এখন আমি কিকরবো কিকরা উচিৎ তাদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনব কিভাবে,তাদের বুঝাবো কিভাবে। আমার কি আরো ত্ওবা করতে হবে যেভাবে করেছি সেটা ঠিক আছে কিনা। দয়া করে উত্তরটা জানাবেন।

আমি একজন পুরুষ

1 Answer

0 votes
by (671,280 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَمِنْ آيَاتِهِ ٱلَّيْلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمْسُ وَٱلْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوا۟ لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَٱسْجُدُوا۟ لِلَّهِ ٱلَّذِى خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ

অনুবাদ:
"তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র রয়েছে। তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সেজদা করো না; বরং সেজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো।"
(সূরা ফুসসিলাত, আয়াত ৩৭)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ قَيْسِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: أَتَيْتُ الْحِيرَةَ، فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ، فَقُلْتُ: رَسُولُ اللَّهِ ﷺ أَحَقُّ أَنْ يُسْجَدَ لَهُ، فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ، فَقُلْتُ: إِنِّي أَتَيْتُ الْحِيرَةَ، فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ، فَقُلْتُ: أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَحَقُّ أَنْ نَسْجُدَ لَكَ، قَالَ: «أَرَأَيْتَ لَوْ مَرَرْتُ بِقَبْرِي أَكُنْتَ تَسْجُدُ لَهُ؟»، قُلْتُ: لَا، قَالَ: «فَلَا تَفْعَلُوا، لَوْ كُنْتُ آمُرُ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ، لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ، لِمَا جَعَلَ اللَّهُ لَهُمْ عَلَيْهِنَّ مِنَ الْحَقِّ»

অনুবাদ:
কায়েস ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি হীরায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম তারা তাদের শাসককে সেজদা করছে। আমি মনে মনে বললাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ সেজদার জন্য অনেক বেশি উপযুক্ত। তারপর আমি নবী ﷺ এর কাছে এসে বললাম: আমি হীরায় গিয়েছিলাম, সেখানে দেখেছি তারা তাদের শাসককে সেজদা করছে। তাই মনে হল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনিই সেজদার বেশি উপযুক্ত। তখন নবী ﷺ বললেন: "তুমি যদি আমার কবরের পাশ দিয়ে যাও, তবে কি তাকে সেজদা করতে?" আমি বললাম: না। তিনি বললেন: "তাহলে সেজদা করো না। যদি আমি কাউকে অন্য কারও জন্য সেজদার আদেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকে স্বামীর জন্য সেজদার আদেশ দিতাম, কারণ আল্লাহ তাদের জন্য স্ত্রীদের উপর হক্ব নির্ধারণ করেছেন।"
(সুনান আবু দাউদ (২১৪০), জামি‘ আত-তিরমিযী (১১৫৯)

অর্থাৎ, সেজদা কেবল আল্লাহর জন্যই বৈধ। কবর, পীর বা অন্য কারও জন্য সেজদা করা শির্কের অন্তর্ভুক্ত।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনিই মূলত সঠিক পথে আছেন।

এক্ষেত্রে বাবা-মার আদেশ মান্য করা কোনক্রমেই জায়েজ হবে না।

শরীয়ত বহির্ভূত কোনো আদেশ করলে পিতা মাতা সহ কারো আদেশকে মান্য করা যাবে না।কেননা হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।

ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ

আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)
,
চার মাযহাবের গ্রহণযোগ্য ফেকহী গ্রন্থ 'আল-মা'সুআতুল ফেকহীয়্যায়(২৮/৩২৭)' বর্ণিত রয়েছে,

"طاعة المخلوقين - ممّن تجب طاعتهم – كالوالدين ، والزّوج ، وولاة الأمر : فإنّ وجوب طاعتهم مقيّد بأن لا يكون في معصية ، إذ لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق" انتهى

শরীয়ত কর্তৃক যাদের বিধিনিষেধের অনুসরণ করা ওয়াজিব।যেমনঃ মাতাপিতা,স্বামী,এবং রাষ্ট্রীয় প্রধান বা তাদের আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ।তাদের বিধিনিষেধ আমলে নেয়া তখনই ওয়াজিব যখন তা শরীয়ত বিরোধী হবে না।কেননা 'সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীতে কোনো সৃষ্টজীবের অনুসরণ করা যায় না'(মর্মে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে)

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহঃ লিখেন,

ويلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية وإن كانا فاسقين ، وهو ظاهر إطلاق أحمد ، وهذا فيما فيه منفعة لهما ولا ضرر ، فإن شق عليه ولم يضره : وجب ، وإلا فلا

গোনাহের কাজ ব্যতীত মুবাহ তথা বৈধ কাজে
মাতা পিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।যদি তার ফাসিকও হয়।এটা তখন যখন তাতে মাতাপিতার ফায়দা থাকবে,এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হবে না।যদি সন্তানের উপর কষ্টদায়ক হয় তবে ক্ষতিকারক না হয়, তাহলে তখন মাতাপিতার আদেশ মান্য করা ওয়াজিব নয়।(আল-ফাতাওয়াল কুবরা-৫/৩৮১)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনি পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং নিজ যোগ্যতা বলে চাকরির চেষ্টা করুন। আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করুন আল্লাহ তাআলা আপনার চাকরি ব্যবস্থা করে দিবেন,ইনশাআল্লাহ। 

পাশাপাশি আপাতত প্রাইভেট পড়িয়ে বা অন্য কোনভাবে নিজের জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করুন।

এখন পরিবারের লোকদের যেভাবে বুঝাবেন:

★নরম ভাষায় বলবেন — রাগ বা কটু কথা নয়। কারণ পরিবারকে বুঝাতে গেলে ঝগড়া করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।

★কুরআন-হাদিস থেকে সহজ দালিল দেখান — উপরের আয়াত ও হাদিসগুলো শেয়ার করতে পারেন।

★তাদের ভালোবাসা ও ঈমানের দিক তুলে ধরুন — বলুন: "আপনারা তো আল্লাহকে ভালোবাসেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ কে মানেন। সেজদা শুধু আল্লাহর হক, তাই অন্য কারও সামনে সেজদা করলে সেটা আল্লাহর হক কেড়ে নেয়া হয়।"

★বিকল্প আমল দেখান — যেমন কবর বা পীরের প্রতি সম্মান দেখাতে হলে দোয়া করা, সালাম দেওয়া, কবরবাসীর জন্য মাগফিরাত চাওয়া। এগুলোই সুন্নাহ।

★দুয়া করুন — হেদায়েত আল্লাহর হাতে, তাই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন যেন তারা সঠিক পথ পান।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
edited
তাদেরকে ৭-৮ বছর যাবৎ এভাবেই বুঝিয়ে আসছি কিন্তু তারা আমাকে ছারছেনা, আমি প্রশ্ন করেছি যদি আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা দেয়া  না যায় নবিকেও সেজদা দেয়া না যায় তাহলে পিরকে সেজদা দিব কেনো, এখন তারা জোর করছে পিরের কাছে নিয়ে যাবে পির আমাকে বুঝিয়ে বলবে আমি কোনো ভাবেই পেরে উঠছিনা, এখন তাদের সাথে সম্পর্ক কেমন রাখা উচিৎ  নিজের ঈমান বাচাতে কিকরা উচিৎ,  তাদের  এই কথা না শোনার কারনে তারা যদি আমাকে অভিশাপ দেয় তাহলে সেই অভিশাপ  কি আনার কোন ক্ষতি করবে? 
by (671,280 points)
তাদের দেওয়া অভিশাপ আপনার কোনো ক্ষতি করবেনা। আপনি এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত মনে থাকুন।

তাদের থেকে সাময়িকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা আপনার জন্য বৈধতা রয়েছে।

তবে তারা যদি কোনদিন আবার সঠিক পথে ফিরে আসে, সেক্ষেত্রে তখন আবার তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা রেখে চলবেন।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...