মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَمِنْ آيَاتِهِ ٱلَّيْلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمْسُ وَٱلْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوا۟ لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَٱسْجُدُوا۟ لِلَّهِ ٱلَّذِى خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
অনুবাদ:
"তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র রয়েছে। তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সেজদা করো না; বরং সেজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো।"
(সূরা ফুসসিলাত, আয়াত ৩৭)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
عَنْ قَيْسِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: أَتَيْتُ الْحِيرَةَ، فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ، فَقُلْتُ: رَسُولُ اللَّهِ ﷺ أَحَقُّ أَنْ يُسْجَدَ لَهُ، فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ، فَقُلْتُ: إِنِّي أَتَيْتُ الْحِيرَةَ، فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ، فَقُلْتُ: أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَحَقُّ أَنْ نَسْجُدَ لَكَ، قَالَ: «أَرَأَيْتَ لَوْ مَرَرْتُ بِقَبْرِي أَكُنْتَ تَسْجُدُ لَهُ؟»، قُلْتُ: لَا، قَالَ: «فَلَا تَفْعَلُوا، لَوْ كُنْتُ آمُرُ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ، لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ، لِمَا جَعَلَ اللَّهُ لَهُمْ عَلَيْهِنَّ مِنَ الْحَقِّ»
অনুবাদ:
কায়েস ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি হীরায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম তারা তাদের শাসককে সেজদা করছে। আমি মনে মনে বললাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ সেজদার জন্য অনেক বেশি উপযুক্ত। তারপর আমি নবী ﷺ এর কাছে এসে বললাম: আমি হীরায় গিয়েছিলাম, সেখানে দেখেছি তারা তাদের শাসককে সেজদা করছে। তাই মনে হল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনিই সেজদার বেশি উপযুক্ত। তখন নবী ﷺ বললেন: "তুমি যদি আমার কবরের পাশ দিয়ে যাও, তবে কি তাকে সেজদা করতে?" আমি বললাম: না। তিনি বললেন: "তাহলে সেজদা করো না। যদি আমি কাউকে অন্য কারও জন্য সেজদার আদেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকে স্বামীর জন্য সেজদার আদেশ দিতাম, কারণ আল্লাহ তাদের জন্য স্ত্রীদের উপর হক্ব নির্ধারণ করেছেন।"
(সুনান আবু দাউদ (২১৪০), জামি‘ আত-তিরমিযী (১১৫৯)
অর্থাৎ, সেজদা কেবল আল্লাহর জন্যই বৈধ। কবর, পীর বা অন্য কারও জন্য সেজদা করা শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনিই মূলত সঠিক পথে আছেন।
এক্ষেত্রে বাবা-মার আদেশ মান্য করা কোনক্রমেই জায়েজ হবে না।
শরীয়ত বহির্ভূত কোনো আদেশ করলে পিতা মাতা সহ কারো আদেশকে মান্য করা যাবে না।কেননা হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।
ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ
আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)
,
চার মাযহাবের গ্রহণযোগ্য ফেকহী গ্রন্থ 'আল-মা'সুআতুল ফেকহীয়্যায়(২৮/৩২৭)' বর্ণিত রয়েছে,
"طاعة المخلوقين - ممّن تجب طاعتهم – كالوالدين ، والزّوج ، وولاة الأمر : فإنّ وجوب طاعتهم مقيّد بأن لا يكون في معصية ، إذ لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق" انتهى
শরীয়ত কর্তৃক যাদের বিধিনিষেধের অনুসরণ করা ওয়াজিব।যেমনঃ মাতাপিতা,স্বামী,এবং রাষ্ট্রীয় প্রধান বা তাদের আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ।তাদের বিধিনিষেধ আমলে নেয়া তখনই ওয়াজিব যখন তা শরীয়ত বিরোধী হবে না।কেননা 'সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীতে কোনো সৃষ্টজীবের অনুসরণ করা যায় না'(মর্মে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে)
ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহঃ লিখেন,
ويلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية وإن كانا فاسقين ، وهو ظاهر إطلاق أحمد ، وهذا فيما فيه منفعة لهما ولا ضرر ، فإن شق عليه ولم يضره : وجب ، وإلا فلا
গোনাহের কাজ ব্যতীত মুবাহ তথা বৈধ কাজে
মাতা পিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।যদি তার ফাসিকও হয়।এটা তখন যখন তাতে মাতাপিতার ফায়দা থাকবে,এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হবে না।যদি সন্তানের উপর কষ্টদায়ক হয় তবে ক্ষতিকারক না হয়, তাহলে তখন মাতাপিতার আদেশ মান্য করা ওয়াজিব নয়।(আল-ফাতাওয়াল কুবরা-৫/৩৮১)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনি পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং নিজ যোগ্যতা বলে চাকরির চেষ্টা করুন। আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করুন আল্লাহ তাআলা আপনার চাকরি ব্যবস্থা করে দিবেন,ইনশাআল্লাহ।
পাশাপাশি আপাতত প্রাইভেট পড়িয়ে বা অন্য কোনভাবে নিজের জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করুন।
এখন পরিবারের লোকদের যেভাবে বুঝাবেন:
★নরম ভাষায় বলবেন — রাগ বা কটু কথা নয়। কারণ পরিবারকে বুঝাতে গেলে ঝগড়া করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
★কুরআন-হাদিস থেকে সহজ দালিল দেখান — উপরের আয়াত ও হাদিসগুলো শেয়ার করতে পারেন।
★তাদের ভালোবাসা ও ঈমানের দিক তুলে ধরুন — বলুন: "আপনারা তো আল্লাহকে ভালোবাসেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ কে মানেন। সেজদা শুধু আল্লাহর হক, তাই অন্য কারও সামনে সেজদা করলে সেটা আল্লাহর হক কেড়ে নেয়া হয়।"
★বিকল্প আমল দেখান — যেমন কবর বা পীরের প্রতি সম্মান দেখাতে হলে দোয়া করা, সালাম দেওয়া, কবরবাসীর জন্য মাগফিরাত চাওয়া। এগুলোই সুন্নাহ।
★দুয়া করুন — হেদায়েত আল্লাহর হাতে, তাই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন যেন তারা সঠিক পথ পান।