আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
19 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (13 points)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্। 

১। বাসা থেকে ৫ মিনিটের দূরত্বে একটা বাসায় তালিম হয়,,সেক্ষেত্রে কি মাহরাম ছাড়া তালিমে যাওয়া যাবে?মাহরাম ফ্রি থাকলে তিনি রেখে আসবেন?

তিনি বাহিরে থাকলে কি কোনো মহিলার সাথে বা একা তালিমে যাওয়া যাবে?

কোনটা জায়েজ,উত্তম হবে উস্তায জানালে মুনাসিব হবে ইন শা আল্লাহ। 

২। বাসা থেকে ৫ মিনিটের দূরত্বে কওমি মহিলা মাদ্রাসায় খেদমত করা যাবে?

উস্তায আমি ভার্সিটি থেকে অনার্স কমপ্লিট করেছি। দ্বীনি বুঝ আসায় সহশিক্ষা ছেড়ে দিয়েছি।  আমি পরিপূর্ন পর্দা করার চেষ্টা করি আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমার  স্বামী আমার মাহরাম।  উনার অফিস থাকে, সারাদিন দেখা যায় আমাকে বাসায় একা থাকতে হয়। সময় অনেক নষ্ট হয়ে যায়। অলসতা কাজ করে বেশি। আমি আমার সময় টাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছিলাম। পাশেই একটা মহিলা মাদ্রাসায় জেনারেল শিক্ষীকা হিসেবে খেদমতে থাকতে  চাচ্ছিলাম। 

এটা কি আমার জন্য জায়েজ হবে? উত্তম হবে?

মাহরাম ছাড়া যাতায়াত করতে হবে।

এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি উস্তাদ। 

৩। হারাম ইনকাম করে এমন এক আত্মীয় জামা দিয়েছিলো,এখন এই জামা কোন ধরনের মানুষকে দিয়ে দেয়া যাবে?

জামা কাপড় কিনতে পারে,কিন্তু এতো দামী জামা কিনতে পারে না,এমন মানুষকে কি দেয়া যাবে?

৪। হানাফি মাজহাব অনুসরণ করে,এমন মেয়ে কি সুন্নিদেরকে বিয়ে করতে পারবে? বিয়ে করতে পারলেও ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হওয়ার আশংকা থাকে কি?

৫। একজন পরিপূর্ণ পর্দা মেনে চলতে চায়,দেখা যায় পরিবারের চাপে পরে নন মাহরাম আত্মীয়দের সাথে পর্দা করে সামনে যায়,সালাম দেয়,কেমন আছে এতটুক কথা বার্তা বলে,,এটা কি জায়েজ হবে? অনুত্তমের পর্যায়ে পরে কি?

আবার দেখা যায় তাকে উপায় না পেয়ে দুই একদিন বাজারেও যেতে হয়।

সে একদম পরিপূর্ণ পর্দায় থাকতে যায়,,তার এখন করণীয় কি?

 ৬। মেয়েদের কি অযু করার সময় নাক ফুটা করা থাকলে সেখানেও পানি পৌছাতে হয়?

নাকফুল পরা না থাকলে কিভাবে পানি প্রবেশ করাতে হবে?

1 Answer

0 votes
ago by (658,410 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

প্রয়োজন, অপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا
‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‘তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭)

হযরত উম্মে  হুমাইদ আস সাআদী রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাই। নবী করীম ﷺ উত্তরে বললেন,

 قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلاةَ مَعِي وَصَلاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ وَصَلاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلاتِكِ فِي دَارِكِ وَصَلاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ وَصَلاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي مَسْجِدِي قَالَ فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِي أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ فَكَانَتْ تُصَلِّي فِيهِ حَتَّى لَقِيَتْ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ

‘আমি ভালো করেই জানি, তুমি আমার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাও। কিন্তু তোমার জন্য তোমার রুমে নামাজ আদায় করা অন্য রুমে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার ঘরের কোনো রুমে আদায় করা বাড়িতে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার  বাড়িতে নামাজ আদায় করা কওমের (এলাকার ) মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার কওমের (এলাকার ) মসজিদে নামাজ আদায় করা আমার পিছনে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এরপর ঐ মহিলা তার অন্ধকার কুঠরিতে নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে নেয়। এবং মৃত্যু পর্যমত সেখানেই নামাজ আদায় করতে থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ ৩৭/৪৫)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
এক্ষেত্রে মাহরাম পুরুষের সাথে সেখানে যাওয়া সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি।

বাসায় মাহরাম পুরুষ না থাকলে এমতাবস্থায় রাস্তা যদি নিরাপদ হয়, এলাকার যদি ফিতনা মুক্ত হয়, এভাবে সেখানে তালিম এ যাওয়াতে যদি বিন্দুমাত্র কোন ফিতনার সম্ভাবনা না থাকে, সেক্ষেত্রে চেহারা সহ সারা শরীর ঢেকে পূর্ণ পর্দা করে হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করে  আপনি  মাহরাম পুরুষ ছাড়া সেখানে তালিমে যেতে পারবেন। 

তবে এক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে একাকী না যেয়ে আর একজন নারীর সাথে সেখানে যাওয়া।

(০২)
স্বামী থেকে অনুমতি নিয়ে আপনি সেখানে খেদমত করতে পারবেন।

তবে শর্ত হল ফেতনার বিন্দুমাত্র আশঙ্কা না থাকা।

(০৩)
যে ব্যাক্তি যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত অর্থাৎ এমন দরিদ্র যার নিকট নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, তাকে আপনি উক্ত জামা ছওয়াবের নিয়ত ছাড়া দিতে পারবেন।

(০৪)
উক্ত বিবাহ জায়েজ, এতে শরীয়তের পক্ষ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

তবে এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি রয়েছে।

স্বামী যদি বিদ‘আতের কাজ করে, স্ত্রীকে তাতে টেনে নেয়ার চেষ্টা করবে।

সন্তানদের আকীদাহ নষ্ট হওয়ার আশংকা প্রবল।

দ্বীনি পরিবেশে বিরাট দ্বন্দ্ব তৈরি হবে।

★এক্ষেত্রে হানাফি মাজহাব অনুযায়ী বিয়ে সহীহ হবে, যদি সে মেয়ে একজন বিদ‘আতি মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে।

কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে এধরনের বিয়ে করা অত্যন্ত অনুচিত, কারণ দ্বীনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।

সঠিক আকীদাহ (আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, বিদ‘আত থেকে মুক্ত) কারো সাথে বিয়ে করা সবচেয়ে নিরাপদ ও উত্তম।

(০৫)
নন মাহরাম কাহারী সাথে বিনা প্রয়োজনে এভাবে কথা বলা জায়েজ নেই।

এতে আপনার গুনাহ হবে।

প্রয়োজনে কথা বলতে হলে পরিপূর্ণভাবে পর্দার আড়াল থেকে কথা বলবেন, চেষ্টা করবেন মুখের উপর হাত রেখে কথা বলতে যাতে কন্ঠ বিকৃত হয়ে যায়,অপ্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েজ নেই। সালাম দেয়া জায়েজ নেই।
সে সালাম দিয়ে আপনি জবাব দিবেননা।
জবাব দিলে মনে মনে জবাব দিতে পারেন,মুখে নয়।

(০৬)
হ্যাঁ সেখানেও পানি পৌঁছাতে হবে।

এক্ষেত্রে নাকফুল পড়া না থাকলে হাতের আঙ্গুল দিয়ে যতটুকু সম্ভব পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। অন্য কিছুর সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

وَجَبَ تَحْرِيكُ الْقُرْطِ وَالْخَاتَمِ الضَّيِّقَيْنِ وَلَوْ لَمْ يَكُنْ قُرْطٌ فَدَخَلَ الْمَاءُ الثَّقْبَ عِنْدَ مُرُورِهِ أَجْزَأَهُ وَإِلَّا أَدْخَلَهُ وَلَا يَتَكَلَّفُ فِي إدْخَالِ شَيْءٍ سِوَى الْمَاءِ مِنْ خَشَبٍ وَنَحْوِهِ. كَذَا فِي الْبَحْرِ الرَّائِقِ.

সরু কানের দুল এবং আংটি নড়াচড়া করা বাধ্যতামূলক। যদি কানের দুল না থাকে এবং ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ করে, তাহলে তার জন্য যথেষ্ট। অন্যথায়, তার সেখানে পানি পৌছানো উচিত। 

তবে পানি ছাড়া অন্য কিছু, যেমন কাঠ বা অনুরূপ জিনিস প্রবেশের চেষ্টা করা উচিত নয়।

(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১৪) (রদ্দুল মুহতার-১/২৮৯, জাদীদ ফেকহি মাসাঈল-৮৯, জাদীদ মাসাঈল-৯৭)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...