আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
55 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (24 points)
reshown by
আসসালামু আলাইকুম হযরতজি।

আমার স্ত্রী একজন হাফেজা। বিয়ের বয়স দুই বছর। আমি চাকুরীর সুবাদে দূরে থাকি। বাড়িতে মধ্যবয়স্ক  মা থাকেন।বাবা নেই। বড় বোন চাকরির সুবাদেও এখানেই থাকে। পরিবারে এই তিনজন সদস্য। আমার স্ত্রী হেফজ শেষ করার পরে তাকে বিবাহ করি। তার ইয়াদ তেমন ভালো না। আমি জেনারেল শিক্ষিত। তাই নিজের এবং নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য  তাকে বিবাহ করি। তবে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার জন্য সাংসারিক কাজে সে যথেষ্ট দুর্বল। মাদ্রাসার অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেছে। আমার স্ত্রী সাংসারিক কাজকর্ম করে পড়াশোনার খুব কম সময় পায়। তার ইয়াদ আরো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির জন্য তাকে অতিরিক্ত করে মাদ্রাসায় পড়ানোর  জন্য সুযোগ নেই। কিন্তু সে মাদ্রাসায় পড়া এবং সেখানে চাকরি করতে চায়। যেটা আমার বাড়িতে থেকে করার সুযোগ নেই। সে সে ইয়াদ মনে রাখার জন্য  মাদ্রাসায় পড়তে যাওয়া নিয়ে সাংসারিককাজ ত্যাগ করতে চায়।আমি তাকে চেষ্টা করতে বললেও সে বলে এভাবে হবে না। আমি বলি দিনে যতটুকু পারো চেষ্টা করো, কিন্তু কাজকর্মের পরে ক্লান্ত এর জন্য পারে না।এ নিয়ে একটা মনমালিন্য চলছে।এজন্য আমি তাকে রুটিন করে দিয়েছি। কিন্তু দুইদিন করার পরে আর খোঁজ নেই।বলে এভাবে মনে থাকে না। নামাজে পড়তে বলি তাও হয় না।

আমি তাকে বলেছি তুমি চেষ্টা করো আল্লাহ তোমার চেষ্টা দেখবে। কিন্তু তাকে বুঝাতে আমি ব্যর্থ। সংসার তার কাছে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এটাকে সে এখন দায়ী করতেছে। আমার সকল আদেশ-নিষেধের প্রতি তার বিশ্বাস উঠে গেছে। ভবিষ্যতে হয়তো তাকে নিয়ন্ত্রণ করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।
এই মুহূর্তে কি করতে পারি?
জাযাকাল্লাহ খায়ের

1 Answer

0 votes
by (665,220 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

স্ত্রী তার স্বামীর আনুগত্য করবে যদি সে হারাম এবং সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজের আদেশ না করে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «الْمَرْأَةُ إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ أَىِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ»

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করে, রমাযানের সিয়াম পালন করে, গুপ্তাঙ্গের হিফাযাত করে, স্বামীর একান্ত অনুগত হয়। তার জন্য জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশের সুযোগ থাকবে।
(মিশকাত ৩২৫৪.হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/৩০৮।)

أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ ابْنِ عَجْلَانَ عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلَا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ 

কুতায়বা (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন মহিলা উত্তম? তিনি বললেনঃ যে মহিলার প্রতি দৃষ্টিপাত স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। সে আদেশ করলে তা সম্পন্ন করে, এবং তার বাড়ীর ও তার মালের ব্যাপারে যা অপছন্দ করে, সে তার বিরোধিতা করে।
(সুনানে নাসায়ী ৩২৩৪.মিশকাত ৩২৭২, সহীহাহ ১৮৩৮।)

আরো জানুনঃ 

عَنْ مُعَاذٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ»

হযরত মুয়াজ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যদি আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অন্য কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে আমি স্ত্রীদের আদেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সেজদা দিতে। [কিন্তু সেজদা আল্লাহ ছাড়া কাউকে দেয়া জায়েজ নয়, তাই এ আদেশ দেয়া হয়নি’।
হাদীসটি যেসব কিতাবে বর্ণিত
মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৮৭৮৫,
সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৫০৪,
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৪০,
মুসনাদুল হারেস, হাদীস নং-৪৯৮,
মাশকিলুল্ আসার, হাদীস নং-১৪৮৭,
মুজামে কাবীর, হাদীস নং-৪৮৬,
মুসতাদরাক আলাস সাহিহাইন, হাদীস নং-২৭৬৩,
সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৪৭০৫।

আরো জানুনঃ 

★যে সমস্ত বিষয় স্বামীর জন্য ফায়দাদায়ক এবং স্ত্রীর জন্য ক্ষতিকর নয়,সে সমস্ত বিষয়ে স্বামীর আদেশ অনুসরণ স্ত্রীর উপর ওয়াজিব।যদি স্বামীর জন্য ফায়দাদায়ক না হয় বা স্ত্রীর জন্য ক্ষতিকর হয়,সে সমস্ত বিষয়ে স্বামীর আদেশ নিষেধের অনুসরণ ওয়াজিব নয়। 

চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ 'আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়' রয়েছে,

 " ﻃﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﻴﻦ - ﻣﻤّﻦ ﺗﺠﺐ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ – ﻛﺎﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ، ﻭﺍﻟﺰّﻭﺝ ، ﻭﻭﻻﺓ ﺍﻷﻣﺮ : ﻓﺈﻥّ ﻭﺟﻮﺏ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ ﻣﻘﻴّﺪ ﺑﺄﻥ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ، ﺇﺫ ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻟﻤﺨﻠﻮﻕ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﺨﺎﻟﻖ " ﺍﻧﺘﻬﻰ  

যাদের আদেশ-নিষেধ এর অনুসরণ শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব।যেমন-মাতাপিতা,স্বামী,সরকারী বিধিনিষেধ,এর অনুসরণ ওয়াজিব। এ হুকুম ব্যাপক হারে প্রযোজ্য হবে না বরং ঐ সময়-ই প্রযোজ্য হবে যখন তা গুনাহের কাজ হবে না। কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(২৮/৩২৭) 

আরো জানুনঃ- 

স্বামীর আদেশকে মান্য করা মূলত তিনটি মূলনীতির আলোকে হয়ে থাকে।

(১) তাদের আদেশ কোনো মুবাহ বিষয়ে হতে হবে।কোনো ওয়াজিব তরকের ব্যাপারে হতে পারবে না।এবং কোন হারাম কাজের জড়িত হওয়ার জন্যও হতে পারবে না।

(২)যে কাজের আদেশ তারা দিবেন,এতে তাদের ফায়দা থাকতে হবে,বা শরীয়তের পছন্দসই কাজ হতে হবে।

(৩)যে কাজের আদেশ দিচ্ছেন,তা তার স্ত্রীর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারবে না।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার স্ত্রীর জন্য সংসার করাটা বেশি জরুরী, এক্ষেত্রে আপনার আদেশ অমান্য করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তার জন্য জায়েজ নেই।

এমতাবস্থায় আপনি যেটা তাকে বুঝিয়েছেন, ওইটাই তাকে বুঝাবেন। তাহা হলো সংসারের কাজ করে সে যতটুকু সময় সুযোগ পাবে, ততটুকু সময় সে বাসাতেই কোরআন শরীফ ইয়াদ করার দিকে মনোযোগী হবে

তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো সংসারের যেসব কাজ তার উপর জরুরী নয়, সেসব কাজ তারপর যেনো চাপিয়ে দেওয়া না হয়  এ বিষয়টি আপনি লক্ষ্য রাখবেন।

যেমন আপনার বড় বোনের রান্না বান্না তার কোন খেদমত আপনার স্ত্রীর উপর আবশ্যক নয়, আপনার স্ত্রীর উপর আপনার মায়ের খেদমত আবশ্যক নয়।

সুতরাং এসব বিষয় নিয়ে চাপ সৃষ্টির সুযোগ নেই। হ্যাঁ যদি সে নিজ হতেই কাজ করতে চায়,তাহা ভিন্ম কথা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...