ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/7278/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
গায়ে হলুদ সম্বন্ধে সংসদ বাংলা অভিধান বলছে, গায়ে-হলুদ, বিবাহের অব্যবহিত পূর্বে পাত্রপাত্রীকে হলুদ মাখাইয়া স্নান করানো হিন্দু সংস্কার বিশেষ। পৃ. ১৬৯।
عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ:: ” الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ব্যক্তি [কিয়ামতের দিন] তার সাতে থাকবে যাকে সে মোহাব্বত করে। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-৬১৬৮, ৫৮১৬}
,
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১}
সুতরাং প্রশ্ন উল্লেখিত গায়ে হলুদ করা জায়েজ নেই।
,
কেউ কেউ প্রথম সারীর সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর হলুদ বর্ণ সংশ্লিষ্ট ঘটনা দ্বারা প্রচলিত গায়ে হলুদ প্রথাকে বৈধ বলতে চেষ্টা করেন।
আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর ঘটনাটি নিম্নরূপ :
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর সাক্ষাৎ হলো। তখন তাঁর দেহে হলুদ সুগন্ধির চিহ্ন ছিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি ব্যাপার আব্দুর রহমান ! তখন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. বললেন, আল্লাহর রাসূল ! আমি এক আনসারী নারীকে বিবাহ করেছি। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৯৩৭)
,
উপরোক্ত ঘটনার আলোকে প্রচলিত গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানকে বৈধতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রচলিত গায়ে হলুদ প্রথার সাথে উক্ত ঘটনার সামান্যতম সম্পর্ক নেই। কারণ,
১। সাহাবীর গায়ে লেগে থাকা দ্রব্যটি ছিলো মূলত সুগন্ধি দ্রব্য, যেটা জাফরান বা জাফরান ও অন্যান্য দ্রব্যের সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হতো।
২। হাদীসে যে হলুদ বর্ণের উল্লখ রয়েছে তা ছিলো মূলত এ জাফরান ও অন্যান্য সুগন্ধি দ্রব্যের চিহ্ন।
৩। হলুদ সুগন্ধির ব্যবহারটা ছিলো বাসর রাতকেন্দ্রিক।
৪। জাফরান সংশ্লিষ্ট এ সুগন্ধি আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. নিজে ব্যবহার করেন নি। বরং সেটা তাঁর স্ত্রীর ব্যবহার করা রং থেকে তাঁর দেহে বা পোষাকে লেগেছিলো। কারণ হাদিসে পুরুষের জন্য জাফরান রং ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সহীহ মুসলিম, হাদিস ২১১০।
,
প্রথম সারির একজন সাহাবী নববী নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবেন তা কল্পনাও করা যায় না। ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহ.ও এ বক্তবটি উল্লেখ করেছেন। উমদাতুল কারী ১৭/২৩৮
৫। হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ দীর্ঘস্থায়ী বিবাহিত জীবন, বংশবিস্তার, নবদম্পতির সুখ-শান্তি কামনা এবং অপশক্তির প্রভাব দূর করতে ধর্মীয় আবশ্যকীয় রীতি হিসেবে এ গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। যা স্পষ্ট শিরক।
৬। বস্তুত হিন্দুধর্মালম্বী ও আদিবাসী উপজাতীদের থেকেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের উৎপত্তি হয়েছে। সেখান থেকে মুসলিম সমাজে এর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মুসলিম সংস্কৃতিতে গায়ে হলুদের অবস্থান কোনো কালেই ছিলো না।
সুতরাং গায়ে হলুদ কোনো ভাবেই জায়েজ নয়।
,
http://ifatwa.info/116463/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
বর বা নববধূকে শরীরে হলুদ মাখার কথা হাদীসে পাওয়া যায়, যেমন হযরত জাবের রাযি. এর কাপড়ে হলুদের দাগ দেখে রাসূলুল্লাহ সা. জিজ্ঞেস করলেন, হে জাবের! তুমি কি বিয়ে করেছ!
এ হলুদ মাখা ছিল, নিতান্তই নিজস্ব ব্যাপার বা নিজে নিজে মাখা। কিন্তু আমাদের সমাজে যে গায়ে হলুদ হয়, সেটা সম্পূর্ণ বিজাতীয় হিন্দুওয়ানি সংস্কৃতি। সুতরাং গান-বাজনা ছাড়া হলেও এমন অনুষ্ঠানের কোনো বৈধতা নাই। এটা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। হাদীস শরীফে এসেছে,
ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ،
অনুবাদ: যদি কেউ আমাদের মধ্যে কোনো (ধর্মীয়) নতুন জিনিষ সৃষ্টি করে তাহলে সে আমাদের মধ্য থেকে নয়।
,
ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. উক্ত হাদিসের ব্যখ্যা করে বলেন,
ﻓﻜﺬﻟﻚ ﻛﻞ ﻋﻤﻞ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ، ﻓﻬﻮ ﻣﺮﺩﻭﺩ ﻋﻠﻰ ﻋﺎﻣﻠﻪ ،
প্রত্যেক ঐ আমল যা আল্লাহএবং রাসুলুল্লাহ সা. এর পদ্ধতি সমর্থিত নয়, তা বর্জিত ও পরিত্যাজ্য। (জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম-১৭৬)
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/6154