আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
720 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (67 points)
১. মেডিকেল টেস্টের জন্য প্যাথলজি থেকে প্রতি মেডিকেল টেস্ট বাবদ ডাক্তারদের যে কমিশন দেয় তা কি ডাক্তারদের গ্ৰহণ করা জায়েয?

২. যদি ১ নং ক্ষেত্রে উত্তর না-জায়েজ হয় তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে-

আমার পরিচিত কোন ডাক্তার যদি আমার কাছ থেকে কোন কনসালটেন্সি ফি না নেয় কিন্তু আমি তাকে কিছু হাদিয়া দিতে ইচ্ছুক। উনি আমাকে মেডিকেল টেস্ট করতে দিয়েছেন। টেস্টের রেফারেন্স হিসেবে উনার নাম দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি। আমি কি টেস্টের রেফারেনসে উনার নাম দিতে পারবো? আমার নিয়ত হবে যে আমি উনাকে কনসালটেন্সি ফি দিচ্ছি।

1 Answer

0 votes
by (714,120 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
এই প্রশ্নের উত্তরের শুরুতেই জেনে নিই, ফিকহের কিছু মূলনীতি ও ফিকহী দৃষ্টিতে ডাক্তার ও রোগীর সম্পর্ক।
প্রথমেই দু-একটি আয়াত ও হাদীসের অর্থ জেনে নিলে মূল উত্তর বুঝতে সুবিধা হবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ- 
ﻭَﻳُﺤِﻞُّ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕِ ﻭَﻳُﺤَﺮِّﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺂﺋِﺚ
আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম ঘোষনা করেন। 
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ- 
ﻭَﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﻭَﺗُﺪْﻟُﻮﺍْ ﺑِﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺤُﻜَّﺎﻡِ ﻟِﺘَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﻓَﺮِﻳﻘًﺎ ﻣِّﻦْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻝِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻹِﺛْﻢِ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ- 
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।
নবীজী সাঃ বলেনঃ- 
ﻣﻦ ﻏﺸﻨﺎ ﻓﻠﻴﺲ ﻣﻨﺎ 
"যে ব্যক্তি ধোকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়"সহীহ মুসলিম-১০১। 

মূলত ডাক্তার ও রোগীর সম্পর্ক আকদুল ইজারা চুক্তির অর্ন্তভুক্ত।
কোন রোগী ডাক্তারের কাছে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ব্যবস্থা পত্র আনতে গেলে ইসলামি ফিকহের পরিভাষায় রোগিকে বলা হবে মুস্তাজির -নিয়োগকর্তা বা অর্থ দাতা)। আর ডাক্তারকে বলা হবে আজির বা কর্মের বিনিময়ে অর্থ গ্রহীতা।
এক্ষেত্রে ইসলাম বলবে রোগির দায়িত্ব হল ডাক্তারকে তার অবস্থা জানানো এবং নির্ধারিত ভিজিট প্রদান করা। পক্ষান্তরে ডাক্তারের দায়িত্ব হলো রোগীর জন্য প্রযোজ্য চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রযুক্তি যোগ হওয়ার পর এখন চিকিৎসকগণ রোগীর ব্যধি নিরুপণের জন্য বিভিন্ন মেশিনারি ও কম্পিউটারাইজড পরীক্ষা-নিরিক্ষার সাহায্য নিয়ে থাকেন।এরকম পরীক্ষা কেন্দ্র তথা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন।
উপরের বিশ্লেষণ থেকে বুঝা গেলো, মেডিকেল টেস্ট গুলো ডাক্তারগণ করিয়ে থাকেন তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব  (রোগ নিরুপণ করে সঠিক ব্যবস্থাপত্র দেওয়া) যথাযথভাবে আদায়ের সুবিধার্থে। তদ্রুপ কোন ল্যাবে পরীক্ষা করালে ভালো হবে, তা বলে দেওয়াও ডাক্তারের দায়িত্ব।
এবার মূল জবাবে আসি, তিনটি ধাপে উপরোক্ত বিশ্লেষণের পর এবার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বিভিন্ন মেডিকেল টেস্ট এর চার্জে রোগী প্রেরণকারী ডাক্তারের কমিশন গ্রহণের সুযোগ নেই।কারণ, এক্ষেত্রে কমিশন গ্রহণের অর্থ হলো, ডাক্তার সাহেব নিজ দায়িত্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য অন্যর কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন। যাকে সাধারণ বিবেচনায় ঘুষ বলেই ধরে নেওয়া হয়। যহডকাকিতদহপজব্কতামরেসুতরাং এক্ষেত্রে গ্রহণকৃত অর্থ রিশওয়াহ বা ঘুষের মধ্যেই পড়ে যায়। (সূত্র:ইমদাদুল ফাতাওয়া৩/৪১০,ফাতাওয়া রশিদিয়া-৫৫৮,বাস্তব জীবনে হারামের অনুপ্রবেশ-আল্লামা তাকি উসমানি দাঃবাঃ লিখিত)

সহসাই মনের কোনে প্রশ্ন জেগে উঠতে পারে যে, ডাক্তার সাহেব তো কমিশন নিচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। রোগী থেকে নয়। তিনি উভয়ের মধ্যে মিডিয়া হিসেবে কাজ করছেন। এটি তার মধ্যস্থতার পারিশ্রমিক।আর মধ্যস্থতার পারিশ্রমিক তো বৈধ।

এমন প্রশ্নের প্রতিউত্তরে বলা হবে,
ক. ডাক্তার রোগী কে কোন সেন্টারে প্রেরণ করবেন তা কমিশন নিয়ে নয়, বরং তার সর্বোচ্চ বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে নির্বাচন করবেন। এক্ষেত্রে কমিশন লাভের ভিত্তিতে সেন্টার নির্বাচন তার পেশা ও দায়িত্বের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে না। 
খ. আর একথা কি সত্য যে, ডাক্তারগণ রোগীর নিকট হতে টাকা গ্রহণ করেন না? যদিও সরাসরি রোগীর থেকে টাকা নেওয়া হয় না, কিন্তু ল্যাব থেকে নেওয়া হয়। প্রকারান্তরে টাকা গুলো ভোক্তা তথা রোগীরই।

সারকথা, যেসকল কারণে এ কমিশন প্রথা শরীয়তের দৃষ্টিতে বর্জনীয় তা নিম্নরূপঃ
ক.  ডাক্তার তার উপর অর্পিত দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত এমন অনিবার্য কাজের জন্য অতিরিক্ত ফি নিচ্ছেন,এটি ঘুষ।   
খ.  কমিশন ভাগাভাগির কারণে এদেশের অসহায় গরীব রোগীদের প্রায় দ্বিগুণ অর্থ গুনতে হচ্ছে।
গ.  চড়া কমিশন প্রদান করে রোগী পেয়ে যাওয়ার সুবাদে অনেক নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো গজিয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত।পক্ষান্তরে যদি এই কমিশন প্রথা উঠে যায়, তাহলে সেন্টারগুলোর মধ্যে উন্নত সেবা প্রদাণের এক প্রকার প্রতিযোগিতা তৈরী হবে।তখন সাধারণ মানুষ আরো ভালো সেবা পাবে। এমনকি এক্ষেত্রে চূড়ান্ত রূপে লাভবান হবেন ডাক্তারগণ। কেননা তখন স্বল্প খরচে কারণে অনেক বেশী রোগী পাবেন।
ঘ.  উক্ত কমিশন গ্রহণের কারণে ডাক্তার স্বাধীনভাবে সেন্টার নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত হন।
তাই,
-এই কমিশন নেয়া যাবে না, এটি ঘুষের পর্যায়ভুক্ত।
 -রোগীকে টেস্ট করতে দেয়ার সময় full discount লিখে দিতে হবে, 
 -ল্যাবকে বলে রাখতে হবে যাতে কমিশন বাবদ রোগি থেকে টাকা না রাখে।
 -ল্যাব তারপরও নিজ থেকে কমিশন পাঠিয়ে দিলে, যেই রোগির টাকা তা তাকে ফেরত দিতে হবে। কোন কারণে সেটা সম্ভব না হলে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া মূল মালিকের পক্ষ থেকে সদকাহ করে দিতে হবে (যাকাতের টাকা যাদেরকে দেয়া যায়, তাদেরকে এই টাকা দেয়া যাবে)।সূত্রঃ (বাস্তব জীবনে হারামের অনুপ্রবেশ, লেখক- আল্লামা ত্বকী উসমানি,Islamic Finance Academyএর লেকচার শীট।) (ডা. নিশাত তাম্মিম এর লিখা থেকে সংগৃহিত)

২য় প্রশ্নটি পরিস্কার করে কমেন্টে লিখবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (67 points)
আমার পরিচিত এক ডাক্তার  আমার কাছ থেকে কোন কনসালটেন্সি ফি নেয় নি কিন্তু আমি তার কাছ থেকে ফ্রি চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক নই। উনি আমাকে মেডিকেল টেস্ট করতে দিয়েছেন। টেস্টের রেফারেন্স হিসেবে উনার নাম দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি। এখন প্যাথলজিতে আমি যখন মেডিকেল টেস্ট করাবো তখন তার নাম রেফারেন্স ডাক্তার হিসেবে উল্লেখ করা জায়েয হবে কি? আমার নিয়ত হবে যে আমি উনাকে কনসালটেন্সি ফি দিচ্ছি।
আমি যদি উনার নাম উল্লেখ করি তাহলে উনি কমিশন পাবেন আর যদি নাম রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ না করি তাহলে উনি কমিশন পাবেন না আমার জানামতে। যদিও উভয়ক্ষেত্রেই আমাকে একই ফি পরিশোধ করতে হবে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...