আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
24 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম।  আমার প্রশ্ন টা বড় হতে পারে কিন্তু মাসায়ালা জানা টা আমার জন্য খুব জরুরি।
আমার বাবা ২০১৯ সালে মারা যায়। বর্তমানে আমার মা, ভাইয়া আর আমি ( মেয়ে ) জীবিত।  আমার মা কাছে ৬.৫ ভরি মত স্বর্ণ ছিল সর্বশেষ বাবা মারা যাওয়ার সময়। যা আমার মা আমার বিয়ে জন্য রেখেছিল। আমার ভাইয়ের প্রথম বিয়ে সময় ১.৫  ভরি স্বর্ণ দিয়েছিল।  পরবর্তী তে বিয়ে ভেংগে গেলে বর্তমান ভাবি কে আধা ভরি বেশি ( ঠিক মনে নেই এক ভরি হবে না) দেয়া হয়েছিলো যা বর্তমান বাড়ি কাজে এই আধা ভরি বিক্রি করা হয়েছিল)। বাকি ৬.৫ ভরি ছিল।  আমার বড় ভাই ছিলো যিনি মারা যেছে ওনার বিয়েতে স্বর্ণ দেয়া হয়েছে ( সঠিক পরিমাণ বলতে পারছি না, তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম) । এই ৬.৫ ভরি স্বর্ণ আমার মা আগে থেকে ইচ্ছা ছিল আমার বিয়ে সময় দিবে। আমার বাবা বেচে থাকা অবস্থায় আমার ভাইয়া কে একবার আমার আর আমার বাবা সামনে বলছিলো এই স্বর্ন আমাকে দিবে তখন ভাইয়া কিছু বলে নাই ( উনি বিবাহিত ছিলো না )। এখন ভাইয়া দাবি করছে, স্বর্ণ সম্পত্তি মত ভাগ হয়ে থাকে। আমার মা যেভাবে ভাগ করছে ওই ভাবে ভাগ হয় নাই।
প্রশ্ন ১ - স্বর্ন কি সম্পত্তির মত ইসলামিক নিয়মে ভাগ হয়ে থাকে? ভাইয়া কি ৬.৫ ভরি এখান থেকে পাবে?
প্রশ্ন  ২- সম্পত্তি সাথে কি স্বর্ন এজবদল করা যায়?


আমার বাবা অসুস্থ থাকা অবস্থায় কাজ করতে পারে নাই। বাবার ব্যবসা ওখানে ভাইয়া কাজ করত। ব্যবসা ওখান থেকে মেইন ইনকাম আসত। যা দিয়ে ভাইয়া সংসার চালানো , বাবার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ভাইয়া তখন সত্যি ঘরে অনেক করেছে।  পরে স্বর্ণ নিয়ে আমার মা সাথে কথা বিরোধ লাগলে বলে আমি ইনকাম করেছি, চাইলে ঘরে টাকা না দিয়ে নিজে জমাই রাখতাম।  তখন মা বলে,  নিজে কিছু করে তো করে ইনকাম করো নি। বাবার ব্যবসা থেকে ইনকাম করে আনছো। নিজে আলাদা রুজি করে আনলে এই কথা বলতা।
প্রশ্ন ৩ - যেহেতু বাবা ব্যবসা থেকে টাকা নিয়ে আসত, তাহলে কি ভাইয়া পরিশ্রমের কারনে কি তার টাকা ঘরে খরচ করা হয়েছে?  বাবার ঋণ কি ভাইয়া টাকা পরিশোধ করা হয়েছে?
প্রশ্ন ৪- বাবা মৃত্যু পর তার ব্যবসা কি শুধু কি ছেলে পাবে ( অর্থ, টাকা) ,  তার স্ত্রী, মেয়ে কি পায় না?
আমি জানি না কতটুকু গুছিয়ে লিখতে পেরেছি। উত্তর পেলে আমি ভাইয়া কে স্বর্ন বুঝায় দিতে পারব। আমার জন্য মাসয়ালা জানা অনেক জরুরি।

1 Answer

0 votes
by (664,260 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তা’আলা বলেন, 

يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ فَإِن كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۖ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ ۚ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ ۚ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ ۚ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا ۚ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু?জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু' এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ।

وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَاجُكُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّهُنَّ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۚ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ وَإِن كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ ۚ فَإِن كَانُوا أَكْثَرَ مِن ذَٰلِكَ فَهُمْ شُرَكَاءُ فِي الثُّلُثِ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَىٰ بِهَا أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَارٍّ ۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ

আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। ( সূরা নিসা-১১-১২)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
উক্ত ৬.৫ ভরি স্বর্ণ মূলত কার? এটি কার টাকায় ক্রয়কৃত? এটা যদি আপনার বাবার স্বর্ণ হয়ে থাকে, আপনার বাবার টাকায় ক্রয়কৃত  হয়ে থাকে,আর তিনি যদি এটি আপনার মায়ের মালিকানায় না দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে উক্ত স্বর্ণের মালিক যেহেতু আপনার বাবা,এমতাবস্থায় আপনার বাবা যেহেতু জীবদ্দশায় উক্ত স্বর্ণ আপনাকে দিয়ে যাননি, তাই সেই স্বর্ণ শরীয়তের বিধান অনুসারে আপনার মা, আপনার ভাই এবং আপনার মাঝে বন্টন হবে।

আর যদি সেই স্বর্ণ পুরোপুরিভাবে আপনার বাবা আপনার মাকে দিয়ে থাকেন বা এই স্বর্ণ যদি আপনার মায়ের টাকায় ক্রয়কৃত হয়ে থাকে বা অন্য কোনো ভাবে আপনার মা যদি এই স্বর্ণের মালিক হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে এ স্বর্ণের একচ্ছত্র অধিকার আপনার মায়ের।

আপনার বাবার ওয়ারিশদের মাঝে তাহা বন্টন হবেনা।

আপনার মা যদি পুরো সাড়ে ছয় ভরি স্বর্ণ আপনাকে দিয়ে দেয়,সেক্ষেত্রে আপনার ভাই তাহা হতে কিছুই পাবেনা। 

(০২)
উভয় পক্ষই সন্তুষ্টি চিত্তে এওয়াজ বদল করতে চাইলে করতে পারবে।

(০৩)
এক্ষেত্রে শরীয়তের নিয়ম ছিল যে আপনার ভাইয়ের মাসিক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

কিন্তু আপনার ভাই তো সে পারিশ্রমিকের চুক্তি করেননি, তিনি শ্রম দিয়েছেন এবং আপনার বাবার অধীনে থেকেছেন, খেয়েছেন, আর ব্যবসার মূলধন সম্পূর্ণই আপনার বাবারই ছিলো,সুতরাং এ ক্ষেত্রে তিনি আর কোন কিছু আলাদাভাবে চাওয়া বা পাওয়ার দাবী রাখতে পারেননা।

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার বাবার ব্যবসায় আপনার ভাইয়া পরিশ্রমের কারনে তার টাকা ঘরে খরচ করা হয়েছে,এটি বলা সহীহ হবেনা।  বাবার ঋণ ভাইয়ার টাকা হয়ে পরিশোধ করা হয়েছে, এটিও বলা যাবেনা। 

বরং আপনার বাবার টাকায় ঘরে খরচ করা হয়েছে এবং আপনার বাবার টাকা হতে আপনার বাবার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।
এটিই সহীহ কথা।

(০৪)
বাবার মৃত্যুর পর তার ব্যবসা,অর্থ, টাকা,
শুধু ছেলে পাবেনা, বরং তার স্ত্রী, মেয়েও সম্পদ পাবে।

আপনার বাবার মৃত্যুর সময় যদি শুধুমাত্র আপনি, আপনার ভাই এবং আপনার মা জীবিত থাকেন, তার আর কোন ওয়ারিশ যদি জীবিত না থাকে সেক্ষেত্রে
শরীয়তের বিধান অনুসারে আপনার বাবার সমূদয় সম্পদ এভাবে বন্টন হবেঃ-
মোট সম্পত্তি ২৪ ভাগ হবে।
আপনার বাবার স্ত্রী (আপনার মা) আট ভাগের এক ভাগ হিসেবে ৩ অংশ পাবে। 

কন্যা (আপনি) ৭ অংশ পাবেন। 

আপনার বাবার ছেলে (আপনার ভাই) ১৪ অংশ পাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...