১) আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। আমার ভাই অন্যের জমিন চাষ করে জীবন যাপন করে। নিজের অল্প কিছু জমিন আছে, আর অন্যের টা চাষ করেন। এছাড়া আর কোন ইনকাম নাই। ওনার ছেলে কিছু ইনকাম করে, কিন্তু অভাব অনটনের সংসার। ওনাকে কি যাকাতের টাকা দেয়া যাবে?
যাকাতের শর্ত অনুযায়ী, একজনের যদি নিসাব পরিমান সম্পদ থাকে তাহলে যাকাত দেয়া যাবে না। এখন কথা হলো নিসাব পরিমান সম্পদ বা টাকার পরিমান কথার কথা ৬০/৭০ হাজার, যদি লাখ খানেক টাকাও ধরি টাকা আনুমানিক। কিন্তু একজন মানুষের যদি নিয়মিত ইনকাম না থাকে, তারা যদি অভাব অনটনে দিনপার করে, আত্নীয়র মধ্যেই এমন অবস্থায় থাকে,তাদেরকে যাকাত না দিয়ে কি সেই টাকা অন্যদের দিতে হবে?
২)আমার বোন,বা অন্যান্য আত্নীয়দের অবস্থাও কম বেশি এমন হালত। ইনকাম কিছু করেন, কিন্তু সেটা দিয়ে তাদের অভাব অনটন সারে না। অপারেশন করার জন্য লাখ খানেক টাকার প্রয়োজন ছিল। সেটাও তারা সম্পূর্ন দিতে পারে নি। সহযোগিতা করতে হয়েছে। সারাজীবন ধরেই সহযোগিতা করতে হয়েছে বিভিন্ন ভাবে।
নিসাব এর হিসাব ধরতে গেলে তারা সেই ক্যাটাগরি তে আসে না। আর যাকাতের টাকা ছাড়াও যে আমরা তাদের নিয়মিত দিবো, আমাদেরও তেমন ব্যবস্থা নেই। তাহলে আমরা কি করব? যাকাতের টাকা নাকি কল্যানকর সকল খাতেই ব্যয় করা যায় এমন বিষয়ও পড়েছিলাম। সেটা নিচে উল্লেখ করেছি।
এমন অনেক খাত আছে, যেমন মানুষকে দ্বীন পালনে উপকারী বই কিনে হাদিয়া দিলে মানুষ গ্রহন করে। কিন্তু তারা নিজেরা কিনবে না সামর্থ্য থাকলেও। এসব খাতে কি যাকাতের টাকা খরচ করা যায়?
বইটাতে আরো উল্লেখ আছে, অন্তর জয় করার জন্য খরচ করা, তারা যদি ধনীও হয়। এগুলো ফি সাবিলিল্লাহ খাত৷ এখানে ছবি দেয়া যাচ্ছে না।না হলে ছবি দিতাম।
নিজের পরিবারেই তো এমন মানুষের অভাব নেই। তারা অভাব অনটনেও থাকে। তাদের প্রয়োজনও পূরন করতে হয়।
৩) আমার আত্নীয়, ওনার জমা টাকা আছে ১ লাখ+ টাকার মত। সেটার উপর ওনার যাকাত দিতে হয়। সে টাকা ইসলামী ব্যাংকে রেখেছেন খুব সম্ভবত। ওনারও কোন ইনকাম নাই। ওনার তো নিসাব পরিমান টাকা আছে, তাহলে ওনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে ওনি কিভাবে কুরবানি দিবেন,যাকাত দিবেন? সেই এক দেড় লাখ টাকা ভেঙে খরচ করে?
৪) স্বামী স্ত্রীকে যদি লোকমাও তুলে খাওয়ায় সেটাও সাদাকায়। সব ভাল কাজ সাদাকাহ। সব যদি সাদাকা হয় একে অপরকে, বাবা মা সন্তানকে, অর্থাৎ সবাই একে অপরের পিছনের কি সাদাকার নিয়তে খরচ করতে পারবে?
ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে ব্যয় করা)
'ফি সাবিলিল্লাহ'র অর্থ 'আল্লাহর পথে'। এ বিষয়ে কয়েকটি মত পরিলক্ষিত হয়ঃ
১) আলিমগণ একমত যে, 'আল্লাহর রাস্তায়' মানে জিহাদকে পছন্দ করা। অতএব, মুজাহিদ ও মুজাহিদদের অস্ত্র-শস্ত্রের জন্য যাকাত থেকে ব্যয় করা যাবে, যদিও তারা ধনী হয়। অতএব, যুদ্ধের বিমান ঘাটি তৈরি করা, শত্রুদের সন্ধানদাতাদের বেতন ইত্যাদিও এ খাতের অন্তর্ভুক্ত। শাফেয়ী ও হাম্বলী ফকীহগণ শর্ত করেছেন যে, এমন মুজাহিদদের দেওয়া যাবে, যাদের জন্য সরকারি বেতন-ভাতা বরাদ্দ নেই।
২) হানাফী আলিমগণ 'ফি সাবিলিল্লাহ'কে এক্ষেত্রে অনেক ব্যাপকতা আরোপ করেছেন, কল্যাণকর প্রত্যেক খাতে যাকাত ব্যবহার করা বৈধ, যদিও এটি বেশ দুর্বল মত।
৩) হযরত ইবনে উমার (রা.) থেকে ইবনে তাইমিয়া (রহ.) পর্যন্ত একদল মনীষী মনে করেন, হজ্জও এ খাতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, হজ্জ আল্লাহর রাস্তায় এক প্রকার জিহাদ।
৪) আবার আধুনিক ইসলামী পণ্ডিতদের অনেকে মনে করেন, দীনের পথে যেকোনো বাধা মোকাবিলার জন্য এ খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা বৈধ। তবে মসজিদ তৈরি, রাস্তা সংস্কার ইত্যাদির জন্য যাকাতের অর্থ খরচ করা বৈধ নয়, বরং এগুলো জন্য ওয়াকফ, হেবা, ওসিয়ত ও সাদাকাহর মতো খাত থেকে খরচ করা যেতে পারে।
(যাকাতের বিধিবিধান czm বই থেকে উল্লেখ করা হয়েছে)