মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে, তাদেরকে অন্য মৃতদের মতো মনে করো না। বরং তারা বিশেষ হায়াত প্রাপ্ত এবং তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিভিন্ন রিযিক ও নেয়ামত প্রাপ্ত হচ্ছে। সূরা আলে ইমরান ৩/১৬৯
শহীদের রক্ষা ও সম্মান: শহীদদের মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। তারা পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে যেমন সম্মানিত, আখিরাতেও তারা বিশেষ মর্যাদা লাভ করে।
শহীদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি: শহীদদের জন্য জান্নাতে স্থান বরাদ্দ রয়েছে এবং তারা সেখানে পৃথিবীজীবনে অনুভূত কোনো কষ্টের সম্মুখীন হবে না।
সুরা আল-ইমরান (৩:১৬৯-১৭০)
"আল্লাহর পথে নিহতদেরকে মৃত মনে কোরো না, বরং তারা জীবিত। তারা তাদের প্রভুর কাছে রিজিক লাভ করছে।"
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা শহীদের মর্যাদা এবং তাদের জীবনের অবস্থা তুলে ধরেছেন, যেখানে শহীদরা মৃত্যুর পরও জীবিত এবং তারা আল্লাহর কাছে রিজিক লাভ করে।
সুরা আত তাওবা (৯:১১২)
"তারা যারা আল্লাহর পথের জন্য তাদের প্রান, ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের জন্য জান্নাতে উত্তম পুরস্কার অপেক্ষা করছে।"
এই আয়াতে শহীদদের জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি।
সুরা আল-বাকারা (২:১৫৪)
"আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, তবে তোমরা তা বুঝতে পারো না।"
এখানে শহীদের মৃত্যুকে "মৃত্যু" হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, বরং তাদের জীবিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি শহীদের আধ্যাত্মিক মর্যাদাকে প্রমাণ করে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
নবীজী এরশাদ করেন,
مَا أَحَدٌ يَدْخُلُ الجَنَّةَ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا، وَلَهُ مَا عَلَى الأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا الشَّهِيدُ، يَتَمَنَّى أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا، فَيُقْتَلَ عَشْرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنَ الكَرَامَةِ
কোনো জান্নাতী এটা চাবে না যে, তাকে আবার দুনিয়াতে পাঠানো হোক, যদিও তাকে সারা পৃথিবীর মালিক বানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু একজন শহীদ তাঁর জান্নাতী মর্যাদা প্রত্যক্ষ করে কামনা করতে থাকবে, তাকে অন্তত দশবার দুনিয়াতে পাঠানো হোক, যেন প্রতিবার সে শহীদ হয়ে আসতে পারে। বুখারী, হাদীস নং ২৮১৭
স্বয়ং নবীজী শহীদী মৃত্যুর তামান্না করে ইরশাদ করেন,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ… لَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ، ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ، ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ
ঐ সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! আমার বড় ইচ্ছে হয়, আমি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হবো। আমাকে জীবিত করা হবে, আবার আমি নিহত হবো। পুনরায় আমাকে জিন্দা করা হবে এবং আমি আবার আল্লাহর রাস্তায় জীবন বিলিয়ে দিবো। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২২৬
এক হাদীসে হসেছে,
لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ: يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ، وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الجَنَّةِ، وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَيَأْمَنُ مِنَ الفَزَعِ الأَكْبَرِ، وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الوَقَارِ، اليَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنَ الحُورِ العِينِ، وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ
শহীদ আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে বড়বড় ছয়টি পুরস্কার পাবে।
এক. তাকে তৎক্ষণাৎ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তাকে তার জান্নাতী নিবাস দেখনো হবে।
দুই. কবরের আযাব মাফ করে দেয়া হবে ।
তিন. হাশরের ময়দানে যখন ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই সন্ত্রস্ত ও পেরেশান থাকবে, তখন আল্লাহ পাক তাকে সেই পেরেশানি ও বিভীষিকা থেকে মুক্ত রাখবেন।
চার. সেদিন তার মাথায় এমন একটি সম্মাননা মুকুট পরানো হবে, যার একেকটি হীরা ও মুক্তা দুনিয়া ও তার সব কিছু থেকে দামী হবে।
পাঁচ. স্ত্রী হিসাবে তাকে বাহাত্তরজন হুর দান করা হবে।
ছয়. তার নিকটজনদের মধ্যে হতে সত্তরজনের ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১৬৬৩