জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
যাদু নষ্ট করার ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। এর পদ্ধতি হচ্ছে- যাদুতে আক্রান্ত রোগীর উপর অথবা কোন একটি পাত্রে আয়াতুল কুরসি অথবা সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস, সূরা ত্বহা এর যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়বে। এগুলোর সাথে সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে এবং রোগীর জন্য দোয়া করবে।
বিশেষতঃ যে দুআটি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে সাব্যস্ত হয়েছে:
اللَّهُمَّ ربَّ النَّاسِ، أَذْهِب الْبَأسَ، واشْفِ، أَنْتَ الشَّافي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفاءً لاَ يُغَادِرُ سقَماً
(অর্থ- হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন ও আরোগ্য দান করুন। (যেহেতু) আপনিই রোগ আরোগ্যকারী। আপনার আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। আপনি এমনভাবে রোগ নিরাময় করে দিন যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।)
জিব্রাইল আ. নবী ﷺ-কে যে দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন সেটাও পড়া যেতে পারে।
সে দুআটি হচ্ছে-
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ , مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنٍ أَوْ حَاسِدٍ , اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
(অর্থ- আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি।)
এই দোয়াটি তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন।
আলেমগণ বলেছেন, এ দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিতে হবে। এরপর যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে প্রয়োজনমত একবার বা একাধিক বার গোসল করবে। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী আরোগ্য লাভ করবে।
https://www.ifatwa.info/10103 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ রয়েছেঃ-
সর্বপ্রথম পরামর্শ দিবো,ভালো কোনো বিশুদ্ধ আকিদার মুদাব্বিরের শরণাপন্ন হওয়ার।মুদাব্বির মানে যিনি কুরআন হাদীস থেকে সেহেরের চিকিৎসা করে থাকেন।যাকে রুকইয়ায়ে শরঈয়্যাহ বলা হয়।
তাছাড়া আপনাকে ঘরোয়া ভাবে কিছু রুকইয়ার পরমার্শ দিচ্ছি,
(১)সকল প্রকার ফরয ওয়াজিব ইবাদত যত্নসহকারে পালন করা।এবং সকল প্রকার হারাম ও নাজায়ে কাজ হতে বেঁচে থাকে।
(২) অধিক পরিমাণ কুরআন তেলাওয়াত করা।
(৩)দু'আ, জায়েয তাবীয ও যিকিরের মাধ্যমে নিজেকে হেফাজতের চেষ্টা করা।
নিম্নোক্ত দু'আকে সকাল সন্ধ্যা তিনবার করে পড়া।
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ،
দেখুন-http://ifatwa.info/1093
প্রত্যক নামাযের পর ঘুমাইবার সময় এবং সকাল সন্ধ্যা আয়াতুল কুরসী পড়া।এবং ঘুমাইবার সময় ও সকাল সন্ধ্যা তিনবার করে সূরা নাস,সূরা ফালাক্ব ও সূরা ইখলাস তিনবার করে পড়া।এবং প্রতিদিন নিম্নোক্ত দু'আটি একশতবার করে পড়া।
لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير،
প্রতিদিন সকাল সাতটা করে খেজুর খাওয়া।মদিনার খেজুর হলে ভালো।https://www.ifatwa.info/1816
(এলাজে কুরআনী-০৩)
★উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো জাদু ও জ্বীনের আসর উভয় বিষয়েই কার্যকর হবে ইনশা'আল্লাহ।
কুরআন সুন্নাহের আলোকে শরীর বা ঘর বন্ধ করার নিয়ম হল, চার কুল ও সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ে শরীর বা ঘরের দরজাসমূহে ফু দেওয়া। বিশেষ করে সূলা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে ফু দেওয়া।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا الْمُفَضَّلُ بْنُ فَضَالَةَ عَنْ عُقَيْلٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ ثُمَّ نَفَثَ فِيْهِمَا فَقَرَأَ فِيْهِمَا(قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ)وَ (قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ) وَ (قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ) ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, প্রতি রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সূরাহ ইখ্লাস, সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস পাঠ করে দু’হাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন।
[বুখারী শরীফ ৫০১৭.৫৭৪৮, ৬৩১৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৮)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে উপরে উল্লেখিত আমল গুলি আপনার ভাই নিয়মিত করতে পারেন,ইনশাআল্লাহ কেউ জাদু করে থাকলে বা নজর দিয়ে থাকলে সমাধান মিলবে।
শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকায় বিনা ওযরে এভাবে এতো স্বামীর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাকে সহবাস হতে বাধা দেয়ায় আপনার গুনাহ হয়েছে।
যে নারী স্বামীর একান্ত অনুগতা ও পবিত্র সে নারীর বড় মর্যাদা রয়েছে ইসলামে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا، دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ.
‘‘রমণী তার পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়লে, রমযানের রোযা পালন করলে, ইজ্জতের হিফাযত করলে ও স্বামীর তাবেদারী করলে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।
(মিশকাতুল মাসাবিহ ৩২৫৪।)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيْ النِّسَاءِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلَا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَلَا مَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, কোন্ রমণী সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে স্বামী স্ত্রীর প্রতি তাকালে তাকে সন্তুষ্ট করে দেয়, স্বামী কোনো নির্দেশ করলে তা (যথাযথভাবে) পালন করে এবং নিজের প্রয়োজনে ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করে না।
হাসান :
(নাসায়ী ৩২৩১, আহমাদ ৭৪২১, ইরওয়া ১৭৮৬, সহীহাহ্ ৮৩৩৮, সহীহ আল জামি‘ ৩২৯৮.মিশকাত ৩২৭২।)
★স্ত্রীর নিকট স্বামীর মর্যাদা বিরাট। এই মর্যাদার কথা ইসলাম নিজে ঘোষণা করেছে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘স্ত্রীর জন্য স্বামী তার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’’
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
একবার এক নারী সাহাবী রাসূলের কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জী, আছে। নবীজী বললেন, তার সাথে তোমার আচরণ কেমন? সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তখন নবীজী বললেন, فانظري أين أنت منه، فإنما هو جنتك ونارك
হাঁ, তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থাকো, কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম। (মুআত্তা মালেক, হাদীস ৯৫২; মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৪১ হাদীস ১৯০০৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২৭৬৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৪৭০৬)
لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا.
‘‘যদি আমি কাউকে কারো জন্য সিজদা করতে আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে।’’
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي نَفَرٍ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ فَجَاءَ بِعِيرٌ فَسَجَدَ لَهُ فَقَالَ أَصْحَابُهُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تَسْجُدُ لَكَ الْبَهَائِمُ وَالشَّجَرُ فَنَحْنُ أَحَقُّ أَنْ نَسْجُدَ لَكَ. فَقَالَ: «اعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَأَكْرِمُوا أَخَاكُمْ وَلَوْ كُنْتُ آمُرُ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَلَوْ أَمَرَهَا أَنْ تَنْقُلَ مِنْ جَبَلٍ أَصْفَرَ إِلَى جَبَلٍ أَسْوَدَ وَمِنْ جَبَلٍ أَسْوَدَ إِلَى جَبَلٍ أَبْيَضَ كَانَ يَنْبَغِي لَهَا أَن تَفْعَلهُ» .
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজির ও আনসারগণের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। তখন একটি উট এসে তাঁকে সিজদা করল। এটা দেখে সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে জীব-জন্তু, গাছপালা সিজদা করে, সুতরাং আপনাকে সিজদা করা আমরা বেশী হকদার। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা তোমাদের রবে্র ‘ইবাদাত (সিজদা) কর এবং তোমাদের ভাইকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যথাযোগ্য) সম্মান কর। আমি যদি (দুনিয়াতে) কারো প্রতি সিজদা করতে নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সিজদা করার অনুমতি দিতাম। স্বামী যদি স্ত্রীকে (ন্যায়সঙ্গত ও প্রয়োজনে) হলুদ বর্ণের পর্বত হতে কালো বর্ণের পর্বতে এবং কালো বর্ণের পর্বত হতে সাদা বর্ণের পর্বতে পাথর স্থানান্তরের নির্দেশ করে, তবে তার দায়িত্বনিষ্ঠার সাথে তা পালন করা।
(আহমাদ ২৪৯৭৫, ইবনু মাজাহ ১৮৫২.মিশকাত ৩৩৭০।)