একটি মেয়ের ডিভোর্স শরীয়তের ভিত্তিতে কার্যকর হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছি। মেয়েটির কাবিননামায় 18 নং কলামে "ভরণপোষণ প্রদান না করিলে" তালাক দিতে পারিবে- এই মর্মে উল্লেখ ছিল। বিয়ের আগে ১ বছর ছেলে পক্ষ বিভিন্ন ইতবাচক কথা বলে মেয়েপক্ষকে রাজি করিয়েছিলো। কিন্তু, বিবাহ পরবর্তী সময় দেখা যায় যে, অনেকগুলো ব্যাপার গোপন করেছিলো ওরা।
১। বিয়ের আগে তারা ছেলের শারীরিক সমস্যার বিষয়ে কিছু বলেনি। বিয়ের পর ছেলেটির শারীরিক সমস্যা মেয়ের কাছে ধরা পড়ে। (বি দ্রঃ বিয়ের পরে তাদের এ বিষয়ে জানালে ছেলের মা স্বীকার করেছিলো যে ছেলের বিয়ের আগে অনেক স্বপ্নদোষ হতো। তাছাড়া ডিভোর্সের পর কাজির সাথে ছেলের কথোপকথনের সময় কাজী তাকে তার শারীরিক সমস্যার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে সেটা স্বীকার করেছিলো এবং কাজী যখন তাকে এরকম বলেছিলো যে বিয়ের আগেই চিকিৎসা করিয়ে বিয়ে করা উচিৎ ছিলো তখন সে নিশ্চুপ ছিলো)।
২। ছেলের মায়ের মানসিক সমস্যার কথাও গোপন রাখা হয়েছিল। ছেলেটির মা মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলো না। প্রায়ই চিৎকার চেঁচামেচি করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করত। এমনকি মেয়েটিকেও বকাঝকা করতো। অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হতো। আর উনার চিকিৎসা করানোও সম্ভব ছিলো না কারণ উনি ডাক্তারের কাছে যাওয়া অপছন্দ করতেন ।
৩। অনেক বিদআত আর মিথ্যাচার ছিলো ওই পরিবারে। বিয়ের আগে দ্বীনের সব ব্যাপার মেনে নিলেও বিয়ের পর অন্য চেহারা দেখা যায় (যেমনঃ রাতে রোজা রাখা, মধ্যরাতে উচ্চস্বরে জিকির করা, নামাজে দেরি হলে-কুরআন তিলাওয়াতে তাদের ভুল সংশোধন করতে চাইলে উত্তেজিত হতো, কাবিনের টাকা ইসলামি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখতে বলা ইত্যাদি)। বিয়ের সময় ওরা বলেছিল কাবিন হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আর উপহার হিসেবে ২.৫ লাখ টাকার গহনা দিচ্ছে। কিন্তু কাবিনের টাকা ওরা মেয়েকে দিলেও বিয়ের পর বাহানা করে গহনা রেখে দিয়েছিল।
অন্যদিকে, মেয়েটি এবং মেয়েটির পরিবার বারবার অনুরোধ করার পরও ছেলেটির পরিবার ছেলের চিকিৎসা না করে উল্টো মেয়েটির উপর মানসিক নির্যাতন করত। আর ছেলেটি মেয়েটার সাথে ভালো মানুষের অভিনয় করতো।
ছেলেটির পরিবারের ছিল প্রচন্ড অহংবোধ এবং তাদের পরিবারে একটা অসুস্থ পরিবেশ ছিলো। প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। ছেলের বাবা ছিলেন প্রচণ্ড রাগী। ছেলেটির বাবা একদিন মেয়েটিকে বলেছিল " আমাদের এইসব ব্যাপার বাসায় জানিয়ে লাভ নেই কারণ তারা তো আমাদেরকে পরিবর্তন করতে পারবে না শুধু পারবে তোমাকে নিয়ে যেতে"। তাছাড়া আরেকদিন মেয়েটি অনেক কান্নাকাটি করায় ছেলেটি বলেছিল "আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন"। যদিও তারা কখনোই মেয়েটিকে এত সহজে ছেড়ে দেয়ার মানুষ ছিলো না।
বিয়ের পর পর মেয়েটিকে বাসায় আসতে দিলেও তারপর আর ওরা বাসায় আসতে দিচ্ছিল না। একদিন মেয়ের প্রসঙ্গে কথা বলার সময় ছেলে মেয়ের মাকে বলেছিলো; "আদরের পালা শেষ, এখন মাইরের পালা"। এতে মেয়ের পরিবার আরো ভয় পেয়ে যায়। উল্লেখ্য, তাদের পরিবারে মারধরের অভ্যাস আছে। একদিন মেয়েটির উপস্তিতিতেই ছেলেটির বাবা তার মার গায়ে হাত তুলেছিলো।
এতো এতো সমস্যা দেখে মেয়ের পরিবার আর ভরসা পাচ্ছিলো না মেয়েকে ঐ পরিবারে রাখার। শেষ পর্যন্ত বিয়ের ২ মাস পর অনেক কষ্টে মেয়েটির পরিবার তাকে নিয়ে আসে। যেহেতু তারা অনেক ভালমানুষের অভিনয় করতো এবং পরে সুযোগ বুঝে প্রতিশোধ নিতো তাই মেয়েপক্ষ আর ভরসা পায়নি সামাজিকভাবে বা আদালতের মাধ্যমে কোন সমাধানে যাওয়ার। আর ছেলেপক্ষ কখনোই ডিভোর্স দিবে না আর ডিভোর্সের কথা জানলে তারা মেয়ের বাসায় এসে মেয়েকে যেভাবেই হোক নিয়ে চলে যেতো। তাই নিরুপায় হয়ে মেয়েপক্ষ উকিলের কাছে গিয়ে একজন কাজির মাধ্যমে ডিভোর্স নিয়ে তাদেরকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়।
ডিভোর্সের পরে ছেলেটি শুধুমাত্র একদিন এসে মেয়েটির পরিবারের সাথে বাজে ব্যবহার করে চলে গেছে। ছেলেটির বাবাও একদিন ফোন করে হুমকি-ধামকি দেয়। এরপর মেয়েটির পরিবার ভয়ে ওদের আর কোন কল রিসিভ করেনি। আর ছেলের পরিবারও তাদের বাসায় একবারের জন্যও আসেনি।
বিঃ দ্রঃ তালাকের নোটিশে কারণ উল্লেখ ছিলো- শারীরিক অক্ষম হওয়া, স্ত্রীর ভরণপোষণ না দেয়া, নির্যাতন করা, মনের অমিল ও বনিবনা না হওয়া। (তারা এক্টু ফাকফোকর পেলেই যেকোনো ভাবে হয়রানি করতে পারতো তাই আইনি ঝামেলা থেকে বাচার জন্য কারণগুলো এভাবে উল্লেখ করতে হয়েছিলো)
আরো উল্লেখ্য: কাজী ১৮ নং কলাম পূরণ করার পর মেয়ে কাবিননামায় সাইন করেছিল। এরপর ছেলের সাইন নেয়া হয়েছিল। তারা সেটা পড়ে সাইন করেছিল কিনা সেটা মেয়েপক্ষ জানে না। ছেলে ডিভোর্সের পর বলেছিল যে সে নাকি জানতো না এই বিষয়ে। ছেলে অনেক মিথ্যা কথা বলে। এখন এটা সত্যি না মিথ্যা বলেছে সেই ভালো জানে!