আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
25 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (5 points)
reshown by
একটি মেয়ের ডিভোর্স শরীয়তের ভিত্তিতে কার্যকর হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছি। মেয়েটির কাবিননামায় 18 নং কলামে "ভরণপোষণ প্রদান না করিলে" তালাক দিতে পারিবে- এই মর্মে উল্লেখ ছিল। বিয়ের আগে ১ বছর ছেলে পক্ষ বিভিন্ন ইতবাচক কথা বলে মেয়েপক্ষকে রাজি করিয়েছিলো। কিন্তু, বিবাহ পরবর্তী সময় দেখা যায় যে, অনেকগুলো ব্যাপার গোপন করেছিলো ওরা।

১। বিয়ের আগে তারা ছেলের শারীরিক সমস্যার বিষয়ে কিছু বলেনি। বিয়ের পর ছেলেটির শারীরিক সমস্যা মেয়ের কাছে ধরা পড়ে। (বি দ্রঃ বিয়ের পরে তাদের এ বিষয়ে জানালে ছেলের মা স্বীকার করেছিলো যে ছেলের বিয়ের আগে অনেক স্বপ্নদোষ হতো। তাছাড়া ডিভোর্সের পর কাজির সাথে ছেলের কথোপকথনের সময় কাজী তাকে তার শারীরিক সমস্যার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে সেটা স্বীকার করেছিলো এবং কাজী যখন তাকে এরকম বলেছিলো যে বিয়ের আগেই চিকিৎসা করিয়ে বিয়ে করা উচিৎ ছিলো তখন সে নিশ্চুপ ছিলো)।

২। ছেলের মায়ের মানসিক সমস্যার কথাও গোপন রাখা হয়েছিল। ছেলেটির মা মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলো না। প্রায়ই চিৎকার চেঁচামেচি করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করত। এমনকি মেয়েটিকেও বকাঝকা করতো। অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হতো। আর উনার চিকিৎসা করানোও সম্ভব ছিলো না কারণ উনি ডাক্তারের কাছে যাওয়া অপছন্দ করতেন ।

৩। অনেক বিদআত আর মিথ্যাচার ছিলো ওই পরিবারে। বিয়ের আগে দ্বীনের সব ব্যাপার মেনে নিলেও বিয়ের পর অন্য চেহারা দেখা যায় (যেমনঃ রাতে রোজা রাখা, মধ্যরাতে উচ্চস্বরে জিকির করা, নামাজে দেরি হলে-কুরআন তিলাওয়াতে তাদের ভুল সংশোধন করতে চাইলে উত্তেজিত হতো, কাবিনের টাকা ইসলামি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখতে বলা ইত্যাদি)। বিয়ের সময় ওরা বলেছিল কাবিন হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আর উপহার হিসেবে ২.৫ লাখ টাকার গহনা দিচ্ছে। কিন্তু কাবিনের টাকা ওরা মেয়েকে দিলেও বিয়ের পর বাহানা করে গহনা রেখে দিয়েছিল।
অন্যদিকে, মেয়েটি এবং মেয়েটির পরিবার বারবার অনুরোধ করার পরও ছেলেটির পরিবার ছেলের চিকিৎসা না করে উল্টো মেয়েটির উপর মানসিক নির্যাতন করত। আর ছেলেটি মেয়েটার সাথে ভালো মানুষের অভিনয় করতো।
ছেলেটির পরিবারের ছিল প্রচন্ড অহংবোধ এবং তাদের পরিবারে একটা অসুস্থ পরিবেশ ছিলো। প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। ছেলের বাবা ছিলেন প্রচণ্ড রাগী। ছেলেটির বাবা একদিন মেয়েটিকে বলেছিল " আমাদের এইসব ব্যাপার বাসায় জানিয়ে লাভ নেই কারণ তারা তো আমাদেরকে পরিবর্তন করতে পারবে না শুধু পারবে তোমাকে নিয়ে যেতে"। তাছাড়া আরেকদিন মেয়েটি অনেক কান্নাকাটি করায় ছেলেটি বলেছিল "আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন"। যদিও তারা কখনোই মেয়েটিকে এত সহজে ছেড়ে দেয়ার মানুষ ছিলো না।
বিয়ের পর পর মেয়েটিকে বাসায় আসতে দিলেও তারপর আর ওরা বাসায় আসতে দিচ্ছিল না। একদিন মেয়ের প্রসঙ্গে কথা বলার সময় ছেলে মেয়ের মাকে বলেছিলো; "আদরের পালা শেষ, এখন মাইরের পালা"। এতে মেয়ের পরিবার আরো ভয় পেয়ে যায়। উল্লেখ্য, তাদের পরিবারে মারধরের অভ্যাস আছে। একদিন মেয়েটির উপস্তিতিতেই ছেলেটির বাবা তার মার গায়ে হাত তুলেছিলো।
এতো এতো সমস্যা দেখে মেয়ের পরিবার আর ভরসা পাচ্ছিলো না মেয়েকে ঐ পরিবারে রাখার। শেষ পর্যন্ত  বিয়ের ২ মাস পর অনেক কষ্টে মেয়েটির পরিবার তাকে নিয়ে আসে। যেহেতু তারা অনেক ভালমানুষের অভিনয় করতো এবং পরে সুযোগ বুঝে প্রতিশোধ নিতো তাই মেয়েপক্ষ আর ভরসা পায়নি সামাজিকভাবে বা আদালতের মাধ্যমে কোন সমাধানে যাওয়ার। আর ছেলেপক্ষ কখনোই ডিভোর্স দিবে না আর ডিভোর্সের কথা জানলে তারা মেয়ের বাসায় এসে মেয়েকে যেভাবেই হোক নিয়ে চলে যেতো। তাই নিরুপায় হয়ে মেয়েপক্ষ উকিলের কাছে গিয়ে একজন কাজির মাধ্যমে ডিভোর্স নিয়ে তাদেরকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়।
ডিভোর্সের পরে ছেলেটি শুধুমাত্র একদিন এসে মেয়েটির পরিবারের সাথে বাজে ব্যবহার করে চলে গেছে। ছেলেটির বাবাও একদিন ফোন করে হুমকি-ধামকি দেয়। এরপর মেয়েটির পরিবার ভয়ে ওদের আর কোন কল রিসিভ করেনি। আর ছেলের পরিবারও তাদের বাসায় একবারের জন্যও আসেনি।

বিঃ দ্রঃ তালাকের নোটিশে কারণ উল্লেখ ছিলো- শারীরিক অক্ষম হওয়া, স্ত্রীর ভরণপোষণ না দেয়া, নির্যাতন করা, মনের অমিল ও বনিবনা না হওয়া। (তারা এক্টু ফাকফোকর পেলেই যেকোনো ভাবে হয়রানি করতে পারতো তাই আইনি ঝামেলা থেকে বাচার জন্য কারণগুলো এভাবে উল্লেখ করতে হয়েছিলো)

আরো উল্লেখ্য: কাজী ১৮ নং কলাম পূরণ করার পর মেয়ে কাবিননামায় সাইন করেছিল। এরপর ছেলের সাইন নেয়া হয়েছিল। তারা সেটা পড়ে সাইন করেছিল কিনা সেটা মেয়েপক্ষ জানে না। ছেলে ডিভোর্সের পর বলেছিল যে সে নাকি জানতো না এই বিষয়ে। ছেলে অনেক মিথ্যা কথা বলে। এখন এটা সত্যি না মিথ্যা বলেছে সেই ভালো জানে!

1 Answer

0 votes
by (652,350 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم 

তালাক হচ্ছে স্বামীর অধিকার। স্বামী তালাক দিলেই তালাক সংঘটিত হবে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ عَنْ مُوسَى بْنِ أَيُّوبَ الْغَافِقِيِّ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ سَيِّدِي زَوَّجَنِي أَمَتَهُ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنِي وَبَيْنَهَا قَالَ فَصَعِدَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ مَا بَالُ أَحَدِكُمْ يُزَوِّجُ عَبْدَهُ أَمَتَهُ ثُمَّ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنَهُمَا إِنَّمَا الطَّلَاقُ لِمَنْ أَخَذَ بِالسَّاقِ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার মনিব তার বাঁদীকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছে। এখন সে আমার ও আমার স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে আরোহণ করলেন, অতঃপর বলেনঃ হে লোকসকল! তোমাদের কারো এরূপ আচরণ কেন যে, সে তার গোলামের সাথে তার বাঁদীর বিবাহ দেয়, অতঃপর তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়? নারীর ঊরু স্পর্শ করা যার জন্য বৈধ, তালাকের অধিকার তার।
(সুনানে ইবনে মাজাহ ২০৮১.বায়হাকী ৯/১৫৭, ইরওয়াহ ২০৪১।)

★শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  মহিলা নিজের উপর কেবল তখনি তালাক পতিত করতে পারবে, যদি স্বামী তাকে তালাক দেবার অধিকার দিয়ে থাকে।
এটি নিকাহ নামার ১৮ নং ধারাতে হ্যাঁ লেখার মাধ্যমেই হোক,বা পরবর্তীতে মৌখিক বা লিখিত ভাবেই হোক।

আরো জানুনঃ- 

★শরীয়তের বিধান হলো স্বামী যদি জেনে শুনে নিকাহ নামার ১৮ নং ধারাতে স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেয়, অথবা সেখানে কাজী সাহেব বা অন্য কেহ হ্যাঁ লিখে দেয়,আর স্বামী তাহা জেনে শুনে নিচে স্বাক্ষর দেয়,আর এই নিকাহ নামা বিবাহের ইজাব কবুল হওয়ার পরে যদি লেখা হয়,তাহলে স্ত্রী তালাকের ক্ষমতা পাবে। 

তবে যদি এমনটি না হয়,স্বামী যদি না জেনেই নিচে সাইন করে,সে যদি তালাকের ক্ষমতা প্রদানের এই বিষয় সম্পর্কে স্বীকার না করে যে এটার তারই লেখা,অথবা এই নিকাহ নামা যদি বিবাহের ইজাব কবুল হওয়ার আগে লেখা হয়,তাহলে স্ত্রী তালাকের ক্ষমতা পাবেনা।
 
كُلُّ كِتَابٍ لَمْ يَكْتُبْهُ بِخَطِّهِ وَلَمْ يُمِلَّهُ بِنَفْسِهِ لَا يَقَعُ بِهِ الطَّلَاقُ إذَا لَمْ يُقِرَّ أَنَّهُ كِتَابُهُ كَذَا فِي الْمُحِيطِ (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)
সারমর্মঃ
প্রত্যেক ঐ লেখা,যেটা নিজ হাত দিয়ে লিখেনি,নিজের মন সেদিকে ঝুকেওনি,তাহলে তালাক পতিত হবেনা।
যদি সে এটা স্বীকার না করে যে এটার তারই লেখা।    

সুতরাং  যদি স্বামীর দস্তখত করার সময় জানা থাকে যে, কাজী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দিয়েছে মর্মে উপরে লিখে দিয়েছে, একথা জানার পরও যদি স্বামী উক্ত কাগজের নিচে সাইন করে, তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে বলে সাব্যস্ত হবে। সেই হিসেবে স্ত্রী যদি পরবর্তীতে নিজের উপর তালাক পতিত করে থাকে, তাহলে তালাক পতিত হয়ে যায়।

আরো জানুনঃ 
,
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্বামী যদি দাবী করে,যে সে কাবিন এর ১৮ নং ধারা সম্পর্কে না জেনেই নিচে স্বাক্ষর করেছে,বা নিকাহনামা ইজাব কবুলের আগে লেখা হয়েছে,সেক্ষেত্রে স্ত্রী তালাক এর অধিকারপ্রাপ্ত হয়নি।

এমতাবস্থায় প্রশ্নে উল্লেখিত তালাক পতিত হবেনা।  এক্ষেত্রে তালাক দিতে হলে আদালতের মাধ্যমে খোলা তালাক দিতে হবে।

আর যদি স্বামী কাবিন এর ১৮ নং ধারা সম্পর্কে জেনেই নিচে স্বাক্ষর করে থাকে এবং নিকাহনামা ইজাব কবুলের পরে লেখা হয়ে থাকে,এবং স্ত্রী নিজের নফসের উপর তালাক প্রদান করে থাকে,সেক্ষেত্রে স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়েছে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...