আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
18 views
ago in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।
আমি একজন মেয়ে, বয়স ২৪ বছর। দ্বীনের বুঝ পাওয়ার পর থেকে যথাসাধ্য দ্বীন মেইনটেইন করার চেষ্টা করি। পর্দা, নন মাহরাম সহ যে সকল বিধি-বিধান সম্পর্কে আমি অবগত আছি সেগুলো কঠোরতার সাথে মেনে চলার চেষ্টা করি।
কিছু দিন পূর্বে একটি ম্যাট্রিমনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি পরিবার আমার পরিবারের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেন। আমার পরিবার তাদের সাথে প্রাথমিকভাবে কথা বলার পর ছেলের ফুফাতো বোন আমার সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন। (উল্লেখ্য তাদের বাসা অনেক দূরে হওয়ায় আমাকে ভিডিও কলে কথা বলতে হয়)। ভিডিও কলে কথা বলার পর তারা আমাকে প্রাথমিক ভাবে পছন্দ করেন এরপর ছেলের সাথে অডিও কলে কথা হয়।
ছেলের সাথে কথা বলার পর জানতে পারি যে তিনি বাংলাদেশের খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ছাড়া অন্য কোনো আলেমকে ফলো করেন না, শায়েখ আহমাদুল্লাহ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি নোমান আলি খান, ইয়াসির ক্বাদি এনাদের ফলো করেন।
ছেলের দাড়ি সুন্নাতি দাড়ি নাই, তিনি যাদের ফলো করেন তাদের আদলেই দাড়ি রেখেছেন। সুন্নাতি দাড়ি রাখার বিষয়েও আগ্রহী না। ছেলে মাহরাম-গাইরে মাহরাম মেনে চলে না। ইভেন ছেলেকে ওনার ফুফাতো বোনের মেয়ের বিয়েতে কাজী বাপ বানানো হয়েছে। ছেলে মাঝেমধ্যে ওনার ফুফাতো বোনের পরিবারের সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে যান। ছেলে তার আহলিয়ার পর্দা মেইনটেইনের ব্যাপারে কঠোর না। আহলিয়া চাইলে পর্দা করতে পারবেন, পর্দা করলে থাকে হেল্প করার চেষ্টা করবেন।
ছেলে ২টি বিষয়ে দৃঢ় মনোভাব পোষণ করে। ১. আল্লাহর সাথে শিরক করা যাবে না। ২. মানুষকে যথাসাধ্য সাহায্য করতে হবে, মানুষকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন মানুষকে সাহায্য করলে ফরজ ইবাদতেও ছাড় আছে। এছাড়া তার ফিক্বহের বিষয়ে জ্ঞান নাই, মাযহাব সম্পর্কে ধারনা নাই, অনলাইনে বিভিন্ন ডকুমেন্টরি দেখেন। তবে তার কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তিনি পরিবারের ক্ষেত্রে অনেক সাপোর্টিভ। আহলিয়া, পরিবারের হক্ব সম্পর্কে সচেতন। নিজেকে পরিবর্তনের ইচ্ছা পোষণ করেন (গাইরে মাহরাম মেনে চলা ব্যতীত)। দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী। হালাল-হারাম মেনে চলেন। জামা'আতে স্বলাত আদায় করার চেষ্টা করেন, টাকনুর ওপরে প্যান্ট পরেন। ছেলে জানান যে তিনি যে স্থানে জব করেন, বিবাহের আহলিয়াকে সেখানেই রাখবেন। ওনার জবে সিফটিং ডিউটি। ওনার বর্ণনা মতে, সপ্তাহে ২ রাত ওনার আহলিয়াকে বাসায় একা থাকতে হবে। আর ওনার আহলিয়াকে যেখানে রাখবেন সেখানে শুধু একটা রুমেই থাকবেন, আশপাশের সকল রুমে ওনার পুরুষ কলিগরা থাকেন। এমন পরিবেশেও ওনার আহলিয়া নিরাপদে থাকবে বলে মনে করেন।

এছাড়াও আর্থিক ও দ্বীন মেনে চলার দিক থেকে কুফু মেলে না। আমাদের বাসা থেকে ছেলেদের বাসার দুরত্ব অনেক বেশি।


সবকিছু বিবেচনায় ইস্তিখারা পূর্বক আমি এ প্রস্তাবে না বলে দেই। কিন্তু আমার পরিবার আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এ প্রস্তাবে এগোতে চাচ্ছেন। আমার পরিবার আমার কথা মানতে নারাজ। তাই আমি পূনরায় ইস্তিখারা করার সময় চেয়ে নেই। কয়েকদিন ইস্তিখারা করার পরেও আমি কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না।
এমতাবস্থায় আমার কি করা উচিত জানানোর অনুরোধ। অনুগ্রহ পূর্বক আমাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করুন। আমি চাইনা আমার ভুল সিদ্ধান্তে আমার জীবনে ভুল কেউ আসুক।
ago by
reshown ago
এমন জায়গায় আগানো উচিত না। পুরুষ কলিগরা আশেপাশের রুমের থাকার পরও আহলিয়া নিরাপদ থাকবেন ভাবা ব্যক্তি আহলিয়ার হক সম্পর্কে কত সচেতন তা বুঝাই যায়। 

1 Answer

0 votes
ago by (77,790 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://www.ifatwa.info/4541/  নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি, যে,

বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তার মধ্যে ‘কুফু’ অন্যতম।

আরবি ‘কুফু’ শব্দের অর্থ সমতা, সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ, সমতুল্য ইত্যাদি।

,

বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের দ্বীনদারি, সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের রুচি, চাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি ভিন্ন হলে সেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন প্রতিষ্ঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একজন উচ্চ শ্রেণীর ছেলেমেয়ের চাহিদা-রুচির সাথে একজন দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের রুচিবোধের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক।

,

আবার একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

,

আল্লাহ বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’ (সূরা নূর : ২৬)।

,

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী পুরুষ যেন ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। আবার ব্যভিচারিণী নারী যেন ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। মুমিনদের জন্য এ ধরনের চরিত্রের নারী-পুরুষকে হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা নূর : ৩)।

,

কুরআনের পাশাপাশি রাসূল সা:-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘কুফু’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।

রাসূল সা: ‘কুফু’র বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَابُورَ الرَّقِّيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ سُلَيْمَانَ الْأَنْصَارِيُّ أَخُو فُلَيْحٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ عَنْ ابْنِ وَثِيمَةَ النَّصْرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ خُلُقَهُ وَدِينَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৭,তিরমিযী ১০৮৪, ইরওয়াহ ১৮৬৮, সহীহাহ ১০২২।)

,

হাদীস শরীফে এসেছে-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ عِمْرَانَ الْجَعْفَرِيُّ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ

 ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবচেনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৮)

,

হাদীস শরীফে এসেছে-

وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدَّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ»

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)! সহীহ : বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১, ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩।)

,

কুফু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/4541/

ইস্তেখারার নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/14451/

,

★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

,

ছেলে ও ছেলের পরিবার যদি আপনার ও আপনার পরিবারের মত দ্বীনদার না হয় এবং আপনার ও আপনার পরিবারের কুফু এবং তার ও তার পরিবারের কুফুর সাথে মিল না থাকে তাহলে বিয়ের জন্য সামনে অগ্রসর না হওয়াই আমরা পরামর্শ দিবো। কারণ, একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দ্বীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

,

তারপরও আপনি ইস্তেখারাহ করে ও আপনার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...