আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
29 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম

১. ইমান, আকীদা ও তাওহীদের মধ্যে  পার্থক্য কি?

২. ইমান আগে না আকিদা আগে?

৩. একজন মুসলমানের কি শুধু ইমানের ৬ টি রুকনের উপর বিশ্বাস রাখলে হবে নাকি ৬ টি রুকনের পাশাপাশি কুরআন ও হাদীসে বিশ্বাস সম্পর্কিত যা যা আছে ঐ সব বিষয়ের প্রতিও বিশ্বাস রাখতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (650,730 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
★ঈমানের সংজ্ঞা:
ঊমান হলো—আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, আখিরাতের দিন এবং তাকদীর (ভাল-মন্দ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে)—এসবের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা।

ঈমানের উপাদান তিনটি:

1. তাসদীক (হৃদয় দিয়ে স্বীকৃতি)
2. ইকরার (মুখে স্বীকার)
3. আমল (কর্মে প্রকাশ)

★আকীদার সংজ্ঞা:
আকীদা হলো এমন বিশ্বাস ও ধারণা যা অন্তরে গেঁথে যায় এবং যা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না। এটি মূলত ইসলামী বিশ্বাসব্যবস্থার পূর্ণ কাঠামো, যার মধ্যে ইমান, তাওহীদ, আখিরাত, ফেরেশতা, তাকদীর ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

যেমন, আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে সঠিক বিশ্বাস

কবরের আযাব বা হাশরের ময়দানে হিসাব—এসব বিশ্বাস।

★তাওহীদ এর সংজ্ঞা:
তাওহীদ অর্থ আল্লাহকে তাঁর সত্তা, গুণাবলী, উপাসনা ও কাজে একক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করা এবং কোনো অংশে তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করা।

তাওহীদের তিনটি ধরন:

1. তাওহীদ আর-রুবুবিয়্যাহ – আল্লাহই সৃষ্টি, রিজিক, মৃত্যু, জীবনের একমাত্র মালিক।
2. তাওহীদ উলুহিয়্যাহ – শুধু আল্লাহর জন্য ইবাদত নির্ধারিত।
3. তাওহীদ আস্-সিফাত – আল্লাহর গুণাবলী কেবল তাঁরই উপযুক্ত, কারো সাথে তুলনীয় নয়।

যেমন, নামাজ কেবল আল্লাহর জন্য পড়া
কোনো নবী বা বুযুর্গের নামে মানত না করা

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
তাওহীদ হলো আকীদার একটি অংশ,
আকীদা হলো পূর্ণ বিশ্বাসব্যবস্থা,
ঈমান হলো সেই বিশ্বাসের আস্তিত্বগত ঘোষণা ও অনুসরণ।

(০২)
আকীদা আগে, তারপর ঈমান।

আকীদা হলো জ্ঞান বা ধারণা (বেসিক বিশ্বাস):
আকীদা হলো—সেসব বিশ্বাস বা মৌলিক ধারণা যা একজন মানুষ প্রথমে জেনে ও বুঝে নেয় (যেমন: আল্লাহ আছেন, একমাত্র ইবাদতের যোগ্য, তিনি সৃষ্টি করেছেন ইত্যাদি)।

এগুলো সম্পর্কে মানুষ যখন সত্যতা বুঝে, তখন সে ঈমান আনে অর্থাৎ বিশ্বাস করে ও স্বীকার করে।

তাই, আকীদা হচ্ছে জ্ঞানের ভিত্তি,
আর ঈমান হচ্ছে সেই জ্ঞানের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও আমলী গ্রহণ।

ঈমান হলো আকীদার ফল বা প্রকাশ:

আপনি যদি জানেন না আল্লাহ কে, কিয়ামত কী—তাহলে আপনি বিশ্বাস করবেন কীভাবে?

সুতরাং, আকীদা আগে—কারণ তা আপনাকে সঠিক তথ্য দেয়, তারপর ঈমান আসে—কারণ আপনি সেটাকে মেনে নেন ও গ্রহণ করেন।

যেমন,আপনি জানলেন—আল্লাহ এক, তিনি কাউকে অংশীদার করেন না। → এটা হলো আকীদা।

আপনি এই কথায় অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করলেন ও মুখে স্বীকার করলেন → এটা হলো ঈমান।

উলামায়ে কেরামগন বলেন:
«العقيدة أساس الإيمان»
"আকীদা হলো ঈমানের ভিত্তি।"

কুরআনও এই পর্যায়ক্রম মেনে চলে:
❝فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ❞ (সূরা মুহাম্মদ: ১৯)
"জানো! যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।"
— এখানে প্রথমে ‘জানো’ (علم)—মানে আকীদা জেনো, তারপর ঈমান আনো।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

(০৩)
মুজমাল হলো সংক্ষেপ। 
আর মুফাসসাল হলো বিস্তারিত।  
ঈমানে মুজমাল :

امنت بالله كما هو باسمائه وصفاته وقبلت جميع احكامه و اركانه

উচ্চারাণঃ- আমানতু বিল্লাহি কামা হুয়া বি আসমায়িহী ওয়া ছিফাতিহী ওয়াক্বাবিলতু জামিয়া আহ্কামিহী ও আরকানিহী।
অর্থঃ- সর্বমহান সুন্দর নাম ও গুণ বিশিষ্ট আল্লাহ্ তা'আলার উপর ঈমান আনলাম এবং তাঁর আদেশাবলী ও নিষেধসমূহ মেনে নিলাম।

ঈমানে মুফাসসাল :
امنت بالله وملئكته وكتبه ورسله واليوم الاخر والقدر خيره وشره من الله تعالى والبعث بعد الموت

উচ্চারণঃ-
আমানতু বিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহী ও কুতুবিহী ওয়াল ইয়াওমিল আখিরী ওয়াল ক্বাদরী খইরিহী ওয়া শাররিহী মিনাল্লাহি তা'আলা ওয়াল বা'ছি বা'দাল মাউত।
অর্থঃ-
প্রথমত- আমি ঈমান আনলাম আল্লাহ তা'আলার উপর;
দ্বিতীয়ত- ঈমান আনলাম তাঁর ফেরেশতারগণের উপর;
তৃতীয়ত- ঈমান আনলাম তাঁর কিতাব সমূহের উপর;
চতুর্থত- ঈমান আনলাম তাঁর রাসূলগণের উপর;
পঞ্চমত- ঈমান আনলাম আখিরাতের উপর;
ষষ্ঠত- ঈমান আনলাম তাক্বদীরের উপর;
সপ্তমত- ঈমান আনলাম মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার উপর।


মুজমাল সংক্রান্ত আয়াতঃ 
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ      

তরজমা: রাসূল ঈমান আনয়ন করেছেন ঐ সকল বস্তু সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও। সবাই ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর নবীগণের প্রতি। তারা বলে, আমরা তাঁর নবীগণের মাঝে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা আরো বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা আপনার নিকট ক্ষমা চাই, ওহে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সকলেই আপনারা দিকে প্রত্যাবর্তন করি। [সূত্র : সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৫।]

তারই বিস্তারিত হলো ঈমানে মুফাসসালঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ    

وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا     

“যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের ওপর এবং তাঁর রাসূলগণের ওপর ও কিয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে”। [সূত্র: সূরা নিসা, আয়াত ১৩৬।

হাদীসে জিবরাঈলে উল্লেখ আছে, হযরত জিবরাঈল আ. আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ছদ্মবেশে এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ

اَنْ تُؤ مِنَ بِا للّهِ وَمَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه والْيَؤمِ الاَخِرِ وَتُؤْمِنُ بِا لْقَدْرِ خَيْرِه وَ شَرِّه

ঈমানের হাকীকত হলো, তুমি মনে-প্রাণে বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তা‘আলার ওপর, তাঁর ফেরেশতাগণের ওপর, আসমানী কিতাবসমূহের ওপর, আল্লাহ তা‘আলার নবী-রাসূলগণের উপর, কিয়ামত দিবসের ওপর এবং তাকদীরের ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হওয়ার ওপর।  [সূত্র: বুখারী খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২ ও মুসলিম। মিশকাত শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১১] 

উল্লেখিত আয়াত ও অত্যন্ত প্রসিদ্ধ এ হাদীসটি ‘ঈমানে মুফাসসাল’-এর ভিত্তি। ঈমানে মুফাসসালের মাধ্যমে এ কথাগুলোরই স্বীকৃতি জানানো হয় এবং মনে-প্রাণে বদ্ধমূল বিশ্বাসের ঘোষণা করা হয় যে,

أَ مَنْتُ باِ للهِ وَ مَلأَئِكَتِه وَ كُتُبِهِ وَرُسُلِه وَالْيَوْ مِ الأخِرِ وَالقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ ا للهِ تَعَالي والْبَعْثِ بَعْدَا لْمَوْتِ

আমি ঈমান আনলাম বা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বিশ্বাস করলাম-১. আল্লাহ তা‘আলাকে, ২. তাঁর ফেরেশতাগণকে, ৩। তাঁর প্রেরিত সকল আসমানী কিতাবকে, ৪. তাঁর প্রেরিত সকল নবী-রাসূলকে, ৫. কিয়ামত দিবসকে অর্থাৎ সমস্ত বিশ্বজগত একদিন শেষ হবে, তাও বিশ্বাস করি, ৬। তাকদীরকে বিশ্বাস করি অর্থাৎ জগতে ভালো-মন্দ যা কিছু হয়, সবই আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্ট, তাঁরই পক্ষ হতে নির্ধারিত এবং মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিন পুনর্বার জীবিত হতে হবে, তাও অটলভাবে বিশ্বাস করি। 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
৬ টি বিষয় তো রুকন,এগুলো মৌলিক বিষয়। 
আর কুরআন হাদীসের অন্যন্য বিষয় কিছুটা শাখাগত।

সব বিষয়ের প্রতিও বিশ্বাস রাখতে হবে।

সুতরাং একজন মুসলমানিকে ঈমানের ৬ টি রুকনের উপর বিশ্বাস রাখার পাশাপাশি কুরআন ও হাদীসে বিশ্বাস সম্পর্কিত যা যা আছে ঐ সব বিষয়ের প্রতিও বিশ্বাস রাখতে হবে।

বিস্তারিত জানুনঃ  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...