আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
48 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (7 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আমি এক হতভাগী মা। আমার একটি ছেলে সন্তান আছে, ১৮ মাস বয়স। আমাদের তালাক হয়েছে, বাচ্চার বাবার ২য় স্ত্রী আছে। তালাকের পরও আমি বাচ্চাকে নিয়ে এই সংসারেই ছিলাম, এখন চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিছু প্রশ্ন আমার জানার আছে, দয়া করে পয়েন্ট আকারে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন ইনশাআল্লাহ।
১) আমার বাচ্চা বুকের দুধ পান করে না। আমার বাবা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, আমার ভরনপোষন চালানোর সামর্থ্য আমার বাবার নেই। তাই বাচ্চার বাবা চায় বাচ্চাকে তিনি নিজের দায়িত্বে রাখবেন, তার ২য় স্ত্রী ও আমার সন্তানকে দেখে রাখবে বলেছে। সবদিক বিবেচনা করে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাচ্চাকে তাদের কাছে দিয়ে আমি চলে যাবো, এতে কী আমি গুনাহগার হবো?

২) আমার অনেক স্বপ্ন ছিল বাচ্চাকে দ্বীনের পথে মানুষ করবো।বাচ্চার বাবাও তাই চায়,কিন্তু তাদের দ্বীনের বুঝ নেই। ৫ ওয়াক্ত সালাত সঠিকভাবে আাদায় করেনা। যদি বড় হবার পর বাচ্চাটা দ্বীন থেকে দুরে সরে যায় তবে কী তার দায়ভার আমার উপরও পড়বে?

৩) আমি কী আর আমার সন্তানের মা থাকবো না? কেয়ামতের দিনে কী আমি আমার সন্তানের মা থাকবো?
৪) সন্তানের রিজিক কী নির্ধারিত? মানে ও কতটুকু খাবে, কতটুকু ঘুমাবে এটা কী নির্ধারিত? যেহেতু সে তার নতুন মায়ের কাছে থাকবে, তাই আমার ভয় হয় যে সময়মতো খাবার পাবে কী না, ঘুম পরিপূর্ণ হবে কী না। একটু ক্লিয়ার করবেন প্লিজ, ওর রিজিকে যতটুকু লেখা আছে ও কী তাই পাবে?
৫) আমি মানসিকভাবে ভেঙে পরেছি। দুনিয়ার এই জিন্দেগীতে সবকিছু হারিয়েছি। আঁকড়ে ধরে বাঁচার মতো কিছু নেই আমার। একাকীত্বকে সঙ্গী করে কীভাবে বাঁচবো আমি? আমাকে উত্তম নসিহত করবেন উস্তায।

৬) ছোটবেলায় না বুঝে মাকে কষ্ট দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বদ দোয়া করেছিলেন,আমি তাকে যে পরিমাণ কাঁদিয়েছি,তার চেয়ে বেশি আমাকে কাঁদতে হবে। আমার মায়ের দোয়া কবুল হয়েছে, সবকিছু হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার মা একজন অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষ। এই বদদোয়া থেকে পরিত্তানের উপায় কী?

৭) আমার বাবা নিম্ন শ্রেণির মানুষ। সমাজে আমাদেরকে হেয় চোখে দেখা হয়। কোনো বিবাহের প্রপোজাল আসলে ইচ্ছাকৃত বদনাম করে ভেঙে দেওয়া হয়। আমি ডিভোর্সি, সমাজে এখনো কেউ জানেনা। আমার বয়স খুব বেশি নয়, আমাকে অন্য কোথাও বিয়ে করে নিতে হবে, কিন্তু সমাজের মানুষ তা কখনোই হতে দিবে না, বদনাম করবে। তো সম্মান বাঁচানোর জন্য, বদনাম থেকে বাঁচার জন্য, আমার বাবা - মা সমাজে বলতে চায় যে আমার স্বামী এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। আমি বাচ্চার বাবাকে এই কথা জানিয়েছি, তিনি বলেছেন তার কোনো সমস্যা নেই, যদি এই কথা বলার দরুন আমাদের ভালো হয়, তবে যেনো তাই বলি। যেহেতু আমাদের আলাদা জেলা তাই এলাকার মানুষজন খোঁজও নিতে পারবেনা। কিন্তু উস্তায এই মিথ্যা কথা বলা কী ঠিক হবে?

1 Answer

0 votes
by (658,350 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
শরীয়তের বিধান মতে তালাকের পর স্ত্রী যদি অন্যত্রে বিবাহ না বসে,এ শর্তে সন্তান ছেলে হলে ৭ বছর,মেয়ে হলে ৯ বছর পর্যন্ত তার লালন পালন স্ত্রী তথা সন্তানের মা করতে পারবে।
এটি তার হক,তবে তিনি অন্যত্রে বিবাহ বসলে তার হক আর থাকবেনা।

আবু দাউদ শরীফের ২২৭৬ নং হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ السُّلَمِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، عَنْ أَبِي عَمْرٍو يَعْنِي الْأَوْزَاعِيَّ، حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ امْرَأَةً قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ ابْنِي هَذَا كَانَ بَطْنِي لَهُ وِعَاءً، وَثَدْيِي لَهُ سِقَاءً، وَحِجْرِي لَهُ حِوَاءً، وَإِنَّ أَبَاهُ طَلَّقَنِي، وَأَرَادَ أَنْ يَنْتَزِعَهُ مِنِّي، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنْتِ أَحَقُّ بِهِ مَا لَمْ تَنْكِحِي 

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। একদা এক মহিলা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এই সন্তানটি আমার গর্ভজাত, সে আমার স্তনের দুধ পান করেছে এবং আমার কোল তার আশ্রয়স্থল। তার পিতা আমাকে তালাক দিয়েছে। এখন সে সন্তানটিকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চাইছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি অন্যত্র বিয়ে না করা পর্যন্ত তুমিই তার অধিক হকদার।
(আহমাদ, হাকিম। ইমাম হাকিম ও যাহাবী বলেন: সনদ সহীহ।)

সাত বছর ছেলে সন্তানের আর নয় বছর মেয়ে সন্তানের মা তার লালন পালন করতে পারবে,খরচ দিবে তার পিতা।
,
তবে শর্ত হলো তার মা অন্যত্রে বিবাহ না বসা।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১০/১৪৩)
,
যদি বিবাহ হয়ে যায়,তাহলে তার মায়ের হক আর থাকবেনা।
যদি মা খারাপ পথে যায়,তাহলে মেয়ে সন্তানের নয় বছর পর্যন্ত সন্তানের নানি (নানি মারা গেলে সন্তানের দাদি) তার লালন পালন করতে পারবে।

ছেলে সন্তান সাত বছর আর মেয়ে সন্তান নয় বছর হওয়ার পার তার লালন পালনের দায়িত্ব তার পিতার।
এক্ষেত্রে কেউই তার হক নষ্ট করতে পারবেনা।
,
والحاضنۃ أمّا أو غیرہا أحق بہ أي بالغلام حتی یستغنی عن النساء وقدر بسبع وبہ یفتی؛ لأنہ الغالب۔ (شامي ۳؍۵۶۶ کراچی) 
সারমর্মঃ এক্ষেত্রে ফতোয়া হলো সাত বছরের উপর।
  
والأم والجدۃ أحق بہا بالصغیرۃ حتی تحیض أي تبلغ۔ (الدر المختار مع الشامي ۵؍۲۶۸ زکریا)
সারমর্মঃ
সন্তান বালেগ হওয়া পর্যন্ত তার হকদার তার মা এবং নানি দাদি।  

والأم والجدۃ لأم أو لأب أحق بہا بالصغیرۃ حتی تحیض أي تبلغ في ظاہر الروایۃ۔ (الدر المختار ۳
؍۵۶۶ کراچی، شامي ۵؍۲۶۸ زکریا)

সারমর্মঃ সন্তানের হকদার তার মা এবং নানি দাদি,তার হায়েজাহ তথা বালেগ হওয়া পর্যন্ত।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনি যদি নিজ ইচ্ছায় বাচ্চাকে তাদের কাছে দিয় চলে যান, এতে আপনি গুনাহগার হবেননা।

(০২)
প্রশ্নের বিবরণ মতে তার দায়ভার আপনার উপর বর্তাবেনা।
তবে আপনি বাচ্চার সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবেন এবং তাকে যথাযথ ভাবে দ্বীনের পথে চলার নির্দেশ দিবেন।

(০৩)
দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বক্ষেত্রেই আপনি উক্ত সন্তানের মা থাকবেন।

(০৪)
হ্যাঁ,দুনিয়ার সকল মানুষের ন্যায় তার রিজিকও নির্ধারিত।

ও কতটুকু খাবে, কতটুকু ঘুমাবে এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।

ওর রিজিকে যতটুকু লেখা আছে ও তাই পাবে।

(০৫)
একাকীত্বকে সঙ্গী না বানিয়ে তালাক পরবর্তী ইদ্দত পালন শেষে অন্যত্রে বিবাহ বসার পরামর্শ থাকবে। 

এতে দ্বীনের উপর অটল অবিচল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে।

(০৬)
আপনি আপনার মায়ের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইবেন এবং বলবেন যে তিনি যেন মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে  অভিশাপের বিপরিত তার জন্য ভালো কিছু চান।

পাশাপাশি আপনিও আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।

ইনশাআল্লাহ একদিন সব কিছু ভালো হয়ে যাবে।

আপনি আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন,ইনশাআল্লাহ। 

(০৭)
এক্ষেত্রে যে পাত্রের সাথে বিবাহ বসবেন সে যদি পরবর্তীতে উক্ত বিষয় এর সত্যতা সম্পর্কে জানতে না পারে, তাহলে এ ধরনের কথা যদি আপনি বলেন, আশা করি আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উক্ত মিথ্যা বলার দরুন ক্ষমা করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...