আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
23 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)

আমি একজন বিবাহিত নারী। বিয়ের পর থেকে আমার স্বামীর চরিত্রগত অনেক সমস্যা প্রকাশ পায়— যেমন অনলাইন জুয়া খেলা, অর্থ আত্মসাৎ, মানসিক অবহেলা, দাম্পত্য অধিকার পালনে অনীহা, এবং আমাকে একাধিকবার মানসিক ভঙ্গুর অবস্থায় ফেলে দেওয়া।

এই পরিস্থিতিতেও আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তাকে সংশোধনের জন্য একাধিকবার সুযোগ দিয়েছি, সে সংশোধন হয়নি । কিন্তু আজ বিয়ের পাঁচ বছর পর এবং আমাদের একটি ছোট মেয়ে থাকা অবস্থায় আমি বুঝতে পারছি, তার প্রতি আমার আর কোনো আবেগ, ভালোবাসা, বা মানসিক প্রশান্তি কাজ করে না। তার পাশে থেকেও আমি নিজেকে ভীষণ একা অনুভব করি।

বর্তমানে এই সম্পর্ক শুধুই কাগজে-কলমে টিকে আছে বলে মনে হয়। আমি আলাদা হয়ে যেতে চাই, কিন্তু ভয় হয়—এই সিদ্ধান্তে কি আমি গোনাহগার হবো? আল্লাহ কি এতে আমার ওপর অসন্তুষ্ট হবেন? নাকি এটিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা মনে করে নিজের অন্তরকে মেরে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা উচিত?

উল্লেখ্য, আমার স্বামী এখন কিছুটা সংশোধনের চেষ্টা করছে এবং বিগত কয়েক মাসে তার আচরণে সামান্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সে আমাকে ছাড়তে রাজি নয় এবং সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য বারবার অনুরোধ জানাচ্ছে।

তবে তাকে তার পরিবার গৃহবন্দী অবস্থায় রেখেছে যেন সে আবার পুরনো অভ্যাসে না ফিরে যায়। বর্তমানে সে বেকার এবং তার পরিবার আমাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে। যদি ভবিষ্যতে তাকে আবার স্বাধীনতা দেওয়া হয় (যেমন— ব্যবসা করার সুযোগ বা বিদেশে যাওয়ার অনুমতি), সে আবার পুরনো অভ্যাসে ফিরে যেতে পারে— এই আশঙ্কা সবাই করছে। তাই কেউই নিশ্চিতভাবে তাকে ভরসা করতে পারছে না।

এই অবস্থায় দ্বীনের আলোকে আমার জন্য করণীয় কী? আমি কি আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারি? এতে কি আমি গোনাহগার হবো?<!--/data/user/0/com.samsung.android.app.notes/files/clipdata/clipdata_bodytext_250726_195736_906.sdocx-->

1 Answer

0 votes
by (649,470 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া কোন মহিলা তার স্বামী থেকে তালাক চাওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلَاقًا فِيْ غَيْرِ مَا بَأْسٍ ؛ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْـجَنَّةِ.

‘‘যে কোন মহিলা কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া নিজ স্বামীর নিকট তালাক চাইলো তার উপর জান্নাতের সুগন্ধি হারাম হয়ে যাবে’’। (আবূ দাউদ ২২২৬; তিরমিযী ১১৮৭; ইব্নু মাজাহ্ ২০৫৫)

ইসলামী স্কলারগন বলেছেন, যেসব কারণে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে তা হলোঃ-

★যদি কোনো বাস্তবসম্মত কারণে উভয়ের পক্ষে একসঙ্গে বসবাস করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে।

★যদি স্বামীর মাঝে দৈহিক এমন ত্রুটি থাকে, যার কারণে দাম্পত্যজীবনের স্বাভাবিকতা খুবই দুরূহ হয়ে যায়। যেমন—পাগল হওয়া, যৌন অক্ষম হওয়া, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়া। 
বলা বাহুল্য, স্বামীর মাঝে উক্ত ত্রুটিগুলো থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে ভালোভাবে রাখা সম্ভব নয়।

★স্বামী স্ত্রীর আবশ্যকীয় জরুরত তথা ভরণ-পোষণ দিতে অক্ষম হলে। কেননা, এটা স্ত্রীর মৌলিক অধিকার। 

★শরিয়ত নির্দেশিত কারণ ছাড়া স্বামী স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া বা জুলুম করা।

এটা শারীরিকভাবেও হতে এবং মানসিকভাবে হতে পারে। যেমন—স্ত্রীকে মারধর করা, গালাগাল করা, স্ত্রীকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে দেখা সাক্ষাতে বাধা প্রদান করা, বেপর্দা কিংবা হারাম কাজে স্ত্রীকে জোরপূর্বক বাধ্য করা। 

★স্বামীর মধ্যে দ্বিনদারির প্রতি অবহেলা চরম পর্যায়ের হলে। যেমন—নামাজ না পড়া, মদ পান করা, পরকীয়া কিংবা চারিত্রিক অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হওয়া। 

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরণ মতে স্বামী যদি আপনার ভরনপোষণ এর ব্যবস্থা না করতে পারে, আপনার অধিকার আদায় না করে,সেক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান অনুসারে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে পারেন।

অর্থাৎ স্বামী কর্তৃক তালাকের অধিকার পেয়ে থাকলে নিজের নফসের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারেন।

স্বামী কর্তৃক তালাকের অধিকার না পেয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে স্বামীর কাছে তালাক চাইতে পারেন।
তালাক না দিলে আদালতের কাছে খোলা তালাকের আবেদন করতে পারেন। 

তবে এক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে, যেহেতু বর্তমানে আপনার স্বামীর আচরণে সামান্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সে আপনাকে ছাড়তে রাজি নয় এবং সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য বারবার অনুরোধ জানাচ্ছে,সুতরাং এমতাবস্থায় তাকে সুযোগ দিতে পারেন।

স্বামীর অন্তরে আপনার মুহাব্বত জাগানোর জন্য করনীয় কাজ গুলি করতে পারেন।
এ সংক্রান্ত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (2 points)
হুজুর, আপনার উত্তর পড়ে শুকরিয়া জানাচ্ছি। তবে একটা দ্বিধা এখনো থেকেই যাচ্ছে।

আপনি বলেছেন—তার পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাই তাকে আরেকটু সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
এই সামান্য পরিবর্তন কতটা স্থায়ী হবে তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। সে অতীতে বহুবার এমন ভঙ্গুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু পরে আবার ভেঙে পড়েছে।

বর্তমানে সে নিজে ভরণপোষণ না করলেও তার পরিবার সেটা করছে। কিন্তু এটা কি আসলে স্বামীর দায়িত্ব পালনের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—তার প্রতি আমার মনে আর কোনো ভালোবাসা বা আবেগ অবশিষ্ট নেই। সে ফেরেশতা হয়ে গেলেও, আমি যে মানসিক ক্ষত আর অবহেলার ভিতর দিয়ে গিয়েছি, সেটা কি ভুলে গিয়ে আবার এই সম্পর্কে ফিরে যেতে পারবো?

যদি আমি এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখি কেবল দায় থেকে বা শিশুকে বাবার পরিচয়ে রাখার জন্য, কিন্তু নিজে প্রতিনিয়ত বিষণ্নতা আর অভ্যন্তরীণ মৃত্যুর মতো যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকি—তাহলে কি সেটা শরিয়তসম্মত হবে?

আমি দ্বীন মোতাবেক জানতে চাই,
মানসিক শান্তি, ভালোবাসাহীনতা, আস্থা সংকট এবং আত্মিক যন্ত্রণার মতো বিষয়ের ভিত্তিতে কি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা জায়েয হবে?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...