আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,009 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ শায়েখ

আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা যে যে ফেরেশতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন যেমন:মালাকুল মউত(আলাইহিস সালাম), মিকাইল আলাইহিস সালাম
,প্রশ্ন হচ্ছে পৃথিবীতে একসাথে অনেকে মানুষ এবং প্রাণীর জান কবজের দায়িত্ব দিয়েছেন আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা মালাকুল মউত(আলাইহিস সালাম) কে,এবং কবরে প্রশ্নউত্তর করার জন্য মুনকার নাকীর দুইজন ফেরেশতা যে প্রশ্নসমূহ করে থাকেন,তারা কি একসাথে সকল মৃতের কবরে প্রশ্ন করেন নাকি? নাকি তাদের অধীনস্থ ফেরেশতারা করে থাকেন?
মালাকুল মউত এর অধীনস্ত ফেরেশতারা নাকি সকল প্রানী এবং মানুষ এর জান কবজ করেন?এটি কি সত্যি??

হাজির নাজির শব্দের অর্থ কি শায়েখ?

অজুতে নাকে পানি দেয়া কি ফরজ?
মুখমণ্ডল ধোয়ার সাথে নাকে পানি দেয়া ও কি ফরজ?

মালাকুল মউত কি সকল উদ্ভিদ,প্রানী এবং মানুষের জান কবজ করেন??

1 Answer

0 votes
by (573,960 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
কুরআনে কারিমে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,

 حَتَّىَ إِذَا جَاء أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لاَ يُفَرِّطُونَ 

অর্থাৎ অবশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরীতরা তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা কোনো ত্রুটি করে না। [সুরা আনআম : ৬১] 

এ আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনে আবি হাতেম ও ইবনে আবি শায়বা রহ. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণনা করেন যে, উক্ত আয়াতে কারিমার মাঝে رسل (রুসুল) শব্দ দ্বারা রুহ কব্জ করার সময় আযরাইলের সঙ্গে উপস্থিত সহকারী ফিরিশতাগণকেই বুঝানো হয়েছে। 

হযরত রবি ইবনে আনাস রহ. বলেন, রুহ কব্জ করার সময় মালাকুল মাউতের সঙ্গে তাঁর সহকারী হিসেবে একদল ফিরিশতা উপস্থিত থাকেন। কিন্তু হযরত আযরাইল আ.-ই মূল দায়িত্ব পালন করেন। রুহ কব্জ করার পর রুহকে রহমতের ফিরিশতা অথবা আযাবের ফিরিশতার হাতে সোপর্দ করেন। 

তাঁদেরকে সোপর্দ করা এই কাজে এবং আত্মাকে হেফাযত করার ব্যাপারে কোন ত্রুটি করেন না। বরং এই ফিরিশতা মৃত্যুবরণকারী যদি নেক হয়, তাহলে তার আত্মাকে ‘ইল্লিয়্যীন’-এ এবং সে যদি পাপী হয়, তাহলে তার আত্মাকে ‘সিজ্জীন’-এ পাঠিয়ে দেন।
আরো জানুনঃ 
,
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, বারা বিন আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “...মুমিন বান্দা যখন দুনিয়াকে বিদায় দিয়ে আখিরাতের যাত্রী হতে থাকে, তখন উজ্জ্বল চেহারাবিশিষ্ট একদল ফেরেশতা আসমান থেকে তার কাছে আসেন। যাঁদের চেহারা সূর্যের মতো। তাঁদের সঙ্গে বেহেশতের কাফনসমূহের একটি কাফন থাকে। বেহেশতের সুগন্ধিগুলোর একটি তাঁদের সঙ্গে থাকে। তাঁরা সে ব্যক্তি থেকে দৃষ্টির দূরত্ব পরিমাণ দূরে অবস্থান করেন। এরপর মালাকুল মাউত (মৃত্যুর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা) আসেন। তিনি তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে পবিত্র আত্মা! বের হয়ে এসো আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে। রাসুল (সা.) বলেন, তখন তার রুহ বের হয়ে আসে যেমনভাবে মশক থেকে পানি বের হয়ে আসে। তখন মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে গ্রহণ করেন এবং এক মুহৃর্তের জন্যও ফেরেশতারা তাকে মৃত্যুর ফেরেশতার হাতে থাকতে দেন না; বরং তাঁরা নিজেরাই তাকে গ্রহণ করেন এবং তাকে ওই কাফনের কাপড় ও ওই সুগন্ধির মাঝে রাখেন। ফলে তার থেকে পৃথিবীর সব সুগন্ধির চেয়ে উত্তম মেশকের সুগন্ধ বের হতে থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, তাকে নিয়ে ফেরেশতারা ওপরে উঠতে থাকেন...।’

ইবনুল কাইয়েম (রহ.) ‘ইলামুল মুওয়াক্কিঈন’ নামক কিতাবে (১/২১৪) এবং শাইখ আলবানি (রহ.) কিতাবুল জানাইজে (পৃষ্ঠা নং ১৫৯) এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন। এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে মালাকুল মাউত তথা প্রাণ হরণের প্রধান দায়িত্বশীল ফেরেশতার সঙ্গে আরো সহযোগী ফেরেশতা রয়েছেন।
,
রুহ কবজ করার প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা হলেন মালাকুল মাউত। কিন্তু তাঁর সহযোগী বহু ফেরেশতা আছেন। তাঁরা মালাকুল মাউতের নির্দেশে এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, তোমাদের জান কবজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ফিরে যাবে।’ (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ৩২)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মাত্র একজন ফেরেশতার কথা বলেছেন। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যারা নিজের প্রতি অবিচার করে, ফেরেশতারা তাদের রুহ কবজ করে বলে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে...?’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৭)

এ আয়াতে রুহ কবজকারী ফেরেশতার ক্ষেত্রে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। অনুরূপ বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে সুরা মুহাম্মদের ২৭ আয়াতসহ আরো একাধিক আয়াতে। এর আলোকে বোঝা যায়, জান কবজকারী মালাকুল মাউতের সঙ্গে বহু ফেরেশতা রয়েছেন। 
,
(০২)
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْل الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ الْعَبْدَ اِذَا وُضِعَ فِيْ قَبْرِهِ وَتَوَلَّي عَنْهُ اَصْحَابُهُ اِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ اَتَاهُ مَلَكَانِ فَيَقْعُدَانِهِ فَيَقُوْلَانِ مَاكُنْتَ تَقُوْلُ فِيْ هذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ فَاَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُوْلُ اَشْهَدُ اَنَّهُ عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ فَيُقَالُ لَهُ اُنْظُرْ اِلَي مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدَ اَبْدَلَكَ اللهُ بِهِ مَقْعَدًا مِّنَ الْجَنَّةِ فَيَرَاهُمَا جَمِيْعًا وَاَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُفَيُقَالُ لَهُ مَاكُنْتَ تَقُوْلُ فِيْ هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُوْلُ لَااَدْرِيْ كُنْتُ اَقُوْلُ مَايَقُوْلُ النَّاسُ فَيُقَالُ لَهُ لَادَرَيْتُ وَلَاتَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقِ مِنْ حَدِيْدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيْحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيْهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ.

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীগণ সেখান হ’তে ফিরতে থাকে, তখন সে তাদের পায়ের শব্দ শুনতে পায়। তাদের ফিরে যেতে না যেতেই তার নিকট দু’জন ফেরেশতা চলে আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। তার পর নবী করিম (সা.) -এর প্রতি ইশারা করে জিজ্ঞেস করেন তুমি দুনিয়াতে এ ব্যক্তি সম্পর্কে কি ধারণা করতে? মুমিন ব্যক্তি তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর দাস এবং তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, এই দেখে লও জাহান্নামে তোমার স্থান কেমন জঘন্য ছিল। আল্লাহ তোমার সেই স্থানকে জান্নাতের সাথে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তখন সে উভয় স্থান দেখে এবং খুশি হয়। কিন্তু মৃতু ব্যক্তি যদি মুনাফিক বা কাফের হয় তখন তাকে বলা হয়, দুনিয়াতে তুমি এ ব্যক্তি সর্ম্পকে কি ধারণা করতে? তখন সে বলে আমি বলতে পারি না। মানুষ যা বলত আমিও তাই বলতাম, (প্রকৃত সত্য কি ছিল তা আমার জানা নেই)। তখন তাকে বলা হয়, তুমি তোমার বিবেক দ্বারা বুঝার চেষ্টা করনি কেন? আল্লাহর কিতাব পড়ে বোঝার চেষ্টা করনি কেন? অতঃপর তাকে লোহার হাতুড়ি দ্বারা এমনভাবে পিটাতে শুরু করে। পিটানির চোটে সে হাউমাউ করে বিকটভাবে চিৎকার করতে থাকে। আর এত জোরে চিৎকার করে যে, মানুষ ও জিন ব্যতীত সব কিছুই তার চিৎকার শুনতে পায় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১১৯)।

★কবরে যেই ফেরেশতাই আসুক,তাদের একজনকে মুনকার বলা হবে,২য় জনকে নাকির বলা বলা হবে।
,
তারা নির্দিষ্ট ২ জন নয়।
,
(০৩)
হাজির ও নাজির উভয় শব্দই আরবী। হাজির অর্থ হল উপস্থিত। আর নাজির অর্থ হল দ্রষ্টা। তথা যিনি দেখেন।
,
(০৩)
অযুতে মুখমণ্ডল ধোয়ার সময় নাকে পানি দেয়া সুন্নাত।
,
(০৪)
সকল প্রানীর জান কবজের দায়িত্ব মালাকুল মউতকে মহান আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...