আসসালামু আলাইকুম
আমার স্বামীর একটা মুদি দোকান আছে,দোকান থেকে যা ইনকাম হয় তার প্রায় সব ইনকাম পাওনাদারদের কে প্রতিদিন দিয়ে দিতে হয়। স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা এমন যে প্রতিমাসে ঘর ভাড়ার টাকা পরিশোধ করার জন্য অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করে এনে ভাড়া দিতে হয়। প্রতিদিনই দিন আনে দিন খাওয়ার মত। প্রতিদিনই ১/২ কেজি চাল কিনে আনতে হয়। ৪/৫ বছর যাবতই স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। আমি এতদিন অনেক ধৈর্য ধারন করেছি কিন্তু আমার সন্তানের কথা চিন্তা করলে আমি আর নিজের ধৈর্য ধরে রাখতে পারিনা। সন্তানকে একটু ভালো খাবার খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিনই স্বামীর সাথে একপ্রকার বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হতে হয় আমাকে। আমার মূল ব্যক্তব্য হল,সপ্তাহে বা মাসে একটু মাছ/মাংস কিনে আনতে পারে কিন্তু দেখা যায় সেটাও অনেক বলার পর গিয়ে স্বামী কিনে আনে সবটাকা পাওনাদারকে দিয়ে দেয়। আমি মা হয়ে কিভাবে সহ্য করি চোখের সামনে সন্তান দিনের পর দিন ভালো খাবারের কষ্ট করবে! দুনিয়ার সব মাদের মত আমিও চাই আমার সন্তান ভালো খাক,ভালো থাকুক কিন্তু সেটা অবশ্যই হালাল উপায়ে। আমি আমার স্বামীকে সর্বদা বলি আল্লাহর কাছে ঋনমুক্তির জন্য দোয়া করতে,আল্লাহর কাছে হালাল রিজিক চাইতে কিন্তু সে কয়েকদিন তাহাজ্জুদ পড়েই আবার ছেড়ে দেয় এবং মানুষের কাছে সাহায্য খুঁজতে থাকে। আমাদের এই বিপদের সময় আত্মীয় স্বজনরা আমাদের খোজখবরও নেয় না। আমার আপন বাবা মা আমার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে শুধুমাত্র স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ দেখে। কিন্তু একটা সময় বাবা মা ভাইবোনদের জন্য স্বামী ইনকামের হাজার হাজার টাকা নষ্ট করেছি। আমাদের এই বিপদের সময় আমার এক খালা কিছু টাকা দিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করে শুরুমাত্র আমার সন্তানের জন্য। খালার উপার্জন মিশ্র তার মূল বেতনের বাহিরে সে তার মালিকের টাকা মালিককে না জানিয়ে নেয়। স্বাভাবিক ভাষায় এটাকে তো চুরি করা বলে যেটা হারাম। খালা ইতোপূর্বে সন্তানের জন্য বিভিন্ন জিনিস হাদিয়া দিয়েছে যেগুলো এখন তাকে ফেতরদেয়া সম্ভব না কারন আমাদের বর্তমান অবস্থা তো দিন আনি দিন খাওয়ার মত। তার হারাম উপার্জনের বিষয়টি এতদিন জানতে পারিনি।মিশ্র উপার্জনের বিষয়টি জানার পর তাকে সরাসরি বলেছি যদি সে আমার সন্তানের জন্য আমাদেরকে সাহায্য করতে চায় তাহলে সে যেন তার মুল বেতন যেটা হালাল সেখান থেকে টাকা দেয়। কিন্তু বলার পরও সে তার মিশ্র উপার্জন থেকেই টাকা দিয়ে যায়। তার দেয়া টাকা বা খাবারের জিনিস নিতে না চাইলেও সে বাসায় জোর করে নিয়ে আসে। কান্নাকাটি করে বলে তোদের জন্য এগুলো আনি না তোদের সন্তানের জন্য আনি। কিন্তু আমিতো মা হয়ে সন্তানকে কোন হারাম স্পর্শ করুক সেটা কখনোই চাই না। তার হারাম উপার্জনের বিষয়টি জানার পর থেকে তার অর্থনৈতিক সাহায্য করার বিষয়ে আমি নিরুৎসাহিত করি কিন্তু সম্প্রতি আমাকে না জানিয়ে আমার স্বামী আমার খালার কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা ধার নেয়। আমাকে না জানিয়ে নেয়ার কারন হলো পূর্বেই স্বামীর অনেক ঋন আছে যেগুলো পরিশোধ করতেই স্বামী হিমশিম খাচ্ছে তারউপর এত বড় এমাউন্ট! এজন্য স্বামী খালাকে বলেছিল আমাকে না জানাতে কিন্তু খালা আমাকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। খালার কাছ থেকে স্বামীর টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার মোটেও ভালো মনে হয়নি কারন আমার কাছে আত্মসম্মানবোধ সবার আগে। স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার পরও আমি তো খালার কাছে টাকা চাইনি স্বামী ছোট হবে এই ভেবে আল্লাহর উপর ভরসা করেছি যে নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিন ফেরাবে। কিন্তু স্বামী টাকা নেয়ার বিষয়টি তার স্ত্রীর কাছে গোপন রেখেছে এটা কি ঠিক করেছে? এটা কি শয়তানের ধোঁয়া নয়? এখন আমার প্রশ্ন হলো,
১.আমার বা আমার স্বামীর কোন সম্পদ নেই,স্বর্নের জিনিস নেই,ব্যাংকে টাকা নেই, এই অবস্থায় আমরা কি খালার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিতে পারবো? একটু ভালো থাকার জন্য? সেটা কি হালাল হবে?
২.খালা বয়স ৫০,আমার স্বামীর নন মারহাম এজন্য আমি সবসময় চাই স্বামী ননমারহাম থেকে দূরে থাকুক কিন্তু খালা স্বেচ্ছায় টাকা ধার দিয়েছে এটা দেখে যে আমার স্বামী এখন অভাবি আর স্বামীও তার টাকা ধারে নিয়েছে এখন এই টাকায় যদি দোকানের মাল তোলে তাহলে কি স্বামীর ইনকাম হালাল হবে? আমার স্বামীর কথা হচ্ছে সুদে টাকা আনলে (পূর্বে একজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছে সেই টাকা এখনও পরিশোধ হয়নি) গুনাহ হবে কিন্তু খালার কাছ থেকে ধার নিলে তো সেটার সুদ দিতে হবে না। কিন্তু খালার উপার্জনের বড় অংশই তো হারাম উপায়ে অর্জন করা। স্বামী যেহেতু এখন অভাবি তাহলে খালার কাছ থেকে টাকা ধার নেয়া কি তার জন্য জায়েজ হবে?
৩.নিরুপায় হয়ে যদি খালার টাকায় কেনা মাছ,মুরগী,সবজি,ফলমূল সন্তানকে খেতে দেই তাহলে সেটা কি আমার আর সন্তানের জন্য হালাল হবে?
৪.আল্লাহর সন্তুষ্টি আর সন্তনকে দ্বীন শেখানোর নিয়তে যদি খালার টাকায় IOM থেকে দ্বীনি ইলম অর্জন করি তাহলে সেটা কি জায়েজ হবে? হালাল হবে? স্বামীর পক্ষে এই টাকা দেয়া বর্তমানে কষ্টসাধ্য। আর আমার তো নিজের কোন টাকা নেই।
৫.স্বামী যদি স্ত্রী সন্তানের মৌলিক চাহিদা পূরন করতে না পারে তাহলে একজন স্ত্রী হিসেবে এবং সন্তানের মা হিসেবে কিভাবে ধৈর্য ধারন করবো? যেন এই ধৈর্যের বিনিময়ে সওয়াব পাই?
৬.আমার খালা টাকা দিয়ে সাহায্য করে ঠিকই কিন্তু মাঝেমাঝে খোটা দেয় স্বামী অভাবি দেখে বিভিন্ন কথা শোনায় এসব কথা আমার আত্মসম্মানে লাগে কিন্তু স্বামী আমার মানসিক দিকটা মোটেও বুঝতে চায়না। প্রায় সময়ই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াবিবাদ হয় শুধুমাত্র টাকা নিয়ে। আমি অন্যের টাকায় জীবনধারণ করতে চাইনা আমি চাই স্বামীর হালাল ইনকামে চলতে কিন্তু স্বামী তার ঋন থেকে মুক্ত হতে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ধার নেয় পাওনাদারদেরকে দেয়ার জন্য। স্বামীকে জোর করে হালাল ইনকাম করাতে চাওয়া কি স্ত্রীর গুনাহের কারন হবে? ১০০ ভাগ হালাল ইনকামের জন্য প্রতিদিনই আমি স্বামীকে কথা শোনাই। এক্ষেত্রে কি আমার গুনাহ হচ্ছে?
৭.আমাকে সঠিক পরামর্শের সাথে কিছু নসীহাও করবেন দয়া করে। আমি হারাম খেতে চাই সন্তানকেও হারাম খাওয়াতে চাইনা। কিন্তু আমি খুবই অসহায় আপন বাবা মা থেকেও তারা যোগাযোগ রাখেনা আবার স্বামীকেও ত্যাগ করতে পারবোনা,সন্তান ছোট হওয়ায় আমার ইনকাম করারও কোন সু্যোগ নেই। নিজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে খুব অসহায়বোধ করছি আর সর্বসক্ষই মনে হয় আমি হারামে জড়িয়ে আছি। স্বামীর ভুলের জন্য হয়ত আমিও পাপী হয়ে যাচ্ছি বা যাবো।