জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।
কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء
মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ
আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)
ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,
فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك
সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)
★ একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)
তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।
কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
যতদিন পর্যন্ত আমাদের মুসলিম দেশ গুলোতে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।
২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১;
★এ শর্ত পুরোপুরি ভাবে মেনে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া জায়েজ আছে।
,
সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ
মক্কা — ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলোর একটি — সেখানে থেকে লেখাপড়া করার সুযোগ নিঃসন্দেহে একটি বড় নিয়ামত। কিন্তু যখন সহপাঠীদের মধ্যে মেল-ফিমেল মিশ্র পরিবেশ থাকে এবং অনেকে অমুসলিমও হন, তখন নিজের ঈমান, চরিত্র ও নৈতিকতা রক্ষা করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
ফিতনা থেকে বাঁচতে করণীয়সমূহ:
১. নিয়ত ও ইখলাস ঠিক রাখা
সর্বপ্রথম নিজের নিয়ত বিশুদ্ধ করতে হবে: আপনি এখানে এসেছেন ইলম অর্জনের জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
নিয়ত ঠিক থাকলে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচা সহজ হয়।
২. দৃষ্টিকে সংযত রাখা (غض البصر)
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:
“মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের যৌন অঙ্গ হেফাজত করে।” (সূরা আন-নূর, ২৪:৩০)
চোখ দিয়ে অনেক ফিতনা শুরু হয়। তাই দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা ফিতনা থেকে বাঁচার বড় উপায়।
৩. ফ্রেন্ডশিপ বা অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এড়িয়ে চলা
বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে না বলা ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব না করা।
রাসূল ﷺ বলেছেন:
"তোমরা কোনো নারী ও পুরুষ যেন একান্তে না থাকো, কারণ তৃতীয়জন হয় শয়তান।" (তিরমিযী)
৪. পরিবেশ ও সঙ্গ বেছে নেওয়া
এমন বন্ধু বেছে নিন যারা দ্বীনদার, সময়মতো সালাত আদায় করে, ভালো কাজে উৎসাহ দেয়।
অমুসলিম বা গাফেল মুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত রাখুন কেবল প্রয়োজনীয় বিষয়েই।
৫. সালাত এবং কুরআনের সাথে সংযুক্ত থাকা
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করুন। এটি ফিতনা থেকে রক্ষা করে।
“নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীলতা ও গোনাহ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত, ২৯:৪৫)
নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত ও অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন।
৬. সময় অপচয় থেকে দূরে থাকা
অলসতা শয়তানের হাতিয়ার। পড়াশোনার সময় ঠিকভাবে ব্যয় করুন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় না কাটান, যেখানে ফিতনার দরজা খোলা।
৭. দু’আ করা
আল্লাহর কাছে সবসময় হেদায়েত ও ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য দু’আ করুন।
রাসূল ﷺ নিয়মিত এই দু’আ করতেন:
اللهم إني أعوذ بك من الفتن ما ظهر منها وما بطن
“হে আল্লাহ! প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ফিতনা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই।”
আপনি এমন একটি জায়গায় আছেন যেখানে “হারাম” এর সুযোগ কম — কিন্তু “আধুনিকতার” নামে অনেক কিছু “নরমালাইজড” হয়ে গেছে। তাই আপনার সচেতনতা, নিয়ত ও আল্লাহভীতি আপনাকে রক্ষা করতে পারে ইনশাআল্লাহ।
আপনি যেহেতু মক্কা প্রদেশে আছেন — এটি এক অমূল্য নিয়ামত! কারণ এখানে এমন কিছু আমল ও ইবাদতের সুযোগ আছে, যা অন্য কোথাও করলে তার তুলনাই চলে না।
★আপনার সময়, ছুটি ও সুযোগ থাকলে যেসব ইবাদত ও নফল আমল করতে পারেনঃ-
১. বায়তুল্লাহতে (মসজিদুল হারাম) বেশি বেশি সালাত আদায় করা
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“এই মসজিদে (মসজিদুল হারাম) এক রাকাত নামাজ, অন্য যেকোনো মসজিদের এক লক্ষ রাকাত নামাজের সমান।” (ইবনে মাজাহ, হাদীস: ১৪০৬)
কাজ শেষে বা ক্লাস না থাকলে মসজিদে হারামে গিয়ে নিয়মিত সালাত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২. বেশি বেশি তাওয়াফ করা
মক্কার বিশেষ ইবাদতগুলোর মধ্যে তাওয়াফ অন্যতম। যেহেতু আপনি লোকাল, আপনার তাওয়াফ করার সুযোগ অনেক বেশি।
প্রতিটি ৭ চক্করের তাওয়াফ ১টি নফল সালাতের সমান — আবার একেকটা তাওয়াফের জন্য ৭০,০০০ ফেরেশতা দো‘আ করে।
চাইলে আপনি প্রতি শুক্রবার বা ছুটির দিনে একাধিক তাওয়াফের নিয়ত করতে পারেন।
৩. মাক্কীর প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থানে যিয়ারত ও ইবাদত
উদাহরণ:
জাবালে নূর (হেরা গুহা): প্রথম ওহি যেখানে নাজিল হয়।
জাবালে সাওর: হিজরতের সময় নবী ﷺ যে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
জান্নাতুল মুআল্লা: খদীজা (রাঃ), আবু তালিব, এবং অন্যান্য সাহাবাদের কবর।
এই জায়গাগুলো শুধু ইতিহাস নয়, এখানে গিয়ে আপনি কবর জিয়ারতের দো‘আ, তাওবা, চোখের পানি সহ দো‘আ করতে পারেন।
৪. ওমরা করা (যেকোনো সময়ে, বারবার)
মক্কা বাসিন্দা হিসেবে আপনি চাইলে মাসে একাধিকবারও উমরা করতে পারেন।
উমরার জন্য আপনাকে শুধু হিল অঞ্চলের বাইরে গিয়ে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা লাগবে (যেমন: মসজিদে আয়েশা, তানঈম)।
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“এক ওমরা থেকে আরেক ওমরা — মাঝখানের গুনাহ মোচনের কারণ।” (বুখারি)
৫. রোযা রাখা
সুন্নাহ অনুযায়ী:
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা
আরাফার দিন (যদি হজে না থাকেন)
আশুরা (১০ মহররম) + ৯ অথবা ১১ মহররম
এছাড়া চাইলে মাঝে মাঝে ৩ দিন (১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) আইয়্যামে বীয রোযা রাখতে পারেন।
৬. সালাতুল দুহা।
সকাল ৯টা-১১টার মধ্যে ২, ৪, ৬ বা ৮ রাকাত পড়া যায়।
ফজিলত:
“প্রতিদিন শরীরের ৩৬০টি জোড়া হাড্ডির শোকর আদায় হিসেবে দুহা সালাত যথেষ্ট।” (মুসলিম)
৭. ইতিকাফ (বিশেষ করে রমজানে)
রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফের ফজিলত অনেক।
৮. কুরআন তিলাওয়াত ও হিফজ (সময় মতো)
প্রতিদিন কিছু সময় নির্ধারণ করুন:
তিলাওয়াত, অর্থ বোঝা, হিফজ বা রিভিশন
৯. ইলম চর্চা ও তালিবুল ইলমদের সঙ্গে সময় কাটানো
হারাম শরীফে ও বাইরের অনেক জায়গায় হাদীস, তাফসীর, ফিকহ বিষয়ে হালকা ক্লাস হয়। সেখানে অংশগ্রহণ এর চেষ্টা করবেন।
জুমু'আর দিন সুরা কাহফ পাঠ
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যার যিকির।
সালাতের পর নিয়মিত যিকির
আল্লাহর ৯৯ নাম মুখস্থ করা ও অর্থ বোঝা
আত্মসমালোচনার মাধ্যমে তাওবা ও ইস্তিগফার
★আপনি যেখানে আছেন, সেটি হলো ইবাদতের রাজপথের কেন্দ্রবিন্দু। এই সময়টা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগান, তাহলে কিয়ামতের দিন অনেককে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।