আসসালামু আলাইকুম। আমি জানতে চাই
১)একজন মেয়ে বিয়ের পর তার বাবা- মা,ভাই- বোনদের উপর কি কি।হক আছে যা আদায় করা তার বাবা- মা, ভাই- বোনদের জন্য ফরজ?
২)একজন মেয়ের হাজব্যন্ড ও বাচ্চাকাচ্চাদের কি কি হক রয়েছে যেগুলো আদায় না করলে মেয়ের পিতামাতা ও ভাই- বোন হাক্কুল ঈবাদ নষ্ট করার গোনাহে গুনাহগার হবে?
৩) মেয়ের প্রেগ্ন্যাসি ও প্রসব পরবর্তী সময়ে তার পিতামাতা- ভাই বোনদের দায়িত্ব কি কি?
৪) মেয়ে বিয়ের পর সাধ্য অনুযায়ী পিতা- মাতা ভাইদেরকে আর্থিক সহযোগীতা করার পরেও বাবা, মা,ভাই কৌশলে মেয়েকে ইনকাম না করার কারণে তার সাথে দূরত্ব তৈরি ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া, বাচ্চা হবার সময় না যাওয়া এগুলো ইসলামে কি জায়েজ? ( টাকা নেই অজুহাত দেয়া কিন্তু জমি বিক্রি করে ঠিকই নিজেদের কাজ চালিয়ে যায় তারা)
৫) বিয়ের পর বাবার বাড়ির আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার দায় কি মেয়ের? আর সেজন্য মেয়ের জন্য কি এটা ওয়াজিব / ফরজ যে মেয়ে ৪ বাচ্চা ও হাজব্যন্ড কে নিয়ে বছর শেষে অবশ্যই বাবার বাড়িতে যেতে হবে, প্রতিদিন হোয়াটস এ নাতী নাতনীদের সাথে ঘন্টা লাগিয়ে কথা বলাতে হবে। কিন্তু নানা-নানী মামারা বছরে একবারো মেয়ের বাসায় আসবেনা।
আমার বাবা ৪ বছর + হয়েছে আমার বাসায় আসেনি।আমার ভাইরা আমার বিয়ের ১২ বছরে একবারো আমার এখানে ঈদে আসেনি।আমার মা প্রথম দুই বাচ্চা হবার সময় আমার বাসায় আসেনি, পরের দুই বাচ্চা হবার সময় বাধ্য হয়ে এসেছিল কিন্তু এসে আমার শশুর বাড়ির আত্মীয় ও হাজব্যন্ড এর সাথে পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে কিছু দিন থেকেই চলে গিয়েছে।এখানে বলে রাখা ভাল যে আমার ৪ বাচ্চাই সিজারে হয়েছে এবং আমার প্রথম দুই বাচ্চা হবার পর শাশুড়ী মারা গিয়েছেন, পরের ২ বাচ্চা হবার সময় আমার কাছে থাকার মত কোন মহিলা আত্মীয় ছিলনা আমার মা ছাড়া। আমার ১২ বছরের বিয়েতে আমার মা- বাবা হাতে গোনা ৪/৫ বার আমার বাসায় এসেছে।
আমি আমার হাজব্যন্ড ও বাচ্চাকাচ্চারা আমরা ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী আমাদের জীবন কাটাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার ৩ বাচ্চা হিফজ করছে, আমরা হালাল হারাম মেনেই সবসময় চলার চেষ্টা করি। অন্যদিকে আমার বাবার বাড়িতে আমার মা নামায ঠিকমত পড়েন না। আমার মা তার পুরো জীবনে ২০% সময় ও নামায পড়েছেন কিনা সন্দেহ। আমার বাবা নামায কাযা করেন নিয়মিত।কুরআন পড়েন না। আমার মেজ ভাই মোটামুটি নামায পড়ে কিন্তু ইসলাম পরিপন্থি বিভিন্ন কুফরি টাইপ কথা বলে প্রায়ই ( যেমন আমার আব্বুর ইনকাম কম থাকলে আমার আম্মুর জন্য যায়েজ আব্বুর সাথে চিল্লাপাল্লা,তুই তুকারি করা,আব্বুর বাবামাকে গালি দেয়া ইত্যাদি। আমার মায়ের বিভিন্ন হারাম কাজে আমার ভাই আম্মুকে আস্কারা দেয়। আমার মা যখন বলে এখনকার সময়ে ইসলাম সব জায়গায় চলেনা, এত মৌলবাদীতা ঠিক না তখন আমার ভাই চুপ থেকে মাকে সমর্থন দেয়) । আমার ছোটভাই প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত সালাত কাযা করে। ও নামায পড়েনা বললেই চলে। আমার বাবা মা ভাইরা কেউই শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেনা। আমার মা সারাদিন স্বামীর অবাধ্যতা,আত্মীয়দের গীবত, অভিশাপ দেয়া এসবে লিপ্ত থাকে। আমার পিতা আমার মাকে পারিবারিক বিষয়ে সামনে আগিয়ে দেয় আবার আমার মায়ের সাথে সারাদিন খারাপ আচরণ করে। আমার দুই ভাই ই পিতামাতার সাথে খারাপ আচরণ,চিল্লাপাল্লা করে, মিথ্যা,পরনিন্দা, অপবাদ, নাটক সিনেমা,রিলস দেখা এগুলোতে বাসার সবাই লিপ্ত।আমার ছোটভাই সারাদিন ঘুমানো আর রাতে গেমস খেলায় ব্যস্ত থাকে। মোদ্দাকথা বাসায় কোন ইসলামী পরিবেশ নেই।
আমি,আমার হাজব্যন্ড অনেকবার তাদেরকে বুঝিয়েছি তারা কোন দাওয়াহ কবুল করেনা। আলহামদুলিল্লাহ আমার হাজব্যন্ড সচ্ছলভাবে আমার ও আমার সন্তান্দের পিছনে ব্যয় করেন এবং সাধ্যমত আমার পিতামাতাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন বিয়ের পর ১২ বছর ধরে। (এখানে উল্লেখ্য যে আমরা ভাড়া বাসায় থাকি আর আমার বাবার নিজের বাড়ি আছে ঢাকায়। টুকটাক চাষাবাদ,গরু,হাস-মুরগী পালেন আমার বাবা মা। ভাই ইনকাম করে।) অন্যদিকে আমার হাসব্যন্ড এর একার ইনকামে আমাদের ৬ সদস্যের পরিবার চলে। আমার বাবার বাসায় লক্ষাধিক টাকার আর্থিক সহযোগীতা ছাড়াও তাদেরকে ওয়াশিং মেশিন,গীযার থেকে শুরু করে বেডশীট পর্যন্ত ছোট বড় বিভিন্ন হাদিয়া, বাসায় আসলে বেহিসাব মেহমানদারি করে এসেছি আমরা।
অথচ আমি যখন বাচ্চাকাচ্চা হাজব্যন্ড নিয়ে বাবার বাড়ি যাই আমার মা সকাল ৯/১০ টার আগে ঘুম থেকে উঠেন না, আমার বাবা চা বিস্কিট পরোটা দিয়ে সকালের নাস্তা দেন। দুপুর ৩/৪ টার দিকে দুপুরের খাবার,রাত ৯/১০ টায় রাতের খাবার দেয়া এই হল তাদের রুটিন। আমরা বেড়াতে গেলে নিজেদের অভাব অনটনের কথা বলে প্ররযাপ্ত মেহমান্দারি করেন না। আমার বাচ্চারা সেখানে গেলে খাওয়ার সমস্যায় পড়ে। আমার আর হাজব্যন্ড এর কথা তো বাদ ই দিলাম। অথচ আমার বাবার নিজের বাড়ি ঢাকায়। গরু পালেন তিনি।আমার ভাই ৩০হাজার + স্যালারিতে জব করে। আর আমরা যাই বছরে একবার।
আমার বাবা আমার জন্য আলাদা রুম ও বাসায় রাখেন নি। আমরা গেলে আম্মু আব্বুর বেডরুমে থাকতে হয়। এসব কারনে আমি বলেছি তাদেরকে যে যদি চায় আমরা প্রতিবছর বাবার বাড়ি বেড়াতে যাই তাহলে যেন ১ টা রুম বাড়ায়। আমি চেষ্টা করব হাজব্যন্ড কে বলে লাখখানেক টাকা ম্যানেজ করতে( এটা জাস্ট আল্লাহর জন্য হেল্প, আমার / হাজব্যন্ড এর কোন মালিকানা দাবীর নিয়াত নেই সেটাও ক্লিয়ারলি বলেছি।) কিন্তু তারা তাতে রাজি হয়নি। ৪ বাচ্চা নিয়ে কষ্ট করে ৭/৮ ঘন্টা জার্নি করে এভাবে বাবার বাসায় থাকা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক এবং আমরা গেলে অভাবের গল্প শোনানো এবং আমরা যখন যাই তখন ই বাইরের লোকজনকে বাসায় রাখা ( যাদের সামনে আমার পর্দা করতে হয়) তাদের রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে।
আমি যদি না যেতে চাই তাহলে তারা বলে আমি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন করছি। অথচ তারা আমার বাসায় ১২ বছরে এসেছে হাতেগোনা কয়েকবার। আমি তাদের সাথে আগে ফোনে নিয়মিত কথা বলতাম। আমার ৩ বাচ্চার জেনারেল+ হিফজ পড়া স্টার্ট হবার প্র প্রতিদিন এদেরকে ২ কিলোমিটার দুরত্বে থাকে মাদ্রাসা থেকে দিনে ৫-৬ বার আনা নেয়া করা, হোমওয়ার্ক করানো,হিফজ এর পড়া ধরা এসব নিয়ে ব্যস্ততায় সপ্তাহে একদিন কথা বলি। আমার বাবা- মা প্রতিদিন হোয়াটস এপে বাচ্চাদের সাথে ঘন্টা লাগিয়ে কথা বলতে চায় কিন্তু বাচ্চাদের এত সময় থাকেনা কারণ ওরা জেনারেল+ হিফজ একসাথে করছে। খুব অল্প সময় ই ওরা বাসায় থাকে। এটার জন্য তারা বলে আমি নাকি তাদের ফোন ধরিনা,যোগাযোগ রাখিনা।
আমি যখন বলি যে তোমরা এসে বেড়ায়ে যাও তারা ব্যস্ততার অযুহাত দেখায়। এমতাবস্থায় আমি জানতে চাই আমার উপর আমার পিতা- মাতা ও ভাইদের কি কি হক আছে আর আমার পিতামাতা,ভাইদের উপর আমার, আমার হাজব্যন্ড ও ৪ বাচ্চার কি কি হক আছে?
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কি আমার জন্য উপরে উল্লেখিত শিচুয়েশনেও বাবার বাড়িতে যেতে হবে এবং ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে হবে?
ফোনে মাসে মিনিমাম কতবার তাদের সাথে কথা বলা আমার জন্য ফরজ?
পিতামাতা যদি বিভিন্ন আচরণে বোঝায় যে মেয়ে হাজব্যন্ড এর আনুগত্য করা তাদের পছন্দ না তাহলে মেয়ের করণীয় কি?
আরেকটা বিষয় আমার বাবা বাড়ি করেছেন প্রভিডেন্ট ফান্ড এর সুদের টাকায় এবং বিভিন্ন ব্যংক এর শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে ( যেমন AB Bank)। বাসার পরিবেশে সুদের সেই প্রভাব পুরোপুরিভাবে আছে। আমার জন্য কি বাবার বাড়িতে গিয়ে আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখা বাধ্যতামূলক?
আর যারা নিয়মিত নামায কাযা করে, ইউটিউব ভিডিও দেখা, রিলস দেখা, গেমস খেলা সহ বিভিন্ন হারাম কাজে লিপ্ত তাদেরকাছে কি আমি আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়ে জবাব্দিহি করতে বাধ্য? তারা তো সালাত আদায়,কুরআন দিয়ে জীবন চালানোর ফরজ বিধান ই মানেনা।