‘ইসরাফ’ (إسراف) শব্দের অর্থ হ’ল সীমালঙ্ঘন, অপচয়, অপব্যয়, অমিতব্যয়, বাড়াবাড়ি, মাত্রাতিরিক্ততা, অপরিমিতি।
‘তাবযীর’ (التبذير) অর্থও অপচয়, অপব্যয়, বাজে খরচ, অমিতব্যয় ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا، إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ،
‘তুমি অপব্যয় করবে না, নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই’ (বনী ইসরাঈল ১৭/২৬-২৭)।
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
كُلُوا مِنْ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ،
‘তোমরা এগুলির ফল খাও যখন তা ফলবন্ত হয় এবং এগুলির হক আদায় কর ফসল কাটার দিন। আর তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না’ (আন‘আম ৬/১৪১)।
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন,
من أنفق درهما في غير حقه فهو سرف
‘যে ব্যক্তি অনর্থক কাজে এক দিরহামও খরচ করল সেটাই অপচয়’।
(ইমাম কুরতুবী, আল-জামি‘ লি আহকামিল কুরআন (বৈরূত : দারু ইহয়াইত তুরাছিল আরাবী, ১৯৮৫ খ্রি./১৪০৫ হি.), ১৩তম খন্ড, পৃঃ ৭৩।)
শরীফ আলী জুরজানী রহঃ অপচয় এর সংজ্ঞা দিয়েছেনঃ-
الإسراف هو إنفاق المال الكثير في الغرض الخسيس وتجاوز الحد في النفقة، وقيل: أن يأكل الرجل ما لا يحل له، أو يأكل مما يحل له فوق الاعتدال، ومقدار الحاجة-
‘ইসরাফ হ’ল কোন হীন উদ্দেশ্যে প্রচুর অর্থ-সম্পদ ব্যয় করা এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করা। কেউ কেউ বলেন, কোন ব্যক্তির অবৈধ বস্ত্ত ভক্ষণ করা অথবা তার জন্য যা কিছু হালাল তা অপরিমিত ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত আহার করা’।
(শরীফ আলী জুরজানী, কিতাবুত তা‘রীফাত (বৈরূত: দারুল কিতাবিল আরাবী, ১৪০৫ হি.), পৃঃ ৩৮।)
ফক্বীহগণ ‘তাবযীর’-কে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে যে,
عدم إحسان التصرف في المال وصرفه فيما لا ينبغي،
‘সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার না করা এবং তা অনুচিত কাজে ব্যয় করা’।
(ইমাম নববী, তাহরীরু আলফাযিত তানবীহ (দামেশক : দারুল কলম, ১৪০৮ হি.), পৃঃ ২০০।)
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)
অপ্রয়োজনে পানি নষ্ট করা যেমন পানির অপচয়, তেমনি প্রয়োজন পূরণের সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করাও পানির অপচয়। এমনকি সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে সরাসরি সাগর থেকে অজু করলেও বেশি পানি অজুতে খরচ করার অনুমতি ইসলাম দেয়নি।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ حُيَىِّ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْمَعَافِرِيِّ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحُبُلِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ مَرَّ بِسَعْدٍ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ فَقَالَ " مَا هَذَا السَّرَفُ " . فَقَالَ أَفِي الْوُضُوءِ إِسْرَافٌ قَالَ " نَعَمْ وَإِنْ كُنْتَ عَلَى نَهَرٍ جَارٍ " .
হজরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) সা’দ (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সা’দ (রা.) অজু করছিলেন। তাঁর অজুতে পানি বেশি খরচ হচ্ছিল। রাসুল (সা.) তা দেখে বললেন, কেন এই অপচয়? সা’দ (রা.) আরজ করলেন, অজুতেও কি অপচয় হয়? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, এমনকি বহমান নদীতে অজু করলেও। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হা. ৪২৫)
সীমালঙ্ঘন না হলে এবং কাপড়টি আপনার প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত হলে সেক্ষেত্রে প্রশ্নের বিবরন মতে এটি অপচয় হবেনা।
শখটি যদি আপনার প্রয়োজনীয় হয়,আর সীমালঙ্ঘন না হয়,সেক্ষেত্রে সামর্থ অনুযায়ী সেই শখ পূরন করা অপচয় বা হারাম হবেনা।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান, এবং বাস্তবতা নির্ভর মানসিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমাধানের পথ: ব্যালান্স করার উপায়
*খোলামেলা ও আন্তরিক সংলাপ।
দুজনেই শান্তভাবে বসে নিজেদের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা আলোচনা করুন।
স্ত্রী বলতে পারেন, কোন কোন জায়গায় তিনি সন্তুষ্ট নন।
স্বামী জানাতে পারেন, কোন চাহিদা তার পক্ষে মেটানো সম্ভব আর কোনটা নয়।
*প্রত্যাশার মান ঠিক করা।
স্ত্রীকে বুঝতে হবে, কেবল আর্থিক সামর্থ্যই সুখের মাপকাঠি নয়।
যদি স্বামী চরিত্রবান, দায়িত্বশীল ও দ্বীনদার হন, তাহলে এটা অনেক বড় নেয়ামত।
*স্বামীকে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে:
স্বামী যদি জানেন যে তার স্ত্রীর কিছু ন্যায্য চাহিদা তিনি পূরণ করতে পারছেন না, তবে দক্ষতা অর্জন, আয় বাড়ানোর চেষ্টা করা কর্তব্য।
স্বামীর জন্য উচিত হলো বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা স্ত্রীর মৌলিক চাহিদা পূরণে আন্তরিক হওয়া
কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্য উপার্জনের দক্ষতা বাড়ানো
তুলনা না করাস্ত্রীর প্রতি সংবেদনশীল হওয়া
সম্মান ও সহনশীলতা যৌক্তিক অভিযোগে মনোযোগ দেওয়া
*স্ত্রীর পক্ষেও কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্যের চর্চা জরুরি:
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, একজন স্ত্রীর কর্তব্য তার স্বামীর প্রতি সম্মান, কৃতজ্ঞতা এবং সহনশীলতা রাখা।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)
(০৫)
কিভাবে ফাতিমা (রা.)-এর মতো স্ত্রী হওয়া যায়।
★সাদাসিধে জীবনকে আলিঙ্গন করা:
ফাতিমা (রা.) রাজপ্রাসাদের মেয়ে ছিলেন না, বরং ঘরে কাজ করতেন নিজ হাতে—পাথরের চুলায় রুটি বানাতেন, পানি আনতেন, ঘর ঝাঁট দিতেন।
★ স্ত্রীর উচিত জীবনযাত্রায় সাদাসিধে ও সহনশীল হওয়া। স্বামীর আর্থিক অবস্থা যদি সীমিতও হয়, তবুও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করা।
★অভিযোগ নয়, কৃতজ্ঞতা:
ফাতিমা (রা.) একদিন হযরত আলী (রা.)-কে বলেন যে, ঘরের কাজের কষ্টে হাত ফেটে যাচ্ছে। তিনি রাসূল (সা.)-এর কাছে গিয়েছিলেন গৃহকর্মে সাহায্য চেয়ে, কিন্তু রাসূল (সা.) বলেছিলেন:
“আমি কি তোমাদের এমন কিছু না বলি, যা খাদিম থেকেও উত্তম? প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলো।”
— (বুখারী ও মুসলিম)
★কষ্টে অভিযোগ না করে, ধৈর্য ধরা ও আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি খোঁজা—এটাই একজন মুমিনা স্ত্রীর গুণ।
★স্বামীকে বুঝা ও সমর্থন করা:
ফাতিমা (রা.) কখনো হযরত আলী (রা.)-কে দোষারোপ করতেন না। বরং চুপচাপ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবন পার করতেন।
★ স্বামীর কষ্ট ও সীমাবদ্ধতা বুঝে, তার পাশে থেকে তাকে অনুপ্রাণিত করা — এটি এক নিঃশব্দ ইবাদত।
★পরস্পর ইজ্জত ও দ্বীনদারি:
হযরত আলী (রা.) বলতেন:
“আমি ফাতিমাকে যতদিন চিনেছি, কখনো তাকে মিথ্যা বলতে শুনিনি, অথবা দ্বীনের বাইরে কোনো কাজ করতে দেখিনি।”
★স্ত্রী হিসেবে সবসময় সততা, হায়া ও দ্বীনদার চরিত্র বজায় রাখা, যেন স্বামীর হৃদয়ে ভালোবাসা ও সম্মান জন্মায়।
★গীবত ও বাহ্যিক দুনিয়াবি তুলনা থেকে বিরত থাকা:
ফাতিমা (রা.) দুনিয়ার আরামের তুলনায় আখিরাতের সুখকেই গুরুত্ব দিতেন। কারো বাড়ি, কারো জামা-জুতা দেখে হিংসা করতেন না।
★সামাজিক মিডিয়া বা প্রতিবেশী দেখে নিজের স্বামীকে ছোট ভাবা, বা অতিরিক্ত দুনিয়াবি চাহিদা রাখা—এগুলো দূরে রাখা জরুরি।
একটি দোয়া:
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي زَوْجَةً صَالِحَةً كَمَا كَانَتْ فَاطِمَةُ لِعَلِيٍّ
“হে আল্লাহ! আমাকে এমন একজন সৎ স্ত্রী বানিয়ে দাও, যেমন ফাতিমা (রা.) ছিলেন আলী (রা.)-এর জন্য।”
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)