জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
ইদ্দত একটি ওয়াজিব বিধান। এটি লঙ্ঘন করা কবিরা গুনাহ।
স্বামী যেখানেই থাক, যদি সে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর জন্য ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়া উসমানী ২/৪৫১)
ইদ্দত শুরু হয়, তালাক সম্পন্ন হওয়ার পরবর্তী সময় থেকে তিন হায়েয পরিমাণ।
তিন হায়েয শেষ হওয়ার আগে অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয হবে না।
ইদ্দত দুই প্রকার
(১)তালাকের ইদ্দত
(২)স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত
- (১)তালাকের ইদ্দত সাধারণত তিন হায়েয বা তিন মাসিক।ছোট বালিকা যার হায়েয এখনো আসেনি বা বৃদ্ধা মহিলা যার হায়েয বন্ধ হয়ে গেছে,তার ইদ্দত হল তিন মাস।আর স্ত্রী গর্ভবতী হলে উক্ত স্ত্রীর ইদ্দত হল সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া।
- (২)স্বামী মৃত্যুবরণ করলে তখন স্ত্রীর ইদ্দত হল চার মাস দশদিন।স্ত্রী সন্তানসম্ভাবনা হলে স্ত্রীর ইদ্দত হল এক্ষেত্রে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া। ইদ্দত পালন কালে স্বামীর উপর স্ত্রীর ভরণপোষণ ওয়াজিব।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। (সূরা বাকারা-২২৮)
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ۖ فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ [٢:٢٣٤]
আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِي أَنفُسِكُمْ ۚ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَٰكِن لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَن تَقُولُوا قَوْلًا مَّعْرُوفًا ۚ وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ [٢:٢٣٥]
আর যদি তোমরা আকার ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গাম দাও, কিংবা নিজেদের মনে গোপন রাখ, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই, আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীদের কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে করার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না। অবশ্য শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী কোন কথা সাব্যস্ত করে নেবে। আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্তি পর্যায়ে না যাওয়া অবধি বিয়ে করার কোন ইচ্ছা করো না। আর একথা জেনে রেখো যে, তোমাদের মনে যে কথা রয়েছে, আল্লাহর তা জানা আছে। কাজেই তাঁকে ভয় করতে থাক। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী ও ধৈর্য্যশীল। {সূরা বাকারা-২৩৪-২৩৫}
,
তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলার জন্য স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। বিশেষ ওজর ব্যতীত স্বামীর বাড়ি ছাড়া বাবার বাড়িতে কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে ইদ্দত পালন করা জায়েয নেই।
,
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তাদেরকে (ইদ্দতরত মহিলাকে) তাদের ঘর থেকে বের করে দিও না। আর তারা নিজেরাও যেন বের না হয়। যদি না তারা কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়।
(সূরা তালাক : ১
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) তোমরা ঐ (তালাক প্রদত্ত) স্ত্রীদেরকে তোমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা অনুপাতে থাকার ঘর দাও যেখানে তোমরা বসবাস কর। আর তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য (বাসস্থান সম্বন্ধে) কষ্ট দিও না।
(সূরা তালাক : ৬)
উল্লেখ্য যে, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দতের সময় তার স্বামী ভিন্ন ঘরে বসবাস করবে। মহিলার ঘরে নয়।
আরো উল্লেখ্য যে, স্বামীর বাড়িতে যদি পর্দার সাথে থাকার ব্যবস্থা না হয় কিংবা তার জন্য সেখানে থাকা বেশি কষ্টকর বা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে যেখানে যাবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বিনা জরুরতে সেখান থেকে অন্যত্র থাকা জায়েয হবে না।
সর্বপ্রথম কথা হলো কোন মহিলাকে তার স্বামী তালাক দিলে অথবা তার স্বামী মারা গেলে সেক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে আদেশ করেছেন।
স্বামীকে ইদ্দত পালন করতে আদেশ করেননি, সুতরাং এটিই কারন যে স্ত্রীদের ইদ্দত পালন করতে হয়,স্বামীদের ইদ্দত পালন করতে হয়না।
ইদ্দতের পেছনের যৌক্তিক কারণ ও উদ্দেশ্য:
1. গর্ভের অবস্থা নির্ধারণ করা (পিতৃত্ব নিশ্চিতকরণ):
নারীর যদি গর্ভধারণ হয়ে থাকে, তাহলে এই সময়ের মধ্যে তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
যেন ভবিষ্যতে সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে কোনো দ্বিধা বা দ্বন্দ্ব না থাকে।
★স্বামীরা তো আর গর্ভধারণ করে না সুতরাং বিবাহ করা থেকে বিরত থেকে ইদ্দত পালন করা স্বামীদের উপর কোনোভাবেই আবশ্যক হবে না। কারণ এক্ষেত্রে গর্ভের অবস্থান নির্ধারণ করা তথা পিতৃত্ব নিশ্চিতকরণের বিষয়টি থাকে না।
ইদ্দত পালের এটিই মূল কারন।
বাকি আরো কিছু কারন উল্লেখ করা হয়,কিন্তু সেগুলো মূল কারন নয়।
2. সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক সময়:
তালাক বা স্বামী মৃত্যু—উভয়ই এক ধরণের মানসিক ধাক্কা।
ইদ্দতের সময় নারীর জন্য মানসিক বিশ্রাম ও পুনর্মূল্যায়নের সময়সীমা প্রদান করে।
3. সামাজিক ও পারিবারিক শৃঙ্খলা রক্ষা:
হুট করে আরেকটি বিবাহে না গিয়ে, সময় নিয়ে সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধান করা যায়।
স্বামীর পরিবার, সন্তান, পৈত্রিক সম্পত্তির ব্যাপারে কোনো জটিলতা এড়ানো যায়।
4. স্বামী-মৃত্যুর ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শন:
স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দত পালন করা হয় যেন তা একধরনের শোকপ্রকাশ ও মর্যাদা প্রদর্শন হয়।
5. দ্বিতীয় বিবাহের আগেই সকল পুরাতন সম্পর্কের পরিসমাপ্তি:
ইদ্দতের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে নারী আগের বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন।