আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
23 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (19 points)
আমার বাবা মরহুম জহিরুল হক ভূঁইয়া, পরকালের মুক্তির আশায় মৃত্যুর পূর্বে ২০০৮ ইং সালের ২০ এপ্রিল
আমুলিয়া মৌজার ৫৫১৭ মহানগর দাগের তিন শতাংশ জমি মসজিদ নির্মাণের জন্য ওয়াকফ দলিল রেজিষ্ট্রি করে দেন।
যে সমস্যার সমাধানের জন্য আবেদন করা হয়েছে তার কিছু বর্ণনা নিন্মে উল্লেখ করা হলো-
আমার চাচা মো: মোকদুম ভূঁইয়া মৃত্যুর পর তাহার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ওয়ারিশ হলেন তার স্ত্রী (ফালেমা খাতুন) এক ছেলে (মো: আব্দুল হাই ভূঁইয়া) ও তিন মেয়ে (নুর জাহান বেগম, ফাতেমা বেগম ও মাহমুদা বেগম)
মোকদুম ভূঁইয়ার উক্ত ওয়ারিশগণ মহানগর ৫৫১৬ দাগের ১৯০৮ অযুতাংশের জমি পান। সেই জমি হইতে মোকদুম ভূঁইয়ার স্ত্রী ফালেমা খাতুন ও ছোট মেয়ে মাহমুদা বেগম জমিটির পূর্বাংশে চৌহদ্দি/সীমানা নির্ধারণ করে
৫৭২ অযুতাংশ জমি ২০০৬ সালের ১৭ জুলাই সাফ কবলা দলিলের মাধ্যমে নাজমা বেগম ও মো: আমিরহোসেনের কাছে বিক্রি করে দেন।
আব্দুল হাই ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল তার নিজের প্রাপ্ত অংশ হইতে ৪৫০ অযুতাংশ মসজিদের জন্য ওয়াকফ করেন। তবে চৌহদ্দি/সীমানা নির্ধারণ করে দেন তার মা-বোনের বিক্রীত জায়গাটি।
বর্তমানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দান ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দুই জনের (জনাব জহুরুল হক ভূঁইয়া ও আব্দুল হাই ভূঁইয়া) প্রদত্ত ওয়াকফ জমির মধ্যে ৪ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে এক তলা একটি সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করা হয় ।
পরিতাপের বিষয় এই যে, আমরা মহল্লাবাসী প্রায় ১৭ (সতেরো) বছর পর জানতে পারি জনাব আব্দুল হাই মসজিদের জন্য জমির মধ্যে সীমানা নির্ধারণ যে অংশটি ওয়াকফ করেছেন সেই অংশটি সীমানা নির্ধারণ করে
তার মা ও বোন আগেই বিক্রী করে দিয়েছিলেন।
প্রশ্নঃ
১. মা ও বোন মাহমুদা বেগমের বিক্রীত জায়গার মালিক ১) নাজমা বেগম ২) আমির হোসেন তাহাদের
জায়গায় আব্দুর হাই ওয়াকফ করা সঠিক হয়েছে কি ?
২. যদি সঠিক না হয়ে থাকে তাহলে উক্ত জমিতে নির্মিত মসজিদের সমাধান কী হবে এবং সেখানে এতদিন যে নামাজ হয়ে এসেছে তা কি সহিহ হয়েছে? উল্লেখ থাকে যে জমির ক্রেতা (নাজমা বেগম ও আমির হোসেন) কে মসজিদের পশ্চিমে একই জমির নিজ অংশ
থেকে মৌখিকভাবে সমপরিমাণ জায়গা আব্দুল হাই বুঝাইয়া দেন এবং তা রেজিষ্ট্রি দলিল না করে শুধু স্থানীয় লোকের স্বাক্ষর দিয়ে স্ট্যাম্প করে দেন ।
৩. আব্দুল হাই তার মা-বোন কর্তৃক বিক্রীত সমপরিমাণ জায়গা ক্রেতাকে মৌখিক বা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে লিখিত এওয়াজ বদল করে দিলে সমস্যার সমাধান হবে কি? যদি সমস্যা সমাধান হয়ে থাকে তাহলে নতুন করে ওয়াকফ করার প্রয়োজন আছে কি ?
আমি মো: মোশারফ হোসেন এবং আমরা এলাকাবাসী সকলেই মনে প্রাণে চাই, উক্ত সমস্যার সমধান হয়ে যেন মসজিদটি ত্রুটি মুক্ত হয় ।
অতএব দলিল সহ উক্ত মাসআলার সমাধান দেয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে।

1 Answer

0 votes
by (642,660 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

অন্যের মালিকানাধীন জমি (অর্থাৎ নিজের মালিকানায় না থাকা জমি) ওয়াকফ করা সহীহ নয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

"لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ"

“তোমরা কখনো পূর্ণতা (বরকতপূর্ণ দান) লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে দান করো।”
 [সূরা আলে ইমরান: ৯২]

এই আয়াতে "مِمَّا تُحِبُّونَ" — মানে, নিজের ভালবাসার সম্পদ, নিজের মালিকানাধীন বস্তু।

অতএব, অন্যের মালিকানাধীন সম্পদে দান বা ওয়াকফ সহীহ নয়, কারণ সেটা তোমার “প্রিয় সম্পদ” নয়, বরং কারো মাল।

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ، عَنْ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، يَأْتِينِي الرَّجُلُ فَيُرِيدُ مِنِّي الْبَيْعَ لَيْسَ عِنْدِي أَفَأَبْتَاعُهُ لَهُ مِنَ السُّوقِ؟ فَقَالَ: لَا تَبِعْ مَا لَيْسَ عِنْدَكَ صحيح

হাকিম ইবনু হিযাম (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোনো ব্যক্তি আমার নিকট এসে এমন জিনিস কিনতে চায় যা আমার কাছে নেই। আমি কি বাজার থেকে তার জন্য ঐ জিনিস কিনে আনবো? তিনি বলেনঃ তোমার কাছে যা নেই তা বিক্রি করো না।

(তিরমিযী ১২৩২, আবূ দাঊদ ৩৫০৩, নাসায়ী ৪৬১৩, ইবনু মাজাহ ২১৮৭, আহমাদ ১৫৩১৫, ইরওয়া ১২৯২, সহীহ আল জামি‘ ৭২০৬।)

উক্ত হাদীসে রাসূল ﷺ বলেন:

"لا تبع ما ليس عندك"

অর্থ: “তোমার মালিকানায় নেই এমন জিনিস বিক্রি কোরো না।”
[তিরমিযী: 1232, আবু দাউদ: 3503]

যদিও হাদীসটি বেচাকেনা সম্পর্কে, ফিকহবিদগণ এটিকে ওয়াকফ সহ অন্যান্য লেনদেনেও প্রযোজ্য করেছেন। অর্থাৎ:

না বিক্রি করা যাবে,না ওয়াকফ করা যাবে,না দান করা যাবে,যতক্ষণ না সেটা তোমার নিজস্ব মালিকানা হয়।

হযরত উমর (রা.) নিজ জমি ‘খাইবার’ ওয়াকফ করেন।
রাসূল ﷺ বলেন:

"إن شئتَ حبّستَ أصلها، وتصدّقتَ بها"

অর্থ: “যদি চাও, তবে জমির মূলটুকু স্থায়ী করে (ওয়াকফ করে) দান করো।”

[সহীহ বুখারী: 2737, সহীহ মুসলিম: 1632]

এখানে লক্ষ্য করুন — তিনি নিজের মালিকানাধীন জমি ওয়াকফ করেছেন।

 “وشرط الوقف أن يكون الموقوف مملوكاً للواقف وقت الوقف.”
অর্থ: “ওয়াকফের শর্ত হলো — ওয়াকফকৃত জিনিসটি ওয়াকফকারীর মালিকানায় থাকা।”
— الدر المختار مع الرد (6/429)

 "لا وقف إلا فيما يملكه الواقف ملكاً تاماً"

অর্থ: “ওয়াকফ শুধু সেই জিনিসেই সহীহ, যা ওয়াকফকারী (দানকারী) নিজে সম্পূর্ণ মালিকানায় রাখে।”
(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনি (5/599)

★মসজিদের জন্য জমি "ওয়াকফ" হওয়া আবশ্যক

ইবনু কুদামা (রহ.) বলেন:

> "ولا تصحّ المساجد إلّا أن تكون الأرض مملوكةً أو موقوفةً"

“মসজিদ তখনই সহীহ (বৈধ) হবে, যখন তার জমি মালিকের দ্বারা ওয়াকফকৃত হবে।”
(আল-মুগনি (5/402)

“إذا غُصِبَت أرضٌ وبُنِيَ عليها مسجد، لا يثبت له حكم المسجد.”
অর্থ: “যদি জবরদখলকৃত জমিতে মসজিদ বানানো হয়, তা শরয়ি মসজিদের হুকুম পাবে না।”
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া (5/294)
 رد المحتار (6/430)

অন্যায় ভাবে অন্যের জমিতে মসজিদ বানিয়ে সেই মসজিদে নামাজ আদায় করলে নামাজ শুদ্ধ হবে, যদি অন্য কোনো বাধা না থাকে (কিবলা, পবিত্রতা ইত্যাদি ঠিক থাকে)।

কিন্তু সওয়াব বা গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ জায়গাটিই অবৈধভাবে দখল করা।

আল্লামা ইবনে আবেদীন (রহ.) বলেন:
"মসজিদ যদি জবরদখলকৃত জমিতে হয়, তবে সেটি মসজিদ নয়, আর সেখানে ইতিকাফ, ওয়াকফ, জামাত ইত্যাদি শরয়ি হুকুম প্রযোজ্য হবে না।"

মুফতি তাকী উসমানী (দা.বা.) বলেন:
"অন্যায়ভাবে তৈরি মসজিদে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে পড়লে নামাজ শুদ্ধ হলেও, গোনাহ থেকে মুক্ত নয়।"

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
মা ও বোন মাহমুদা বেগমের বিক্রীত জায়গার মালিক ১) নাজমা বেগম ২) আমির হোসেন তাহাদের জায়গায় আব্দুর হাই এর ওয়াকফ করা সঠিক হয়নি।

(০২)
প্রশ্মের বিবরণ মতে সে মসজিদে এতোদিন যে নামাজ পড়া হয়েছে,সবই আদায় হয়েছে।

এক্ষেত্রে জমির মূল মালিককে মসজিদের পশ্চিমে একই জমির নিজ অংশ
থেকে মৌখিকভাবে সমপরিমাণ জায়গা আব্দুল হাই বুঝাইয়া দিয়েছেন এবং তা রেজিষ্ট্রি দলিল না করে শুধু স্থানীয় লোকের স্বাক্ষর দিয়ে স্ট্যাম্প করে দিয়েছেন,এতে যদি জমির ক্রেতা (নাজমা বেগম ও আমির হোসেন) যদি সন্তুষ্টি চিত্তে রাজী হয়ে  থাকেন,সেক্ষেত্রে এটি জায়েজ হবে।

এখন যদি জমির ক্রেতা নাজমা বেগম ও আমির হোসেনকে জমিটি দলিল করে দেয়,আর নাজমা বেগম ও আমির হোসেন যদি তাদের ক্রয়কৃত পূর্বের জায়গা মসজিদের নামে ওয়াকফের দলিল করে দেয়,সেক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যা থাকবেনা।

(০৩)
এতে স্থায়ী ভাবে সমস্যার সমাধান হবেনা।

বরং ২ নং প্রশ্নের জবাবে দেয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
তাহলে স্থায়ী ভাবে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...