অন্যের মালিকানাধীন জমি (অর্থাৎ নিজের মালিকানায় না থাকা জমি) ওয়াকফ করা সহীহ নয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
"لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ"
“তোমরা কখনো পূর্ণতা (বরকতপূর্ণ দান) লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে দান করো।”
[সূরা আলে ইমরান: ৯২]
এই আয়াতে "مِمَّا تُحِبُّونَ" — মানে, নিজের ভালবাসার সম্পদ, নিজের মালিকানাধীন বস্তু।
অতএব, অন্যের মালিকানাধীন সম্পদে দান বা ওয়াকফ সহীহ নয়, কারণ সেটা তোমার “প্রিয় সম্পদ” নয়, বরং কারো মাল।
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ، عَنْ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، يَأْتِينِي الرَّجُلُ فَيُرِيدُ مِنِّي الْبَيْعَ لَيْسَ عِنْدِي أَفَأَبْتَاعُهُ لَهُ مِنَ السُّوقِ؟ فَقَالَ: لَا تَبِعْ مَا لَيْسَ عِنْدَكَ صحيح
হাকিম ইবনু হিযাম (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোনো ব্যক্তি আমার নিকট এসে এমন জিনিস কিনতে চায় যা আমার কাছে নেই। আমি কি বাজার থেকে তার জন্য ঐ জিনিস কিনে আনবো? তিনি বলেনঃ তোমার কাছে যা নেই তা বিক্রি করো না।
(তিরমিযী ১২৩২, আবূ দাঊদ ৩৫০৩, নাসায়ী ৪৬১৩, ইবনু মাজাহ ২১৮৭, আহমাদ ১৫৩১৫, ইরওয়া ১২৯২, সহীহ আল জামি‘ ৭২০৬।)
উক্ত হাদীসে রাসূল ﷺ বলেন:
"لا تبع ما ليس عندك"
অর্থ: “তোমার মালিকানায় নেই এমন জিনিস বিক্রি কোরো না।”
[তিরমিযী: 1232, আবু দাউদ: 3503]
যদিও হাদীসটি বেচাকেনা সম্পর্কে, ফিকহবিদগণ এটিকে ওয়াকফ সহ অন্যান্য লেনদেনেও প্রযোজ্য করেছেন। অর্থাৎ:
না বিক্রি করা যাবে,না ওয়াকফ করা যাবে,না দান করা যাবে,যতক্ষণ না সেটা তোমার নিজস্ব মালিকানা হয়।
হযরত উমর (রা.) নিজ জমি ‘খাইবার’ ওয়াকফ করেন।
রাসূল ﷺ বলেন:
"إن شئتَ حبّستَ أصلها، وتصدّقتَ بها"
অর্থ: “যদি চাও, তবে জমির মূলটুকু স্থায়ী করে (ওয়াকফ করে) দান করো।”
[সহীহ বুখারী: 2737, সহীহ মুসলিম: 1632]
এখানে লক্ষ্য করুন — তিনি নিজের মালিকানাধীন জমি ওয়াকফ করেছেন।
“وشرط الوقف أن يكون الموقوف مملوكاً للواقف وقت الوقف.”
অর্থ: “ওয়াকফের শর্ত হলো — ওয়াকফকৃত জিনিসটি ওয়াকফকারীর মালিকানায় থাকা।”
— الدر المختار مع الرد (6/429)
"لا وقف إلا فيما يملكه الواقف ملكاً تاماً"
অর্থ: “ওয়াকফ শুধু সেই জিনিসেই সহীহ, যা ওয়াকফকারী (দানকারী) নিজে সম্পূর্ণ মালিকানায় রাখে।”
(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনি (5/599)
★মসজিদের জন্য জমি "ওয়াকফ" হওয়া আবশ্যক
ইবনু কুদামা (রহ.) বলেন:
> "ولا تصحّ المساجد إلّا أن تكون الأرض مملوكةً أو موقوفةً"
“মসজিদ তখনই সহীহ (বৈধ) হবে, যখন তার জমি মালিকের দ্বারা ওয়াকফকৃত হবে।”
(আল-মুগনি (5/402)
“إذا غُصِبَت أرضٌ وبُنِيَ عليها مسجد، لا يثبت له حكم المسجد.”
অর্থ: “যদি জবরদখলকৃত জমিতে মসজিদ বানানো হয়, তা শরয়ি মসজিদের হুকুম পাবে না।”
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া (5/294)
رد المحتار (6/430)
অন্যায় ভাবে অন্যের জমিতে মসজিদ বানিয়ে সেই মসজিদে নামাজ আদায় করলে নামাজ শুদ্ধ হবে, যদি অন্য কোনো বাধা না থাকে (কিবলা, পবিত্রতা ইত্যাদি ঠিক থাকে)।
কিন্তু সওয়াব বা গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ জায়গাটিই অবৈধভাবে দখল করা।
আল্লামা ইবনে আবেদীন (রহ.) বলেন:
"মসজিদ যদি জবরদখলকৃত জমিতে হয়, তবে সেটি মসজিদ নয়, আর সেখানে ইতিকাফ, ওয়াকফ, জামাত ইত্যাদি শরয়ি হুকুম প্রযোজ্য হবে না।"
মুফতি তাকী উসমানী (দা.বা.) বলেন:
"অন্যায়ভাবে তৈরি মসজিদে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে পড়লে নামাজ শুদ্ধ হলেও, গোনাহ থেকে মুক্ত নয়।"
মা ও বোন মাহমুদা বেগমের বিক্রীত জায়গার মালিক ১) নাজমা বেগম ২) আমির হোসেন তাহাদের জায়গায় আব্দুর হাই এর ওয়াকফ করা সঠিক হয়নি।
এখন যদি জমির ক্রেতা নাজমা বেগম ও আমির হোসেনকে জমিটি দলিল করে দেয়,আর নাজমা বেগম ও আমির হোসেন যদি তাদের ক্রয়কৃত পূর্বের জায়গা মসজিদের নামে ওয়াকফের দলিল করে দেয়,সেক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যা থাকবেনা।