আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
228 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (21 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
১)তওবা করলে কি সেই গোনাহের সকল খারাপ প্রভাবও আল্লাহ মুছে দেন?
২)অতীতের যে পাপের জন্য মানুষ অপমান করে সেই পাপগুলোর জন্য কৃত তওবা কি কবুল হয়নি? অতীতের গোনাহের জন্য অপমানিত হওয়া কি তওবা কবুল না হওয়ার লক্ষন?
৩)তওবার পরেও গোনাহের কি কি খারাপ প্রভাব রয়ে যায়?
৪) হায়েজ শুরু হওয়ার তারিখে খুব অল্প রক্ত দেখা যায়। এরপরের দিন সাদা স্রাব দেখা যাচ্ছে। সবসময় ৭/৮ দিন হায়েজ থাকে।এর আগে এমন কখনো হয়নি। এখন কি ফরজ গোসল করে নামাজ পড়ে ফেলতে হবে নাকি কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
তাওবাহ করলে সকল গোনাহ কেই আল্লাহ ক্ষমা দেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠُﻮﺍ ﻓَﺎﺣِﺸَﺔً ﺃَﻭْ ﻇَﻠَﻤُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻬُﻢْ ﺫَﻛَﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻐْﻔَﺮُﻭﺍ ﻟِﺬُﻧُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺼِﺮُّﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻠُﻮﺍ ﻭَﻫُﻢْ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﺟَﺰَﺍﺅُﻫُﻢْ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓٌ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻭَﺟَﻨَّﺎﺕٌ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺍﻷَﻧْﻬَﺎﺭُ ﺧَﺎﻟِﺪِﻳﻦَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻧِﻌْﻢَ ﺃَﺟْﺮُ ﺍﻟْﻌَﺎﻣِﻠِﻴﻦَ
তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য "ইস্তেগফার"(ক্ষমা প্রার্থনা) করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।(আলে-ইমরান;১৩৫-১৩৬)

তাওবাহর দ্বারা আল্লাহ বান্দার হক পর্যন্ত ক্ষমা করে দেন। হযরত আবু-সাঈদ খুদরী রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে,তিনি বলেন,
ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﻱ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - : " ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺑﻨﻲ ﺇﺳﺮﺍﺋﻴﻞ ﺭﺟﻞ ﻗﺘﻞ ﺗﺴﻌﺔ ﻭﺗﺴﻌﻴﻦ ﺇﻧﺴﺎﻧﺎ ، ﺛﻢ ﺧﺮﺝ ﻳﺴﺄﻝ ، ﻓﺄﺗﻰ ﺭﺍﻫﺒﺎ ، ﻓﺴﺄﻟﻪ ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺃﻟﻪ ﺗﻮﺑﺔ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻻ ; ﻓﻘﺘﻠﻪ ، ﻭﺟﻌﻞ ﻳﺴﺄﻝ ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺭﺟﻞ : ﺍﺋﺖ ﻗﺮﻳﺔ ﻛﺬﺍ ﻭﻛﺬﺍ ، ﻓﺄﺩﺭﻛﻪ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﻓﻨﺎﺀ ﺑﺼﺪﺭﻩ ﻧﺤﻮﻫﺎ ، ﻓﺎﺧﺘﺼﻤﺖ ﻓﻴﻪ ﻣﻼﺋﻜﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﻣﻼﺋﻜﺔ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ، ﻓﺄﻭﺣﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﻫﺬﻩ ﺃﻥ ﺗﻘﺮﺑﻲ ، ﻭﺇﻟﻰ ﻫﺬﻩ ﺃﻥ ﺗﺒﺎﻋﺪﻱ ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻗﻴﺴﻮﺍ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻬﻤﺎ ﻓﻮﺟﺪ ﺇﻟﻰ ﻫﺬﻩ ﺃﻗﺮﺏ ﺑﺸﺒﺮ ﻓﻐﻔﺮ ﻟﻪ " ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, বনি ইসরাঈল গোত্রে একজন ব্যক্তি ছিল,যে নিরানব্বই জনকে হত্যা করেছিল।অতঃপর যখন হেদায়তের নিকটবর্তী হল,তখন সে একজন পাদ্রীর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল তার তাওবাহ কি কবুল হবে?ঐ পাদ্রী উত্তরে বলল,না, তোমার তাওবাহ কবুল হবে না। তখন সে ঐ পাদ্রীকেও হত্যা করে ফেলল।অতঃপর সে তার তাওবাহর কবুল হওয়া না হওয়া সম্পর্কে লোকদেরকে জিজ্ঞেস করতে লাগল।তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি অমুক গ্রামে যাও সেখানে হয়তো কোনো সমাধান পেতে পারেন। সে ঐ গ্রামের দিকেই যেতে লাগল,তার বুক সেই গ্রামের দিকে থাকাবস্থায় রাস্তায় মধ্যখানে সে মূত্যুমূখে পতিত হল।সে সময় জান কবজের ব্যাপারে রহমতের ফিরিস্তা এবং আযাবের ফিরিস্তিাদের মধ্য ঝগড়া বেধে গেলো।তখনই আল্লাহ তা'আলা তার উদ্দিষ্ট ঐ গ্রামকে নিকটবর্তী হওয়ার নির্দেশ প্রদাণ করলেন।এবং ছেড়ে আসা গ্রামকে দূরবর্তী হওয়ার নির্দেশ প্রদাণ করলেন। তারপর আল্লাহ তা'আলা ফিরিস্তাদেরকে জায়গা পরিমাপন করার নির্দেশ দিলেন।জায়গা পরিমাপণ করে দেখা গেল যে, উদ্দিষ্ট গ্রাম ছেড়ে আসা গ্রাম থেকে অর্ধহাত কম।অতঃপর সেই ব্যক্তিকে মাফ করে দেয়া হল।(এবং রহমতের ফিরিস্তা তার জান কবয করল)(মিশকাত-২৩২৭)

দেখুন, আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে গেলে বান্দার হক পর্যন্ত মাফ করে দিতে পারেন।কেননা যাকে হত্যা করা হয়েছে তার বেঁচে থাকার হক্বকে ধংস করা হয়েছিলো।সুতরাং এটাও একটা বান্দার হক।
কিন্তু এর পরও আল্লাহ তা'আলা মাফ করে দিয়েছেন।এবং হক নষ্ট হয়ে যাওয়া উক্ত বান্দাদিগকে এমন পুরুস্কার দান করবেন যে, তারা আর তাদের হক সম্পর্কে কোনো প্রকার অভিযোগ দায়ের করবে না।বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/11915


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)তওবা করলে আল্লাহ তা’আলা সেই গোনাহের সকল খারাপ প্রভাবকেও আল্লাহ মুছে দেন।
(২) তাওবাহ কবুল হওয়ার অর্থ হল, আল্লাহ এই অপরাধের জন্য তাকে আখেরাতে শাস্তি দিবেন না। দুনিয়ার কোনো মানুষ সেটাকে মনে রাখবেনা, বিষয়টা আসলে এমন নয়। বরং আখেরাতে তাকে মুক্তি দিবেন. সেটাই মূলত তাওবাহর অর্থ। 
(৩)খারাপ প্রভাব বলতে আখেরাত হিসেবে কোনো খারাপ আর বাকী থাকবে না। 

(৪)হায়েযের সর্বোচ্ছ সময়সীমা ১০দিন।এ ১০দিনের ভিতর লাল,হলুদ,সবুজ,লাল মিশ্রিত কালো বা নিখুত কালো যে কালারের-ই পানি বের হোক না কেন তা হায়েয হিসেবেই গণ্য হবে।যতক্ষণ না নেপকিন সাদা নজরে আসবে।(বেহেশতী জেওর-১/২০৬)তথা সাদা রং ব্যতীত সকলপ্রকার রং ই হায়েযের অন্তর্ভুক্ত।

সুতরাং হায়েয শুরু হওয়ার পর যখনই সাদাস্রাব দেখা যাবে,তখনই গোসল করে পবিত্র হয়ে নামায পড়তে হবে। ১০ দিনের ভিতর আবার দেখা গেলে আবার হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। এবং তখন নামাযকে পরিত্যাগ করতে হবে।

৭/৮ দিন পর যদি আপনার হায়েয সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যায়,তাহলে আপনি পবিত্র হয়ে যাবেন।
তবে যদি দশ দিনের ভিতর আবার হায়েয চলে আসে,তাহলে আবার আপনি অপবিত্র হয়ে যাবেন।তথা মাঝে বন্ধ হওয়ার পর আবার চালু হলে,সেই রক্তকে হায়েযের রক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে।যেমন বর্ণিত রয়েছে,
اذا عاودها الدم في العشرة بطل الحكم بطهارتها مبتدأة كانت او معتادة و كأنها لم تطهر اصلا
হায়েয বন্ধ হওয়ার পর দশ দিনের ভিতর আবার যদি হায়েয চলে আসে,তাহলে পূর্বের পবিত্রতার বিধান খতম হয়ে যাবে।চায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন ঐ মহিলা প্রথমবার হোক বা এ ব্যাপারে অভ্যস্ত থাকুক।যেমন ঐ মহিলা পূর্বে পবিত্রই হয়নি।(ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া-১/৪৮৫, যাকারিয়া)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
فَإِنْ لَمْ يُجَاوِزْ الْعَشَرَةَ فَالطُّهْرُ وَالدَّمُ كِلَاهُمَا حَيْضٌ سَوَاءٌ كَانَتْ مُبْتَدَأَةً أَوْ مُعْتَادَةً
মাঝেমধ্যে হায়েয হওয়া আবার মাঝেমধ্যে বন্ধ হওয়া, দশ দিনের ভিতর সবকিছুই হায়েয হিসেবে গণ্য হবে।চায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন ঐ মহিলা প্রথমবার হোক বা এ ব্যাপারে অভ্যস্ত থাকুক।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩৭,কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/১০৮,কিতাবুন-নাওয়াযিল-৩/১৭২)বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/6962


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (597,330 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...