আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
35 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (3 points)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিনীত নিবেদন এই যে, বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্থানে “হেযবুত তওহীদ” নামে একটি দল তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, বইপত্র ও দাওয়াতি কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে যে, তারা বহু ক্ষেত্রে ইসলামের মূল আকিদা ও পরিপূর্ণ শরিয়তের খিলাফ কথা বলে, নবুয়তের চূড়ান্তত্ব ও অন্যান্য মৌলিক বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক কথা প্রচার করে এবং ইসলামের নাম নিয়ে সাধারণ মুসলমানদের গোমরাহ করে থাকে।

আমরা একজন সাধারণ মুসলমান হিসেবে জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে এদের অবস্থান কী?

১।  এরা কি ইসলামের মূল আকিদা থেকে সরে গিয়ে কাফের বা মুরতাদ হয়েছে?

২।  নাকি এরা যিন্দিক  হিসেবে গণ্য হবে?

৩।  নাকি এরা গোমরাহ  গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত?

আপনাদের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ, কুরআন-সুন্নাহ ও ফিকাহ গ্রন্থের আলোকে স্পষ্টভাবে ফতোয়া প্রদান করে আমাদের ও মুসলিম সমাজকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দিন, যাতে আমরা বিভ্রান্তি থেকে বাঁচতে পারি এবং ঈমান রক্ষা করতে পারি।

আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে হক কথা বলার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে সঠিক পথে রাখুনআমিন।

1 Answer

0 votes
by (639,720 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ পাকের মনোনিত দ্বীন ইসলামের হেফাযত তিনি নিজেই করবেন।
যেদিন ইসলাম এবং মুসলিম থাকবে না সেদিন কেয়ামত সংগঠিত হয়ে যাবে।

عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ اللَّهُ الله
অর্থাৎ আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সঃ বলেন- যেদিন দুনিয়াতে কোনো আল্লাহ আল্লাহ বলনেওয়ালা মুমিন থাকবে না সেদিন কেয়ামত সংগঠিত হয়ে যাবে।(সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ১৪৮;তিরমিযি হাদিস-২২০৭)

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي عَلَى ضَلَالَةٍ ، وَيَدُ اللَّهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন আমার সকল উম্মতকে আল্লাহ তায়ালা কখনও ভ্রান্ত (বিকৃত) বিষয়ের উপর ঐক্য করবেন না।
(তিরমিযি হাদিস-২১৬৭;আবু দাউদ হাদিস-৪২৫৩)

عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَذَلِكَ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। এমন কি এভাবে আল্লাহর আদেশ অর্থাৎ কিয়ামত এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনটই থাকবে। (সহীহ মুসলিম-ইঃফা,হাদীস নং-৪৭৯৭)

অথচ হিযবুত তাওহীদের দাবী হলো যে ধর্মটি ইসলাম বলে প্রচলিত আমাদের সমাজে এটা আসল ইসলাম নয়।বরং অন্যন্য ধর্মের মত একটি ধর্ম শুধু।

অথচ মুসলিম মাত্রই জানেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতপ্রাপ্তির পর পূর্ববর্তী সকল আসমানী ধর্মও রহিত হয়ে গেছে। একমাত্র ইসলামকেই আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছেন। খোদ কুরআন কারীমে সেই দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন–

اِنَّ الدِّیْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ.

নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র (মনোনীত) দ্বীন। –সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯

আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন–

وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُ، وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.

আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করতে চাইবে, তা তার কাছ থেকে কিছুতেই কবুল করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। –সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮৫

আর হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো একেবারে সুস্পষ্ট ভাষায় শপথ করে বলে গেছেন–

وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَا يَسْمَعُ بِيْ أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُوْدِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ، ثُمَّ يَمُوْتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِيْ أُرْسِلْتُ بِهِ، إِلّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ.

সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, এই উম্মতের ইহুদী বা নাসারা যেই আমার দাওয়াত পাবে, অতঃপর আমার আনীত দ্বীনের ওপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, সে হবে জাহান্নামী। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩

★ রাসুলুল্লাহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রহমাতুল্লিল আলামিন বলতে তারা একেবারেই নারাজ হলেও রামকৃষ্ণ,বৌদ্ধ অবতারদের নাম নেয়ার সময় তারা আলাইহিস সালাম বলে থাকে।

★হেযবুত তওহীদের অন্যতম দাবী হচ্ছে-

৬০/৭০ হিজরীর পর থেকে ১৩০০ হিজরির পর পুরো ইসলাম ধর্মটি বিকৃত হয়ে গিয়েছে এবং সমস্ত মুসলমান কাফের এবং মুশরিক হয়ে গিয়ে। সুৎরাং প্রচলিত ইসলামটি আসল ইসলাম নয় বরং আল্লাহর প্রেরিত ইসলামের বিপরিত এটা।

অথচ দলীল-প্রমাণ ছাড়া কোনো একজন মুসলমানকে কাফের বলার ব্যাপারেও কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–

مَنْ رَمَى مُؤْمِنًا بِكُفْرٍ فَهُوَ كَقَتْلِه.

কোনো মুমিনকে কুফুরীর অপবাদ দেওয়া তাকে হত্যা করার সমতুল্য। –সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১০৫

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন–

أَيُّمَا امْرِئٍ قَالَ لِأخِيْهِ: يَا كَافِرُ، فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا، إِنْ كَانَ كَمَا قَالَ، وَإِلّا رَجَعَتْ عَلَيْهِ.

যে কেউ তার ভাইকে কাফের বলবে, সেটা তাদের দুজনের কোনো একজনের ওপর বর্তাবে। যদি সে যা বলেছে তা বাস্তব হয় তবে তো হল। অন্যথায় তার নিজের ওপরই তা বর্তাবে। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০

★টুপি, দাড়ী,পাগড়ি,জুব্বা এগুলোর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জোর দাবী তুলেছেন তারা।
অথচ বিধর্মীদের মত দাড়ীতে তারা ষ্টাইল করা রুচিসম্মত কাজ মনে করে থাকেন।

★তাদের দাবী হলো “হেযবুত তওহীদ’ই হলো আল্লাহর পাঠানো আসল দ্বীনুল হক।তাদের এমামুযযামান খ্যাত বায়াজীদ খান পন্নীকে নাকি আল্লাহ পাক মো’জেজার মাধ্যমে বলেছেন যে,”হেযবুত তওহীদ” এ দলটি দিয়ে পুরো বিশ্বে সহীহ ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে।

এজন্য তারা ঘোষণা দিয়ে তাদের বইয়ের মধ্যে লিখেছে-
“যারা হেযবুত তওহীদ করবে তাদের জন্য নিশ্চিত জান্নাত। এনকি যদি কেউ হেযবুত তওহীদে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে দুই শহিদের মর্যাদা পাবে।আর যারা পন্নী সাহেবের মোজেজা বিশ্বাস করবে না তারা মোনাফেক। তাদের কোনো মুক্তি নাই।তারা জাহান্নামী।”[লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।]

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
https://ifatwa.info/48202/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
হিজবুত তাওহিদ একটি ভ্রান্ত মতবাদ।
বায়জীদ খান পন্নীর একটি ভিডিও লেকচার ইউটিউবে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিও লেকচারে বায়জীদ খান পন্নী সাহেব বলেনঃ “মহাসত্য পেয়েও যেখানে নবী রাসূলদের মধ্যেও অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন, পারেন নাই, সেখানে আমিকে সেই মু’জিজা দিয়ে, আল্লাহর রহমে, আল্লাহ অবসান  করে দিলেন আমার যে, কর! হবে!”

এছাড়া আরো অনেক ভ্রান্ত মতবাদ তাদের রয়েছে।
এ সমস্ত আকিদা বিশ্বাসের কারণে আমরা তাদের ভ্রান্ত ও গোমরাহ এবং কুফরি মতবাদ সম্পন্ন দল হিসেবে মনে করি। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়ত দান করুক।আমীন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 249 views
...