আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
25 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।


আমি একজন শিক্ষার্থী এবং ভবিষ্যতে ফ্রিল্যান্সিং করে হালাল উপার্জন করার চেষ্টা করছি। আমি এমন একটি পেশা খুঁজছি যেটা একদিকে স্কিলভিত্তিক, অন্যদিকে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী হালাল।


সম্প্রতি আমি “ইথিক্যাল হ্যাকিং” (Ethical Hacking) বা “বাগ হান্টিং” (Bug Hunting) সম্পর্কে জানতে পারি। এই পেশাটির মূল উদ্দেশ্য হলো – বিভিন্ন কোম্পানি, ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের নিরাপত্তা দুর্বলতা (vulnerability) খুঁজে বের করে রিপোর্ট করা এবং তাদের সিস্টেম আরও নিরাপদ করতে সাহায্য করা। এটা একটা প্রযুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা পেশা (Cyber Security Profession), যেটা অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠানে আইনত স্বীকৃত ও সম্মানজনক।


তবে আমার একটি দ্বিধা হচ্ছে — এই কাজ করার সময় প্রায়শই বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যারে প্রবেশ করতে হয়, যেখানে অনেক সময় অশ্লীল ছবি, অনাবৃত নারীর ছবি, হারাম প্রোডাক্ট (যেমন: অ্যালকোহল, সুদভিত্তিক ব্যাংক, জুয়া, ডেটিং সাইট, বা ফ্যাশন ব্র্যান্ড ইত্যাদি) বা ইসলামবিরোধী কনটেন্ট থাকতে পারে। যদিও আমি এসব কিছু দেখা বা ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে কাজ করি না, কিন্তু vulnerability test বা penetration test করতে গেলে এগুলো অনিচ্ছাকৃতভাবে চোখে পড়ে যেতে পারে।


এ অবস্থায় আমার কিছু প্রশ্ন:


1. এই ধরনের কাজ, যেখানে মূল উদ্দেশ্য নিরাপত্তা প্রদান, কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে হারাম কনটেন্ট চোখে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে — এটা কি হালাল হবে?


2. ইথিক্যাল হ্যাকিং কি ইসলামি দৃষ্টিতে একটি গ্রহণযোগ্য (জায়েয) পেশা?


3. যদি আমি শুধুমাত্র ইসলামসম্মত বা পরিষ্কার ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করি (যেমন: মুসলিম কোম্পানি, ইসলামি প্রতিষ্ঠান, নিরাপদ ও সাধারণ কনটেন্ট), তাহলে কি এটা পুরোপুরি হালাল হবে?


4. এই কাজ থেকে উপার্জন কি ‘তাযকিয়া’ (পরিশুদ্ধ উপার্জন) হিসেবে গণ্য হবে, যদি নিয়ত থাকে হালাল পথে চলা?


আমি একান্তভাবে চাই, আমার প্রতিটি কাজ যেন হালাল হয়, এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির মাধ্যমে আমার রিজিক আসে। তাই আপনাদের নিকট সঠিক শরয়ি দিকনির্দেশনা কামনা করছি — যেন দ্বিধাহীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।


আল্লাহ্‌ আপনাদের কাজকে কবুল করুন এবং আমাদের সবাইকে হালাল পথে থাকার তাওফিক দান করুন।

1 Answer

0 votes
by (639,720 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/20515/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
সহীহ বুখারীর প্রথম হাদীস যা হযরত উমর রাযি থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,

انما الاعمال بالنيات الخ

প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।

নিয়ত ভালো থাকলে সওয়াব পাওয়া যাবে।আর নিয়তে কোনো প্রকার সমস্যা থাকলে সওয়াব পাওয়া যাবে না,এমনকি গোনাহও হতে পারে।

এবং ধোকা দেয়া হারাম।এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ﻣﻦ ﻏﺸﻨﺎ ﻓﻠﻴﺲ ﻣﻨﺎ 
"যে ব্যক্তি ধোকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়" (সহীহ মুসলিম-১০১) আরো জানুন-https://www.ifatwa.info/647

সুতরাং এই মূলনীতির আলোকে বলা যায় যে,সরকার জনগণ এমনকি সাধারণ অমুসলিমকেও ধোকা দেয়া যাবে না।তবে আত্মরক্ষার জন্য নিজেকে লুকিয়ে রাখার অনুমোদন রয়েছে।

তাই বলা যায় যে,
কাউকে ঠকানো বা ধোঁকা দেয়ার নিয়তে বিপিএন ব্যবহার কখনো জায়েয হবে না।বিস্তারিত জানুন- https://www.ifatwa.info/2171 তবে নিজের আত্মরক্ষার জন্য,বা কাজের সুবিধার্থে VPN ব্যবহার করা জায়েয হবে।

★যেহেতু মানুষের সেবা এবং মানুষের নিাপত্তার স্বার্থে আপনি সাইবার সিকিউরিটি এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখছেন, তাই আপনার জন্য উক্ত পেশা জায়েয হবে। এবং উক্ত পেশার ইনকামও আপনার জন্য হালাল হবে। মানুষের সেবা করার জন্য এতে আপনি সওয়াবও পাবেন। নিজের হেফাজতের স্বার্থে আপনি ভিন্ন আইপি এড্রেসও ব্যবহার করতে পারবেন। 

★কারো ওয়েবসাইট হ্যাকিং করা কখনো জায়েয হবে না। এমনকি কোনো অমুসলিমের ওয়েবসাইট হেকিং করাও জায়েয হবে না। হ্যা, মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত কাফিরদের ওয়েব সাইট হ্যাক করার অনুমতি কিছু সংখ্যক ফুকাহায়ে কেরাম দিয়ে থাকেন। তবে ভারতের সাথে আমাদের চুক্তি রয়েছে। তাই তাদের কোনো ওয়েব সাইট হ্যাক করা কখনো জায়েয হবে না। এই খারাপ দিকগুলো ব্যতীত আপনি তাদের ভালো ভালো দিক শিখতে পারবেন। 

https://ifatwa.info/85180/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে,
ইথিক্যাল হ্যাকিং অর্থাৎ কোন ওয়েবসাইটের সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করা। দেশী হোক বা বিদেশী,মুসলিমের হোক বা কোনো অমুসলিমের, পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে সবই করা জায়েয হবে। 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
এক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত হারাম কোনো কিছু দেখে ফেললে চোখ সাথে সাথে সড়িয়ে নিতে হবে।
ইচ্ছাকৃতভাবে দেখলে বা অনিচ্ছায় নজরে আসলেও সাথে সাথে চোখ না ফিরিয়ে নিলে সেক্ষেত্রে গুনাহ হবে। 

(০২)
ইথিক্যাল হ্যাকিং ইসলামি দৃষ্টিকোণ হতে জায়েয হওয়ার শর্তসমূহ:

1. সুস্পষ্ট অনুমতি থাকতে হবে:

যাদের সিস্টেমে হ্যাক করা হচ্ছে, তাদের পূর্ণ অনুমতি থাকতে হবে।

অন্যথায় এটি হবে জুলুম এবং হারাম।

2. উদ্দেশ্য হতে হবে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা:

ক্ষতি করা নয়, বরং সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই কাজটি করতে হবে।

3. কারো গোপনীয়তা বা তথ্য অপব্যবহার করা যাবে না:

যদি কাউকে নিরাপত্তা পরীক্ষার সময় ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য দেখা যায়, তবে তা গোপন রাখা ফরজ।

4. চুক্তি ও আইন মানতে হবে:

ইসলামিক নীতিমালার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় আইনেরও বিরোধী হওয়া যাবে না।

(০৩)
উপরোক্ত শর্ত পূর্ণ ভাবে মেনে কাজ করতে পারলে হালাল হবে।
অন্যথায় নয়। 

(০৪)
উপরোক্ত শর্ত পূর্ণ ভাবে মেনে কাজ করতে পারলে আপনার কাজ ও ইনকাম হালাল হবে। পরিশুদ্ধ হবে।
অন্যথায় নয়। 

এক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃতভাবে হারাম কনটেন্ট চোখে পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকেই,তাই এ ধরনের কাজ ছেড়ে দেয়াই সতর্কতা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...