আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
17 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (28 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারোকাতুহ
১.জনৈক একজন পুরুষের ২ স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী চার সন্তানসহ স্বামীকে রেখে অন্যত্র ২য় বিয়ে করে।এরপরে জনৈক ব্যক্তিটি দ্বিতীয় বিয়ে করে এবং তার সন্তানদের লালন-পালন করেন তাদের  একটা রুজিরোজগারের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত। বর্তমানে তারা বিয়ে করে যে যার সংসারে আলাদা আছে। জনৈক ব্যক্তিটি তার চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ২য় স্ত্রীর এলাকায় (বগুড়া) এসে জায়গাজমি কিনে এবং বাড়ি করেন। তিনি মনে করতেন তার মৃত্যুর পরে তার সন্তানরা তাদের সৎ মায়ের দেখভাল করবে না। তাই তিনি তার সন্তানদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নিজ এলাকায় (চট্টগ্রাম) বাড়ি না করে তার ২য় স্ত্রীর এলাকায় (বগুড়া) করেন। এবং তিনি উইল করে যান তার ২য় স্ত্রীর মৃত্যুর পরে এই বাড়ি তার সন্তানদের। কিন্তু তার সন্তানরা বলে যে তারা এই বাড়িতে আসবে না এবং এখানের কিচ্ছু নিবে না।
প্রশ্ন : এক্ষেত্রে কি জনৈক ব্যক্তিটি তার সন্তানদের হক আদায় করলো না? এরজন্য কি তাকে কবরে আজাব ভোগ করতে হতে পারে?
২. কেউ কি চুল কালো করার জন্য কোনো শ্যাম্পু (চুল কালো করে) ব্যবহার করতে পারবে?

1 Answer

0 votes
by (634,530 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
ব্যক্তি জীবিত এবং সুস্থ্য থাকা অবস্থায় তার মালিকানাধীন সম্পদ যাকে ইচ্ছে দান করতে পারে। যেখানে ইচ্ছে খরচ করতে পারে। এতে তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার অর্জিত সম্পদের একক মালিকানা তার হাতেই থাকে। তাতে যাচ্ছে তাই হস্তক্ষেপের অধিকার তার রয়েছে। এতে কেউ হক দাবী করার অধিকার রাখে না।
তার মালিক তার সন্তান বা অন্য কেউ নয়।
 হ্যা, মৃত্যুর পরের কথা ভিন্ন। তখন শরয়ী নীতিমালা অনুপাতে সম্পদ বন্টন করতে হয়।
সে সময় ওয়ারিশগন নীতি অনুসারে সম্পদের দাবী করতে পারবেন।

জীবদ্দশায় কেহ যদি তার সম্পদ বন্টন করে দেয়,সেক্ষেত্রে সকল সন্তানদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

  النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ أبَاهُ أتَى بِهِ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: إِنِّي نَحَلْتُ ابْنِي هَذَا غُلاَماً كَانَ لِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَهُ مِثْلَ هَذَا ؟» فَقَالَ: لاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: فَأَرْجِعهُ وَفي رِوَايةٍ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَفَعَلْتَ هذَا بِوَلَدِكَ كُلِّهِمْ ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: اِتَّقُوا الله وَاعْدِلُوا فِي أَوْلاَدِكُمْ فَرَجَعَ أَبِي، فَرَدَّ تِلْكَ الصَّدَقَةَ . وفي روايةٍ : فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَا بَشيرُ أَلَكَ وَلَدٌ سِوَى هَذَا ؟» فَقَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «أكُلَّهُمْ وَهَبْتَ لَهُ مِثْلَ هذَا ؟» قَالَ: لاَ، قَالَ: فَلاَ تُشْهِدْنِي إِذاً فَإِنِّي لاَ أَشْهَدُ عَلَى جَوْرٍ وفي روايةٍ : «لاَ تُشْهِدْنِي عَلَى جَوْرٍ» . وفي رواية : «أَشْهِدْ عَلَى هذَا غَيْرِي !» ثُمَّ قَالَ: «أَيَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِي البِرِّ سَواءً؟» قَالَ: بَلَى، قَالَ: «فَلا إِذاً» . متفق عليه 

 নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা তাঁকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে হাজির হয়ে বললেন, ‘আমি আমার এই ছেলেকে একটি গোলাম দান করেছি। [কিন্তু এর মা আপনাকে সাক্ষী রাখতে বলে।]’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমার সব ছেলেকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তা ফেরৎ নাও।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমার সব ছেলের সঙ্গেই এরূপ ব্যবহার দেখিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। সুতরাং আমার পিতা ফিরে এলেন এবং ঐ সাদকাহ [দান] ফিরিয়ে নিলেন।’’

আর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে বাশীর! তোমার কি এ ছাড়া অন্য সন্তান আছে?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাদের সকলকে কি এর মত দান দিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী না।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাহলে এ ব্যাপারে আমাকে সাক্ষী মেনো না। কারণ আমি অন্যায় কাজে সাক্ষ্য দেব না।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমাকে অন্যায় কাজে সাক্ষী মেনো না।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘এ ব্যাপারে তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে সাক্ষী মানো।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি এ কথায় খুশী হবে যে, তারা তোমার সেবায় সমান হোক?’’ বাশীর বললেন, ‘জী অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে এরূপ করো না।’’ 
(সহীহুল বুখারী ২৫৮৬, ২৫৮৭, ২৬৫০, মুসলিম ১৬২৩, তিরমিযী ১৩৬৭, নাসায়ী ৩৬৭২-৩৬৮৫, আবূ দাউদ ৩৫৪২, ইবনু মাজাহ ২৩৭৫, ২৩৭৬, আহমাদ ১৭৮৯০, ১৭৯০২, ১৭৯১১, ১৭৯৪৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৭৩)

অন্য বর্ণনায় এসেছে হযরত নোমান ইবনে বশীর (রাযি.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে) তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো। তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো।’
(সহীহ বুখারী : ১/৩৫২; সুনানে আবুদাউদ : ৩৫৪৪)

আরো জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে জনৈক ব্যক্তিটি তার সন্তানদের হক আদায় করলো না,এটা বলা কোনোভাবেই ঠিক নয়। এরজন্য তাকে কবরে আজাব ভোগ করতে হতে পারেনা।

কেননা বাসাবাড়ি করে দেয়া এটি কোনোভাবেই বাবার উপর আবশ্যক নয়।

★শরীয়তের বিধান মতে ছেলে সন্তান বালেগ হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণ ও বাসস্থানের ব্যবস্থা বাবা করবে। কিন্তু ছেলে সন্তান বালেগ হওয়ার পর তার ভরণপোষণ তার বাসস্থানের ব্যবস্থা করা বাবার উপর আবশ্যক নয়।

পাশাপাশি মেয়ে সন্তান এর বিবাহের আগ পর্যন্ত তার ভরণপোষণ ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা বাবার উপর আবশ্যক। মেয়ে সন্তানের বিবাহ হয়ে যাওয়ার পর তার ভরণপোষণ ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা বাবার উপর আর আবশ্যক থাকে না।

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তার বাবার উপর আবশ্যকই না যে সে তার সন্তানদের জন্য বাসা বাড়ি বানিয়ে দেবে।

তদুপরি তিনি (বগুড়াতেই হোক) যে বাসা  বানিয়ে দিয়েছেন এটা তার সন্তানদের প্রতি দয়া এহসান ও অনুগ্রহ।

এক্ষেত্রে সন্তানদের হক নষ্ট হয়েছে বা সন্তানদের এতে মনঃক্ষুন্ন হওয়ার কোনো কারণ রয়েছে, কোনোভাবেই বিষয়টি এমন নয়। বরং এটি তাদের বাবার ঐচ্ছিক ব্যাপার।

(০২)

হরমোনাল কারণে যদি স্বাভাবিক চুল পাকার বয়সের পূর্বে চুল পেকে যায়,তাহলে চুল কালো করার জন্য কোনো শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারবে।

যদি তা কাফিরগণ কে অনুসরণ করে না করা হয়।এবং পরপুরুষ কে দেখানোর উদ্দেশ্য না থাকে।

কেননা এখানে তো ধোঁকা দেয়া হচ্ছে না।অথচ ধোঁকা হওয়া দরুণই মূলত চুলে কালো খেযাব দেওয়ার বিধান মাকরুহে তাহরীমি ছিলো।

তবে কেহ কেহ বলেছেন যে বৃদ্ধ,বৃদ্ধাগনও চুল কালো করার জন্য কোনো শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারবে।কেননা এটি খেজাব নয়। 

আরো জানুনঃ- 

https://ifatwa.info/90619/ 

https://ifatwa.info/11239/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...