আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
31 views
in হজ ও উমরা (Hajj and Umrah) by (53 points)

আসসালামু আলাইকুম 
 

১) কারো যদি হজ ফরজ না হয় তাও যদি সে হজ করে তাহলে সেই হজ নফল বলে গণ্য হবে? কুরআন হাদীসের আলোকে বললে উপকৃত হতাম। 


 

২) হজ করলে কি পূর্বের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়? কুরআন হাদীসের আলোকে বললে উপকৃত হতাম। 



 

৩) কুরবানীর পশুর গোশত কেটে কিছু ছোট করার পর কোথাও পলিথিনের উপর রেখে দিলে সেখান থেকে রক্ত বের হয়ে ফ্লোরে লাগে, সেগুলো কি নাপাক? 


 

জাযাকাল্লাহু খাইরান 

1 Answer

0 votes
by (627,000 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
উল্লেখিত ব্যক্তি যদি ফরজ হজ পালনের নিয়তে ইহরাম পরিধান করে হজ করেন, তাহলে তার জন্য সম্পদশালী হওয়ার পর পুনরায় হজ করা ওয়াজিব নয়, তবে সে যদি ইহরাম পরিধান করার সময় নফলের নিয়ত করে, তাহলে সম্পদশালী হওয়ার পর তাকে পূণরায় হজ করতে হবে। আর যদি সে ফরজ বা নফল ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ত ব্যতীত সাধারণ নিয়তে ইহরাম বেঁধে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রেও ঐ ব্যক্তির উপর সম্পদশালী হওয়ার পর আবার হজ ফরজ হবে না।

সহীহ মুসলিমের ৩১৪৮ নং হাদিসের বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ الحج فَحُجُّوا " . فَقَالَ رَجُلٌ أَكُلَّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَسَكَتَ حَتَّى قَالَهَا ثَلاثًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ ثُمَّ قَالَ - ذَرُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلافِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَدَعُوهُ .

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ হে জনগণ! তোমাদের উপর হাজ্জ ফারয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হাজ্জ কর। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! তা কি প্রতি বছর? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন এবং সে তিনবার কথাটি বলল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি হ্যাঁ বললে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে (প্রতি বছরের জন্য) অথচ তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হবে না। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা আমাকে ততটুকু কথার উপর থাকতে দাও যতটুকু আমি তোমাদের জন্য বলি। কারণ তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের নবীদের বিরোধিতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদের যখন কোন কিছু করার নির্দেশ দেই-তোমরা তা যথাসাধ্য পালন কর এবং যখন তোমাদের কোন কিছু করতে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ কর। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩১৪৮)

মুসনাদে আহমাদের ৩৫১০ নং হাদিসের অপর বর্ণনায় এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ الْأَقْرَعَ بْنَ حَابِي سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم: الْحُجُ كُلَّ عَامٍ ۚ فَقَالَ: لَا، بَلْ حَجَّةٌ

فَمَنْ حَجَّ بَعْدَ ذَلِكَ، فَهُوَ تَطَوُّعُ.

অর্থ: হযরত উবনু আব্বাস রাযি. বলেন, আকুরা' বিন হাবিস সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন, হজ্ব কি প্রতি বছরই আদায় করতে হবে? তিনি জবাব দিলেন, না। বরং একবারই, তবে যারা একবারের পর হজ্ব করবে তা নফল বলে গণ্য হবে। একবারের অধিক হজ্ব করলে তা নফল বলে গণ্য হবে।

(মুসনাদে আহমাদ: ৩৫১০)

الدر المختار مع رد المحتار: (كتاب الحج، 460/2، ط: سعید)

ليفيد أنه يتعين عليه أن لا ينوي نفلا على زعم أنه لا يجب عليه لفقره ۔۔۔ فلو نواه نفلا لزمه الحج ثانيا. اه.

البناية شرح الهداية: (الاستطاعة من شروط وجوب الحج، 144/4، ط: دار الكتب العلمية)

সারমর্মঃ-
দরিদ্র ব্যক্তি যদি নফল হজ্বের নিয়তে হজ্ব আদায় করে সেক্ষেত্রে সে পরবর্তীতে ধনী হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার হজ্ব করা তার উপর আবশ্যক হবে।

ولو حج الفقيرماشياً سقط عنه حجة الإسلام، حتى لو استغنى بعد ذلك لا يلزمه ثانيا۔

منحة الخالق علی ھامش البحر الرائق: (باب الحج عن الغير، 74/3، ط: دار الكتاب الإسلامي)

সারমর্মঃ-
কোন দরিদ্র ব্যক্তি যদি পায়ে হেঁটে হজ্ব করে সে ক্ষেত্রে যদি সে পরবর্তীতে ধনী হয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয়বার হজ্ব করা তারপর আবশ্যক হবে না।

حج الفقير نفلا يجب عليه أن يحج حجا ثانيا اه.

مجمع الأنهر: (شروط الحج، 260/1، ط: دار إحياء التراث العربي)

ولو حج الفقير ثم استغنى لم يحج ثانيا؛ لأن شرط الوجوب التمكن من الوصول إلى موضع الأداء ألا ترى أن المال لا يشترط في حق المكي وفي النوادر أنه يحج ثانيا.

সারমর্মঃ-
কোন দরিদ্র ব্যক্তি যদি হজ্ব করে সে ক্ষেত্রে যদি সে পরবর্তীতে ধনী হয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয়বার হজ্ব করা তারপর আবশ্যক হবে না।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
কারো যদি হজ্ব ফরজ না হয়, তাও যদি সে হজ্ব করে, এক্ষেত্রে সে যদি ফরজ হজ্ব পালনের নিয়তে ইহরাম পরিধান করে বা ফরজ বা নফল ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ত ব্যতীত সাধারণ নিয়তে ইহরাম বেঁধে থাকে, তাহলে সেই হজ্ব ফরজ বলে গণ্য হবে।

পরবর্তীতে সেই ব্যাক্তি সম্পদশালী হয়ে গেলে আবার হজ্ব আদায় করা ফরজ হবে না।

তবে যদি সে ইহরাম পরিধান করার সময় নফলের নিয়ত করে, তাহলে তার সেই হজ্বটি নফল বলে গন্য হবে।

এক্ষেত্রে সম্পদশালী হওয়ার পর তাকে পূণরায় হজ্ব করতে হবে। 

(০২)
হ্যাঁ,তার হজ্ব যদি কবুল হয়,তাহলে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

হজ্জ আদায় করলে অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। জামে' আত-তিরমিজি'র ৮১১ নং হাদিসে বর্ণিত

হয়েছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ حَجَّ فَلَمْ يَرْفُتُ وَلَمْ يَفْسُقُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক যদি হজ্জ করে এবং তাতে কোনো রকম অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ না করে তাহলে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (জামে' তিরমিযী: ৮১১)

হজ্জ আদায় করলে সেই বান্দা নিষ্পাপ সন্তানের মতো গুনাহমুক্ত হয়ে যায়। সহিহ বুখারী ১৫২১ নং হাদিসে

বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ حَجَّ اللَّهِ فَلَمْ يَرْفُتُ وَلَمْ يَفْسُقُ رَجَعَ كَيَوْمٍ وَلَدَتْهُ امه

অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল, সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হজ্জ হতে ফিরে আসবে যেদিন তার মা জন্ম দিয়েছিল। (সহিহ

বুখারী, হাদিস নং ১৫২১)

হজ্জে মাবরুর তথা কবুল হজ্বের প্রতিদান হলো একমাত্র জান্নাত- সহিহ বুখারীর ১৭৭৩ নং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه . أَنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم قَالَ الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةً لِمَا بَيْنَهُمَا، والحج الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءً إِلَّا الْجَنَّةُ .

অর্থ: আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ও বলেছেন: "এক উমরাহ থেকে পরবর্তী উমরাহ পর্যন্ত (সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া গুনাহসমূহের) কাফফারা হয়ে যায়, আর যে হজ্ব মাকবুল (হজ্বে মাবরুর) হয়, তার বিনিময় তো জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।" (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৭৭৩)

(০৩)
সেটি নাপাক নয়।

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...