আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
343 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (62 points)
অনেকজনকে বলতে শুনি শবে মিরাজে তারা নফল রোজা পালন রাখেন, বারো রাকাত নফল সালাত আদায় করেন, ভালো খাবারদাবার  রান্না করেন।

এগুলো কি মিরাজ উপলক্ষে করা জায়েজ? যদি জায়েজ না হয় তাহলে কিভাবে তাদেরকে বুুঝানো যায়?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
সালেহ আল-মুনাজ্জিদ লিখেন,
রজব মাস হারাম মাসসমূহের একটি। যে হারাম মাসসমূহের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:....[সূরা তাওবা, আয়াত: ৩৬] হারাম মাসগুলো হচ্ছে- রজব, যুলক্বদ, যুলহজ্জ ও মুহররম মাস।
বুখারি (৪৬৬২) ও মুসলিম (১৬৭৯) আবু বকরা (রাঃ) থেকে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “বছর হচ্ছে- বার মাস। এর মধ্যে চার মাস- হারাম (নিষিদ্ধ)। চারটির মধ্যে তিনটি ধারাবাহিক: যুলক্বদ, যুলহজ্জ, মুহররম ও (মুদার গোত্রের) রজব মাস; যে মাসটি জুমাদাল আখেরা ও শাবান মাস এর মধ্যবর্তী।”
এ মাসগুলোকে ‘হারাম’ আখ্যায়িত করা হয় দুইটি কারণে:
১. এ মাসগুলোতে যুদ্ধ হারাম হওয়ার কারণে। তবে শত্রু যদি প্রথমে যুদ্ধের সূত্রপাত করে সেটা ভিন্ন ব্যাপার।
২. এ মাসগুলোতে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া অন্য মাসে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে বেশি গুনাহ।

তাই আল্লাহ তাআলা এ মাসগুলোতে গুনাতে লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “এগুলোতে তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করো না”[সূরা তওবা, আয়াত: ৩৬] যদিও এ মাসগুলোতে পাপে লিপ্ত হওয়া যেমন নিষিদ্ধ তেমনি অন্য যে কোন মাসে পাপে লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ; তদুপরি এ মাসগুলোতে পাপে লিপ্ত হওয়া অধিক গুনাহ।

শাইখ সা’দী (রহঃ) (পৃষ্ঠা-৩৭৩) বলেন:
“এগুলোতে তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করো না” এখানে সর্বনামের একটা নির্দেশনা হতে পারে- বার মাস। আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি এ মাসগুলো মানুষের হিসাব রাখার সুবিধার্থে সৃষ্টি করেছেন। এ মাসগুলোতে তাঁর ইবাদত করা হবে। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে এবং মানুষের কল্যাণের মাধ্যমে অতিবাহিত করা হবে। অতএব, এ মাসগুলোতে স্বীয় আত্মার উপর জুলুম করা থেকে সাবধান হোন।

আরেকটি সম্ভাবনা রয়েছে এখানে সর্বনামটি চারটি হারাম মাসকে নির্দেশ করছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে- এ মাসগুলোতে জুলুম করা থেকে বিরত থাকার বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারী করা। যদিও যে কোন সময় জুলুম করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এ মাসগুলোতে জুলুমের গুনাহ বেশি মারাত্মক। সমাপ্ত

দুই:
কিন্তু রজব মাসে রোজা রাখা বা রজব মাসের কিছু অংশে রোজা রাখার ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। কিছু কিছু মানুষ রজব মাসের বিশেষ ফজিলত রয়েছে মনে করে এ মাসের বিশেষ কিছু দিনে যে রোজা রাখে এ ধরণের বিশ্বাসের কোন ভিত্তি নেই।

তবে হারাম মাসসমূহে (রজব একটি হারাম মাস) রোজা রাখা মুস্তাহাব মর্মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণিত আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখ; এবং রোজা ভঙ্গও কর”[আবু দাউদ, হাদিস নং- ২৪২৮, আলবানী হাদিসটিকে যয়ীফ বা দুর্বল বলেছেন]

এ হাদিসটি যদি সাব্যস্ত হয় তাহলে হারাম মাসে রোজা রাখা মুস্তাহাব প্রমাণ হবে। অতএব, যে ব্যক্তি এ হাদিসের ভিত্তিতে রজব মাসে রোজা রাখে এবং অন্য হারাম মাসেও রোজা রাখে এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে রজব মাসকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে রোজা রাখা যাবে না।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) মাজমুউল ফাতাওয়া (২৫/২৯০) গ্রন্থে বলেন:
পক্ষান্তরে রজব মাসে রোজা রাখা সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস দুর্বল; বরঞ্চ মাওযু (বানোয়াট)। আলেমগণ এর কোনটির উপর নির্ভর করেন না। ফজিলতের ক্ষেত্রে যে মানের দুর্বল হাদিস বর্ণনা করা যায় এটি সে মানের নয়। বরং এ সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস মাওজু (বানোয়াট) ও মিথ্যা।

মুসনাদে আহমাদ ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি হারাম মাসসমূহে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হারাম মাসগুলো হচ্ছে- রজব, যুলক্বদ, যুলহজ্জ, মুহাররম। এটি চারটি মাসের ব্যাপারেই এসেছে। বিশেষভাবে রজব মাসের ব্যাপারে নয়। সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:
“রজব মাসে রোজা রাখা ও নফল নামায পড়ার ব্যাপারে যে কয়টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে সব ক’টি মিথ্যা”[আল মানার আল-মুনিফ, পৃষ্ঠা- ৯৬]

ইবনে হাজার (রহঃ) ‘তাবয়িনুল আজাব’ (পৃষ্ঠা- ১১) বলেন:
রজব মাসের ফজিলত, এ মাসে রোজা রাখা বা এ মাসের বিশেষ বিশেষ দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। অথবা এ মাসের বিশেষ কোন রাত্রিতে নামায পড়ার ব্যাপারে সহিহ কোন হাদিস নেই। সমাপ্ত

শাইখ সাইয়্যেদ সাবেক (রহঃ) “ফিকহুস সুন্নাহ’ গ্রন্থে (১/৩৮৩) বলেন:
অন্য মাসগুলোর উপর রজব মাসের বিশেষ কোন ফজিলত নেই। তবে এটি হারাম মাসসমূহের একটি। এ মাসে রোজা রাখার বিশেষ কোন ফজিলত কোন সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়নি। এ বিশেষ যে ক’টি বর্ণনা রয়েছে এর কোনটি দলিল হিসেবে গ্রহণ করার উপযুক্ত নয়। সমাপ্ত

শাইখ উছাইমীনকে ২৭ শে রজব সিয়াম ও কিয়াম পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন: “সবিশেষ মর্যাদা দিয়ে ২৭ শে রজব সিয়াম ও কিয়াম পালন- বিদআত। আর প্রত্যেকটি বিদআতই ভ্রান্তি।” সমাপ্ত [মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ উছাইমীন, (২০/৪৪০)]

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
রাসুল (সা.)-এর জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত্রি ছিল এই শবে মেরাজ। কিন্তু এ রাতে উম্মতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আমল সাব্যস্ত হয়নি। যদি সুনির্দিষ্ট কোনো আমল সাব্যস্ত হতো, তাহলে অবশ্যই রাসুল (সা.)-এর সহিহ হাদিসের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হতো। কিন্তু আল্লাহর বান্দারা মনে করে থাকেন যে, রজব মাসের ২৭ তারিখ রাত্রিতে তারা ব্যক্তিগত ইবাদত করবেন, তাহলে এতে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। যেহেতু আমরা ভালো কাজগুলো যেকোনো সময় করতে পারি।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 283 views
0 votes
1 answer 509 views
asked May 22, 2019 in সাওম (Fasting) by আব্দুস সালাম ইবনু আবি হানিফা
0 votes
1 answer 285 views
...