আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
24 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (12 points)
edited by
উস্তায,বিষয়টা এক পরিচিত বোনের।

গতকালও জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাকে এই বোনের বিষয়ে।

বোনটি পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করে নেয় হারাম সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার জন্য।কিন্তু বিয়ের সময় ছেলের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছুই বোনটি জানতো না।ধীরে ধীরে ছেলের পরিবার সম্পর্কে জানতে পারে এবং তাতে দেখা যায় যে ছেলে - মেয়ের পরিবারের মধ্যে অনেক তফাৎ।যেমন - আর্থিক দিক থেকে,দ্বীনদারীর দিক থেকে।

মেয়ে অনার্স পাশ কিন্তু ছেলে ইন্টার মিডিয়েট পাশ।মেয়ের পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো অপরদিকে ছেলেদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না।ছেলে দ্বীনের ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন।এদিকে মেয়ের বাবা ভালো মানের সরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন,ছেলের বাবা গার্মেন্টস এ চাকরি করেন।এই ধরনের অনেক কিছুই কম বেশি আছে।

পরে বোনটি বুঝতে পারে যে তার পরিবার যদি কখনও জানতে পারে তাহলে এই ছেলেকে কোনোদিন মেনে নিবে না।তখন তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়।মেয়েটি বারবার বিচ্ছেদ চাইতে থাকে।যেহেতু তারা আলাদা জেলায় থাকে তাই তাদের মধ্যে মোবাইলের ম্যাসেজেই কথা হয় বেশিরভাগ সময়।

এরকম এক পর্যায়ে মেয়ে বলে যে সে সবকিছু থেকে,ছেলের কাছ থেকে মুক্তি চায়।ছেলে তখন ম্যাসেজে উত্তর দেয় যে "দিলাম,মুক্ত থাকো তুমি"।( এক্ষেত্রে তার অন্তরে তালাক দেয়ার নিয়ত ছিলো কিনা জানা নেই)

এরপর ছেলে বলে যে,"মনে করো আমি মারা গেছি।এটা মনে করে তুমি নিজের জীবন গুছিয়ে নাও।হাজবেন্ড মারা গেলে তো মেয়েরা আবার বিয়ে করতে পারে,তো তুমিও সেভাবে নিজের জীবন গুছিয়ে নাও।আর যদি এটাতে প্রবলেম হয় তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে দিও।"

এরপরেও দুই একদিন রাগারাগির এক পর্যায়ে ছেলে বলে যে,তোমাকে মুক্তি দিলাম।( এখানেও তার অন্তরে তালাক দেয়ার নিয়ত ছিলো কিনা জানা নেই)

আবার অন্য একদিন কথা প্রসঙ্গে মেয়ে বলে যে,"আমার পরিবার যদি কখনো তোমাকে মেনে না হয় তাহলে আমি কি করবো?"

ছেলে উত্তর দেয় যে," তাহলে তোমার পরিবারকেই তুমি বেছে নিও।"
এখন বোনটির প্রশ্ন হলো যে -

উল্লিখিত প্রথম সুরতে ছেলের কথার দ্বারা কি তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে?

আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে -

মেয়ের পরিবার যদি রাজি না থাকে ছেলের কথার দ্বারা কি মেয়ে তালাক প্রদানের অধিকারী হয়েছে?মেয়ে নিজে থেকে তালাক দিতে পারবে?

ছেলে আর একজায়গায় বলেছে যে,তাতেও সমস্যা হলে তুমি আমাকে ছেড়ে দিও।এমন কথার দ্বারা কি মেয়ে তালাক প্রদানের অধিকারী হবে?

উল্লেখ্য,মেয়ের অন্য কোনো সমস্যা নেই।

তার পরিবার যদি কখনো জানতে পারে যে সে এই কাজ করেছে তাহলে হয়তো তার মা বাবার মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনার শিকার হবে( যেহেতু মেয়ের মা এক আর স্ট্রোক করেছিলেন)।বাবা মায়ের সম্মান রক্ষার্থে মেয়েটি এই সম্পর্ক থেকে বের হতে চায়।

এক্ষেত্রে বোনটি তার করণীয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে।

1 Answer

0 votes
by (618,420 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

তালাক হচ্ছে স্বামীর অধিকার। স্বামী তালাক দিলেই তালাক সংঘটিত হবে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ عَنْ مُوسَى بْنِ أَيُّوبَ الْغَافِقِيِّ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ سَيِّدِي زَوَّجَنِي أَمَتَهُ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنِي وَبَيْنَهَا قَالَ فَصَعِدَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ مَا بَالُ أَحَدِكُمْ يُزَوِّجُ عَبْدَهُ أَمَتَهُ ثُمَّ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنَهُمَا إِنَّمَا الطَّلَاقُ لِمَنْ أَخَذَ بِالسَّاقِ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার মনিব তার বাঁদীকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছে। এখন সে আমার ও আমার স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে আরোহণ করলেন, অতঃপর বলেনঃ হে লোকসকল! তোমাদের কারো এরূপ আচরণ কেন যে, সে তার গোলামের সাথে তার বাঁদীর বিবাহ দেয়, অতঃপর তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়? নারীর ঊরু স্পর্শ করা যার জন্য বৈধ, তালাকের অধিকার তার।
(সুনানে ইবনে মাজাহ ২০৮১.বায়হাকী ৯/১৫৭, ইরওয়াহ ২০৪১।)

★শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  মহিলা নিজের উপর কেবল তখনি তালাক পতিত করতে পারবে, যদি স্বামী তাকে তালাক দেবার অধিকার দিয়ে থাকে।
এটি নিকাহ নামার ১৮ নং ধারাতে হ্যাঁ লেখার মাধ্যমেই হোক,বা পরবর্তীতে মৌখিক বা লিখিত ভাবেই হোক।
,  
সুতরাং স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করে,আর স্ত্রী স্বামী কর্তৃক তালাকে তাভবিজের ক্ষমতাবলে লিখিত বা মৌখিকভাবে নিজের নফসের উপর তালাক দিয়ে দিলে সেটি পতিত হয়ে যাবে।

আরো জানুনঃ 

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ
   
قال لھا: طلقي نفسک ولم ینو أو نوی واحدة فطلقت وقعت رجعیة الخ (الدر المختار مع رد المحتار، کتاب الطلاق، باب الأمر بالید، ۴: ۵۷۵، ط: مکتبة زکریا دیوبند)۔
সারমর্মঃ
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে,তুমি তোমার নিজের নফসকে তালাক দাও,কোনো নিয়ত না করে,অথবা এক তালাকের নিয়ত করে,অতঃপর স্ত্রী তালাক দেয়,তাহলে এক তালাকে রজয়ী পতিত হবে।     

رجل قال لامرأتہ خذي طلاقک، فقالت: أخذت، یقع الطلاق۔ (الفتاویٰ الہندیۃ، کتاب الطلاق / الفصل الثاني في إیقاع الطلاق ۱؍۳۵۹)
সারমর্মঃ
কোনো ব্যাক্তি যদি তার স্ত্রীকে বলে,তুমি তোমার তালাক গ্রহন করো।
স্ত্রী যদি বলে যে গ্রহন করলাম,তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে।    

’’ ولو قال اختاری فقالت أنا اختارنفسی طلق ‘‘ ( الھدایۃ : ۲/۳۷۷)
সারমর্মঃ
স্বামী যদি বলে (তালাক সংক্রান্ত)  তোমার ইখতিয়ার,বা তোমার ইচ্ছা।
স্ত্রী যদি বলে আমি নিজের নফসের প্রতি ইখতিয়ার করলাম,তাহলে তালাক পতিত হবে। 
আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
"তোমাকে মুক্তি দিলাম"

উক্ত বাক্য স্বামী তালাকের নিয়তে বললে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।

অন্যথায় কোনো তালাক পতিত হবে না।

এখন স্বামী তালাকের নিয়তে বলেছে কিনা সেটির জন্য স্বামীকে জিজ্ঞাসা করতে হবে।

তিনি যদি বলেন যে তার তালাকের নিয়ত ছিলনা, সেক্ষেত্রে তালাক পতিত হবে না।

(০২)
" তাহলে তোমার পরিবারকেই তুমি বেছে নিও।"

এটিও কেনায়া বাক্য।
উক্ত বাক্য স্বামী তালাকের নিয়তে বললে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।

অন্যথায় কোনো তালাক পতিত হবে না।

এ বাক্যের দরুন স্ত্রী তালাকের অধিকার পাবেনা।

(০৩)
"তুমি আমাকে ছেড়ে দিও"

এমন কথার দ্বারা মেয়ে তালাক প্রদানের অধিকারী হবে।

এক্ষেত্রে স্বামী কোন কথার প্রেক্ষিতে আমাকে ছেড়ে দিও শব্দ বলেছিলেন?
কোন শর্তে বলেছিলেন?

সেই শর্ত মাফিক স্ত্রী তালাকের অধিকারপ্রাপ্ত হবে।

এখন স্বামী এই কথাটি কোন শর্তের ভিত্তিতে বলেছিলেন?

যদি স্ত্রীকে বলে থাকে যে তোমার পরিবার মেনে না নিলে সেক্ষেত্রে "আমাকে ছেড়ে দিও" সেক্ষেত্রে স্ত্রীর পরিবার মেনে না নিলে তখন স্ত্রী তালাকের অধিকার প্রাপ্ত হবে। তার আগে নয়।

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

No related questions found

...