আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
66 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُ

আমার সহবাস জনিত ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই যখন থেকে জানতে পারি জিনিসটা কি তখন থেকেই খারাপ লাগা কাজ করতো। মানে, মানতেই পারতাম না এভাবে বেবি হয়। যা হোক, কিশোরী বয়সে আমি পরিবারের একজনের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হই, ধর্ষন না হলেও তা শরীরে হাত দেয়া। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাসে পথে ঘাটে আমি বিভিন্ন খারাপ পুরুষ দ্বারা শরীরে বিভিন্ন হাত দেয়া টাইপ পেয়েছি। আমি অত্যন্ত নরম মনের এবং রাস্তাঘাটে আমি এসবের মুখ ফুটে প্রতিবাদ করতে পারিনি। এগুলো মানসিক ভাবে আমাকে আরো আঘাত করেছে। বিয়ের শুরুতে আমার স্বামীর সাথে সহবাসে এসব নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে। এ ট্রমাগুলো আমার মনে পড়তো সে আমার গায়ে হাত দিলেই। এভাবে ৩ বছর পার হয়। তাকেও কষ্ট দিয়েছি জানি। তবে যখন বুঝতে পেরেছি নিজে নিজে জিনিসটা ঠিক করার চেষ্টা করেছি। নিজের আন্তরিক চেষ্টা, অভিনয় দিয়ে হলেও আমি স্বামী ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। তবুও আমার স্বামীর তার মনমত হয় না বলে এখন আমাকে তিরস্কার করে। অতীতে যে আমি এমন করেছি তার সাথে এর জন্য অনেক অশ্লীল গালিগালাজ, খারাপ কথা বলেছে। সে আমার সাথে আর থাকতে চায় না। বর্তমানে আমি প্রেগন্যান্ট, এ অবস্থায়ই সে খুব খারাপ আচরণ করতে থাকে। আর সে মাঝে এমনভাবে চাইতো যেন খারাপ ভিডিওতে যেমন দেখা যায় ওরকম করা। লজ্জাস্থানে মুখ দেয়া, সারারাত একটানা করা এমন যা আমার পক্ষে অনেক কষ্টকর। সে আমাকে অনেক কিছু বলেছে। বলেছে দেখি তুই আমার অসন্তুষ্টি নিয়ে কিভাবে জান্নাতে যাস? তোর বিচার আল্লাহ করবে। বলে রাখা ভালো, বিয়েটা পছন্দের বিয়ে ছিলো এবং আমার এই ট্রমার ব্যাপারে তাকে৷ আমি অবগত করেছিলাম। তবে এ নিয়ে কোন ডাক্তার দেখায় নি সে। শুধু এটাই বলেছে আমার মানসিক সমস্যা, আমি নিজে থেকে না চাইলে সম্ভব না।


আমার প্রশ্ন, এইযে আমি চেষ্টা করেছি নিজের অনাগ্রহ সত্তেও কিংবা অভিনয় করে হলেও তাকে সন্তষ্ট করার চেষ্টা করেছি এতেও কি আমার গুনাহ হবে?? আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং আমি জানি এগুলো কত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু জানতে চাই চেষ্টা করা সত্তেও কি আমার গুনাহ হবে?

1 Answer

0 votes
by (618,420 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/12098/ ফতোয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
  
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর হকঃ
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের উপর অনেক হক রয়েছে।তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হক হল,সহবাসের হক।
স্ত্রীর উপর স্বামীর সহবাস হক কতটুকু? 
উত্তরঃ স্বামী স্ত্রীকে সহবাসের জন্য তলব করলে স্ত্রীর জন্য তৎক্ষনাৎ স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব।শরয়ী উযর ব্যতীত জবাব না দেয়ার কোনো অপশন নেই।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত
عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه فأبت فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح»
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশ্তাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত দিতে থাকে। 
(সহীহ বুখারী-৩২৩৭)

এখন সহসাই প্রশ্ন জাগে, 
তাহলে স্বামীর নিকট স্ত্রীর সহবাস হক্ব কতটুকু?

এ সম্পর্কে উলামাদের কাছ থেকে বিরোধপূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যায়।
(ক) 
ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,
ﻭﻳﺠﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻭﺝ ﻭﻁﺀ ﺍﻣﺮﺃﺗﻪ ﺑﻘﺪﺭ ﻛﻔﺎﻳﺘﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻨﻬﻚ ﺑﺪﻧﻪ ﺃﻭ ﻳﺸﻐﻠﻪ ﻋﻦ ﻣﻌﻴﺸﺘﻪ ، .. ﻓﺈﻥ ﺗﻨﺎﺯﻋﺎ ﻓﻴﻨﺒﻐﻲ ﺃﻥ ﻳﻔﺮﺿﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻛﺎﻟﻨﻔﻘﺔ ﻭﻛﻮﻃﺌﻪ ﺇﺫﺍ ﺯﺍﺩ " 
স্ত্রীর সন্তুষ্টি পর্যন্ত স্বামীর উপর স্ত্রীকে সহবাস করা ওয়াজিব(অর্থাৎ স্ত্রীর চাওয়া মাত্র স্বামীকে সহবাস করতে হবে)।যতক্ষণ না স্বামীর শরীর দুর্বল হচ্ছে বা স্বামীকে তার জীবিকানির্বাহ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সহবাসের পরিমাণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হলে এক্ষেত্রে উচিৎ খোরপোষ ইত্যাদির মত সহবাসের পরিমাণকে বিচারক ঠিক করে দেবেন।(দৈনিক না সাপ্তাহিক? এইভাবে ঠিক করে দিবেন)
ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ-২৪৬

(খ)
জুমহুর উলামায়ে কেরাম বলেন,প্রতি চার মাসে একবার স্বামীর উপর স্ত্রীকে সহবাস করা ওয়াজিব।(যখন স্ত্রী তা চাইবে)
সে সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রাহ, লিখেন..
স্বামী-স্ত্রীর হক সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সহবাস, সুতরাং স্ত্রীর সাথে স্বামী কতদিন পর্যন্ত সহবাস না করে থাকতে পারবে সে বিষয়ে অালোকপাত করে বলেনঃ
وَيَجِبُ أَنْ لَا يَبْلُغَ بِهِ مُدَّةَ الْإِيلَاءِ إلَّا بِرِضَاهَا وَطِيبِ نَفْسِهَا بِهِ. اهـ
স্ত্রীর সন্তুষ্টি ব্যতীত স্বামী মুদ্দতে ই'লা তথা চার মাস এর বেশী সময় সহবাস ব্যতীত থাকতে পারবে না।অন্যকথায় চার মাসের ভিতরে স্ত্রীর সাথে একবার সহবাস করা স্বামীর উপর ওয়াজিব।তবে স্ত্রী সহবাস ব্যতীত সন্তুষ্ট থাকলে ভিন্ন কথা অর্থাৎ যতদিন ইচ্ছা সহবাস ব্যতীত স্বামী থাকতে পারবে।

বিস্তারিত জানুন- https://www.ifatwa.info/990

হযরত আবু যর রাযি থেকে বর্ণিত,

عن أبی ذر: أن ناساً قالوا: يارسول الله، ذهب أهل الدثور بالأجور، يصلون كما نصلي، ويصومون كما نصوم، ويتصدقون بفضول أموالهم قال: " أو ليس قد جعل الله لكم ما تصدقون به: إن بكل تسبيحة صدقة، وكل تكبيرة صدقة، وكل تحميدة صدقة، وكل تهليلة صدقة، وأمر بالمعروف صدقة، ونهي عن المنكر صدقة وفي بضع أحدكم صدقة قالوا: يارسول الله أيأتى أحدنا شهوته، ويكون له فيها أجر؟! قال: " أرأيتم لو وضعها في حرام أكان عليه وزر؟ فكذلك إذا وضعها في الحلال كان له أجر" (رواه مسلم)

কিছু সাহাবী বললেন, ’হে আল্লাহর রাসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে।’ তিনি বললেন, ’’আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি?
নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।’’ সাহাবীগণ বললেন, ’হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন করে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’ তিনি বললেন, ’’কি রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? (নিশ্চয় হবে।) অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে।’’ (মুসলিম ১০০৬, আবূ দাউদ ১৫০৪, ইবনু মাজাহ ৯২৭, আহমাদ ২০৯১৭)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরণ মতে এক্ষেত্রে আপনার গুনাহ হবেনা।

আপনি আল্লাহ তায়ালা আপনার উপর অসন্তুষ্ট হবেননা। আপনার প্রতি পরামর্শ, কোনো বিজ্ঞ গাইনী ডাক্তার দেখাবেন,ইনশাআল্লাহ সমস্যা সমাধান হবে।

আপনাকে আপনার স্বামী পর্ণের যে ধরনের কাজ করতে বলে,সে-ধরনের কাজ শরীয়তে জায়েজ নেই।

এধরণের আদেশ না মানায় আপনার গুনাহ হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...