আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
55 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহু, উস্তাদ

আমার বিয়ে হয়েছে ১ বছর ২১ মাস আলহামদুলিল্লাহ। আমার জাওজ অনার্স থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন। আমি গত দের বছর ধরে বাবার বাসায়ই থাকছি। আমার উনার ইনকাম নেই, তার বাবা ও নেই। মা আর এক বোন আছে শুধু। উনি বাড়ি থাকেন না উনার কলেজ যেখানে সেখানে মেসে থাকেন। আমার পড়াশুনার খরচটুকুই উনি দিতে পারেন আলহামদুলিল্লাহ বাকি সব খরচ আমার বাবা মা ই করে আসছে এই কয় বছর। আমাকে শ্বশুর বাড়ি থাকতে দিবে না আমার আম্মু আর আমার জাওজও কারণ উনি না থাকলে বা থাকলেও ওখাণে একটু সমস্যা হয় কিন্তু বাহ্যিক সমস্যা না হলেও অভ্যন্তরীণ সমস্যা!  এই জন্য আমার আমার আম্মু উনার সাথে আলোচনা করেই আমার এখানে থাকা আলহামদুলিল্লাহ। উনি যখন বাড়ি যান তখন উনার সাথে আমি যাই আর নয় উনি আমার বাবার বাসায় আসেন। উনার নিজের পরিবার চালাতেই একটু কষ্ট হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ।
আর আমি যে বাবার বাসায় থাকছি এটা আমার আত্নীয়রা এমনকি আমার খুব খাছের দ্বীনি বোনেরা ভালোভাবে নেয় না। সুযোগ পেলেই খুব খোটা দেয় আমার তখন খুব কষ্ট লাগে। বিশেষ করে আমার খরচ সব আমার আব্বু আম্মু চালাচ্ছে তাই আরো বেশি খোটা দেয়। আমাকে বাচ্চা নিতে না করে যে আমার বাচ্চার খরচ ও আব্বু আম্মুর করতে হবে আরো অনেক কথা উস্তাদ আল্লাহ ভাল জানেন!  আবার আমার আব্বু আম্মুর কাছেও আমি বোঝা হয়ে গিয়েছি মাঝে মাঝে তাদের আচরণ আমার প্রতি তাই প্রকাশ করে। যেই আম্মু কখনো আমার সাথে ধমক দিয়ে কিছু বলতো না সেই আম্মু এখন আমাকে কথায় কথায় ধমক দেয় আলহামদুলিল্লাহ। আমার থেকে আমার আম্মু তার ভাগ্নি ভাস্তিদের বেশি স্নেহ করে তারা আমাকে এতো খোচা দিয়ে কথা শুনায় আমার আম্মু কখনো এর প্রতিবাদ করে নি। আর আমি প্রতিবাদ করতে গেলে আম্মু আমাকে বকা দেয় বলে আমি খারাপ হয়ে গিয়েছি। এই হলো আমার পরিস্থিতি উস্তাদ। আমি আশা করবো আপনি একটু হলেও বুঝেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
আমার মা হওয়ার খুব শখ উস্তাদ। আমি এই উদ্দেশ্যেই বিয়ে করেছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু যেখানে আমাকেই বোঝা মনে করে হচ্ছে আর আমার জাওজ তার নিজের পরিবার চালাতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমন অবস্থায় আমি কি করবো উস্তাদ? আমার জাওজ এই জন্য এখন বাচ্চা নিতেও চান না। তাহলে কি এটা গুনাহ হচ্ছে আমাদের? আমি চাই না আমার বাচ্চা যখন পৃথিবীতে আসবে তাকেও আমার মতো বোঝা ভাবা হবে আমি চাই না উস্তাদ। আমি জানি না আমার সার্বিক অবস্থা বুঝাতে পেরেছি কিনা। কিন্তু এটা নিয়ে আমার খুব কাছের দ্বীনি বোনরাও কথা শুনায় হুম হয়তো না বুঝেই করে তবে আমি কষ্ট পাই। আজকে তারা অনেকেই প্রেগন্যান্ট, যে যার জাওজ এর বাসায় নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত আলহামদুলিল্লাহ। সেই হিসেবে আমি এখনো সংসার বলতে কি বুঝিও ণী৷ স্বামীর হক হয়তো এখনো আমি ঠিক মতো আদায় করতে পারি নি। সেইখানে আমি মা হতে চাচ্ছি কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে সেটাও হতে দিচ্ছে না। উস্তাদ এখানে কি আমাদের গুনাহ হচ্ছে বাচ্চা নেয়া থেকে যে বিরত আছি!?  কি করবো উস্তাদ এখন? আমার মাঝে মাঝে সবকিছু কেমন যে মনে হয় আল্লাহ ভালো জানেন! আমি অভিযোগ করছি না সবকিছুর জন্যই আলহামদুলিল্লাহ। আমি আশা করি আমার রব আমাকে এর বিনিময়ে অনেক সুন্দর জান্নাতি সংসার আর নেক সন্তান দিবেন ইন শা আল্লাহ। শুধু একটু কষ্ট পাচ্ছি কিন্তু কাওকে বলার মতো পাচ্ছি না।  আমি জানি না এখানে বলা ঠিক হবে কিনা।
উস্তাদ আমাকে পরামর্শ দিন আমার জন্য কি করণীয়!  এভাবে বাচ্চা নেয়া থেকে বিরত থাকাতে কি আমাদের গুনাহ হচ্ছে? কিন্তু আমার জাওজ এখন চান না নিতে তাহলে কি আমার তার কথা শুনতে হবে না কি করবো উস্তাদ?

1 Answer

0 votes
by (616,290 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে।

 রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة

“তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”(আবু দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে  সাধারণত জন্ম নিয়ন্ত্রণ  করা হয়।
,
এক.স্থায়ী পদ্ধতি–যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। 

আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)

দুই.অস্থায়ী পদ্ধতি– যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন : আযল করা (সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো), Condom Jelly, Cream, Foam, Douche ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (Pill) খাওয়া,জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রকার শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ব্যতীত মাকরুহে তানযিহি।তবে শরীয়ত সম্মত নিম্নোক্ত প্রয়োজনে বৈধ রয়েছে।
(ক)মহিলা এত দুর্বল যে, গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা নেই।
(খ)মহিলা নিজ বাসস্থান থেকে এত দূর সফরে যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আপতত কোনো মনোবাসনা নেই।আবার নিজ বাসস্থানে আসতেও কয়েক মাস লেগে যাবে বা কয়েক মাসের প্রয়োজন।
(গ)স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক চূড়ান্ত নিম্ন পর্যায়ের,এমনকি উভয়ের অন্তরে বিচ্ছেদের চিন্তাভাবনা চলছে।
(ঘ)পূর্বের বাচ্চার সু-সাস্থ্যর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
(ঙ)স্থান-কালের ফাসাদ অর্থাৎ দ্বীনী পরিবেশের চূড়ান্ত পর্যায়ের অবনতির ধরুন বাচ্চা বদ-আখলাক বা অসচ্চরিত্র এবং মাতাপিতার বে-ইজ্জতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা করলে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عن جابر قال كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب العزل

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)

★বিঃদ্রঃ
সম্পদ কমে যাবে বা মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে সমাজে লজ্জিত হতে হবে মনেকরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ কখনো বৈধ হবে না।

আল্লাহ বলেছেন, 

ولا تقتلوا أولادكم خشية إملاق، نحن نرزقهم وإيّاكم إنّ قتلهم كان خطأ كبيراً. 

‘’দারিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি।নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ…’’(সূরা ইসরা, আয়াত-৩১)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ . 
“শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” (সূরা আল-বাক্বারা)

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,আজকাল যদিও সন্তান হত্যার পরিবর্তে নানাবিধ উপায়ে তাদের জন্মের পর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, তবুও সন্তান জন্মানোর ফলে আর্থিক আশংকাজনিত ভুল ধারণা জন্মনিরোধের অন্যতম কারণ। 

সুতরাং এবিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে ভেবে চিন্তে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে,দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস, কষ্ট বা লজ্জার ভয়ে আমরা যেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমান ও আখেরাতকে বরবাদ না করে দেই।

বিস্তারিত জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরণ মতে উল্লেখিত কারনে বাচ্চা না নিয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর অস্থায়ী পদ্ধতি অবলম্বন করার দরুন আপনাদের গুনাহ হচ্ছে।

উল্লেখ্য আপনার স্বামীর নিজ পরিবার খরচ থেকেও আপনার ভরণপোষণের খরচ দেয়া তার উপর অতি আবশ্যক।

সুতরাং আপনার স্বামীর উপর অতীব জরুরী যে তিনি আপনার ভরণপোষণের খরচ দিবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে বৈধ ভাবে টাকা ইনকামের অনেক পথ তিনি অবলম্বন করবেন।

আপনার লেখাপড়ার খরচ দেয়া তার উপর আবশ্যক নয়,তবে আপনার ভরণপোষণের খরচ দেয়া তার উপর আবশ্যক। 

এক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের জন্য স্বামীর বাসায় গিয়ে থাকার পরামর্শ থাকবে। 

আপনার ভরনপোষণ এর খরচ দেয়ার পর যদি টাকা বেঁচে যায়, সেক্ষেত্রে তার মা বোনের খরচ তাকে দিতে হবে,যদি তার বোন দরিদ্র হয়।
অন্যথায় তার মা বোনের খরচ দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিকোণ হতে তার উপর ওয়াজিব হবেনা।

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...