আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
16 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

একটু জরুরত ছিল...এন্সার তাড়াতাড়ি পাইলে মুনাসিব হতো,ইন শা আল্লাহ

আমার প্রশ্ন,একজন মেয়ের জন্য কি মোশন গ্রাফিক্স শেখা যুক্তিযুক্ত হবে কিনা?

আসলে বিষয়টা নিয়ে অনেকদিন থেকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতেছি,ইস্তেখারা ও করেছি আলহামদুলিল্লাহ। নামায পড়ার পর মন শান্ত হয়ে গেলেও মাঝে মধ্যেই হুট করে মন একদম অস্থির হয়ে যায়।ইস্তেখারার পর বিশ্বস্ত মানুষদের সাথে কথা বলেছি,কিন্তু সেটাতে আমার মন স্থির হয় নি কারণ তারা সেভাবে ইসলামে ইনভলভড নাহ।দীনের সব মেইন্টেইন করার চেষ্টা খুব কম করে।তাই তাদের সাজেশনে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি নি।সব শেষে মুকাররিরা আপুকে বলার পর আপু এখানে জিজ্ঞেস করতে বললেন,কারণ আপুর মোশন গ্রাফিক্স নিয়ে তেমন জানা নেই।

বিষয়টা হলো,আমার গ্রাফিক ডিজাইন জানা আছে,তাই মোশন নিয়ে অনেকেই বলার পর আমি এখানে ভর্তির জন্য কিছু টাকা ও দিয়েছি।বাট তারপর থেকেই দ্বিধা কাজ করতেছে।তারপর মনে হয়েছে টাকা যেটুক গেছে যাক,বাট এটা হয়তো আমার দীন থেকে গাফেল হয়ার কারণ না হয় আবার।এডমিশন এর পরেই আমি ক্যান্সেল করার জন্য বললে তারা হোল্ড করে রেখেছে।কিন্তু আজ ৫ টায় জানাতে বলছে যে কন্টিনিউ করব কিনা..!

 সবার সাজেশন এ মনে হচ্ছে শিখলে আমি অনলাইন বেইজ কাজ ও করতে পারবো,আমি আমাদের আই ও এম এও দেখেছি মোশন এর কাজ।গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ তো আছেই অনেক।সাথে মোশন এর ও দেখেছি।

ইন ফিউচার নিজের কিছু করতে হবে,কারণ আম্মু নাই।আব্বু খরচ দেয় কিন্তু আব্বুর মাইন্ড চেইঞ্জ হলে সে খরচ আর দিবে না।টিউশন করাতাম,এখন টিউশন নাই।আত্মীয় স্বজন ফিরেও তাকাবে না।তো সব ভেবে কিছু করার ইচ্ছা আছে ঘড়ে বসে।পারত পক্ষে বাইরে গিয়ে জব বা কিছু করার ইচ্ছা নাই।

এখন যেহেতু গ্রাফিক জানা আছে,তো এইটা নিয়েই কাজ  করবো নাকি এইটার পাশাপাশি মোশন গ্রাফিক্স শিখবো.. যদি বলে দিতেন..ইন শা আল্লাহ।

জাযাকুমুল্লাহ খয়রন!

1 Answer

0 votes
ago by (612,450 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/56115/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

বর্তমান সময়ে গ্রাফিক ডিজাইন একটি অতীব প্রয়োজনীয় ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বভাবতই এটি অর্থ উপার্জনের এক বিশাল সম্ভাবনাময় পেশায় পরিণত হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। নিম্নে এ সম্পর্কে শরিয়তের বিধান তুলে ধরা হল:

একজন ডিজাইনার বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন যেমন: ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ইন ডিজাইন, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে কোন ছবি, টেক্সট, বিভিন্ন নকশা ইত্যাদির মাধ্যমে মনের ধারণা বা হৃদয় পটে অঙ্কিত কল্পনাকে বাস্তবিক চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে। এটাকেই বলা হয় গ্রাফিক ডিজাইন।মানুষের জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে এর ব্যবহার রয়েছে। যেমন: পণ্যের সাইনবোর্ড, ব্যানার, বিলবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড, বিয়ের কার্ড, বিজনেস কার্ড, হালখাতার কার্ড, মেমো, ভাউচার, স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসা/ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রয়োজনে গ্রাফিক করতে হয়।

জামা-কাপড়, শাড়ি, টি-শার্ট, বইয়ের প্রচ্ছদ ইত্যাদির নকশা তৈরি করতে গ্রাফিক ডিজাইনের প্রয়োজন। ওয়েব ডেভলোপ বা ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রেও ওয়েব সাইটের লোগো, ব্যানার ইত্যাদি তৈরিতে গ্রাফিক ডিজাইন করতে হয়।

এভাবে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রাফিক ডিজাইনের আশ্রয় নিতে হয়। এগুলো সবই বর্তমান সময়ে মানুষের অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়। তাই ইসলামি শরিয়তের কতিপয় মূলনীতি মেয়ে চলে গ্রাফিক ডিজাইন করতে এবং এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে অর্থ উপার্জন করতে কোন বাধা নেই।

যে সকল শর্ত সাপেক্ষে গ্রাফিক ডিজাইন করা বৈধ:

১. মানুষ, পশু-পাখি ইত্যাদি জীব-জন্তুর ছবি ডিজাইন করা জায়েজ নয়। কেননা একাধিক হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। [অবশ্য শরিয়ত সম্মত বৈধ কাজে মানুষের ছবির দরকার হলে ভিন্ন কথা: যেমন: পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, জরুরি প্রমাণ বা ডকুমেন্ট ইত্যাদি]

এ ছাড়া গাছ-পালা, বাগান, ফল-ফুল, মসজিদ, ঘরবাড়ি, জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি প্রাকৃতিক দৃশ্য ইত্যাদি ডিজাইন করতে কোন বাধা নেই।

ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻰ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﻗَﺎﻝَ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻰ ﺭَﺟُﻞٌ ﺃُﺻَﻮِّﺭُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺼُّﻮَﺭَ ﻓَﺄَﻓْﺘِﻨِﻰ ﻓِﻴﻬَﺎ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺍﺩْﻥُ ﻣِﻨِّﻰ . ﻓَﺪَﻧَﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺍﺩْﻥُ ﻣِﻨِّﻰ . ﻓَﺪَﻧَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃْﺳِﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺃُﻧَﺒِّﺌُﻚَ ﺑِﻤَﺎ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻳَﻘُﻮﻝُ « ﻛُﻞُّ ﻣُﺼَﻮِّﺭٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻪُ ﺑِﻜُﻞِّ ﺻُﻮﺭَﺓٍ ﺻَﻮَّﺭَﻫَﺎ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﻓَﺘُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﻓِﻰ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ » . ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﻻَ ﺑُﺪَّ ﻓَﺎﻋِﻼً ﻓَﺎﺻْﻨَﻊِ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮَ ﻭَﻣَﺎ ﻻَ ﻧَﻔْﺲَ ﻟَﻪُ .

অর্থ: সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর কাছে এসে বলল, আমি চিত্রকর এবং চিত্র অংকন করি। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে শরিয়তের বিধান বলে দিন।

ইবনে আব্বাস রা. বলেন: আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তাঁর কাছে গেল।তিনি পুনরায় বললেন: আরও কাছে আস। সে ব্যক্তি আরও কাছে গেল।তখন ইবনে আব্বাস রা. তাঁর মাথায় হাত রেখে বললেন: আমি তোমাকে এ সম্পর্কে এমন একটি হাদিস শুনাচ্ছি, যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে শুনেছি।

আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে,

ﻛُﻞُّ ﻣُﺼَﻮِّﺭٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻪُ ﺑِﻜُﻞِّ ﺻُﻮﺭَﺓٍ ﺻَﻮَّﺭَﻫَﺎ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﻓَﺘُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﻓِﻰ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ

“সকল চিত্রকরই জাহান্নামে যাবে। আর প্রত্যেক চিত্রের পরিবর্তে একজন মানুষ বানানো হবে, যা জাহান্নামে তাকে শাস্তি দেবে। তিনি আরও বললেন, “যদি তোমাকে তা করতেই হয়, তাহলে গাছ-পালা বা এমন বস্তুর ছবি তৈরি কর যার আত্মা নাই।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৫৬৬২)

সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার ইমাম নওবি রহ. বলেন, এখানে ﺻُﻮﺭَﺓٍ ﺻَﻮَّﺭَﻫَﺎ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﻓَﺘُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﻓِﻰ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ এ কথা দু রকম অর্থ বলেছেন। তিনি বলেন, এর অর্থ হতে পারে:

ক. প্রত্যেক ছবি/চিত্রের পরিবর্তে একজন মানুষ বানানো হবে, যা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেবে।

খ. অথবা যে ছবিটি সে অঙ্কন করেছিলো তাতে প্রাণের সঞ্চার ঘটানো হবে যা তাকে জাহান্নামে শাস্তি প্রদান করবে। (শরহে মুসলিম-ইমাম নওবি রহ.)

২. বেপর্দা নারী ছবি, অশ্লীল দৃশ্য ইত্যাদি ডিজাইন করা বৈধ নয়। ইসলামে নারীর জন্য পর্দা করা ফরজ চাই তা বাস্তব জীবনে হোক অথবা ছবি/ভিডিও ইত্যাদি ডিজিটাল ক্ষেত্রে হোক। অনুরূপভাবে ইসলামে অশ্লীলতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

৩. কোন কপিরাইটকৃত ছবি সংগ্রহ করে ইডিটের মাধ্যমে তা পরিবর্তন করা যাবে না। কারণ তা অন্যের অধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং প্রচলিত আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

৪. ছবি ইডিটের মাধ্যমে শরিয়া বিরোধী বা দেশের প্রচলিত আইন বিরোধী কোন কাজ করা যাবে না। কেননা মুসলিম হিসেবে আমরা যেমন শরিয়তের আদেশ-নিষেধ পালনে বাধ্য তেমনি জনকল্যাণের প্রণীতে সরকারি আইন পালনেও বাধ্য। (যদি তাতে শরিয়া বিরোধী কোন কিছু না থাকে)। কেননা, ইসলাম সবসময় মানুষকে যে কোন উপকারী ও কল্যাণকর কাজের প্রতি উৎসাহিত করে। (আংশিক কপি)

★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন,
কোন ব্যক্তি যদি উপরে উল্লেখিত মূলনীতি ও শর্তসমূহ মেনে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে এবং এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে তার উপার্জিত সম্পদ হারাম হবে না। আর যদি উল্লেখিত শর্ত সমূহ না পাওয়া যায় তাহলে তার জন্য উক্ত কাজ করা জায়েয হবে না।

আরো জানুন: 

★সুতরাং আপনি যদি উপরোক্ত শর্তসমূহ মেনে শরীয়তের গন্ডির মধ্যে থেকে মোশন গ্রাফিক্স শিখেন,এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন,তাহলে এটি আপনার জন্য জায়েজ হবে।
এমতাবস্থায় এ থেকে ইনকাম হালাল হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...