আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
59 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ

আমার বয়স ২৭ বছর এবং আমার জন্য প্রায় অনেকবছর ধরেই বিয়ের জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। রোজার কিছুদিন আগে আমার এলাকা থেকে একটা বিয়ের প্রস্তাব আসে ছেলের বাসা আমার বাসা থেকে দশ মিনিট দূরত্বে। ছেলের বয়স ২৯। সিনিয়র ভিডিও এডিটর হিসাবে একটা আইটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

ছেলের মা ও ভাবী আমাকে দেখতে এসেছিল। আমার এলাকা থেকে আগেও আমার জন্য কিছু প্রস্তাব এসেছিল কিন্তু সেগুলোর তুলনায় ওনাদের আচার আচরণ আমার বেশ ভালো লেগেছে। তারা মোবাইলে ছবি তুলে নিয়ে যেতে চায় নি যেটা আগে অনেকে জোর করে করতে চেয়েছে। ছেলের মা, ভাবী দুজনই হিজাব পরা ছিল কিন্তু মুখ খোলা। ছেলের ভাবী আমাকে বলতেছিল যে আমার দেবর আসলে সেভাবে নামাজে নিয়মিত নাহ হয়তো ধার্মিক একজন জীবনসঙ্গী হলে ঠিক হয়ে যাবে।তবে সে খুবই নম্র ভদ্র ভাবী দেবরসুলভ ফাজলামিও কখনো করে নাহ

তারা চলে যাওয়ার পরে জানাল যে মেয়ে দেখে তাদের পছন্দ হয়েছে,এখন ছেলে আর মেয়ে একে অপরকে কোথায় দেখবে সেটা জানতে চাইল। যেহেতু রোজার মাস চলে এসেছিল তাই আমাদের বাসা থেকে জানানো হলো যে ঈদের পরে ইনশাআল্লাহ ছেলের মা এবং আমার আম্মুসহ বাহিরে কোথায়ও বসবে।

এর মধ্যে রোজার মাঝখানে একদিন ছেলের ভাবী আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিল যে আমার সাথে তার কিছু কথা আছে। ছেলের ভাবী বললো যে সে তার দেবরের সাথে সরাসরি আমার ব্যাপারে আলোচনা করেছিল তো তার দেবরের আমার কিছু বিষয় নিয়ে কনফিউশান আছে যেটা সে জানতে চাচ্ছে, তার প্রশ্নটা এমন ছিল যে,"আমি যে পর্দা করি,পর্দার তো অনেক ধরনের প্রকারভেদ আছে আমারটা কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে আমি কি একদমই কারো সামনে যাই নাহ?সামাজিকতা রক্ষার খাতিরেও কি কারো সামনে যাবো নাহ,যদি একদমই না যাই তাহলে তো এসব নিয়ে আত্মীয় স্বজন নানান ধরনের কথা বলবে, আবার অনেকে পর্দাকে আশ্রয় করে সামাজিকতা থেকে দূরে থাকতে চায় আমি সেরকম কিনা"।
আমি উত্তর দিয়েছিলাম যে, আমি এখনো পরিপূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করার চেষ্টায় আছি , বোরকা পড়ি, নিকাব ছাড়া নন মাহরাম কারো সামনে না পড়ার যথেষ্ট চেষ্টা করি,তবে আমার কিছু দায়িত্বের জায়গা আছে সেগুলোর জন্য পর্দায় থেকে নন মাহরামদের সাথে মাঝেমধ্যে কথা বলতে হয়।তবে পরিপূর্ণ পর্দা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি ভবিষ্যৎ এ আল্লাহ কবুল করলে হয়তো আরো স্ট্রিক্টলি মেইনটেইন করবো ইনশাআল্লাহ।

পরবর্তীতে ঈদের পরে সরাসরি ছেলের সাথে দেখা করতে যাওয়া হয় আমার আম্মু সহ সেখানে ছেলের মা ও ভাবীও আসে।
ছেলে আমাকে কিছু প্রশ্ন করে যেগুলো তার ইনকাম অনুযায়ী কম মোহরানা এবং বেশি ঝাকঝমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে পারবে নাহ সে ব্যাপারে ছিল যেহেতু এই দুইটা বিষয় নিয়ে আমি কখনোই খুব বেশি দুশ্চিন্তা করি নি তাই আমি সেভাবেই উত্তর দেই।

তারপর আমি তাকে কয়েকটা প্রশ্ন করি,

  • আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, যেহেতু সে ভিডিও এডিটিং নিয়ে কাজ করে সেখানে হারাম কিছু আছে কিনা?


তার উত্তর ছিল-তাদেরকে ইলেকট্রনিক গেজেটের প্রোমো ভিডিও বানাতে হয় এবং সেখানে হারাম কিছু আছে বলে তার বিগত ৫ বছরে মনে হয় নি।

  • আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল রেগুলার নামাজ পড়ে কিনা?

তার উত্তর ছিল - রেগুলার পড়া হয় নাহ চেষ্টা করে পড়ার মাঝেমধ্যে কাজের চাপ থাকলে মিস হয়ে যায়।

  • তারপর কোরআন শুদ্ধভাবে পড়তে পারে কিনা জিজ্ঞেস করার পরে বললো,অনেক আগে শিখেছিল ২ খতম দেয়া হয়েছিল এখন পড়া হয় নাহ।

 

  • আমার পর্দা করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম, বললো যে যদি আমি পারিবারিক সব দিক মেইনটেইন করে পর্দা করতে পারি তার সমস্যা নেই।

 

  • তার বায়োডাটায় উল্লেখ ছিল যে সে ভিডিও গেমস খেলা পছন্দ করে। সেটা উল্লেখ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে এটা কি তার এডিকশন কিনা নাকি শখের বসে খেলে বললো যে তার গেমস খেললে পিস ফিল হয়, মাথার প্রেশার কম থাকে তাই শখ হিসাবে খেলে।




প্রশ্নোত্তর পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। ওইদিন দেখাদেখির পর্ব জলদি শেষ করতে হয়েছিল কারণ ছেলে বলেছিল যে সে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলবে সে ব্যাপারে আলোচনা করবে। তাই সে বিদায় নিয়ে আগে আগেই বের হয়ে গিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে আমি তার ফেসবুক আইডি খুজে বের করে দেখলাম যে সে আসলে বিদায় নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল এবং সেটা ফেসবু্কে স্টোরি দিয়েছে।

আমরা বাসায় আসার পরে ঘটকের কাছ থেকে উত্তর আসে যে তারা আগাতে চায় আমাদের ডিশেসান কি। আমি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দুইদিন সময় চেয়েছি। আমার মাসিক অসুস্থতা চলছে তাই নামাজ পড়তে পারছি নাহ, এই দুইদিন যাবত আমি টানা ইস্তিখারার দোয়াটা পড়েছি প্রতি ওয়াক্তে।

কিন্তু আমি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছি নাহ।

আমার কাছে যে বিষয়গুলো ভালো লেগেছে,

- ছেলের ফ্যামিলির আচার আচরণ ভালো লেগেছে
- বাসা আমাদের বাসার কাছে
- ছেলের পারিবারিক স্ট্যাটাস ও আমাদের একই রকম
- ছেলের কথাবার্তা ও আচার আচরণ মার্জিত মনে হয়েছে

আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি,

- ছেলের দ্বীনদারিতার দিক।যেহেতু আমি প্রাক্টিসিং একজন আমি নিজেই প্রতিনিয়ত শিখছি ভুল করছি আবার শিখছি। আমার জন্য আসলে আমার থেকে দ্বীনের বিষয়ে বেশি সিরিয়াস এমন কেউ জীবনসঙ্গী হিসাবে থাকলে আমার জন্য দ্বীনের রাস্তায় চলার পথটা ঠিক থাকবে বলে আমি মনে করি। এখন ছেলের মা বা ভাবী আশা করছে যে আমি ছেলেকে পরিবর্তন করে দিব বা নামাজী করে তুলবো কিন্তু এই বিষয়টা তো এতোটা সহজ নাহ এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব।

- যেহেতু যৌথ ফ্যামিলি এবং ছেলেরা দুই ভাই এবং সেখানে ছেলের বাবাও আছেন। সেখানে নিকাবসহ পর্দা করার বিষয়টা বা মাহরাম নন মাহরাম মেইনটেইন করে চলা সবাই কিভাবে নিবে এবং ছেলে যেখানে প্রথম থেকেই পারিবারিক দায়িত্ব পালনের বিষয়টাকে আগে প্রাধান্য দিচ্ছে সে কি এই বিষয়ে সাপোর্টিভ হবে কিনা। আর আমি খুবই ছোট পরিবারে বড় হয়েছি। আম্মু আব্বু আমি এবং আমার বড় ভাই। যেখানে আমার প্রায়োরিটি আলহামদুলিল্লাহ সবসময়েই খুব বেশি ছিল তারপরও পরিপূর্ণ পর্দা শুরু করার পরে অনেক বিরুপ পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়েছে।

- আমার আরেকটা জিনিস মনে হয়েছে যে,আমি পর্দা করি বা প্রাক্টিসিং এটা ছেলে বা ছেলের ফ্যামিলির কাছে এরজন্যই পজিটিভ যে মডার্ণ কাউকে চয়েজ করলে অনেক বিষয়ে টেনশনে থাকতে হয় সেদিক থেকে এরকম কাউকে চয়েজ করাটা ভাল। ভুল অনুমান করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিক

- ছেলের সিনেমা দেখতে যাওয়া, গেমস খেলা, কিছুটা মডার্ণ ও স্বাধীন লাইফস্টাইল নিয়ে আমি কিছুটা শংকিত

সবশেষে আমি এই বিষয়গুলো এভাবে বিস্তারিত কারো সাথে আলোচনা করতে পারছি নাহ তাই মনে হলো এখানে প্রশ্ন করলে হয়তো কোনো ভালো পরামর্শ পাবো ইনশাআল্লাহ

এবং আমার প্রশ্নও এটাই যে আমার কি সিদ্ধান্ত জানানো উচিত? আমার কি এই প্রস্তাবে আগানো ঠিক হবে?

1 Answer

0 votes
by (612,540 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

বিবাহের ক্ষেত্রে রাসুল সাঃ কুফু মিলাইতে বলেছেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
 
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدَّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ»

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)!
(সহীহ বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১, ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩।)

কুফু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/4541/

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
আপনি উক্ত বিবাহে রাজি হতে পারেন।

পাত্রকে বলে নিবেন যে গায়রে মাহরামদের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে আমি কিন্তু নেকাব সহ পরিপূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে কথা বলব।

গায়রে মাহারাম কারো সামনে আমি চেহারা দেখাবো না।

পাত্রকে আরো বলে নিবেন যে তার ভিডিওতে যদি কোন মেয়ের ছবি থাকে বাদ্য বাজনার ব্যবহার থাকে,বা নাজায়েজ কিছু থাকে, সেক্ষেত্রে এ ধরনের ভিডিওর কাজ যেনো তিনি না করেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...