আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
32 views
in সালাত(Prayer) by (34 points)
আসসালামু 'আলাইকুম,
জামা'আতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে,
সামনে ইমাম, এবং তার একটু পিছেনে কিন্তু ডানে একজন "বিকল্প" ইমাম (আপাতত মুক্তাদী হিসেবে), আর বামে একজন মুক্তাদী


আর এই ৩ জনের পিছনে সব কাতার পূর্ণ। এরকম সিচুয়েচশন ইচ্ছা করে সৃষ্টি করা কতটুকু জরুরত?  এটি মাকরুহ নয় কি?
মানে,  ২ বা ততোধিক মুসল্লি থাকতেও ইমামের একটু পিছনে বাট ডানে বামে দাড়িয়ে জামা'আত আদায় করার বিধান কি?
রিসেন্টলি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ  মহোদয়ের ইদের জামা'আতে তাকে ইমাম এবং সামনের কাতারের লোক কর্তৃক  সামনে নিয়ে যাওয়াটা কতটুকু জরুরত ছিলো এবং কতটুকু শরিয়তসম্মত? পিছনের কাতারে উপদেষ্টা ভালোভাবেই দাড়িয়েছিলো, সমস্যা হচ্ছিলো না কোনো।
আর,  ইমাম কখনও জামা'আত চালিয়ে যেতে অপারগ হলে তো পিছনের কাতার থেকে বরাবর একজন এসে ইমামতি করবে।কিন্তু  তার বদলে আগে থেকে বিকল্প ইমাম ডান পাশে, একটু পিছনে দাড়ানোর বিধান কি?

1 Answer

0 votes
by (607,050 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

শরীয়তের বিধান হলো একজন মুক্তাদি হলে ইমামের ডান দিকে সামান্য পিছনে এসে দাড়াবে।

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন,

صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِرَأْسِي مِنْ وَرَائِي، فَجَعَلَنِي عَنْ يَمِينِهِ، فَصَلَّى

একরাতে আমি নবী ﷺ–এর সঙ্গে নামায আদায় করতে গিয়ে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পেছনের দিক ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন। তারপর নামায আদায় করলেন….। (বুখারী ৬৯০)

মুক্তাদী ২ জন বা তার বেশী (পুরুষ) হলে ইমামের পশ্চাতে কাতার বাঁধবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُصَلِّيَ فَجِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى أَقَامَنِي عَن يَمِينه ثُمَّ جَاءَ جَبَّارُ بْنُ صَخْرٍ فَقَامَ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخَذَ بيدينا جَمِيعًا فدفعنا حَتَّى أَقَمْنَا خَلفه. رَوَاهُ مُسلم

জাবের (রাঃ) বলেন, একদা মহানবী (ﷺ) মাগরেবের নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এই সময় আমি এসে তাঁর বাম দিকে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। ইতিমধ্যে জাব্বার বিন সাখার (রাঃ) এলেন। তিনি তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি আমাদের উভয়ের হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁর পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। (মুসলিম ৩০১০, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১১০৭ নং)
,
মাসয়ালা হলোঃ
যদি দু'জন লোক, অর্থাৎ একজন ইমাম ও অনুসারী জামাতে নামায পড়ছেন, তবে যদি এখন তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত হন, যদি স্থান প্রশস্ত হয়, তবে ইমামের এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং উভয় অনুসারীর পিছনে দাঁড়ানো উচিত। 
,
যদি ইমামের সামনে এগিয়ে যাওয়ার কোন জায়গা না থাকে বা ইমাম নতুন আগত মুক্তাদিকে না জানে এবং সে এগিয়ে না যায়, তবে প্রথম মুক্তাদির নিজেই পিছনে যেতে হবে। 
যাতে এ দু'জন মিলে ইমামের পেছনে একটি লাইন তৈরি করতে পারে।
,
মুক্তদি যদি পিছনে না যায় তবে তৃতীয় ব্যক্তি তাকে পিছনে টেনে নিয়ে যাবে, সে তাহরিমাকে বেঁধে রেখেছে বা তার পূর্বে।

 (السنة أن يقف المأمومون خلف الإمام. فإن [وقفوا]  قدامه لم تصح. وإن وقفوا معه عن يمينه أو عن جانبه صح).

أما كون السنة أن يقف المأمومون خلف الإمام؛ فلأن الصحابة رضي الله عنهم كذا كانوا يقفون خلف النبي صلى الله عليه وسلم. نقله الخلف عن السلف.

وأما كونهم إذا وقفوا قُدّامه لا تصح صلاتهم؛ فلأنه ليس موقفاً لأحد من المأمومين بحال. فلم تصح صلاتهم كما لو صلوا في بيوتهم بصلاة الإمام في المسجد.

ولأن الإمام متبوع ومقتدى به والمأموم متبع ومن تقدم إمامه ليس بمتبع.

وأما كونهم إذا وقفوا عن يمينه أو جانبيه تصح صلاتهم؛ فـ «لأن ابن مسعود رضي الله عنه صلى بين علقمة والأسود إماماً لهما. فلما فرغ قال: هكذا رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يفعل»  رواه أبو داود.

قال: (فإن كان واحداً وقف عن يمينه. وإن وقف خلفه أو عن يساره لم يصح. وإن أم امرأة وقفت خلفه).

أما كون الواحد يقف عن يمين الإمام؛ فلما روى ابن عباس قال: «بِتُّ عند خالتي ميمونة. فقام النبي صلى الله عليه وسلم يصلي من الليل. فقمت عن يساره فأخذ بذؤابة رأسي فأدارني عن يمينه»  متفق عليه.

(সুন্নাত হল ইমামের পিছনে দাঁড়ানো। যদি তারা তার সামনে দাঁড়ায়, তাহলে তা বৈধ নয়। যদি তারা তার সাথে তার ডানে বা পাশে দাঁড়ায়, তাহলে তা বৈধ।)

আর সুন্নাত হলো ইমামের পিছনে দাঁড়ানো; কারণ সাহাবাগণ, আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট থাকুন, নবী (সাঃ)-এর পিছনে দাঁড়াতেন।

আর যদি তারা ইমামের সামনে দাঁড়ায়, তাহলে তাদের নামায সহীহ হবে না; কারণ এটি কোনও অবস্থাতেই মুক্তাদীদের জন্য অবস্থান নয়।

তাদের নামাজ বৈধ নয়, যেমন তারা মসজিদে ইমামের নামাজের পরে ঘরে নামাজ পড়ে।

কারণ ইমামের অনুসরণ ও অনুকরণ করা হয়, আর যার ইমামতি করা হয় সে একজন মুক্তাদি, আর যে তার ইমামের আগে আসে সে মুক্তাদী নয়।

আর ডানে বা পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে, তাদের নামায সহীহ; কারণ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আলকামাহ ও আসওয়াদের মধ্যবর্তী নামাজের ইমামতি করেছিলেন। যখন তিনি শেষ করলেন, তখন তিনি বললেন: "আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-কে, আল্লাহ তাঁর উপর দরুদ নাযিল করুন এবং শান্তি বর্ষণ করুন, এটা করতে দেখেছি।"  আবু দাউদ কর্তৃক বর্ণিত।

যদি মুক্তাদী একজন থাকে, তাহলে তার ডানদিকে দাঁড়ানো উচিত। যদি সে তার পিছনে বা বাম দিকে দাঁড়ায়, তাহলে তা বৈধ নয়। আর একজন মহিলার মা তার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

যদি মুক্তাদী একজন থাকে, তাহলে তার ডানদিকে দাঁড়ানো উচিত।

ইবনে আব্বাস বর্ণনা করলে তিনি বলেন: “আমি আমার খালা মায়মুনার সাথে রাত কাটিয়েছি।” নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাতে নামাজের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। "আমি তার বাম দিকে দাঁড়িয়েছিলাম, আর সে আমার চুল ধরে আমাকে তার ডান দিকে ঘুরিয়ে দিল"। 

★শরীয়তের বিধান হলো ইমামের সাথে মাত্র একজন মুক্তাদী (পুরুষ বা শিশু) হলে উভয়ে একই সাথে সমানভাবে দাঁড়াবে; ইমাম বাঁয়ে এবং মুক্তাদী হবে ডানে। এ ক্ষেত্রে ইমাম একটু আগে এবং মুক্তাদী একটু পিছনে আগাপিছা হয়ে দাঁড়াবে না। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে মহানবী (ﷺ) নিজের বরাবর দাঁড় করিয়েছিলেন। (বুখারী ৬৯৭নং)

মৃত্যুরোগের সময় তিনি আবূ বাকর (রাঃ)-এর বাম পাশে তাঁর বরাবর এসে বসেছিলেন। (ঐ ১৯৮ নং)

নাফে’ বলেন, ‘একদা আমি কোন নামাযে আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)-এর পিছনে দাঁড়ালাম, আর আমি ছাড়া তাঁর সাথে অন্য কেউ ছিল না। তিনি আমাকে তাঁর হাত দ্বারা তাঁর পাশাপাশি বরাবর করে দাঁড় করালেন।’ (মালেক, মুঅত্তা ১/১৫৪) অনুরুপ বর্ণিত আছে হযরত উমার (রাঃ) কর্তৃকও।

এ জন্যই ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে উক্ত বিষয়ক পরিচ্ছেদ বাঁধার সময় বলেন, ‘দুজন হলে (মুক্তাদী) ইমামের পাশাপাশি তার বরাবর ডান দিকে দাঁড়াবে।’ (বুখারী ৬৯৭)

জ্ঞাতব্য যে, একক মুক্তাদীর ইমামের ডানে দাঁড়ানো সুন্নত বা মুস্তাহাব। অর্থাৎ, যদি কেউ ইমামের বামে দাঁড়িয়ে নামায শেষ করে, তাহলে ইমাম-মুক্তাদী কারো নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। 

মুক্তাদী ২ জন বা তার বেশী (পুরুষ) হলে ইমামের পশ্চাতে কাতার বাঁধবে।

জাবের (রাঃ) বলেন, একদা মহানবী (ﷺ) মাগরেবের নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এই সময় আমি এসে তাঁর বাম দিকে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। ইতিমধ্যে জাব্বার বিন সাখার (রাঃ) এলেন। তিনি তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি আমাদের উভয়ের হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁর পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। (মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১১০৭ নং)

উল্লেখ্য যে, দুই জন মুক্তাদী যদি ইমামের ডানে-বামে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে তাহলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। নামায হয়ে যাবে, কারণ ইবনে মাসঊদ আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদের মাঝে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেছেন এবং তিনি নবী (ﷺ)-কে ঐরুপ দাঁড়াতে দেখেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান) 

অবশ্য মহানবী (ﷺ)-এর সাধারণ সুন্নাহ্ হল, তিন জন হলে একজন সামনে ইমাম এবং দুই জনের পিছনে কাতার বাঁধা। পক্ষান্তরে আগে-পিছে জায়গা না থাকলে তো এক সারিতে দাঁড়াতে বাধ্যই হবে।

ইচ্ছাকৃত ভাবে হোক বা অনিচ্ছায় হোক, ইমামের বরাবর নামাজ দাঁড়ালে নামাজের কোনো সমস্যা হবেনা। নামাজ শুদ্ধ হবে।

তবে ইমাম থেকে আগ বাড়িয়ে সামনে গিয়ে দাড়ালে সেই মুক্তাদীর নামাজ হবেনা।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে তাদের সকলের নামাজ শুদ্ধ হয়েছে। এতে তাদের কারো নামাজের কোনো সমস্যা হয়নি।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

«أن ابن مسعود رضي الله عنه صلى بين علقمة والأسود إماماً لهما. فلما فرغ قال: هكذا رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يفعل»  رواه أبو داود.

ইবনে মাসউদ (রাঃ) আলকামাহ ও আসওয়াদের মধ্যবর্তী নামাজের ইমামতি করেছিলেন। যখন তিনি নামাজ শেষ করলেন, তখন তিনি বললেন: "আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-কে, আল্লাহ তাঁর উপর দরুদ নাযিল করুন এবং শান্তি বর্ষণ করুন, এটা করতে দেখেছি।"  আবু দাউদ কর্তৃক বর্ণিত।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 184 views
...