জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
মুল্য দ্বারা ফিতরা আদায় করাও সুন্নাহ সম্মত।
‘‘ফিতরা’’ টাকা দ্বারা আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। তার দলীল-
مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)
فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ
10371 – حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: «أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِ»
অর্থ : হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সাদাকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭১। এটির সনদ সম্পূর্ণ সহীহ তথা প্রমাণযোগ্য।
তেমনি ভাবে ইবনে আবী শায়বার মাঝে টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার ব্যাপারে রয়েছে হযরত হাসান বসরী (রহ.) এর আসার-
مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)
10370 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: «لَا بَأْسَ أَنْ تُعْطِيَ الدَّرَاهِمَ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ»
অর্থ : হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার দ্বারা কোন সমস্যা নেই। ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭০।
অনুরুপ ভাবে রয়েছে এ বিষয়ে হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহ.) এর চিঠি-
مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)
10369 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ قُرَّةَ، قَالَ: جَاءَنَا كِتَابُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ «نِصْفُ صَاعٍ عَنْ كُلِّ إِنْسَانٍ أَوْ قِيمَتُهُ نِصْفُ دِرْهَمٍ»
ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৬৯।
এছাড়াও বিখ্যাত ইমাম, ইমাম ইবনে আবী শায়বা তার রচিত কিতাব ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে- فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ অর্থাৎ সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার (বৈধতা) সম্পর্কে।
আর ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার রচিত কিতাব সুনানুল কুবরা-৪/১৮৯ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে–بَابُ مَنْ أَجَازَ أَخْذَ الْقِيَمِ فِي الزَّكَوَاتِ. অথাৎ এই অনুচ্ছেদ হলো টাকা দ্বারা যাকাত আদায় করা অনুমোদিত।
তাছাড়াও রাসূল (সা.) এর যুগেও زَكَاةَ الفِطْرِ ও زكوة ইত্যাদি টাকা দ্বারা আদায় করা হতো। তার কিছু প্রমাণ নিম্মে পেশ করা হলো-
صحيح البخاري (2/ 116)
وَقَالَ طَاوُسٌ: قَالَ مُعَاذٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لِأَهْلِ اليَمَنِ: «ائْتُونِي بِعَرْضٍ ثِيَابٍ خَمِيصٍ – أَوْ لَبِيسٍ – فِي الصَّدَقَةِ مَكَانَ الشَّعِيرِ وَالذُّرَةِ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ وَخَيْرٌ لِأَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ» وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَأَمَّا خَالِدٌ فَقَدِ احْتَبَسَ أَدْرَاعَهُ وَأَعْتُدَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ” وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَصَدَّقْنَ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ» فَلَمْ يَسْتَثْنِ صَدَقَةَ الفَرْضِ مِنْ غَيْرِهَا، فَجَعَلَتِ المَرْأَةُ تُلْقِي خُرْصَهَا وَسِخَابَهَا، وَلَمْ يَخُصَّ الذَّهَبَ وَالفِضَّةَ مِنَ العُرُوضِ “
সহীহ বুখারী-২/১১৬।
উল্লেখ্য যে, সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে এটি ইমাম বুখারী (রহ.) এরও উক্তি-
فتح الباري لابن حجر (3/ 312)
(قَوْلُهُ بَابُ الْعَرْضِ فِي الزَّكَاةِ)
أَيْ جَوَازُ أَخْذِ الْعَرْضِ وَهُوَ بِفَتْحِ الْمُهْمَلَةِ وَسُكُونِ الرَّاءِ بَعْدَهَا مُعْجَمَةٌ وَالْمُرَادُ بِهِ مَا عَدَا النَّقْدَيْنِ قَالَ بن رَشِيدٍ وَافَقَ الْبُخَارِيُّ فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ الْحَنَفِيَّةَ مَعَ كَثْرَةِ مُخَالَفَتِهِ لَهُمْ لَكِنْ قَادَهُ إِلَى ذَلِكَ الدَّلِيلُ ……الخ
…..আল্লামা ইবনু রাশীদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসয়ালাটির মাঝে ইমাম বুখারী (রহ.) হানাফীদের সহমত পোষন করেছেন….। ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার-৩/৩১২।
এ বিষয়ে আহমদ আল গুমারী (রহ.) এর আরবী ভাষায় ১৫০ পৃষ্ঠায় ‘‘تحقيق الامال فى فى اخراج زكوة الفطر بالمال’’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা রচনা করেছেন। যা সকলকে পড়ে রাখা আবশ্যক। (আমার কাছে পুস্তিকাটি রয়েছে কারো প্রয়োজন হলে বলবেন)।
এ বিষয়ে আরো দেখুন- বাদায়েউস সানায়ে-২/৯৬৯, আল মাবসুত লিসসারাখসী-৩/১১৩ ইত্যাদি।
(সংগৃহীত)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই,
মূল্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা যায়।
মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা উত্তম না মূল জিনিষ দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম? এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম থেকে দু-রকম সিদ্ধান্ত আমরা দেখতে পাই।
সুতরাং আমরা এ সিদ্ধান্তেই পৌছতে সক্ষম হবো যে,মূল্য দ্বারা ফিতরা করলে সেটা আদায় হয়ে যাবে।হ্যা সময়-সুযোগ থাকলে মূল জিনিষ দ্বারাও দিয়ে দিতে পারবেন।উভয়টিই পারবেন।
আরো জানুনঃ
(০২)
গম দিয়ে সদকাতুল ফিতির আদায় করলে অর্ধ সা পরিমাণ গম দিতে হবে।
এর দলিলঃ-
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا سَهْلُ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ حُمَيْدٌ أَخْبَرَنَا عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ خَطَبَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَحِمَهُ اللهُ فِي آخِرِ رَمَضَانَ عَلَى مِنْبَرِ الْبَصْرَةِ فَقَالَ أَخْرِجُوا صَدَقَةَ صَوْمِكُمْ فَكَأَنَّ النَّاسَ لَمْ يَعْلَمُوا فَقَالَ مَنْ هَا هُنَا مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ قُومُوا إِلَى إِخْوَانِكُمْ فَعَلِّمُوهُمْ فَإِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَذِهِ الصَّدَقَةَ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ شَعِيرٍ أَوْ نِصْفَ صَاعٍ مِنْ قَمْحٍ عَلَى كُلِّ حُرٍّ أَوْ مَمْلُوكٍ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى صَغِيرٍ أَوْ كَبِيرٍ فَلَمَّا قَدِمَ عَلِيٌّ - رضى الله عنه - رَأَى رُخْصَ السِّعْرِ قَالَ قَدْ أَوْسَعَ اللهُ عَلَيْكُمْ فَلَوْ جَعَلْتُمُوهُ صَاعًا مِنْ كُلِّ شَىْءٍ . قَالَ حُمَيْدٌ وَكَانَ الْحَسَنُ يَرَى صَدَقَةَ رَمَضَانَ عَلَى مَنْ صَامَ .
হাসান বসরী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রমাযানের শেষভাগে বাসরাহতে মিম্বারে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, তোমরা তোমাদের সওমের সাদাকা প্রদান করো। লোকেরা হয়ত বিষয়টি অবগত ছিল না। তিনি বললেন, এখানে মাদীনাহবাসী কেউ আছে কি? তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে গিয়ে তাদেরকে এ বিষয়ে শিক্ষা দাও। কেননা তারা (ফিতরাহ সম্পর্কে) অজ্ঞ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতরাহ নির্ধারণ করেছেন মাথাপিছু এক সা’ খেজুর বা যব বা অর্ধ সা’ গম স্বাধীন কিংবা গোলাম, পুরুষ অথবা নারী, ছোট অথবা বড়- সকলের পক্ষ হতে। পরবর্তীতে ‘আলী (রাঃ) বাসরাতে এসে জিনিসপত্রের দাম খুবই কম দেখে বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে প্রাচুর্য দান করেছেন। সুতরাং তোমরা প্রত্যেক বস্ত্ত হতে এক সা‘ প্রদান করো (এটাই ভাল হয়)। হুমাইদ আত-তাবীল (রহঃ) বলেন, হাসান বাসরীর মতে, কেবল সওম পালনকারীর উপর রমাযানের ফিতরাহ দেয়া ওয়াজিব।
(আবু দাউদ ১৬২২, নাসায়ী (অধ্যায় : যাকাত, হাঃ ২৫১৪), আহমাদ, দারাকুতনী।)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: فِي آخِرِ رَمَضَانَ أخرجُوا صَدَقَة صومكم. فرض رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ الصَّدَقَةَ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ شَعِيرٍ أَوْ نِصْفَ صَاعٍ مِنْ قَمْحٍ عَلَى كُلِّ حُرٍّ أَوْ مَمْلُوكٍ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى صَغِيرٍ أَوْ كَبِيرٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার তিনি রমাযানের শেষ দিকে লোকদের উদ্দেশে বললেন, তোমরা তোমাদের সিয়ামের সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দাও। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের প্রত্যেক মুসলিম, স্বাধীন-অধীন, গোলাম-বাঁদী, পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড় সকলের পক্ষে ’এক সা’ খেজুর ও যব অথবা ’এক সা’-এর অর্ধেক গম সদাক্বাতুল ফিত্বর ফরয করে দিয়েছেন।
(মিশকাত ১৮১৭)
(২.১)
এতেও তার সদকাতুল ফিতর আদায় হবে।
তবে বিত্তশালীরাও এমনটি করলে এর দরুন হাদীসের উপর যথাযথ আমল হবেনা।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই,
লক্ষনীয় বিষয়ঃ-
সদাকাতুল ফিতর বর্তমানে প্রায় সকলেই কেবল গম ও আটা হিসাবে এলাকাভেদে ১০৫-১১০-১২০ টাকার ভেতর দিয়ে থাকে।
অথচ এটি সর্বনিম্ন মূল্য মানের।
গম-আটা ছাড়াও বাকি আরো চারটি পণ্যের মূল্য অনুযায়ী সদাকাতুল ফিতর আদায় করার কথা হাদিসে উল্লেখ আছে।
যেন প্রত্যেক মুসলমান নিজ নিজ সামর্থানুযায়ী তা আদায় করতে পারে। এখন দেখা যায়, সমাজের সকল শ্রেণির সম্পদশালী ব্যক্তিরা আটা-ময়দার হিসাবানুযায়ী সদাকাতুল ফিতর আদায় করে থাকে।
অথচ এই ক্ষেত্রে এমনটি হওয়া উচিত ছিল যে, যার কাছে সবোৎকৃষ্ট পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায়ের সুযোগ আছে সে তা দিয়েই আদায় করবে, যার কিসমিস, পনির ইত্যাদি মূল্যে ফিতরা আদায়ের সুযোগ আছে সে ঐগুলোর হিসাবে সদাকাতুল ফিতর আদায় করবে।
আর যার কাছে উপরিউক্ত দামি পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করাটা কঠিন সে গম বা আটা-ময়দার হিসাব অনুযায়ী ফিতরা আদায় করবে।
সহীহুল বুখারী'র ২৫১৮ নং হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-
أَغْلَاهَا ثَمَنًا، وَأَنْفَسُهَا عِنْدَ أَهْلِهَا
অর্থ: ঐ দান উত্তম দান যা দানকারীর কাছে সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। (সহীহ বুখারী, )
কাজেই আমাদের উচিত, সামর্থ অনুযায়ী সবোৎকৃষ্ট পণ্য বা তার মূল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা।
(০৩)
হাদীসে যে ৫ টি পন্য বা তার মুল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায়ের কথা এসেছে,তার বর্তমান মুল্য সমপরিমাণ টাকা দিয়ে চাল/ডাল ইত্যাদি ক্রয় করে তাহা দিয়েও সদকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে।
এতেও সদকাতুল ফিতর আদায় হবে।
১৪৪৬ হিজরী (২০২৫ খ্রি.) সালের সাদাকাতুল ফিতর এর হার জানুনঃ-