আসসালামু আ'লাইকুম। আমি কয়েকবছর আগে হিদায়াতের পথ পাই৷ তখন থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করছি হিদায়াতে অটল থাকার, আমল বাড়ানোর। আমার পরিবার আগে অতটা না মানলেও এখন আমার মা-বোন অনেকটাই ফিরেছে৷ কিন্তু আমার বাবা আমি যতদূর বুঝলাম নাস্তিক। আগে পার্থক্য করতে পারতামনা তাই বুঝিনি৷ তিনি মনে করেন দুনিয়া এসেছে unconscious শক্তি থেকে৷ বিজ্ঞানপূজা করেন। আমার মা আর বোন অন্য জায়গায় থাকে বেশিরভাগ সময় বোনের পরীক্ষার জন্য৷ আমার বাবা আর আমি বাসায় থাকি। যতদিন আমরা দুজন থাকি ততদিন আমার বাবা তার দূর্বলতা শেয়ার করেন, আমিও গল্প করি। কিন্তু মা-বোন বাসায় আসলেই বাবার অহংকার বেড়ে যায়৷ সুযোগ পেলেই ইসলাম নিয়ে ইসলামের শিয়ার নিয়ে আজেবাজে কথা বলেন, হুজুরদের নিয়ে, শরীয়তের নিয়ম নিয়ে। পরকাল বলতে কিছু নাই এমন বলেন। আমরা যে বিশ্বাস করি এগুলা নিয়ে ঠাট্টা করেন৷
আমার মা এগুলো নিয়ে তেমন চিন্তিত না৷ আমার মা কেমন যেন নিঃস্বার্থভাবে বাবার সেবা করেন, ইসলাম নিয়ে বাজে কথায় তার কিছু আসে যায়না৷ বাবাও এটা বুঝেন তাই সাহস পান৷ তার কাছে হয়তো মনে হয় যে তার রিজিক তিনি নিজেই তৈরী করছেন বা এই রিজিক তার প্রাপ্য বা চীরকাল এই রিজিক তিনি পাবেনই। যখন আমি আর বাবা থাকি তখন এগুলো বলেননা তেমন, হয়তো কারণ তখন আমার উপরে তাকে নির্ভর করতে হয়। এই রমজানে তিনি নামাজ পড়া ধরেছিলেন, হয়তো আমি একা নামাজ পড়ব দেখে৷ কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তার হয়তো ইমান ফিরে আসছে, খুশি হয়েছিলাম৷ আমার মা-বোন বাসায় আসতেই আর নামাজের ধারেকাছেও নেই৷ তিনি প্রচুর মিথ্যা বলেন, কিছু একটা না বুঝলেও বুঝে ফেলেছেন এমন ভাব করেন।
আমার সমস্যা হচ্ছে, ইসলাম নিয়ে খারাপ কথাগুলো আমাকে প্রচন্ড প্রচন্ড কষ্ট দেয়। আমার ইমান যেহেতু দূর্বল তাই সংশয়েও পড়ে যাই৷ উনার কথার কোনো প্রমাণ উনার কাছে নেই, যেমন শয়তানের থাকেনা। এগুলো জানলেও প্রচুর ওয়াসওয়াসা হয় আমার। আর আমি ইসলাম নিয়ে কটূক্তি বিষয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণই করতে পারিনা, প্রচন্ড রেগে যাই। আজেবাজে কথা বলে ফেলি৷ অনেকসময় কথাগুলো প্রাসঙ্গিকও হয়না৷ মনে হয় আমি যে কষ্ট পাচ্ছি সেটা তিনিও পাক। অনেকসময় দেখা যায় আমি একটা নরমাল কথা বলছি, উনি সেটাকে টেনে আমার কোনো একটা পরিবর্তনকে নিচু দেখানোতে নিয়ে যান৷ যেমন- আমি নাকি অন্ধকারে ঢুকে যাচ্ছি, সবকিছু ভয় পাই(পর্দা করায় বেগানা পুরুষ আসলে লুকিয়ে পড়ি দেখে)৷ উনার কথায় এমন লক্ষণ দেখলেই আমি অতিরিক্ত ট্রিগার্ড হয়ে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে ফেলি, উনার দূর্বলতাগুলোতে আঘাত করে ফেলি যেমন- উনার ইনকাম। ইনকাম আমার কাছে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ না। কেন এগুলো মুখ দিয়ে বের হয় জানা নাই।
কিন্তু তিনি তো আমার বাবা। আর বাবা হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন আমার ভালো করার এটা আমি বুঝি৷ যখন দুজন একা থাকি তখন তাকে দেখে আমার কষ্ট লাগে, দুআ করি তার হিদায়াতের জন্য। কিন্তু যখন মা আসলে তার অহংকারি কথা কাজগুলো দেখি তখন আর ভিতর থেকে দুআ আসেনা, মনে হয় যা খুশি করুক শাস্তি পাক। এমনকি মাঝেমাঝে মনে হয় হিদায়াত না হোক আর দেখুক নিজের সাথে কী হয়।
আর কিছুদিন ধরে আমার কাছে জিনিসগুলো এত অসহ্য হয়ে উঠেছে যে আমি বাসা থেকে চলে যাওয়ার ফিকির করছি৷ আমি অবিবাহিত তাই একটা দ্বীনী পরিবারে বিয়ের জন্য দুআ আর চেষ্টা করছি। মেয়ে বলে চাইলেই বাইরে চলে যাওয়া যায়না বা বাইরে একটা দ্বীনী দল পাওয়া যায়না।
আল্লাহ যখন চাইবেন তার আগে তো কিছুই হবেনা৷ আমি যতদিন বাসায় আছি কীভাবে উনার সাথে ডিল করতে পারি? উনার ঠাট্টা করার সময় কীভাবে জবাব দিব বা চুপ করে থাকব? এজন্য কি কোনো আলাদা দুআ, বইপত্র আছে যেগুলো আমাকে সাহায্য করতে পারে? আর আমি যে রাগারাগি করি এগুলোর জন্য কি উনার কাছে মাফ চাওয়া উচিত? উল্লেখ্য যে উনার মধ্যে ইনসাফজ্ঞান কম, মাফ চাইলে উনি সম্ভবত ভাববেন যে উনার কথাগুলাই ঠিক। কীভাবে বললে উনার অপরাধটাও বুঝবেন আবার আমার অপরাধটাও বুঝবেন? আর আমি যে এসব খারাপ দুআ করি এগুলো কি গুনাহ হবে?