আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
24 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (10 points)
আসসালামু আ'লাইকুম। আমি কয়েকবছর আগে হিদায়াতের পথ পাই৷ তখন থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করছি হিদায়াতে অটল থাকার, আমল বাড়ানোর। আমার পরিবার আগে অতটা না মানলেও এখন আমার মা-বোন অনেকটাই ফিরেছে৷ কিন্তু আমার বাবা আমি যতদূর বুঝলাম নাস্তিক। আগে পার্থক্য করতে পারতামনা তাই বুঝিনি৷ তিনি মনে করেন দুনিয়া এসেছে unconscious শক্তি থেকে৷ বিজ্ঞানপূজা করেন। আমার মা আর বোন অন্য জায়গায় থাকে বেশিরভাগ সময় বোনের পরীক্ষার জন্য৷ আমার বাবা আর আমি বাসায় থাকি। যতদিন আমরা দুজন থাকি ততদিন আমার বাবা তার দূর্বলতা শেয়ার করেন, আমিও গল্প করি। কিন্তু মা-বোন বাসায় আসলেই বাবার অহংকার বেড়ে যায়৷ সুযোগ পেলেই ইসলাম নিয়ে ইসলামের শিয়ার নিয়ে আজেবাজে কথা বলেন, হুজুরদের নিয়ে, শরীয়তের নিয়ম নিয়ে। পরকাল বলতে কিছু নাই এমন বলেন। আমরা যে বিশ্বাস করি এগুলা নিয়ে ঠাট্টা করেন৷
আমার মা এগুলো নিয়ে তেমন চিন্তিত না৷ আমার মা কেমন যেন নিঃস্বার্থভাবে বাবার সেবা করেন, ইসলাম নিয়ে বাজে কথায় তার কিছু আসে যায়না৷ বাবাও এটা বুঝেন তাই সাহস পান৷ তার কাছে হয়তো মনে হয় যে তার রিজিক তিনি নিজেই তৈরী করছেন বা এই রিজিক তার প্রাপ্য বা চীরকাল এই রিজিক তিনি পাবেনই। যখন আমি আর বাবা থাকি তখন এগুলো বলেননা তেমন, হয়তো কারণ তখন আমার উপরে তাকে নির্ভর করতে হয়। এই রমজানে তিনি নামাজ পড়া ধরেছিলেন, হয়তো আমি একা নামাজ পড়ব দেখে৷ কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তার হয়তো ইমান ফিরে আসছে, খুশি হয়েছিলাম৷ আমার মা-বোন বাসায় আসতেই আর নামাজের ধারেকাছেও নেই৷ তিনি প্রচুর মিথ্যা বলেন, কিছু একটা না বুঝলেও বুঝে ফেলেছেন এমন ভাব করেন।

আমার সমস্যা হচ্ছে, ইসলাম নিয়ে খারাপ কথাগুলো আমাকে প্রচন্ড প্রচন্ড কষ্ট দেয়। আমার ইমান যেহেতু দূর্বল তাই সংশয়েও পড়ে যাই৷ উনার কথার কোনো প্রমাণ উনার কাছে নেই, যেমন শয়তানের থাকেনা। এগুলো জানলেও প্রচুর ওয়াসওয়াসা হয় আমার। আর আমি ইসলাম নিয়ে কটূক্তি বিষয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণই করতে পারিনা, প্রচন্ড রেগে যাই। আজেবাজে কথা বলে ফেলি৷ অনেকসময় কথাগুলো প্রাসঙ্গিকও হয়না৷ মনে হয় আমি যে কষ্ট পাচ্ছি সেটা তিনিও পাক। অনেকসময় দেখা যায় আমি একটা নরমাল কথা বলছি, উনি সেটাকে টেনে আমার কোনো একটা পরিবর্তনকে নিচু দেখানোতে নিয়ে যান৷ যেমন- আমি নাকি অন্ধকারে ঢুকে যাচ্ছি, সবকিছু ভয় পাই(পর্দা করায় বেগানা পুরুষ আসলে লুকিয়ে পড়ি দেখে)৷ উনার কথায় এমন লক্ষণ দেখলেই আমি অতিরিক্ত ট্রিগার্ড হয়ে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে ফেলি, উনার দূর্বলতাগুলোতে আঘাত করে ফেলি যেমন- উনার ইনকাম। ইনকাম আমার কাছে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ না। কেন এগুলো মুখ দিয়ে বের হয় জানা নাই।

কিন্তু তিনি তো আমার বাবা। আর বাবা হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন আমার ভালো করার এটা আমি বুঝি৷ যখন দুজন একা থাকি তখন তাকে দেখে আমার কষ্ট লাগে, দুআ করি তার হিদায়াতের জন্য। কিন্তু যখন মা আসলে তার অহংকারি কথা কাজগুলো দেখি তখন আর ভিতর থেকে দুআ আসেনা, মনে হয় যা খুশি করুক শাস্তি পাক। এমনকি মাঝেমাঝে মনে হয় হিদায়াত না হোক আর দেখুক নিজের সাথে কী হয়।
আর কিছুদিন ধরে আমার কাছে জিনিসগুলো এত অসহ্য হয়ে উঠেছে যে আমি বাসা থেকে চলে যাওয়ার ফিকির করছি৷ আমি অবিবাহিত তাই একটা দ্বীনী পরিবারে বিয়ের জন্য দুআ আর চেষ্টা করছি। মেয়ে বলে চাইলেই বাইরে চলে যাওয়া যায়না বা বাইরে একটা দ্বীনী দল পাওয়া যায়না।
আল্লাহ যখন চাইবেন তার আগে তো কিছুই হবেনা৷ আমি যতদিন বাসায় আছি কীভাবে উনার সাথে ডিল করতে পারি? উনার ঠাট্টা করার সময় কীভাবে জবাব দিব বা চুপ করে থাকব? এজন্য কি কোনো আলাদা দুআ, বইপত্র আছে যেগুলো আমাকে সাহায্য করতে পারে? আর আমি যে রাগারাগি করি এগুলোর জন্য কি উনার কাছে মাফ চাওয়া উচিত? উল্লেখ্য যে উনার মধ্যে ইনসাফজ্ঞান কম, মাফ চাইলে উনি সম্ভবত ভাববেন যে উনার কথাগুলাই ঠিক। কীভাবে বললে উনার অপরাধটাও বুঝবেন আবার আমার অপরাধটাও বুঝবেন? আর আমি যে এসব খারাপ দুআ করি এগুলো কি গুনাহ হবে?

1 Answer

0 votes
by (607,050 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

মাতা পিতা কাফের হলেও তাদেরকে মানতে হবে। তাদের সাথে থাকতে হবে।
ভালো ব্যবহার করতে হবে।
তারা কষ্ট পায়,এমন কোনো আচরন করা যাবেনা।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

وَعَن أسماءَ بِنتِ أَبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَتْ : قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ مُشرِكَةٌ في عَهْدِ رسولِ الله صلى الله عليه وسلم، فاسْتَفْتَيْتُ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قُلْتُ : قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ رَاغِبَةٌ، أفَأصِلُ أُمِّي ؟ قَالَ: «نَعَمْ، صِلِي أُمَّكِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

আসমা বিন্তে আবূ বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম; বললাম, ‘আমার মা (ইসলাম) অপছন্দ করা অবস্থায় (আমার সম্পদের লোভ রেখে) আমার নিকট এসেছে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব কি?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ।’’
সহীহুল বুখারী ২৬২০, ৩১৮৩, ৫৯৭৯, মুসলিম ১০০৩, আবূ দাউদ ১৬৬৮, আহমাদ ২৬৩৭৩, ২৬৩৯৯, ২৬৪৫৪
,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতেও পিতার সাথে ভালো আচরন করতে হবে। 
  
তার সাথে সৎব্যবহার করতে হবে।
তার বৈধ যাবতীয় আদেশ মানার চেষ্টা করতে হবে।

তবে তিনি গুনাহের আদেশ করলে,শরীয়াহ বিরোধী কাজের আদেশ করলে, সেটি মানা যাবেনা।

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ [٣١:١٥]

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। [সূরা লুকমান-১৫]

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ۖ وَإِن جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۚ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ [٢٩:٨]

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। [সূরা আনকাবুত-৮]

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
 
  عن مُصْعَبُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ نَزَلَتْ فِيهِ آيَاتٌ مِنَ الْقُرْآنِ قَالَ:  حَلَفَتْ أُمُّ سَعْدٍ أَنْ لَا تُكَلِّمَهُ أَبَدًا حَتَّى يَكْفُرَ بِدِينِهِ، وَلَا تَأْكُلَ وَلَا تَشْرَبَ، قَالَتْ: زَعَمْتَ أَنَّ اللهَ وَصَّاكَ بِوَالِدَيْكَ، وَأَنَا أُمُّكَ، وَأَنَا آمُرُكَ بِهَذَا. قَالَ: مَكَثَتْ ثَلَاثًا حَتَّى غُشِيَ عَلَيْهَا مِنَ الْجَهْدِ، فَقَامَ ابْنٌ لَهَا يُقَالُ لَهُ عُمَارَةُ، فَسَقَاهَا، فَجَعَلَتْ تَدْعُو عَلَى سَعْدٍ، فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْقُرْآنِ هَذِهِ الْآيَةَ: {وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي}

মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, তাঁর সম্পর্কে কুরআনের কিছু আয়াত অবতীর্ণ হলো। তিনি বলেন, তাঁর মা শপথ করে ফেলেছে যে, যতক্ষন তিনি ইসলামকে অস্বীকার না করবেন ততক্ষন তার সাথে কথা বলবে না খাবেও না, পানও করবে না। সে বললো, আল্লাহ তায়ালা তোকে আদেশ করেছেন, পিতামাতার কথা মানতে। আর আমি তোর মা। আমি তোকে এ আদেশ করছি। মা তিন দিন পর্যন্ত কিছু খেলেন না। কষ্টে সে বেহুশ হয়ে গেলে উমারাহ নামক তার এক ছেলে তাকে পানি পান করালো। মা সা’দর উপর বদদু’আ করতে লাগলো। তখন আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফে এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যব্যাবহার করতে। তবে ওরা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে, আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের মেনো না।” (২৯ঃ ৮) আর পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে।” (৩১ঃ ১৫) [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭৪৮]

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনি দ্বীনদার পাত্রের সাথে বিবাহের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া চালিয়ে যাবেন।

আপনার বাবার সাথে এসব বিষয় নিয়ে আর আলোচনা করবেন না।

এসব বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা তুললে আপনি উক্ত স্থান ত্যাগ করে অন্য রুমে চলে যাবেন।

ইতিপূর্বে আপনার বাবার সাথে এ ধরনের কথাবার্তার দরুন তিনি কষ্ট  পেয়ে থাকলে আপনি তার কাছে ক্ষমা চাইবেন।

তবে এমন ভাবে ক্ষমা চাইবেন যাতে ইসলাম ধর্মকে ছোট করা না হয়,আপনি এভাবে বলবেন যে যদিও আমার কথাবার্তাযই মূলত সঠিক, তারপরও বাবা হিসেবে তোমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলার দরুন কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...