আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
26 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (7 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

সদকাতুল ফিতর আদায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গিয়ে আমি বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছি।অনেক এই জড়ালো ভাবে বলতিছেন ফিতরা খাদ্য দিয়েই করতে হবে। হানাফি মাযহাবের যে মত রয়েছে অর্থাৎ টাকা দিয়ে আদায় করলে ফিতরা আদায় হবে না নাকি?কারণ হানাফি মাযহাবে এটা নাকি জায়েজ কিন্তু সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।আমি নতুন বিয়ে করেছি ফিতরা আদায় করতে চায় কিন্তু কিভাবে আদায় করবো বুঝতে পারছি না। মতানৈক্য দেখে খুব খারাপ লাগলো। এখন টাকা দিয়ে আদায়ের বিষয়টি যদি দলিল ভিত্তিক আলোচনা বা সুন্নাহ দ্বারা যে প্রমাণিত এটা জানতে পারতাম তাইলে উপকৃত হতাম।

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে:-

১.আমি কি দিয়ে ফিতরা আদায় করবো?টাকা নাকি খাদ্য?যদি টাকা দিয়ে তবে কোন ধরনের খাদ্যের মূল্য হিসেবে দিব?আর খাদ্য দিলে কোন খাদ্য দিব?

(বিঃদ্রঃ অনেক এই বলতিছে সমর্থ অনুযায়ী খাদ্য বা টাকা দেওয়া। কিন্তু আমি বিয়ে করেছি আমার ব‌উ এখনো শশুরালয়ে থাকে।আমি শিক্ষার্থী মানুষ সামান্য কিছু টাকা যেমন ৪/৫ হজার টাকা ইনকাম করি মাসে এটা দিয়ে নিজের কিছু চলে কিছু স্ত্রীকে দেই।আমি এখানো বাবা মার উপর নির্ভরশীল।আম্মা বলছে আমাদেরটা(স্বামী ও স্ত্রী )আমাকে দিতে।তাই ফিতরা টা আমি দিতে চাই।এটা জেনে রাখা ভালো যে আমারা মধ্য বিত্ত পরিবার।)

1 Answer

0 votes
by (72,390 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/1811/ নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,

কোন কোন জিনিষ দ্বারা সদকায়ে ফিতির আদায় করা যাবে?

 وإنما تجب صدقة الفطر من أربعة أشياء من الحنطة والشعير والتمر والزبيب كذا في خزانة المفتين وشرح الطحاوي وهي نصف صاع من بر أو صاع من شعير أو تمر، ودقيق الحنطة والشعير وسويقهما مثلهما والخبز لا يجوز إلا باعتبار القيمة، وهو الأصح، وأما الزبيب فقد ذكر في الجامع الصغير نصف صاع عند أبي حنيفة - رحمه الله تعالى -؛ لأنه يؤكل بجميع أجزائه وروي عن أبي حنيفة - رحمه الله تعالى - صاع، وهو قولهما

চারটি জিনিষ দ্বারা সদকায়ে ফিতির আদায় করা যায়, (১) গম (২) যব (৩) খেজুর (৪) কিসমিস।

(পরিমাণঃ)

গম হলে আধা সা' (=১.৬৫০গ্রাম)

যব বা খেজুর হলে এক সা'(=৩.৩০০গ্রাম)

গম বা যবের সাতু হলে পূর্ণ গম বা যবের পরিমাপের মতই।

তবে রুটি হলে এক্ষেত্রে পরিমাপ গ্রহণযোগ্য হবে না বরং মূল্য হিসেবেই দিতে হবে।এটাই বিশুদ্ধ মত।

,

কিসমিস সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা রাহ থেকে এক বর্ণনা মতে আধা সা',কেননা তাকে সমূলে একবারেই মূখে দিয়ে আহার করা হয় এবং ভিন্ন এক বর্ণনায় এক সা'র উল্লেখ পাওয়া যায় যা সাহেবাইনের মত। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১৯২)

,

ফিতরা কি দিয়ে আদায় করতে হবে?মাল দ্বারা না মূল্য দ্বারা?

ثم قيل يجوز أداؤه باعتبار العين والأحوط أن يراعى فيه القيمة هكذا في محيط السرخسي.

 

ثم الدقيق أولى من البر، والدراهم أولى من الدقيق لدفع الحاجة، وما سواه من الحبوب لا يجوز إلا بالقيمة وذكر في الفتاوى أن أداء القيمة أفضل من عين المنصوص عليه وعليه الفتوى كذا في الجوهرة النيرة

কেউ বলেন মূল জিনিষ দ্বারা আদায় করা জায়েয। তবে উত্তম হল তাতে মূল্য দিয়ে দেওয়া। গমের ছাতু গম থেকে উত্তম।

,

ফিতরা’ টাকা দ্বারা আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। তার দলীল-

 10371حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: «أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِ»

অর্থ : হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সাদাকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭১। এটির সনদ সম্পূর্ণ সহীহ তথা প্রমাণযোগ্য।

,

তেমনি ভাবে ইবনে আবী শায়বার মাঝে টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার ব্যাপারে রয়েছে হযরত হাসান বসরী (রহ.) এর আসার-

مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)

10370 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: «لَا بَأْسَ أَنْ تُعْطِيَ الدَّرَاهِمَ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ»

অর্থ : হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার দ্বারা কোন সমস্যা নেই। ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭০।

অনুরুপ ভাবে রয়েছে এ বিষয়ে হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহ.) এর চিঠি-

مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)

10369 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ قُرَّةَ، قَالَ: جَاءَنَا كِتَابُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ «نِصْفُ صَاعٍ عَنْ كُلِّ إِنْسَانٍ أَوْ قِيمَتُهُ نِصْفُ دِرْهَمٍ»

ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৬৯।

,

এছাড়াও বিখ্যাত ইমাম, ইমাম ইবনে আবী শায়বা তার রচিত কিতাব ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে- فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ অর্থাৎ সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার (বৈধতা) সম্পর্কে।

,

আর ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার রচিত কিতাব সুনানুল কুবরা-৪/১৮৯ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে–بَابُ مَنْ أَجَازَ أَخْذَ الْقِيَمِ فِي الزَّكَوَاتِ. অথাৎ এই অনুচ্ছেদ হলো টাকা দ্বারা যাকাত আদায় করা অনুমোদিত।

,

তাছাড়াও রাসূল (সা.) এর যুগেও زَكَاةَ الفِطْرِ زكوة ইত্যাদি টাকা দ্বারা আদায় করা হতো। তার কিছু প্রমাণ নিম্মে পেশ করা হলো-

صحيح البخاري (2/ 116)

وَقَالَ طَاوُسٌ: قَالَ مُعَاذٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لِأَهْلِ اليَمَنِ: «ائْتُونِي بِعَرْضٍ ثِيَابٍ خَمِيصٍ – أَوْ لَبِيسٍ – فِي الصَّدَقَةِ مَكَانَ الشَّعِيرِ وَالذُّرَةِ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ وَخَيْرٌ لِأَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ» وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَأَمَّا خَالِدٌ فَقَدِ احْتَبَسَ أَدْرَاعَهُ وَأَعْتُدَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ” وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَصَدَّقْنَ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ» فَلَمْ يَسْتَثْنِ صَدَقَةَ الفَرْضِ مِنْ غَيْرِهَا، فَجَعَلَتِ المَرْأَةُ تُلْقِي خُرْصَهَا وَسِخَابَهَا، وَلَمْ يَخُصَّ الذَّهَبَ وَالفِضَّةَ مِنَ العُرُوضِ

সহীহ বুখারী-২/১১৬।

উল্লেখ্য যে, সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে এটি ইমাম বুখারী (রহ.) এরও উক্তি-

فتح الباري لابن حجر (3/ 312)

قَوْلُهُ بَابُ الْعَرْضِ فِي الزَّكَاةِ

أَيْ جَوَازُ أَخْذِ الْعَرْضِ وَهُوَ بِفَتْحِ الْمُهْمَلَةِ وَسُكُونِ الرَّاءِ بَعْدَهَا مُعْجَمَةٌ وَالْمُرَادُ بِهِ مَا عَدَا النَّقْدَيْنِ قَالَ بن رَشِيدٍ وَافَقَ الْبُخَارِيُّ فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ الْحَنَفِيَّةَ مَعَ كَثْرَةِ مُخَالَفَتِهِ لَهُمْ لَكِنْ قَادَهُ إِلَى ذَلِكَ الدَّلِيلُ ……الخ

আল্লামা ইবনু রাশীদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসয়ালাটির মাঝে ইমাম বুখারী (রহ.) হানাফীদের সহমত পোষন করেছেন…. ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার-৩/৩১২।

এ বিষয়ে আহমদ আল গুমারী (রহ.) এর আরবী ভাষায় ১৫০ পৃষ্ঠায় ‘‘تحقيق الامال فى فى اخراج زكوة الفطر بالمال’’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা রচনা করেছেন। যা সকলকে পড়ে রাখা আবশ্যক। (আমার কাছে পুস্তিকাটি রয়েছে কারো প্রয়োজন হলে বলবেন)

এ বিষয়ে আরো দেখুন- বাদায়েউস সানায়ে-২/৯৬৯, আল মাবসুত লিসসারাখসী-৩/১১৩ ইত্যাদি।

আরো বিস্তারিত জানুন - https://ahlehaqmedia.com/3450

,

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

,

১. বর্তমানে সদকাতুল ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা দ্রব্যাদি দ্বারা আদায় করা অপেক্ষা উত্তম, কারণ, টাকা দ্বারা সকল প্রকার প্রয়োজন পূর্ণ করা যায়। উল্লেখ্য যে, উপরোল্লিখিত দ্রব্যাদি ব্যতীত অন্যান্য দ্রব্যাদি দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হলে এক্ষেত্রে মূল্যকে মানদন্ড হিসেবে ধরে নিতে হবে।

২. চারটি জিনিষ দ্বারা সদকায়ে ফিতির আদায় করা যায়, (১) গম (২) যব (৩) খেজুর (৪) কিসমিস। সুতরাং আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী এই চারটির কোনো একটির মূল্য ধরে আপনি সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...