ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ
https://ifatwa.info/18730/
নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় বাচ্চা সরাসরি মায়ের খাবার থেকে পুষ্টি
পায় না, বরং আম্বিলিক্যাল শিরা দিয়ে মায়ের রক্ত থেকে পুষ্টি পায়। তাই মা দীর্ঘক্ষণ
না খেয়ে থাকলে গর্ভস্থ সন্তান পুষ্টিহীনতায় ভুগবে, এই ধারণা সত্য নয়।
প্রথম ও শেষের ৩ মাস সাধারণত মায়েরা দুর্গন্ধ, বমি, বারবার ক্ষুধা লাগা
ইত্যাদি নানারকম অসুস্থতায় ভুগে থাকেন, তাই মায়ের জন্য কষ্টকর হলে এসময় সিয়াম না রাখাই
উত্তম, পরে সুস্থ হয়ে কাযা করে নেবেন। তবে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে (৪ থেকে ৬ মাস) সাধারণত
মায়েরা তুলনামূলক সুস্থ থাকেন। তাই মায়ের জন্য কষ্টকর না হলে, এবং সব টেস্টের রিপোর্ট
স্বাভাবিক থাকলে এ সময় নির্দ্বিধায় সিয়াম রাখতে পারেন। তবে কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন
হলে রোযা না রাখা বা ভঙ্গ করারও অনুমোদন রয়েছে।
পরবর্তীতে এগুলোর কাজা আদায় করবে। সুরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ
তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۱۸۵﴾
রমাদান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হিদায়তের
স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে
সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে
এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তোমাদের জন্য কষ্ট চান না। আর
যাতে তোমরা সংখ্যা পূর্ণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন সে জন্য তোমরা
আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
তবে গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত রক্তশূন্যতা, পেটে জময বাচ্চা, আগেই পানি ভেঙে
যাওয়া (PROM), পানি কমে যাওয়া (Oligohydramnios), এক্লাম্পশিয়া, প্রি-এক্লাম্পশিয়া,
আগে থেকেই ডায়াবেটিস থাকা, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়া (GDM), হাইপারটেনশন ইত্যাদি
রোগ থাকলে তাকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে,
সিয়াম রাখতে চাইলেও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই রাখতে হবে। গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি
করে সিয়াম রাখা যাবেনা।
বিস্তারিত জানুনঃ
https://ifatwa.info/14185/
গর্ভবতী নারী যদি নিজের স্বাস্থ্যহানি বা সন্তানের স্বাস্থ্যহানির আশংকায়
রোজা না রাখে, তাহলে এক্ষেত্রে বিধান হচ্ছে- গর্ভবতী নারীর দুইটি অবস্থার কোন একটি
হতে পারে:
১. শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও কর্মোদ্যমী হওয়া, রোজা রাখতে কষ্ট না হওয়া,
গর্ভস্থিত সন্তানের উপর কোন প্রভাব না পড়া- এ নারীর উপর রোজা রাখা ফরজ। যেহেতু রোজা
ছেড়ে দেয়ারজন্য তার কোন ওজর নেই।
২. গর্ভবতী নারী রোজা রাখতে সক্ষম না হওয়া: গর্ভ ধারণের কাঠিন্যের কারণে
অথবা তার শারীরিক দুর্বলতার কারণে অথবা অন্য যে কোন কারণে। এ অবস্থায় এ নারী রোজা রাখবে
না। বিশেষতঃ যদি তার গর্ভস্থিত সন্তানের ক্ষতির আশংকা করে সেক্ষেত্রে রোজা ছেড়ে দেয়া
তার উপর ফরজ। যদি সে রোজা ছেড়ে দেয় তাহলে অন্য ওজরগ্রস্ত ব্যক্তিদের যে হুকুম তার ক্ষেত্রেও
একই হুকুম হবে তথা পরবর্তীতে এ রোজাগুলো কাযা পালন করা তার উপর ফরজ।
অর্থাৎ সন্তান প্রসব ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর এ রোজাগুলো কাযা পালন
করা তার উপর ফরজ। তবে কখনো হতে পারে গর্ভধারণের ওজর থেকে সে মুক্ত হয়েছে ঠিক; কিন্তু
নতুন একটি ওজরগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, অর্থাৎ দুগ্ধপান করানোর ওজর। দুগ্ধপানকারিনী নারী পানাহার
করার মুখাপেক্ষী হয়ে পড়তে পারে; বিশেষতঃ গ্রীষ্মের দীর্ঘতর ও উত্তপ্ত দিনগুলোতে। এ
দিনগুলোতে এমন নারী তার সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর জন্য রোজা ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন
হতে পারে। এমতাবস্থায় আমরা সে নারীকে বলব: আপনি রোজা ছেড়ে দিন। এ ওজর দূর হওয়ার পর
আপনি এ রোজাগুলো কাযা পালন করবেন।”
(ফাতাওয়াস সিয়াম পৃষ্ঠা-১৬২)
“গর্ভবতী ও দুগ্ধপানকারিনী
নারীর ব্যাপারে ইমাম আহমাদ ও সুনান সংকলকগণের গ্রন্থে সহিহ সনদে আনাস বিন মালিক আল-কাবী
এর বর্ণিত হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি
এ দুই প্রকারের নারীকে রোজা ছেড়ে দেয়ার অবকাশ দিয়েছেন এবং এদেরকে মুসাফিরের পর্যায়ে
গণ্য করেছেন। অতএব, জানা গেল যে, এরা মুসাফিরের মত রোজা না-রেখে পরবর্তীতে কাযা পালন
করবে। আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে, রোগীর অনুরূপ কষ্ট না হলে অথবা সন্তানের স্বাস্থ্যহানির
আশংকা না থাকলে এ দুই শ্রেণীর নারীগণ রোজা ছেড়েদিবে না।
(মাজমুউল ফাতাওয়া ১৫/২২৪)
প্রশ্নকারী সম্মানিত দ্বীনি ভাই/ বোন!
অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তার যদি বলে যে রোজা রাখলে বাচ্চার বা আপনার ক্ষতি হবে
তাহলে আপনার জন্য রোজা না রাখা জায়েয আছে। তবে পরবর্তীতে শুধু কাযা আদায় করতে হবে।