আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
35 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (19 points)
................................

রমাদান এ আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া খুব জরুরি, রমাদান এ আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য কি করতে পারি?কি কি আমল করা যেতে পারে?এক্ষেত্রে কি সকল গুনাহ বোঝানো হয়


একটা মানুষ তো সব গুনাহ থেকে মুক্ত না তওবা না করলে তো কবিরা গুনাহ মাফ হয় না,এক্ষেত্রে ক্ষমার ব্যাপার টা কেমন?

1 Answer

0 votes
by (607,050 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার অফুরন্ত ভান্ডারের দ্বার উন্মুক্ত হয়। রমজান মাসে দিনে রোজা ও নামাজের মাধ্যমে বান্দা রহমত ও ক্ষমার বিশেষ সুযোগ লাভ করে। 

রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ রাতের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের অপরাধীরা তওবা করতে পারে। আর তিনি অনুরূপ দিনে তাঁর ক্ষমার দ্বার প্রসারিত করেন, যাতে অপরাধীরা তওবা করতে পারে। এমন চলতে থাকে যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিমাকাশে অস্তমিত হয়।’ (মুসলিম : ২৭৫৯)।

রমজানের দ্বিতীয় দশককে মাগফিরাতের দশক বলা হয়। মাগফিরাত অর্থ, ক্ষমা। রমজানের এ দশকে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের ক্ষমা করে থাকেন। প্রথম দশকেও ক্ষমা করেন, দ্বিতীয় দশকেও ক্ষমা করেন, তৃতীয় দশকেও ক্ষমা করেন।

তবে এ দ্বিতীয় দশকে বিশেষভাবে ক্ষমার দ্বার উন্মুক্ত করেন। মানুষ গোনাহ করে, ভুল-ত্রুটি করে। গোনাহ করা মানুষের কাজ, আর ক্ষমা করা আল্লাহর গুণ। অবশ্য তাই বলে সবসময় গোনাহ করা হবে, ব্যাপারটা তা নয়। বরং গোনাহ আর না করার নিয়তে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ মনে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা প্রত্যেক মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য। 

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা বাকারা : ১৯৯)।

★ক্ষমা প্রাপ্তির উপায়

কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির অনেক উপায় বর্ণিত হয়েছে। এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

ঈমান ও নেক কাজ : যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, আল্লাহতায়ালা তাদের ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন,

 وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡہُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿۲۹﴾ 

'যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।’ (সুরা ফাতহ : ২৯)।

আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহতায়ালা বলেন,

 ‘হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে ক্ষমার আশা রাখবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করব; তোমার অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আমি কারও পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, এরপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারও পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গোনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরিক না করে আমার সামনে এসো, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে উপস্থিত হব।’ (তিরমিজি : ৩৫৪০)।

আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির অন্যতম মাধ্যম হলো, পাপ করার পরই তাঁর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
وَ ہُوَ الَّذِیۡ یَقۡبَلُ التَّوۡبَۃَ عَنۡ عِبَادِہٖ وَ یَعۡفُوۡا عَنِ السَّیِّاٰتِ وَ یَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُوۡنَ ﴿ۙ۲۵﴾ 

‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন।’ (সুরা শূরা : ২৫)। 

তিনি আরও বলেন, 

اَفَلَا یَتُوۡبُوۡنَ اِلَی اللّٰہِ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَہٗ ؕ وَ اللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۷۴﴾ 

‘এরপরও কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না? অথচ আল্লাহতায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা মায়িদা : ৭৪)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা মুমিন বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশী খুশী হন, যে কোন উষর মরুর বুকে ছিল, তার সাথে ছিল বাহন যার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এমতাবস্থায় সে ঘুমিয়ে পড়েছিল, জাগ্রত হয়ে দেখতে পেল যে, বাহনটি তার খাবার ও পানীয়সহ চলে গেছে। সে তার বাহন খুঁজতে খুঁজতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল। তারপর সে বলল, যেখানে ছিলাম সেখানে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ব ও মারা যাব। সে তার হাতের উপর মাথা রেখে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিল, এমতাবস্থায় সে সচেতন হয়ে দেখল যে, তার বাহন ফিরে এসেছে এবং বাহনের উপর তার খাবার ও পানীয় তেমনিভাবে রয়েছে। তখন সে আনন্দে ভুল করে বলে ফেলল: আল্লাহ আপনি আমার বান্দা এবং আমি আপনার রব। আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দার তাওবাতে বাহন ও খাদ্য পানীয় ফিরে পাওয়া লোকটি থেকেও বেশী খুশী হন। [মুসলিম: ২৭৪৪]

আল্লাহর নির্দেশিত বিষয় প্রতিপালন ও নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার করার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করা, যা ক্ষমা লাভের অন্যতম উপায়।

আল্লাহতায়ালা বলেন, 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تَتَّقُوا اللّٰہَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ فُرۡقَانًا وَّ یُکَفِّرۡ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ ذُو الۡفَضۡلِ الۡعَظِیۡمِ ﴿۲۹﴾ 

‘হে ইমানদাররা! যদি তোমরা আল্লাহভীরু হও, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার পথ বের করে দেবেন। এর ফলে তোমাদের পাপ মোচন করবেন। তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। বস্তুত আল্লাহ হলেন মহা অনুগ্রহশীল।’ (সুরা আনফাল : ২৯)। 

তিনি আরও বলেন, 

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَیۡبِ لَہُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ اَجۡرٌ کَبِیۡرٌ ﴿۱۲﴾ 

‘যারা দৃষ্টির অগোচরে তাদের প্রতিপালককে ভয় করে (অর্থাৎ আল্লাহভীতি অর্জন করে), তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা মুলক : ১২)।

★আপনি প্রত্যহ ইফতারের আগ মুহুর্তে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন।
সেই সময় দোয়া কবুল হয়।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا إِسْحَقُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ الْمَدَنِيُّ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ أَبِي مُلَيْكَةَ يَقُولُ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ لِلصَّائِمِ عِنْدَ فِطْرِهِ لَدَعْوَةً مَا تُرَدُّ قَالَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرٍو يَقُولُ إِذَا أَفْطَرَ اللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِي. 

 ‘আবদুললাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইফতারের সময় রোযাদারের অবশ্যই একটি দু‘আ আছে, যা রদ হয় না (কবুল হয়)। ইবনু আবূ মুলাইকা (রহ.) বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে ইফতারের সময় বলতে শুনেছিঃ ‘‘হে আল্লাহ্! আমি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি যা সব কিছুর উপর পরিব্যপ্ত, যেন আপনি আমাকে ক্ষমা করেন’’।
(নাসায়ী ১৭৫৩)

আরো জানুনঃ- 

নিম্নোক্ত দোয়া বেশি বেশি পাঠ করতে পারেন,
يا واسع المغفرة اغفر لي».

يا واسع الفضل اغفر لي».


তাহাজ্জুদ নামাজের পরেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন।

রোযাকে মিথ্যা,গীবত,হাতের গুনাহ,কান নাক চোখ ও জিহবার সহ যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত রাখবেন।
হালালা খাবার ভক্ষন করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...