পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার অফুরন্ত ভান্ডারের দ্বার উন্মুক্ত হয়। রমজান মাসে দিনে রোজা ও নামাজের মাধ্যমে বান্দা রহমত ও ক্ষমার বিশেষ সুযোগ লাভ করে।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ রাতের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের অপরাধীরা তওবা করতে পারে। আর তিনি অনুরূপ দিনে তাঁর ক্ষমার দ্বার প্রসারিত করেন, যাতে অপরাধীরা তওবা করতে পারে। এমন চলতে থাকে যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিমাকাশে অস্তমিত হয়।’ (মুসলিম : ২৭৫৯)।
রমজানের দ্বিতীয় দশককে মাগফিরাতের দশক বলা হয়। মাগফিরাত অর্থ, ক্ষমা। রমজানের এ দশকে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের ক্ষমা করে থাকেন। প্রথম দশকেও ক্ষমা করেন, দ্বিতীয় দশকেও ক্ষমা করেন, তৃতীয় দশকেও ক্ষমা করেন।
তবে এ দ্বিতীয় দশকে বিশেষভাবে ক্ষমার দ্বার উন্মুক্ত করেন। মানুষ গোনাহ করে, ভুল-ত্রুটি করে। গোনাহ করা মানুষের কাজ, আর ক্ষমা করা আল্লাহর গুণ। অবশ্য তাই বলে সবসময় গোনাহ করা হবে, ব্যাপারটা তা নয়। বরং গোনাহ আর না করার নিয়তে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ মনে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা প্রত্যেক মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা বাকারা : ১৯৯)।
★ক্ষমা প্রাপ্তির উপায়
কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির অনেক উপায় বর্ণিত হয়েছে। এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
ঈমান ও নেক কাজ : যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, আল্লাহতায়ালা তাদের ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন,
وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡہُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿۲۹﴾
'যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।’ (সুরা ফাতহ : ২৯)।
আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহতায়ালা বলেন,
‘হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে ক্ষমার আশা রাখবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করব; তোমার অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আমি কারও পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, এরপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারও পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গোনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরিক না করে আমার সামনে এসো, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে উপস্থিত হব।’ (তিরমিজি : ৩৫৪০)।
আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির অন্যতম মাধ্যম হলো, পাপ করার পরই তাঁর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَ ہُوَ الَّذِیۡ یَقۡبَلُ التَّوۡبَۃَ عَنۡ عِبَادِہٖ وَ یَعۡفُوۡا عَنِ السَّیِّاٰتِ وَ یَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُوۡنَ ﴿ۙ۲۵﴾
‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন।’ (সুরা শূরা : ২৫)।
তিনি আরও বলেন,
اَفَلَا یَتُوۡبُوۡنَ اِلَی اللّٰہِ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَہٗ ؕ وَ اللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۷۴﴾
‘এরপরও কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না? অথচ আল্লাহতায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা মায়িদা : ৭৪)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা মুমিন বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশী খুশী হন, যে কোন উষর মরুর বুকে ছিল, তার সাথে ছিল বাহন যার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এমতাবস্থায় সে ঘুমিয়ে পড়েছিল, জাগ্রত হয়ে দেখতে পেল যে, বাহনটি তার খাবার ও পানীয়সহ চলে গেছে। সে তার বাহন খুঁজতে খুঁজতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল। তারপর সে বলল, যেখানে ছিলাম সেখানে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ব ও মারা যাব। সে তার হাতের উপর মাথা রেখে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিল, এমতাবস্থায় সে সচেতন হয়ে দেখল যে, তার বাহন ফিরে এসেছে এবং বাহনের উপর তার খাবার ও পানীয় তেমনিভাবে রয়েছে। তখন সে আনন্দে ভুল করে বলে ফেলল: আল্লাহ আপনি আমার বান্দা এবং আমি আপনার রব। আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দার তাওবাতে বাহন ও খাদ্য পানীয় ফিরে পাওয়া লোকটি থেকেও বেশী খুশী হন। [মুসলিম: ২৭৪৪]
আল্লাহর নির্দেশিত বিষয় প্রতিপালন ও নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার করার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করা, যা ক্ষমা লাভের অন্যতম উপায়।
আল্লাহতায়ালা বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تَتَّقُوا اللّٰہَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ فُرۡقَانًا وَّ یُکَفِّرۡ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ ذُو الۡفَضۡلِ الۡعَظِیۡمِ ﴿۲۹﴾
‘হে ইমানদাররা! যদি তোমরা আল্লাহভীরু হও, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার পথ বের করে দেবেন। এর ফলে তোমাদের পাপ মোচন করবেন। তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। বস্তুত আল্লাহ হলেন মহা অনুগ্রহশীল।’ (সুরা আনফাল : ২৯)।
তিনি আরও বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَیۡبِ لَہُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ اَجۡرٌ کَبِیۡرٌ ﴿۱۲﴾
‘যারা দৃষ্টির অগোচরে তাদের প্রতিপালককে ভয় করে (অর্থাৎ আল্লাহভীতি অর্জন করে), তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা মুলক : ১২)।
রোযাকে মিথ্যা,গীবত,হাতের গুনাহ,কান নাক চোখ ও জিহবার সহ যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত রাখবেন।