আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
19 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
১। মুহতারাম, আমি সম্প্রতি একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছি। উক্ত ফ্ল্যাটে রাজউক কর্তৃক অনুমোদনের চেয়ে বেশি জায়গা নিয়ে ফ্ল্যাট করা হয়েছে। এখন সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে গেলে, সবাই ঘুষ দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের জায়গা ধরেই হোল্ডিং ট্যাক্স এর কাগজ ঠিকঠাক করে। বাস্তবে জায়গা বেশি থাকায়, যদি করপোরেশনের প্রতিনিধি জায়গা মেপে ট্যাক্স নির্ধারণ করত, তাহলে ট্যাক্স বেশি আসত। আমি এতে প্রতিবাদ করায়, আমাকে আলাদা ভাবে কাগজ জমা দিতে বলেছে, কিন্তু একই বিল্ডিং এ একজনের জায়গা বেশি হলে সেটা নিয়ে ভবিষ্যতে সমস্যা হলে বা কোন জরিমানা আসলে আমাকেই পরিশোধ করতে হবে এই নির্দেশনা দেয়। এই অবস্থায় আমার করণীয় কি? এখানে বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয়া যাবে কিনা? নাকি আমার ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়া উচিত?

২। আমাদের বিল্ডিং এর মালিক ৩৬ জন। বিল্ডিং এর নাম নির্ধারণ করতে যেয়ে একটি সমস্যা হয়। অনেক নামের প্রস্তাব আসায় সবাই, সকল নাম কাগজে লিখে লটারীর মাধ্যমে নির্ধারণের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। এখন এই ব্যপারে ইসলামে বৈধতা আছে কিনা তা দেখার জন্যে বলা হয়। আমরা কি এই ক্ষেত্রে লটারীর মাধ্যমে বিল্ডিং এর নাম নির্ধারণ করতে পারব নাকি অন্য কোন পদ্ধতি।

1 Answer

0 votes
by (601,230 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
ঘুষ কবিরা গুনাহ সমূহের একটি।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত,

ﻋﻦ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗَﺎﻝَ : ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﻲ ﻭَﺍﻟْﻤُﺮْﺗَﺸِﻲ .
ঘুষ প্রদাণকারী ও গ্রহণকারী উভয়ের উপর রাসূলুল্লাহ সাঃ লা'নত দিয়েছেন।(মুসনাদে আহমদ-৬৭৯১সুনানে আবু-দাউদ-৩৫৮০)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এখানে ঘুষ দেয়া জায়েজ হবেনা। আপনি ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্যত্র চলে যেতে পারেন।
অথবা আলাদা ভাবে কাগজ জমা দিতে পারেন।

(০২)
https://www.ifatwa.info/1505 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
ক্ষেত্র বিশেষে লটারী বৈধ রয়েছে।সব রকম লটারী হারামের অন্তর্ভুক্ত না।বরং ঐ সমস্ত লটারী-ই হারাম যা দ্বারা কোনো হক্ব বা যোগ্যতা অথবা মালিকানা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু যদি পূর্ব থেকেই হক্ব বা অধিকার প্রতিষ্টিত থাকে।কিন্তু উভয় সমান সমান হওয়ার ধরুণ কাউকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাচ্ছেনা।এমতাবস্তায় একজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য লটারির মাধ্যমে তাকে নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ প্রকার লটারী বৈধ রয়েছে ।যা কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমনঃ- আল্লাহ তা'আলার বানী, 
َ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺖَ ﻟَﺪَﻳْﻬِﻢْ ﺇِﺫْ ﻳُﻠْﻘُﻮﻥ ﺃَﻗْﻼَﻣَﻬُﻢْ ﺃَﻳُّﻬُﻢْ ﻳَﻜْﻔُﻞُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺖَ ﻟَﺪَﻳْﻬِﻢْ ﺇِﺫْ ﻳَﺨْﺘَﺼِﻤُﻮﻥَ
"আপনি তখন তাদের কাছে উপস্থিত ছিলেন না। যখন তারা লটারীর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করছিল যে, কে মারইয়ামকে প্রতিপালন করবে। এবং আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা এ নিয়ে ঝগড়া করছিলো।"(সূরা-আলে ইমরান-৪৪)

মারয়ামের পিতা না থাকার ধরুণ সবাই মারয়ামকে লালন-পালনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো।তাদের মধ্য থেকে একেকজন একেক আঙ্গিকে নিজেকে লালনপালনের অগ্রাধিকারী ধাবী করছিলো।
যেহেতু তাদের সবার মধ্যে লালন-পালনের যোগ্যতা ও অধিকার প্রায় সামন সমান ছিলো।তাই লটারীর মাধ্যমে যাকারিয়া (আঃ)কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিলো। এখানে লালন-পালনের হক্বকে প্রমাণিত করা হচ্ছেনা।বরং লটারির মাধ্যমে ঝগড়াকে নিরসন করা হচ্ছিলো।

হাদীস শরীফে এসেছে,হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, 
عَنْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ( ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺳَﻔَﺮًﺍ ﺃَﻗْﺮَﻉَ ﺑَﻴْﻦَ ﻧِﺴَﺎﺋِﻪِ ، ﻓَﺄَﻳَّﺘُﻬُﻦَّ ﺧَﺮَﺝَ ﺳَﻬْﻤُﻬَﺎ ﺧَﺮَﺝَ ﺑِﻬَﺎ ﻣَﻌَﻪُ ) . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ( 2454 ) ﻭﻣﺴﻠﻢ ( 2770 ) .
নবীজী সাঃ যখনই সফরের ইচ্ছা করতেন,তখন সমস্ত বিবিগণের মধ্যে লটারী দিতেন, লটারীতে যার নাম উঠে আসত,তাকে নিয়েই সফরে বের হতেন।(সহীহ বুখারী -২৪৫৪,সহীহ মুসলীম-২৭৭০)

এখানেও নবীজী সাঃ এর সাথে সফরের অধিকার নিয়ে লটারী হচ্ছিল না। কেননা স্বামী সফরকালীন সময়ে স্ত্রীদের কোনো অধিকার নেই।যে কেউ যেতে পারবে।এখন লটারীর মাধ্যমে একজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।এরকম লটারী ইসলামী শরীয়তে বৈধ রয়েছে। 

ইমাম নববী রাহ বলেন 
  ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻹﻗﺮﺍﻉ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﻭﺍﺟﺐ
এরকম স্থানে লটারী আমাদের দৃষ্টিতে ওয়াজিব।(আল-মিনহাজ-১৫/২১০)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম,লটারী সর্বক্ষেত্রে নিষিদ্ধ নয়,বরং ক্ষেত্র বিশেষে বৈধও রয়েছে।

সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত ছুরতে বিল্ডিং এর নাম নির্ধারণ করতে যেয়ে লটারি নাজায়েয হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...