বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
যাকাতের ক্ষেত্রে সোনা এবং রুপার মধ্যে রুপার সমমূল্যই গ্রহণযোগ্য।(ফাতাওয়া দারুল উলূম,৬/৪৯,দারুল এশা'আত-পাকিস্তান, থেকে ১৪ভলিউমে প্রকাশিত) ইসলামে যত রকম ওয়াজিব/নফল সদকার কথা বলা হয়েছে,সবকটিতেই গরীবের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়েছে।
যেমনঃ- ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে ফিতরা বিষয়ক একটি হাদীসে এর পুরোপুরি বিবরণ এভাবে উঠে এসেছে.........
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ , ﻗَﺎﻝَ : " ﻓَﺮَﺽَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺁﻟِﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ , ﻃُﻌْﻤَﺔً ﻟِﻠْﻤَﺴَﺎﻛِﻴﻦِ , ﻭَﻃُﻬْﺮَﺓً ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻐْﻮِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻬْﻮِ ، ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﺩَّﺍﻫَﺎ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻓَﻬِﻲَ ﺯَﻛَﺎﺓٌ ﻣَﻘْﺒُﻮﻟَﺔٌ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺩَّﺍﻫَﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ , ﻓَﻬِﻲَ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺎﺕِ "
তরজমাঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন, মিসকিনদের খাদ্যস্বরুপ, এবং রোযাকে বেহুদা/অনর্তক ও অশ্লীল কাজকর্ম থেকে পবিত্রতাকারী স্বরুপ। যদি কেউ তা ঈদের নামাযের পূর্বে আদায় করে নেয়, তাহলে তা হবে মকবুল। আর যে নামাযের পর আদায় করবে সেটা হবে নফল সদকা সমূহের একটি, যা মাকবুল হওয়া ও না হওয়ার মধ্যবর্তী। (আল-আমালিল খামিসাহ-১১৭৪)
৭.৫তোলা সোনা বা ৫২.৫তোলা রুপা বা যে কোনো একটির সমমূল্যে পরিমাণ টাকা-পয়সা ও ব্যবসার মাল থাকলে যে কারো উপর যাকাত আসবে। যেহেতু রুপার মূল্য সবসময়ই কম, তাই টাকা-পয়সা ও ব্যসায়িক মালের ক্ষেত্রে রুপার হিসাব-ই বর্তমানে এককভাবে গ্রহণযোগ্য ও ধর্তব্য।
থানভী রাহ এখানে একটি সুক্ষ্ম হেকমতের কথা উল্লেখ করেন। হেকমত হলো,পৃথিবীতে এখনো গরীবের সংখ্যা বেশী,তাই যতবেশী মানুষের উপর যাকাতের বিধান আরোপিত হবে, ততই গরীবরা লাভবান হবে। উক্ত হেকমতের ধরুণই ৫২.৫ তোলার সমমূল্যকে বর্তমান যাকাতের এককনিসাব ধার্য্য করা হয়েছে। তবে শুধুমাত্র সোনা থাকলে সোনার নিসাবই ধর্তব্য হবে।(আশরাফুল জওয়াব)
এখন প্রশ্ন হতে পারে,
৫২.৫তোলা রুপার সমমূল্য যত হয় একটি গরুর মূল্যও প্রায় এর কাছাকাছি। অর্থাৎ একবার একটি গরু খরিদ করলে ৫২.৫তোলা রুপার সমমূল্য টাকা বা তার কাছাকাছি টাকা শেষ হয়ে যাবে। কুরবানি আদায় পরবর্তি মানুষ একেবারেই নি:স্ব হয়ে যাবে।প্রশ্ন জাগতে পারে এটা আবার কেমন হেকমত?
উত্তরে বলা হবে, মানুষের উপর কুরবানি হিসাবে সর্বনিম্ন একটি বকরিই ওয়াজিব হয়। গরু বা মহিষ কিংবা উট নির্দিষ্টভাবে ওয়াজিব হয় না।
এ সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে আলমগীরিতে বর্ণিত রয়েছে,
. (وأما قدره) : فلا تجوز الشاة والمعز إلا عن واحد، وإن كانت عظيمة سمينة تساوي شاتين مما يجوز أن يضحي بهما، ولا يجوز بعير واحد ولا بقرة واحدة عن أكثر من سبعة، ويجوز ذلك عن سبعة وأقل من ذلك، وهذا قول عامة العلماء
তরজমাঃকুরবানির পরিমাণঃএকটি বকরি শুধুমাত্র একজনের পক্ষ্য থেকেই ওয়াজিব হয়।যদি এত বড়ও হয় যে,তা এমন দু'টি বকরির সমপরিমাণ হয় যা দ্বারা কুরবানি শুদ্ধ হয়।একটি গরু বা উট সাতজনের বেশী মানষের পক্ষ্য থেকে আদায় হবে না। শুধুমাত্র সাতজন বা তার চেয়ে কম মানুষের পক্ষ্য থেকে আদায় হবে।এটা জামহুর উলামাদের সিদ্ধান্ত।(৫/২৯৭)
আর একটি এক বৎসরী বকরির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় চার/পাঁচ হাজার টাকা মাত্র।সুতরাং যার কাছে ৫২.৫তোলা রুপা বা তার সমমূল্য পরিমান টাকা আছে, তার উপর চার/পাঁচ হাজার টাকা মূল্যর এক বৎসরী একটি বকরিই ওয়াজিব হচ্ছে।গরু বা উট তার উপর ওয়াজিব হবে না।সুতরাং যার যে পরিমাণ তাওফিক সে সে পরিমাণ মূল্যরই একটি প্রাণী কুরবানি দিবে এক্ষেত্রে আপাতত কারো ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।