আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
26 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
গ্রামে এবং কোনো কোনো এলাকায় প্রায়ই বিয়ের অনুষ্ঠানে আত্মীয়দের নিজের ইচ্ছার বাইরে যেয়ে সামাজিকতা রক্ষা করার জন্য বেশি অঙ্কের টাকা উপহারস্বরুপ দিতে হয়। এক্ষেত্রে 'ক' আত্মীয় যদি 'খ' আত্মীয়দের বিয়ের অনুষ্ঠানে ১০ হাজার টাকা দেয়, পরবর্তীতে 'ক' আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে 'খ' আত্মীয় ১০ হাজার টাকা দিতে না পারলে, বিভিন্ন কথার মাধ্যমে তাকে অপমানিত করা হয়।
কেউ যদি কারো বিয়েতে উপস্থিত নাও হতে পারে, তবুও তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে টাকা পাঠিয়ে দিতে হয়। নতুবা তারা পরবর্তীতে অপমান করে। কারণ তারা মনে করে তারা যে টাকা দিয়েছিল, সে টাকা তাদের পাওনা৷

এ বিষয়টি যে ঠিক নয়, তা বুঝতে পারি। কারণ মানুষের সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু তার কাছ থেকে উপহার-স্বরুপ আদায় করাটা কোনো ভাবেই ঠিক কাজ নয়। উপহার তো খুশি হয়ে দেওয়ার বিষয়।
আমি এ বিষয়টি আগেও আমাদের বাসায় আলোচনা করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
কিন্তু সামাজিকতার কথা চিন্তা করে আমার বাবা-মা এ প্রথা থেকে বের হতে পারছেন না।

সম্প্রতি আমার বিয়ে হয়েছে। আমার শ্বশুর বাড়ি অন্য জেলায় হওয়ায় তাদের মধ্যে এমন দেনা-পাওনার প্রচলন নেই। তারা মনে করেন বিয়েতে আত্মীয়রা যার যেমন সামর্থ্য আছে সে অনুযায়ী উপহার দিতে পারে, বা না দিলেও কোনো সমস্যা নেই। তারা বিয়ের অনুষ্ঠানে টেবিল বসিয়ে টাকা/উপহার নেন না।

কিছুদিন পর আমার বড় বোনের দেবরের বিয়ে। আমার স্বামীকে দাওয়াত করা হয়েছে। আমার স্বামী ওনার চাকরির ট্রেইনিং এর কারণে বিয়েতে যেতে পারবেন না (আমি বর্তমানে আমার আব্বু-আম্মুর বাসায় থাকি, কয়েক মাস পর আমাকে তুলে নেওয়া হবে, অর্থাৎ আমার স্বামীর সাথে আলাদা বাসায় সংসার শুরু করবো)।

আমার আম্মু আমাকে তাদের সাথে আপুর দেবরের বিয়েতে যেতে বলছে।
আমার স্বামী নিজে যেতে পারবেন না স্বত্বেও তার সামর্থ্য অনুযায়ী ধরে নিলাম ৩০০০ টাকা উপহারস্বরুপ দিতে চান। কিন্তু আমার বাসার মানুষেরা মনে করছে অন্তত ৫০০০ টাকা না দিলে হবে না৷
আমার স্বামীর সীমিত বেতনে তার ইচ্ছার বাইরে অতিরিক্ত টাকা চাইতে আমার লজ্জা করে। আবার আমি একা আম্মুদের সাথে যেয়ে বিয়েতে আমার স্বামীর পক্ষ থেকে ৩০০০ টাকা দিলে সেখানকার মানুষেরা পরবর্তীতে আমার স্বামীকে নিয়ে সমালোচনা করবে কম টাকা দেওয়ার কারণে।
আমার স্বামী আমাদের জেলার এই বিষয়গুলোর সাথে অভ্যস্ত নন। তিনি এগুলোতে কষ্ট পান ও অপমানিত বোধ করেন।
আমি আমার আম্মুকে বিষয়টি জানানোর পরে আম্মু বললেন, "তোমরা না যেয়ে ৩০০০ টাকা পাঠিয়ে দিতে চাইলে, পাঠিয়ে দাও।"
অর্থাৎ আমাদের যাওয়া, না যাওয়া এখানে বিষয় না, বরং তাদের উপহার পাওয়াটাই মুখ্য বিষয়।
এমতবস্থায় আমি আমার স্বামীকে ছাড়া বিয়েতে যেতে চাইনা, পাশাপাশি ৩০০০ টাকা দিলে যেহেতু আমার স্বামী অপমানিতই হবে, তাই আমার স্বামীকে কষ্ট দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় না করে, বরং কোনো টাকাই সেখানে পাঠাতে চাই না।
আমাদের সমাজের এই বাজে নিয়মগুলো থেকে বের হতে চাই।

আমি যদি দাওয়াত পাওয়া স্বত্বেও বিয়েতে না যাই ও কোনো টাকা না পাঠাই, এবং আমার স্বামীর ট্রেইনিং এর বিষয়টি জানাই, যে তিনি কাজের কারণে বিয়েতে যেতে পারছেন না।
এতে তারা কিছুটা মনো:ক্ষুন্ন হতে পারেন, যে বিয়েতে গেলাম না, আবার কোনো টাকাও পাঠালাম না।
★আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এ কারণে কি আমাদের গুনাহ হবে? যেহেতু দাওয়াত পাওয়া স্বত্বেও দাওয়াত রক্ষা করলাম না, আত্মীয়তার বন্ধনে কিছুটা সমস্যা হবে, এতে কি আমাদের গুনাহ হবে?

আমি চাইলে আমার স্বামীকে চাপ প্রয়োগ করে বেশি টাকা নিতে পারি। কিন্তু এতে ওনার মন খারাপ হবে৷ আবার কম টাকা দিলে তিনি অপমানিত হবে৷ আমার স্বামীর অপমান আমি সহ্য করতে পারবো না।

এমতাবস্থায় আমাদের জন্য ফতোয়া কি, ইসলাম আমাদের এ বিষয়ে কি বলে, দয়া করে জানাবেন।

জাযাকুমুল্লাহু খইরান।

1 Answer

0 votes
by (68,310 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

জবাব,

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, বিয়ে-শাদি আকীকা কিংবা এ জাতীয় কোনো বৈধ অনুষ্ঠানে কেউ যদি আমন্ত্রিত হয় তখন সেখানে কোনো উপহারসহ উপস্থিত হওয়া নিষেধ নয়। কেননা, উপহার প্রদান এবং অন্যের আনন্দে শরিক হওয়া মৌলিকভাবে এ দুটোই ইসলামসমর্থিত; বরং এ দুটি বিষয় ইসলামে কাঙ্ক্ষিতও।

রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

تَهَادَوْا فَإِنَّ الْهَدِيَّةَ تُذْهِبُ وَغَرَ الصَّدْرِ

তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় করো। এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ ৯২৫০)

অপর হাদীসে রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

حَقّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدّ السّلاَمِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدّعْوَةِ وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ.

এক মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের পাঁচটি অধিকার- ১. সালামের জবাব দেওয়া, ২. অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, ৩. জানাযায় শরিক হওয়া, ৪. দাওয়াত করলে তা রক্ষা করা, ৫. হাঁচির জবাবে দুআ পড়া। (সহীহ বুখারী ১২৪০)

 

সুতরাং সামাজিক চাপ নয়; হাদিয়া আদান-প্রদান হওয়া উচিত খুশি মনে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।

দুই. কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা এই সুন্দর ও স্বাভাবিক বিষয়টিকে একপ্রকার সামাজিক বাধ্যবাধকতা বানিয়ে ফেলেছি। এ বাধ্যবাধকতা দুই দিক থেকেই। যিনি আমন্ত্রিত, তিনি ভাবেন-একটি মানসম্মত উপহার ছাড়া সেখানে যাওয়া যাবে না। আবার যারা আমন্ত্রক, তারা অতিথিদের বরণ করার তুলনায় উপহার গ্রহণের প্রতিই অধিক মনোযোগী হয়ে থাকেন। উপহার গ্রহণের জন্য থাকে ভিন্ন ব্যবস্থাপনা। এবং সেটাও অনেকটা এমনভাবে, যেন চক্ষুলজ্জার কারণে হলেও কেউ উপহার প্রদান না করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে না পারেন। যেন এটাই এখন সামাজিকতা। অথচ জাতীয় সামাজিকতা পরিত্যাজ্য। কেননা, রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

أَلَا لا يَحِلُّ مالُ امرِىءٍ إلا بِطِيبِ نفسٍ منه

খবরদার! একজন মুসলমানের যে কোনো জিনিস তার মনের সন্তুষ্টি ছাড়া অপর মুসলমানের জন্য হালাল নয়। (সহিহ আলজামি’ ৭৬৬২) (সংগৃহীত)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রথমত যে বিয়ে বাড়িতে গান বাজানো হয়, গায়ে হলুদের মতো অনুষ্ঠান করা হয়, ওই বাড়িতে দাওয়াত খেতে না যাওয়াই উত্তম হবে। এবং ঐ সমস্ত শরীয়ত বিরোধী কাজে শরীক হওয়া কখনো জায়েয হবে না। শরীয়ত বিরোধী কাজে শরীক হওয়া ব্যতিত দাওয়াত খেতে যাওয়া জায়েয হলেও দাওয়াত না খাওয়াই উত্তম হবে।

২য়ত আপনার স্বামীর আর্থিক দিকে বিবেচনায় শুধুমাত্র সামাজিকতা রক্ষার নামে সেখানে না যাওয়া উচিত। কারণ সাধারণত প্রশ্নে উল্লেখিত সকল কাজ কু-প্রথার অন্তর্ভুক্ত, এতে সন্তুষ্টি চিত্তে টাকা দেয়না। তাই এটি জায়েজ নেই।   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...