আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
383 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهُ

আমি একজন মেয়ে৷ আমি দ্বীনের পথে অনেকটাই নতুন বলতে গেলে।
الحمد لله

আমি বর্তমানে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ অনার্সে প্রতি সেমিস্টারেই প্রায়,  ফিশারিজের স্টুডেন্টদের অনেক মাছের ছবি আঁকতে হয় সাধারণত। প্রাণীর ছবি আঁকা তো নিষেধ।
এছাড়া ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে ক্লাস করতে হয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকি ক্লাস চলাকালীন সময়ে বেশিরভাগ। আমার হলে আমার থাকার আশেপাশের পরিবেশ তেমন দ্বীনি নয়। আমি যে রুমে থাকি হলে সেটা চারজন মিলে, ১জন তার মধ্যে হিন্দু এবং ঘরে মূর্তি রাখেন তিনি। কোনো ঘরে মূর্তি থাকলে সে ঘরে র`হমাতের ফেরেশতারা আসেন না শুনেছি।
অনেক সময়ই দেখা যায় আমাদের ক্লাস দুপুর থেকে টানা ৫ টা অব্দি থাকে । আসরের নামাজের সময়, বেলা ছোট থাকলে সেক্ষেত্রে নামাজের সময় ক্লাস চলে। নামাজের ওয়াক্ত চলে যায়।
আমার কাছে এই ভার্সিটির ক্লাস কন্টিনিউ করাকে বোঝা মনে হচ্ছে। আমার চাকরী করার সামান্যতম ইচ্ছেও নেই
الحمد لله
এই পড়াশোনার আখিরাতে কোনো গুরুত্ব আমি খুঁজে পাইনি আমার ক্ষেত্রে, দুনিয়ার কোনো কল্যাণও নয়, বরং আমার আখিরাত জীবনের জন্য, ঈমানের জন্য ক্ষতিকর মনে হয়েছে এটাকে আমার। মনে হচ্ছে সময় নষ্ট করা এটা। আমার এই অনার্স এর বিষয়ের জ্ঞান আমার কোনো কাজে লাগার মত মনে হয় না এখন।
একজন মুসলিমের অপ্রয়োজনীয় কাজ,কথা বর্জন করা উচিত আমার জানা মতে।
কিন্তু আমার আব্বু, আম্মু রাজি নন কোনোভাবেই, তারা চান আমি অনার্স কম্পিলিট করি৷ কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে, ভার্সিটি খুললে, ভার্সিটি গেলে প্রাণীর ছবি আঁকতে হবে এটা আমি মানতে পারছি না কিছুতেই। আসরের নামাজ নিয়েও চিন্তা কাজ করছে। ভার্সিটির হলের আশেপাশের পরিবেশ অনেকটা বেদ্বীনে জন্য, ফ্রি মিক্সিং পরিবেশ ইত্যাদি কারণে আমার ঈমান হারানোর ভয় হচ্ছে মাঝে মাঝে।
আমার কী করণীয় এক্ষেত্রে? আব্বু, আম্মুর সন্তুষ্টির জন্য অনার্স কম্পিলিট করা? এক্ষেত্রে কি বাবা, মার সন্তুষ্টি রাখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ?
এভাবে প্রাণীর ছবি আঁকা কি জায়েজ হবে এক্ষেত্রে? মাছের ছবি আঁকা টা শির্ক না আমার পরিস্থিতি বিবেচনায়? নামাজের এভাবে ক্ষতিতে কি করা উচিত? আমি অনার্স কম্পিলিট না করলে, ছেড়ে দিলে তাতে আব্বু, আম্মু খুব অসন্তুষ্ট হলে, খুব আঘাত/ কষ্ট পেলে কি আমার গুনাহ হবে এতে? সবার আগে তো মহান اللّٰه এর নির্দেশ পালন করা উচিত। প্রাণীর ছবি আঁকাটা কি এক্ষেত্রে শির্ক হবে না?
আমি যদি বাবা, মা কে রাজি করাতে না পারি অনার্স ছেড়ে দেবার বিষয়ে, আমাকে যদি ভার্সিটি যেয়ে মাছের ছবি আঁকতে হয়, তাহলে কি তা জায়েজ হবে আমার জন্য? যদি মৃত্যু হয় অনার্স করা অবস্থাতে আমার, যেখানে আমার প্রাণীর ছবি না আঁকার বিষয়ে খাঁটি তাওবা করা সম্ভব না ওখানে ক্লাস করলে হয়তো, তাহলে তা কি শির্ক করা অবস্থাতে মৃত্যু হবে?
যদি আব্বু,আম্মু আমার জন্য অনার্স করা নাজায়েজ হলে সে অনুযায়ী আমি সিদ্ধান্ত নিলে, তারা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যান চিন্তায়, তখন আমার কি করা উচিত? আমার সিদ্ধান্তে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকা? কারণ বিষয়টি আমার কাছে এমন মনে হচ্ছে যে,  اللّٰه এর সাথে শির্ক নাহলে বাবা মার অসন্তুষ্টি এমন কিছু।
আমার জ্ঞান অনেক কম। আমার ভাবনা গুলি কতটুকু সঠিক তা আমি বুঝতে পারছি না নিজেই।
আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না বিষয়টার।
মহান اللّٰه এর দয়ায়, পরামর্শ দিলে উপকৃত হতাম
ان شاء الله

جزاك ا‎لله خيرا‎

1 Answer

0 votes
by (589,200 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ- 
434 নং ফাতাওয়ায় আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে,ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোনো মুসলিম যদি গোনাহ থেকে বেঁচে থেকে জেনারেল শিক্ষা গ্রহণ করতে চায়,তাহলে ইস্তেগফারের সাথে ফ্রি মিক্সিং পরিবেশেও তার জন্য অনুমোদিত হবে।

1722 নং ফাতাওয়ায় আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে,গোনাহের কাজ ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত কাজে মাতাপিতার বিধি-নিষেধের অনুসরণ করা ওয়াজিব।কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহিসসালাম বলেছেন,
ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ
গোনাহের কাজে কারো অনুসরণ করা যাবে না,অনুসরণ একমাত্র নেককাজ সমূহেই করা যাবে।(সহীহ বুখারী-৭২৫৭,সহীহ মুসলিম-১৮৪০)

অন্যত্র বর্ণিত আছে
ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ
আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)

যে সমস্ত বিষয় মাতাপিতার ফায়দাদায়ক এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকর নয়,সে সমস্ত বিষয়ে মাতাপিতার অনুসরণ ওয়াজিব।যদি মাতাপিতা জন্য ফায়দাদায়ক না হয় বা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হয়,সে সমস্ত বিষয়ে মাতাপিতা আদেশ নিষেধের অনুসরণ ওয়াজিব নয়।

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,
ﻭﻳﻠﺰﻡ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻃﺎﻋﺔ ﻭﺍﻟﺪﻳﻪ ﻓﻲ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻌﺼﻴﺔ ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻧﺎ ﻓﺎﺳﻘﻴﻦ ... ﻭﻫﺬﺍ ﻓﻴﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻨﻔﻌﺔ ﻟﻬﻤﺎ ، ﻭﻻ ﺿﺮﺭ ﻋﻠﻴﻪ " ﺍﻧﺘﻬﻰ .
মাতাপিতা আদেশ নিষেধের অনুসরণ সন্তানের জন্য তখনই ওয়াজিব যখন তা কোনো গোনাহের কাজ হবে না।যদি ও তারা ফাসিক হোক না কেন? উপরোক্ত হুকুম তখনই যখন তা মাতাপিতার জন্য ফায়দাদায়ক হবে,এবং সন্তানের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হবে না।(সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হলে শরীয়ত কর্তৃক বৈধ জিনিষেও মাতাপিতার অনুসরণ ওয়াজিব হবে না)(আল-ইখতিয়ারাত-১১৪)

চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ 'আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়' রয়েছে,
" ﻃﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﻴﻦ - ﻣﻤّﻦ ﺗﺠﺐ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ – ﻛﺎﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ، ﻭﺍﻟﺰّﻭﺝ ، ﻭﻭﻻﺓ ﺍﻷﻣﺮ : ﻓﺈﻥّ ﻭﺟﻮﺏ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ ﻣﻘﻴّﺪ ﺑﺄﻥ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ، ﺇﺫ ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻟﻤﺨﻠﻮﻕ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﺨﺎﻟﻖ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
যাদের আদেশ-নিষেধ এর অনুসরণ শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব।যেমন-মাতাপিতা,স্বামী,সরকারী বিধিনিষেধ,এর অনুসরণ ওয়াজিব।
এ হুকুম ব্যাপক হারে প্রযোজ্য হবে না বরং ঐ সময়-ই প্রযোজ্য হবে যখন তা গুনাহের কাজ হবে না।কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(২৮/৩২৭)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
ভবিষ্যতে যেহেতু ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য আপনার কিছু  করার কোনো ইচ্ছে নেই।তাই বলব,এরকম ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে, প্রাণীর ছবি অঙ্কন করে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়াই উত্তম হবে।তবে কেউ কন্টিনিউ করতে চাইলে, তার জন্য অনুমোদনও থাকবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...