হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّه رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا لَا تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارٰى فَإِنَّ تَسْلِيمَ الْيَهُودِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ وَتَسْلِيمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفِّ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
আমর ইবনু শু‘আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর পিতামহ হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য করো না। কেননা ইয়াহূদীরা অঙ্গুলির ইশারায় সালাম দেয়, আর খ্রিষ্টানরা হাতের তালু দ্বারা সালাম করে।
(হাদীসটির হুকুম হাসান : তিরমিযী ২৬৯৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২১৯৪, আল জামি‘উস্ সগীর ৯৫৬৫, সহীহুল জামি‘ ৫৪৩৪, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৭৩৮০, ইরওয়া ১২৭০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭২৩।)
,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ "
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তরভুক্ত (হয়ে যাবে)।
(হাদিস টির হুকুম হাসান : আবূ দাঊদ ৪০৩১, মুসনাদে আহমাদে এরূপ শব্দে হাদীসটি নেই; আল জামি‘উস্ সগীর ১১০৯৪, সহীহুল জামি‘ ৬১৪৯, ইরওয়া ২৬৯১।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ
‘‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে’’-এর অর্থে আল মানাভী ও আলকামী বলেনঃ যে প্রকাশ্যে তাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ করলো, পোশাক-পরিচ্ছদে তাদের জীবনাচার ও সংস্কৃতি এবং জীবনযাপনে তাদের কিছু কাজকর্ম গ্রহণ করলো। কারী বলেনঃ এর অর্থ হলো, যে তার নিজের পোশাক বা অন্য কিছুতে কাফির, ফাসিক, পাপিষ্ঠ, সূফী ইত্যাদি জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে। কারী বলেন, ‘‘সে তাদের অন্তর্ভুক্ত’’- এ বাক্যাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সাদৃশ্য অবলম্বনকারীরা গুনাহ ও কল্যাণে সাদৃশ্য অবলম্বনকৃতদের অংশীদার হবে। আল কারী বলেনঃ যে ব্যক্তি নেককার ব্যক্তিদের সাথে সাদৃশ্য রাখে তারা সম্মানিত হবে যেভাবে নেককাররা সম্মানিত হন। আর যারা ফাসিকদের সাথে সাদৃশ্য রাখে তারা সম্মানিত হবে না। তবে তাদের ওপর যদি সম্মানিতদের নিদর্শন পরিয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা সম্মানিত হবে কিন্তু বাস্তবে সে সম্মানের যোগ্য নয়।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘‘আস্ সিরাত আল মুসতাকিম’’ গ্রন্থে বলেন, ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ)-সহ অনেকেই এ হাদীস দ্বারা দলীল দেন যে, কাফির-মুশরিকদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হারাম। যেমনটা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّه مِنْهُمْ ‘‘আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন।’’ (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৫ : ৫১)
এ কথার সম্পূরক কথা বলেছেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর । তিনি বলেন,
من بنى بأرض المشركين وصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت حشر معهم يوم القيامة
‘‘কেউ যদি মুশরিকদের দেশে বাড়ি নির্মাণ করে, তাদের নওরোয ও মেলায় অংশগ্রহণ করে এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন তাদের (মুশরিকদের) সাথেই হাশর করা হবে।’’
মুসলিম যদি মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাহলে সেটা তাকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। তবে কেউ যদি সব কিছুতে মুশরিকদের সাধে সাদৃশ্য অবলম্বন না করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাহলে যতটুকুতে সে সাদৃশ্য অবলম্বন করেছে ততটুকু দায়ই তার ওপর বর্তাবে। হোক সেটা কুফরী বা কোন সাধারণ গুনাহ কিংবা তাদের কোন নিদর্শন। এ হাদীস দ্বারা ‘আলিমগণ দলীল দিয়েছেন যে, অমুসলিমদের বেশ-ভূষার যে কোন কিছুই গ্রহণ করা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়। তিরমিযীতে বর্ণিত অন্য হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا ‘‘ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয় যে, আমাদের ছাড়া অন্যদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে’’।
,
★শরীয়তের বিধান হলো যে সমস্ত বিষয় ইহুদী খৃষ্টানদের কালচার ও ধর্মীয় বিষয় হিসেবে বিবেচ্য ও প্রসিদ্ধ। তা ব্যবহার করা জায়েজ নয়।
আরো জানুনঃ
,
(০১)
শরীয়তে ইহুদী খ্রিস্টান দের অনুকরণ নিষেধ করার দ্বারা সে কাজ আমাদের জন্য যে নাজায়েজ,সেটি বলা উদ্দেশ্য।
এটাই মূল বিষয়।
কোনো গুনাহের কাজ চাই তাহা ইহুদী খৃষ্টানদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখুক বা না রাখুক,সেটি তো কোনো ভাবেই জায়েজ হতে পারেনা।
,
তাই আমাদের জন্য যা হারাম বা নিষিদ্ধ তার প্রায় সব বিধর্মীরা যদিও করে। তার পরেও যেকোনো গুনাহ হলেই সকল কাজেই তাদের অনুসরণ অনুকরণ হবেনা ঠিকই,তবে সেটি নাজায়েজ হবে।
,
আর হাদীস থেকে যেহেতু তাদের অনুকরণ নিষেধ করার মূল বিষয়ই হলো তাহা গুনাহ,তাই কোনো গুনাহের কাজই করা যাবেনা।
,
(০২)
যদি মুসলিম হিসেবে মারা যায়,তাহলে কোনো ভাবেই
চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবেনা।
,
(০৩)
অমুসলিম পাশের ফ্ল্যাটে থাকলে কোনো সমস্যা নেই যদি তার সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক না থাকে,এবং আপনার ঈমান- আকিদা সুদৃঢ় রাখার পূর্ণ ইয়াক্বিন-বিশ্বাস থাকে।
বিস্তারিত জানুনঃ