আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
32 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
আমার স্বামী আমার মা-বোনদের দেখতে পারেনা, অপছন্দ করে খুব।  বিশেষ করে আমার সেজো বোনকে সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে, তার নামই শুনতে পারেনা এবং তার সাথে কথা বলাও নিষিদ্ধ এবং আমার শ্বশুর বাড়ি যেনো না আসে এই বোন সেটাই আমার স্বামী বলে দিয়েছে। এ বোনের সাথে কথা বলতে দেখলে আমার সাথে ঝগড়াঝাটি করে খুব। তাই আমি  লুকিয়ে হঠাৎ হঠাৎ কথা বলি, তবে তেমন একটা বলিনা৷ উনি দেখেনা তবুও আমাকে হুটহাট জিজ্ঞেস করবে আমি কথা বলি কিনা, তখন আমি ঝামেলার ভয়ে " না" উত্তর দেই। এখন আমার ★১ম প্রশ্ন হচ্ছে  এই যে আমি লুকিয়ে কথা বলি এবং উনি জিজ্ঞেস করলে মিথ্যা বলি এতে কি আমার মিথ্যা বলা জায়েজ আছে এক্ষেত্রে পড়ে?  আমি জানতে চাই আমি কি মিথ্যা বলার শাস্তি পাবো, গুনাহ হবে ?
আবার আমাদের বাড়ি থেকে আমার ছেলের জন্য জামাকাপড় বা কিছু দিলে সেটা আমার স্বামী বাবুকে পরাতে দেয়না আমার খুব কষ্ট লাগে,, কুরআন -হাদিসের কথা বলে উনাকে বুঝিয়ে যাচ্ছি এ পর্যন্ত কাজ হচ্ছে না!
উনারা কিছু দিলে সেটা নিয়ে খুব অপমান করে আমাকে। কেউ কিছু দিলে ধরে ধরে জিজ্ঞেস করে কে দিয়েছে এটা ওটা  তখন আমার যে বোনকে উনি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে ওই বোন কিছু দিলে আমি বলি এটা আমি কিনেছি বা অন্য কেউর নাম বলি কিন্তু ওর নাম বলিন।
★  আমার ২য় প্রশ্ন হচ্ছে  এক্ষেত্রেও যে মিথ্যা বলছি এটা কি জায়েজ আছে বা আমি গুনাহগারী হচ্ছি?  আর ইসলামের দৃষ্টিতে আমার স্বামীর এসব আচার-আচরণ  উদ্দেশ্য কি বলে জানাবেন প্লিজ।
★ ৩য় প্রশ্ন হচ্ছে উনি চায় আমার ভাই -বোনদের সাথে আমি কথা না বলি, আমি কি তার এ কথা মানতে বাধ্য?  ইসলামের দৃষ্টিতে কি বলে।

1 Answer

0 votes
by (67,350 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/3514/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

শরীয়তের বিধান মতে মিথ্যা কথা বলা কবিরাহ গুনাহ।

কোনো কবিরাহ গোনাহ করলে মুসলমান ঈমান থেকে খারিজ হবে না। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা এবং বিশ্বাস।

তবে সে তাওবাহ করলে হয়তো আল্লাহ তাকে ক্ষমা ও করে দেবেন। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১/৬৬৫)

,

কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলা মুনাফিকের আলামত

হাদীস শরীফে এসেছে 

 حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ أَبُو الرَّبِيعِ، قَالَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا نَافِعُ بْنُ مَالِكِ بْنِ أَبِي عَامِرٍ أَبُو سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ " آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ ".

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে; ২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানাত করে। (বুখারী ৩৩,২৬৮২,২৭৪৯,৬০৯৫; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৯, আহমাদ ৯১৬২)

,

https://www.ifatwa.info/644 নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

তিন অবস্থায় মিথ্যা বলা জায়েয। যেমনঃ-

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাঃ থেকে বর্ণিত,

 ﻋَﻦْ ﺃَﺳْﻤَﺎﺀَ ﺑِﻨْﺖِ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ( ﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺛَﻠَﺎﺙٍ : ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ ﻟِﻴُﺮْﺿِﻴَﻬَﺎ ، ﻭَﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ ، ﻭَﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﻟِﻴُﺼْﻠِﺢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ)

তরজমাঃ নবীজী সাঃ বলেনঃ তিনস্থান ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলা জায়েয নয়, ১/স্ত্রীর সাথে ভালবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে। ২/যুদ্ধের ময়দানে কাফিরের সাথে যুদ্ধ বিষয়ে। ৩/দু-ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করতে। (তিরমিযি-১৯৩৯,আবু-দাউদ-৪৯২১)

,

উম্মে কুলছুম রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছেন,

 ﻋﻦ ﺃُﻡَّ ﻛُﻠْﺜُﻮﻡٍ ﺑِﻨْﺖِ ﻋُﻘْﺒَﺔَ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻌَﻴْﻂٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ، ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺳَﻤِﻌَﺖْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ( ﻟَﻴْﺲَ ﺍﻟْﻜَﺬَّﺍﺏُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺼْﻠِﺢُ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻭَﻳَﻨْﻤِﻲ ﺧَﻴْﺮًﺍ ) . ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺷِﻬَﺎﺏٍ : ﻭَﻟَﻢْ ﺃَﺳْﻤَﻊْ ﻳُﺮَﺧَّﺺُ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣِﻤَّﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻛَﺬِﺏٌ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺛَﻠَﺎﺙٍ : ﺍﻟْﺤَﺮْﺏُ ، ﻭَﺍﻟْﺈِﺻْﻠَﺎﺡُ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ، ﻭَﺣَﺪِﻳﺚُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ ﻭَﺣَﺪِﻳﺚُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ﺯَﻭْﺟَﻬَﺎ

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন-যে ব্যক্তি দু'জনের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের মীমাংসার স্বার্থে মিথ্যা বলে সে মিথ্যুক নয়।সে একজনের নিকট এসে উত্তম উত্তম জিনিষ বলে,এবং অন্যর নিকট গিয়ে উত্তম জিনিষ পৌছায়। ইবনে শিহাব যুহরী রাহ বলেন,মানুষের মিথ্যা কথা বলার ব্যাপারে তিন জিনিষে রুখসত রয়েছে, (১)যুদ্ধের সময়ে (২) দু'জনের মধ্যে মীমাংসা করতে, (৩) স্বামী-স্ত্রী পরস্পর ভালবাসা-মহব্বতকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে। (সহীহ মুসলিম-২০৫৬)

,

কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরাম মিথ্যা বলাকে হাদীসে বর্ণিত তিনটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন।কিন্ত বিদগ্ধ গবেষক উলামায়ে কেরাম ঐ সমস্ত বিষয়ের মধ্যেও অনুমিত প্রদান করেছেন যেথায় অন্যর ক্ষতি ব্যতীত নিজের মঙ্গল নিহিত রয়েছে।

,

আবুল ফরয ইবনুল জাওযী রাহ বলেনঃ

 ﻭﺿﺎﺑﻄﻪ ﺃﻥ ﻛﻞ ﻣﻘﺼﻮﺩ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻳﻤﻜﻦ ﺍﻟﺘﻮﺻﻞ ﺇﻟﻴﻪ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻜﺬﺏ، ﻓﻬﻮ ﻣﺒﺎﺡ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﻘﺼﻮﺩ ﻣﺒﺎﺣﺎ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻭﺍﺟﺒﺎ، ﻓﻬﻮ ﻭﺍﺟﺐ . ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ : ﻓﺘﺎﻭﻯ ﺩﺍﺭ ﺍﻹﻓﺘﺎﺀ ﺍﻟﻤﺼﺮﻳﺔ

প্রত্যেক ঐ ভালো উদ্দেশ্য যে পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় ব্যতীত পৌছা প্রায় অসম্ভব, সেখানে মিথ্যা বলা বৈধ।মাকসাদ(উদ্দেশ্য) মুবাহ হলে,মিথ্যা বলা মুবাহ।মাকসাদ ওয়াজিব হলে মিথ্যা বলা ওয়াজিব

,

আল্লামা ইবনূল কাইয়ূম রাহ বলেনঃ

 ﻳﺠﻮﺯ ﻛﺬﺏ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻪ، ﻭﻋﻠﻰ ﻏﻴﺮﻩ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺘﻀﻤﻦ ﺿﺮﺭ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻐﻴﺮ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻳﺘﻮﺻﻞ ﺑﺎﻟﻜﺬﺏ ﺇﻟﻰ ﺣﻘﻪ،

একমাত্র মিথ্যার মাধ্যমে হক্ব (অধিকার রক্ষা) পর্যন্ত পৌছা নির্দিষ্ট হলে নিজের উপর বা অন্যর উপর মিথ্যা বলা জায়েয যখন এতে অন্যর কোনো প্রকার ক্ষতি হয় হবে না। (যাদুল মা'আদ-২/১৪৫)

 আরো বিস্তারিত জানুন - https://www.ifatwa.info/644

,

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

,

১-২. এভাবে মিথ্যা না বলে বরং তাওরিয়াহ করে কথা বলবেন। তাহলে আর কোনো সমস্যা হবে না। আবার আপনার উদ্দেশ্যও হাছিল হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন - https://ifatwa.info/4573/

৩. জানি না আপনার স্বামী কেন এমন রাগ দেখাচ্ছে? বিস্তারিত জানলে তখন আরো বিস্তারিত উত্তর দেওয়া সম্ভব ছিলো। যাইহোক মাঝে মধ্যে আপনার মাহরাম ও আত্মীয়দের সাথে কথা বলা এবং তাদের সাথে দেখা সাক্ষাত করা এটা আপনার একান্ত একটা অধিকার। অন্যায় ভাবে এভাবে কথা বলা থেকে বাঁধা দেওয়া ঠিক নয়। এটা সংশোধিত হওয়া উচিত।

,

বোন, প্রথমত আমাদের পরামর্শ থাকবে যে, আপনি আপনার আপনার স্বামীকে মহব্বত ও ভালোবাসার সাথে বুঝাতে থাকবেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে খুব বেশী বেশী দুআ করতে থাকবেন। বিশেষ করে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। অন্তরকে পরিবর্তন করে দেওয়ার মালিক তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...