আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।
আমি বর্তমানে একজন জেনারেলের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি আইওএমে পড়াশোনা করছি।
আমার কলেজটি একটি মহিলা কলেজ। তবে শিক্ষকেরাও আছেন। আমি সচরাচর ক্লাস করি না, শুধু পরীক্ষা দিতে যাই। পরীক্ষার কেন্দ্র ভিন্ন কলেজে পড়ে।
পরীক্ষা দুপুর ১২:৩০ টা থেকে বিকাল ০৪:৩০ টা পর্যন্ত হয়। আমাকে তাই এক ঘন্টার পূর্বে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়। বাড়ি থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব ৪৪-৪৬ কি.মি.। সকাল ০৮:৩০টায় বাড়ি থেকে বের হই। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি পৌঁছাই সন্ধ্যা ০৭:০০টার দিকে।
আমার বোন আমাকে পড়াচ্ছেন। সাথে যাবার মতো মাহরাম নেই। রাত করে দুজন বাড়ি ফিরতে আমার ভীষণ অস্বস্তি হয়। যখন গাড়িতে ভালো সিট পাই না, তখন আরোও বেশ অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়ে যাই।
পরীক্ষার এডমিট কার্ডে আমার চেহারা দেখা যায়। তাছাড়া যাতায়াত এবং পরীক্ষার সময়টাতে কন্ঠের পর্দা ও নজরের হেফাজত হয় না।
আমার পড়াশোনার বিষয় 'বাংলা'। এর কিছু কিছু বিষয় পড়তেও আমার ভীষণ ভয় লাগে।
যেহেতু আমার পরিবারে দ্বীনের বুঝ নেই, আমিও এভাবেই বড় হয়েছি।
যার ফলশ্রুতিতে, কোনভাবে ৯/১০ বছর বয়সে হস্তমৈথুনে, ১৩ বছর বয়সে পর্নগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ি।
১৬ বছর বয়সে বুঝতে পারি আমি যা কিছু করছি তা ইনএপ্রোপ্রিয়েইট। হালাল-হারাম না বুঝলেও কত কত বার যে তাওবাহ করি, তারপর আবার খেই হারিয়ে ফেলতাম।
এই বয়সেই বন্ধুদের পরিকল্পনার ফাঁদে পড়ে হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। যেটা আমাকে আরও খারাপ কিছুর দিকে ঠেলে দেয়।
২২ বছর বয়সে সে সম্পর্কেরও বিচ্ছেদ ঘটে। এই ১৬ থেকে ২২ বছরের জীবনে আমি অনেক কিছুই হারিয়েছি এবং আমি তখন সবদিক থেকে একেবারে শূন্য হয়ে পড়ি।
আমার বেঁচে থাকা আমার জন্য ভারী হয়ে গিয়েছিল। আমার চিন্তা আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
সেই শোচনীয় অবস্থা থেকে আমাকে যিনি ফিরিয়ে ছিলেন, তিনি হচ্ছেন আমার রব! সেই প্রথমবার আমি আমার রবকে অনুভব করতে পেরেছিলাম!
তখন কারো সাথে কথা বলতাম না, সারাক্ষণ কান্না করতাম, বাইরে যেতাম না, ছেলে মানুষ, চিন্তার গুনাহ থেকেও বেঁচে থাকতাম।
আমি কষ্টে ছিলাম তবুও খুব খুব ভালো ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ!
আলহামদুলিল্লাহ এই যে আমার জন্মের পর পর বাড়িতে আমার মা-বোনদের মাঝে সালাত-সিয়াম ও আমলের বুঝ দিয়েছিলেন। আল্লাহ আমাকেও ১২ বছর বয়সে সালাত উপহার দিয়েছিলেন আলহামদুলিল্লাহ।
আমি আমার ২২ বছরের পুরোটা জীবন ধরে শান্তি খুঁজে বেড়িয়েছি। আমার সবচেয়ে ভেঙে পড়া সময়টাতে সেই শান্তির ছোঁয়া পেয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ!
কিন্তু আমার পরিবারের লোকেদের সংস্পর্শে প্রাপ্ত হেদায়েত টলমল করছে।
আমি আবারও খেই হারিয়ে ফেলেছি। কত যে তাওবা করি। তবু সালাত ছুটে যায়। জিহবা, চিন্তার গুনাহ হয়ে যায়। এমনকি আরোও গুনাহর দিকেও ধাবিত হচ্ছি।
আমি একসাথে অনেক অনেক কিছু থেকে বের হয়ে আসতে চাইছি। জীবনের মোড়কে এবার বদলাতে চাইছি। সঠিক পথে আসতে চাচ্ছি। যে পথ আদৌ কাম্য।
আমি পুনরায় নিজেকে হারাতে চাই না। আমি বাইরে বের হতেও চাই না। আমি বাড়ি বের হলে কোন না কোন গুনাহের ভাড় নিয়ে বাড়ি ফিরছি। পুরুষলোকের উপস্থিতিতে অবস্থান করা আমাকে একাকীত্বের গুনাহের দিকে টানে এবং চিন্তার গুনাহ ছাড়তেই পারছি না।
আমি এখন আর আর আমার রবকে অনুভব করি না, ইবাদতে স্বাদ পাই না।
চেষ্টা করছি, কিছু না কিছুতে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে। কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
আমি পড়াশোনার ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। শিক্ষা ছাড়া বেঁচে থাকা আমার জন্য প্রায় অসম্ভব।
তারপরও আমি আর এই জেনারেল পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে চাইছি না। আশা করি উপরের বর্ণনা থেকে এর কারণগুলো বুঝা যাচ্ছে।
আমি যখন আইওএমে পড়তাম না তখনও নার্সিং এর পড়া পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ছেড়ে এসেছিলাম শুধু এজন্য যে তারা পর্দা, বিয়ের ব্যাপারে খুব হস্তক্ষেপ করে।
তাই এটা স্পষ্ট যে, আইওএমকে পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে জেনারেল পড়াশোনা ছাড়ার ইচ্ছে করছি না। আমার এখনও ইচ্ছে আছে আইইএলটিএস এবং অন্যান্য ভালো কোর্স করার যা আমাকে ঘরে বসেই হালাল রুজিরোজগার করতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
আমার পরিবার আমার থেকে সার্টিফিকেট আর চাকরি আশা করেন। তাদের আশা পূরণ করতে গিয়ে আল্লাহর নাফরমানি করতে থাকলে আশা তো পূরণ করতে পারবই না। আল্লাহকে হারাব, আল্লাহর বান্দাকেও হারাব।
আমার অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষার সময় আমার বিচ্ছেদ ঘটে। তখন পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারিনি। আবারও পরীক্ষা দেবার আগে বাড়িতে নানাভাবে বলেছিলাম আমি আর পড়ব না। কিন্তু আমি স্বাভাবিকভাবেই কোন সাপোর্ট পাইনি। বাধ্য হয়ে পুনরায় পরীক্ষা দিয়েছি। দিতে গিয়েও কত কিছুর মুখোমুখি হয়েছি। এখন ফলাফলের অপেক্ষা করছি। হয়তো এপ্রিল-মে তে ৩য় বর্ষের ভর্তি। ফলাফলও প্রকাশ হবে।
৩য় বর্ষে ভর্তি পূর্বেই আমি পড়াটা ছেড়ে দিতে চাইছি।
আমি আপাতত বিয়েতে ইচ্ছুক নই। আমার অন্তরের ক্ষত এখনও শুকায় নি। আর এই অবস্থায় বিয়ে আমাকে একটা সুন্দর জীবন দিতে পারবেও না।
আমার এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গুনাহ থেকে পরহেয করতে শিখে নেওয়া। আমার শান্তির প্রয়োজন। আমি আমার রবকে অনুভব করতে পারা পুনরায় ফিরে পেতে চাই। আমি তাঁর প্রিয় হতে চাই। তার জন্যে সব করতে রাজি আছি। আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছি, একটা না একটা সময় লোকেরা আমাকে ধাক্কা দিবেই, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যস্ত হলে। কিন্তু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করলে সাময়িক কষ্টের পর অনেক ভালো কিছু অবশ্যই পাব ইনশাআল্লাহ। এমনই তো আল্লাহর ওয়াদা। তিনি সত্যবাদী। তিনি ওয়াদা পালনেও সত্যবাদী। সুবহানাল্লাহ!
আমার ক্বলবে সবসময় এই ওয়াসওয়াসা কাজ করে যে আমি যা করছি তা ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো!!
তাই শুধু এটা জানতে চাচ্ছি যে,
১। আমার জেনারেলের পড়াটা ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত আমার পরিস্থিতির আলোকে কতটুকু সঠিক?
২। এই পড়াটা কি আমার জন্যে আর হালাল সাব্যস্ত হবে? যদিও আমি মহিলা কলেজের ছাত্রী।
৩। আমি সত্যিই পড়াটা ছেড়ে দিব কিনা? এটা কি আসলেই ভালো হবে?
৪। আমি শান্তি চাই, রবকে চাই, রবের প্রিয় হতে চাই। এসব পেতে আমাকে কী করতে হবে?
৫। পড়াশোনা ছেড়ে দিলে, তারপর যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেই হবে তা কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে?
আমার জন্য দুআ করে দিবেন উস্তাদজী, যাতে যেটাতে দুনিয়া ও আখিরাতে আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারিত আছে সেটাই আমার জন্য সহজ হয়ে আসে। ইস্তিখারার ফলাফল এবং আপনার পরামর্শ যেন একই হয়। আমার জন্য যেন বুঝতে সহজ ও সুবিধাজনক হয়।
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ্ উস্তাদজী।