আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
47 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (16 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ উস্তাদ।
কিছু বিষয় জানার ছিলো। হুজুর আমাকে একটু বিস্তারিত জানালে উপকার হয়।

১) শিশু জন্মের পর গিফট হিসেবে তার জন্য প্রাপ্ত স্বর্ণ,টাকা,
কাপড়-চোপড় এগুলোর বিধান আমাকে একটু স্পষ্ট করে বলুন দয়া করে।
এক জায়গায় দেখলাম মা-বাবার আর্থিক অবস্থা টানা-পোড়ন থাকলে নাবালাক থাকা অবস্থায়ও উক্ত স্বর্ণ-টাকা ঐ বাচ্চার জন্য খরচ করা যায়। এখন আর্থিক অবস্থা যদি মুটামুটি হয় বা বড় খরচ করার মতো না থাকে এমন হলে কি করণীয়?
আর বাচ্চার জন্য ব্যবহার করা যাবে না এমন কাপড়-চোপড় বা ঐরকম জিনিস গুলো কি করতে হবে?

২) নবজাতকের চুলের পরিমাণ সদকা করার পর তার চুল ও শুকিয়ে যাওয়া নাভী কি যে কোন জায়গায় ফুঁতে ফেলা যাবে?
আমি শুনলাম যে, বাচ্চার নাভী নাকি তার পিতার বাড়ীর আঙ্গিনায় ফুঁততে হয়। আর এতে আকীকার পশুর ভুঁড়িও কেমন যেন ফুঁতা হয় শুনলাম।

৩) বাচ্চার নামকরণ কি আযানের পর দিতে হয়? কিভাবে দিতে হয়?

জাযাকাল্লাহু খয়েরন

1 Answer

0 votes
by (592,140 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
https://ifatwa.info/44175/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে,

أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ لِيْ مَالاً وَوَلَدًا وَإِنَّ وَالِدِيْ يَحْتَاجُ مَالِيْ قَالَ أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ إِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ، فَكُلُوْا مِنْ كَسْبِ أَوْلَادِكُمْ،

“এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার সম্পদ ও সন্তান আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী।
তিনি বললেন, “তুমি ও তোমার সম্পদ উভয়ই তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানের উপার্জন থেকে খাও।” [আবু দাউদ হা/৩৫৩০; ইবনে মাজাহ, হা/২২৯২, সনদ সহিহ]

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
নাবালেগ বাচ্চাকে যে হাদিয়া/উপহার আত্মীয় স্বজনদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়,তার দ্বারা নির্দিষ্ট করে তাকে হাদিয়া দেয়া উদ্দেশ্য হয়না,বরং মা বাবাকেই দেয়া উদ্দেশ্য হয়।
সুতরাং সেটির মালিক সন্তান নয়,বরং মা বাবাই তার মালিক।
সে যা চাই,তারা সেটা করতে পারবে।
অবশ্য যদি কেহ নির্দিষ্ট ভাবে সন্তানকেই কিছু দেয়,তাহলে সন্তানই এর মালিক হবে।
(বেহেশতি যেওর ৫/৪৭)

(০১) যেই জিনিস নাবালেগ এর মালিকানায় দেয়া হবে,সেটিকে সেই বাচ্চার কাজেই লাগানো উচিত। পিতা মাতা সেটি ব্যবহার করতে পারবেনা।
পাত্র ইত্যাদি যাহা বাসা বাড়ির কাজে ব্যবহার করা যায়,সেটিকে বাসা বাড়ির কাজে ব্যবহার করা যাবে।

(০২) 
যেই হাদিয়া সময় চলে যাওয়ার কারনে খারাপ হয়ে যায়,এবং সেটি ঐ সময়ে সন্তান ব্যবহার করতে পারেনা।
তাহলে সেটিকে বিক্রয় করে বাচ্চাকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে।

(০৩) পিতা মাতাও সেই বস্তুর মূল্য আদায় করে মালিক হতে পারবে।

قال فی الدر: یبیع الأب لأن لہ ولایة التصرف لا الأم ولا بقیة أقاربہ ولا القاضی اجماعاً عرض ابنہ  الکبیر الغائب لا الحاضر إجماعاً لا عقارہ فیبیع عقار صغیر ومجنون۔ (الدر مع الرد: 5/367)
সারমর্মঃ
বাবা সেটি বিক্রয় করতে পারবে,কেননা তার সন্তানের সম্পদে হস্তক্ষেপ এর অধিকার রয়েছে।
তবে মায়ের নয়।    

قال فی الشامی: وحاصلہ أن المنقول مما یخشی ہلاکہ فللأب بیعہ حفظا لہ (5/367
সারমর্মঃ
যে সমস্ত জিনিস পঁচে যাওয়া বা ধ্বংস হওয়ার ভয় রয়েছে,সেগুলো সেগুলো বিক্রয় করতে পারবে,হেফাজতের জন্য। 

★তবে উল্লেখিত মাসয়ালায় কিছু ইসলামী স্কলারদের মতবিরোধ রয়েছে।

তাদের মতানুসারী গন এই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন।     
তারা ঢালাও ভাবে উক্ত সম্পদে পিতার ব্যবহার বৈধ বলেন।
তারা বলেন যে ছোট বাচ্চারা আত্মীয়স্বজন এবং বিভিন্নজন থেকে যেসকল অর্থ ও উপহার-সামগ্রী পায় পিতা যদি আর্থিক অস্বচ্ছলতার দরুন সেগুলো ব্যবহার বা খরচ করতে চায় তাহলে তার জন্য যতটুুক প্রয়োজন ততটুকু নেয়া জায়েজ আছে। তবে প্রয়োজন না হলে বা প্রয়োজন অতিরিক্ত না নেয়াই ভালো। কেননা এসব উপহারের প্রতি শিশুদের মন লেগে থাকে।
হ্যাঁ, প্রয়োজনবোধে পিতা যদি তা ব্যবহার করেও তবে পরবর্তীতে সামর্থ্য হলে তাকে তা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করবে। আর মা তা নিতে পারবে কি না তা দ্বিমত পূর্ণ।

মা নিতে পারে কি না সে ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও, অধিক বিশুদ্ধ মতে পিতা-মাতা এ ক্ষেত্রে সমান। অর্থাৎ মাও তার অভাব মোচন পরিমাণ সন্তানের সম্পদ গ্রহণ করতে পারে। তবে বাবা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় মা সন্তানের অর্থ নেয়ার ব্যাপারে তার নিকট অনুমতি নিবে। কারণ বাবাই হল, পরিবারের প্রধান অভিভাবক।

قال جابر بن عبد الله رضي الله عنه : ” يَأْخُذُ الْأَبُ وَالْأُمُّ مِنْ مَالِ وَلَدِهِمَا بِغَيْرِ إذْنِهِ ، وَلَا يَأْخُذُ الِابْنُ وَالِابْنَةُ مِنْ مَالِ أَبَوَيْهِمَا بِغَيْرِ إذْنِهِمَا ” رواه ابن حزم في “المحلى” (6/ 385) ، وصححه.
জাবের রা. বলেন, “বাবা ও মা তাদের সন্তানের সম্পদ তার অনুমতি ছাড়াই নিতে পারে। কিন্তু ছেলে বা মেয়ে পিতামাতার সম্পদ তাদের অনুমতি ছাড়া নিতে পারবে না।” [আল মুহাল্লা ৬/৩৪৫]

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
শিশু জন্মের পর গিফট হিসেবে তার জন্য প্রাপ্ত স্বর্ণ,টাকা,কাপড় ইত্যাদি শিশুর জন্য ব্যবহার করা যাবে। ঐ বাচ্চার জন্য উহা হতে খরচ করা যাবে। শিশু বড় হওয়ার পর হাদিয়া হিসেবে পাওয়া স্বর্ণ রুপা গুলি তার হাতে অর্পন করতে হবে।

বাচ্চার জন্য ব্যবহার করা যাবে না এমন কাপড়-চোপড় বা ঐরকম জিনিস গুলো ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিতে হবে।
এক্ষেত্রে পিতা মাতা চাইলে তারা সেই বস্তুর মূল্য আদায় করে মালিক হতে পারবে।

(০২)
নবজাতকের চুলের পরিমাণ সদকা করার পর তার চুল ও শুকিয়ে যাওয়া নাভী যে কোন জায়গায় পুত্র ফেলতে হবে।

এটিই নিয়ম।

(০৩)
নবজাতক জন্মের সপ্তম দিনে নাম রাখা ও আকীকা দেওয়ার কথা হাদীস শরীফে এসেছে। 

সামুরা বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

«كُلُّ غُلاَمٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى»

‘প্রত্যেক শিশুই তার আকীকা জরুরী। জন্মের সপ্তম দিনে তার জন্য জবাই করা হবে এবং তার মাথা নেড়ে করা হবে আর নাম রাখা হবে। [আবূ দাউদ : ২৮৪০; মুসনাদ আহমদ : ২০০৯৫।]

আমর বিন শুয়াইব তার বাবা আর বাবা তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে,

«أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِتَسْمِيَةِ الْمَوْلُودِ يَوْمَ سَابِعِهِ وَوَضْعِ الأَذَى عَنْهُ وَالْعَقِّ».

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের সপ্তম দিবসে নবজাতকের নাম রাখা, তার আবর্জনা দূর করা (তথা নেড়ে করা) ও আকীকার নির্দেশ দিয়েছেন।’ [তিরমিযী : ২৮৩২।]

বিস্তারিত জানুনঃ- 

জন্মের সপ্তম দিনে নাম রাখা ও আকীকা করা উত্তম। সপ্তম দিনে আকীকা দেয়া সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১ তম দিনে আকীকা করা ভালো। 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
শিশুর জন্মের ৭ দিনে মাথায় নাম রাখতে হবে।
এর জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি নেই।

ভালো একটি ইসলামিক নাম বেছে নিয়ে সেই নামেই সন্তানকে ডাকবেন,অন্যদেরকেও সেই নামে ডাকার প্রতি আহবান জানাবেন।

এরপর উক্ত নামে ৭ দিনের মাথায় বাচ্চার আকীকা দিবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
আসসালামু আলাইকুম হুজুর।
১ নং উত্তর এর সারমর্ম কি এরকম- 
বাচ্চার জন্য দেয়া স্বর্ণ-রূপা রেখে দিতে হবে সাবালেগ হওয়া পর্যন্ত। আর টাকা-কাপড় চোপড় ঐ বাচ্চার জন্যই নাবালেগ অবস্থায় খরচ করা।
উক্ত টাকা বা কাপড় মা-বাবার ঘরোয়া প্রয়োজনে খরচ করা গেলেও না করা উচিত এমন হবে?
নাকি ঘরোয়া প্রয়োজনে টাকা,কাপড় বা ঐরকম হাদিয়া গুলো মা-বাবা খরচ করতে পারবে ও গুনাহ হবে না?
দয়া করে এটা একটু স্পষ্ট করলে উপকার হয় উস্তাদ।
জাযাকাল্লাহু খয়েরন

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 164 views
...