মাজার সংক্রান্ত কিছু শিরকঃ-
একমাত্র আল্লাহ আল্লাহ তাআলা কুল মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। সৃষ্টির অস্তিত্ব ও বিলুপ্তি তাঁরই হাতে।
মানুষের জীবন-মৃত্যু, সুস্থতা-অসুস্থতা, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা, উন্নতি-অবনতি, এককথায় সকল কল্যাণ ও অকল্যাণ একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে। তাঁর ইচ্ছায় সব কিছু হয়, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। তাঁর কোনো সহযোগী নেই এবং তিনি কোনো উপায়-উপকরণের মুখাপেক্ষী নন।
কারণ পৃথিবীর সকল বস্তু ও বস্তুগুণ তাঁর সৃষ্টি, জীবন ও জীবনোপকরণ তাঁর সৃষ্টি, প্রকৃতি ও প্রকৃতির নিয়ম তাঁরই সৃষ্টি। গোটা জাহান তাঁর মাখলুক এবং কুল মাখলুক তাঁরই আদেশের অধীন।
এই সর্বময় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। কোনো মাখলুকের তাতে বিন্দুমাত্র অংশীদারিত্ব নেই। তদ্রূপ উপায়-উপকরণ ছাড়া কাজ করার ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা অন্য কাউকে দান করেননি।
মাজার বা মাজারে শায়িত ব্যক্তি সম্পর্কে অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ শিরক। ফিকহের কিতাবে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, ‘কোনো মৃত ব্যক্তিকে তাসাররুফ ক্ষমতার অধিকারী (অর্থাৎ গায়বী ক্ষমতা-বলে কার্যসম্পাদনে সক্ষম) মনে করা কুফরী।-আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮
কেউ যদি গায়রুল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সেজদা করে, গায়রুল্লাহর নামে কোরবানী করে, গায়রুল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার নাম জপতপ করে, মানবীয় ক্ষমতার উর্ধ্বের কোনো বিষয় গায়রুল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, কোনো মাযার বা দরগাহ এর উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহর মতো তীর্থযাত্রা করে, হারাম শরীফের মতো দরগাহ ও তার চারপাশের অঞ্চলকে তীর্থস্থান মনে করে, মাযার-দরগাহর তওয়াফ করে এবং দরগাহর দেয়ালে ভক্তিভরে চুম্বন করে, মোটকথা, যেসব কাজ আল্লাহ তাআলা তাঁর উপাসনার জন্য নির্ধারণ করেছেন তা গায়রুল্লাহর জন্য করে তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ শিরক। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন : তাসাওউফ : তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ, পৃষ্ঠা : ২১২-২২৯
শরীয়তের বিধান হলো কেউ যদি গায়রুল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সেজদা করে, গায়রুল্লাহর নামে কোরবানী করে, গায়রুল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার নাম জপতপ করে, মানবীয় ক্ষমতার উর্ধ্বের কোনো বিষয় গায়রুল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, মাযার-দরগাহর তওয়াফ করে, মোটকথা, যেসব কাজ আল্লাহ তাআলা তাঁর উপাসনার জন্য নির্ধারণ করেছেন তা গায়রুল্লাহর জন্য করে তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ শিরক।
এবং যে ব্যাক্তি মাযার বা মাযারে শায়িত ব্যক্তি সম্পর্কে অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করে,সে শিরক করলো।
,
সুতরাং কেহ যদি সত্যিকার অর্থেই এহেন আকিদা, বিশ্বাস মনে প্রানে পোষন করে মাজারে সেজদাহ ইত্যাদি করে,তাহলে সে কুফরী করলো।
তাকে নতুন করে কালেমা পড়ে ঈমান আনতে হবে। খালেছ দিলে তওবা করতে হবে।
আরো জানুনঃ-
শরীয়ত সম্মত পন্থায় বুযুর্গদের মাযার জিয়ারত জায়েজ আছে।
তবে শুধু তা যিয়ারতের জন্য কোনো জায়গায় সফর করা যাবেনা।
কোনো কাজে কোনো জায়গায় গেলে শরীয়ত সম্মত পন্থায় যিয়ারত করতে পারে,এটাই অধিকাংশদের মত।
কবর যিয়ারতের সুন্নত তরীকা হচ্ছে কবরের কাছে গিয়ে সালাম দিবে।
এরপর কবরকে পিছনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে নিজের জন্য এবং কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দুআ করবে।
বিস্তারিত জানুনঃ
শরীয়তের বিধান হলো মাজারওয়ালা বা কবরবাসী, এমনকি ওলী-বুযুর্গ হয়ে থাকলেও তার কাছে কিছু চাওয়া শিরক। কেননা, দুআ ও সাহায্য প্রার্থনা শুধু আল্লাহ তাআলার কাছেই করা যায়। দুআ একটি ইবাদত। আর সমস্ত ইবাদত আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।
সূরা ফাতিহায় আছে-
اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ.
আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য চাই। [সূরা ফাতেহা (১) : ৪]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ.
আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন, তোমরা একমাত্র তারই ইবাদত করবে। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৪০
সূরা রা‘দে (আয়াত : ১৪)
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا یَسْتَجِیْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّیْهِ اِلَی الْمَآءِ لِیَبْلُغَ فَاهُ وَ مَا هُوَ بِبَالِغِهٖ وَ مَا دُعَآءُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ.
এ আয়াতে বলা হয়েছে, সত্য প্রার্থনা সেটিই, যা আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য যে কারো কাছেই প্রার্থনা করা হোক তা বৃথা এবং তা কাফেরদেরই কাজ।
মাজারে গিয়ে দুআ করার ব্যাপারে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. বলেন-
كل من ذهب إلى بلدة أجمير أو قبر سالار مسعود، أو ما ضاهاها لأجل حاجة يطلبها فإنه آثم إثما أكبر من القتل والزنا، أليس مثله إلا مثل من كان يعبد المصنوعات أو مثل من كان يعبد اللات والعزى.
যারা আজমীর, সালার মাসউদ প্রমুখ বুযুর্গদের মাজারে গিয়ে স্বীয় উদ্দেশ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করে তারা হত্যা ও ব্যভিচারের চাইতে জঘন্য পাপ করে। তাদের উপমা হল ঐ মুশরিকদের ন্যায়, যারা স্বহস্তে বানানো মূর্তির পূজা করে এবং লাত উযযার পূজা করে। -তাফহীমাতে ইলাহিয়্যাহ ২/৪৯
প্রশ্নের উল্লেখিত ছুরতে আপনার সেই বন্ধু যদিও মাজারের সেজদা না দিক বা মাজার জাতীয় যত শিরকী কাজ আছে কোন কাজই না করে থাকুক, তারপরেও তিনি যেহেতু শুধুমাত্র মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যেই মাজারে সফর করেন,তাই তার এ কাজটি শরীয়তে দৃষ্টিকোণ হতে জায়েজ নয়।
আর যেহেতু তার সাথে চলাফেরা করার দরুণ তার কাজের দিকে আপনার আকৃষ্ট হওয়ার প্রবল আশংকা আছে, তাই সে যদি সঠিক পথের দিকে না ফিরে, মাজারে যাওয়া যদি বন্ধ না করে,এমতাবস্থায় তার সাথে চলাফেরা,উঠাবসা করা আপনি বন্ধ করে দিবেন।